নাতাশা টোকন তারা আর রুদ্র মোহাম্মদ সানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে বন্ধু হয়ে যায় একে অন্যের। বন্ধু হবার পরে প্রতিদিনই দুজনের দেখা হত, টিএসসি, সরোওয়ার্দী উদ্যান, ছবির হাটে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চলতো দুজনার। ছুটি ছাটা বা অন্য কোন কারণে যে দিন দেখা বা আড্ডা হত না, দুজনের মনেই কেমন এক অসম্পূর্ন দিনের রেশ থেকে যেতো। কি একটা নাই, কি একটা নাই এমন অস্বস্তি দুজনারই হত। পরিচয় হবার পর রুদ্র একদিন ফোন দিয়ে নাতাশাকে বলল টিএসসসি আসো, চা খাই। এরপর এই চা খাওয়া প্রতিদিনের কাজ হয়ে গেলো। যেভাবেই হোক দশ মিনিটের জন্য হলেও দেখা হবে। সম্বোধনটা তুমি থেকে তুই তে আসতে বেশিদিন সময় লাগলো না।
রুদ্রের দুনিয়ার যতো বন্ধু ছিল সবই ছেলেবন্ধু, একটা বান্ধবী পর্যন্ত ছিলো না। বলতে গেলে একমাত্র মেয়ে নাতাশা ই যার সাথে রুদ্রের কথা হয়। হঠাৎ রুদ্র নাতাশাকে একদিন বললো ” প্রেম করব, মেয়ে দেখে দে।”
নাতাশা দারুণ খুশি। মনের আনন্দে মেয়ে খোঁজে বন্ধু রুদ্রের জন্য। নাতাশার ভাবনায় আসে ” লোকটার একটা গতি হওয়া দরকার।” একজনকে পেয়েও গেল নাতাশা। নাতাশা তখন আইএলটিএস দিয়েছে, ইউকেতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছে। সে ভাবছে ইউকেতে যাবার আগে রুদ্রের একটা ব্যবস্থা করেই যাবে।
একদিন ঠিক হল নাতাশা ওই মেয়েকে নিয়ে টিএসসি যাবে, দুজনের দেখা করিয়ে দিতে। তারা কথা বলে দেখবে, দুজন দুজনকে বুঝবে। কিন্তু সন্ধ্যার সময় নাতাশার যেন কেমন লাগতে লাগলো। মনে হল ”এখন থেকে রুদ্র ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে আসবে। আমি কি করব? আমার তখন দেখা করতে গেলে ওই মেয়ের সময় মতো যেতে হবে।” এসব ভাবতেই কান্না চলে আসলো নাতাশার। বুকের ভিতর গহীন শূন্যতা , দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর এসব ভেবে ভেবে। তবে কিছুই বুঝতে পারল না ঘটনা কি! পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে রুদ্রের জন্য হবু প্রেমিকাকে না নিয়ে নাতাশা একাই গেলো রুদ্রের সাথে দেখা করতে।
কাউকে নাতাশা আনেনি সাথে, নাতাশাকে একা দেখে বরং খুশি হয়েছিলো রুদ্র। বলেছিল ” ভালো করেছিস আনিস নি। এভাবে কি প্রেম হয়?”
নাতাশা তাকে বলেছিল ” তোর সাথে আমি কথা বলিয়ে দিবো তবে আমি লন্ডনে যাবার পর। আমি হলে থাকব, আর হল থেকে অন্য একটা মেয়ে এসে এখানে দাড়িয়ে তোর সাথে কথা বলবে এটা আমি মানতে পারব না।”
একথা শুনে রুদ্র চমকে তাকিয়েছিল নাতাশার দিকে, কিছু বলেনি। বলার দরকারও হয় নি। শুধু বলেছিল এটা তারও মনের কথা, শুধু বলতে পারেনি নাতাশা যেহেতু ইউকে যেতে চায়, হয়ত রুদ্রকে নিয়ে নাতাশার ভাবনা অন্যরকম। তাই সংকোচে কিছু বলেনি।
এরপর দুজনে আধাঘন্টা স্ট্যাচুর মতো চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো। দুজনের সমস্ত কথা হয়ত ফুরিয়ে গিয়েছিল, অথবা না বলা কথার মধ্যেই হয়ত সমস্ত কথা বলা হচ্ছিল। রাত সাড়ে নয়টায় হলের গেইট বন্ধ হবার সময় হলে নাতাশা হলে চায় ।
না রুদ্র বা নাতাশা কেউ কাউকে প্রোপোজ করেনি। রাত এগারটার দিকে রুদ্র নাতাশাকে কল দিয়ে বলেছিল ”তোকে এখন থেকে তো তুমি করে বলা অভ্যাস করতে হবে। চল তোকে ফর্মালি প্রোপোজ করি।”
* আমার এক ফেইসবুক বন্ধুর সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। নামটা পরিবর্তন করে দিলাম।
মিষ্টি প্রেমের গল্প- ১
২৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ভাইজান এইটা কেমনে কি হলো, এই একি গল্প যদিও বড় আকারে আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো আজ অনেক দিন, কিন্তু এই গল্প আপনার মনে আসলো কিভাবে, আমি আশ্চর্য্য হলাম। ;(
জিসান শা ইকরাম
মনের মিল আছে তো আপনার আর আমার 🙂
লিখে ফেলুন গল্প, একই বিষয় হলেও আপনার গল্পে বিস্তারিত থাকে।
ইঞ্জা
ভাইজান, এমন বিষয় নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম, কিন্তু লেখায় তো হাতে উঠেনা। ;(
জিসান শা ইকরাম
শুরু করে দিন, লেখা চলে আসবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মন একবার ভালোবাসে যারে
মুখ ফুটে কোনো কথা বলার আগে,,
মন যে মনের ভাষা বুঝতে পারে,,,,,,,,,।
অনেক সময় বন্ধুত্বটা আগে হয়, ভালোবাসাটা পরে। আবার কারো ক্ষেত্রে প্রেমটা আগে আসে, বন্ধুত্বটা পরে। এখানে বন্ধুত্বটা যদিও আগে এসেছে,, কিন্তু মনের অজান্তেই ভালোবাসাটাও শুরু হয়ে গিয়েছিলো, যেটা পরে উভয়েই বুঝতে পেরেছে।সব সময় প্রপোজ এর দরকার হয় না। ভালো লাগলো মিষ্টি প্রেমের গল্প।
জিসান শা ইকরাম
এখানে বন্ধুত্ব আগে এসেছে এবং সম্ভাব্য তৃতীয় একজনের আগমনের আশংকায় একটি শূন্যতা শৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, ফলে সম্পর্কটা নতুন এক অবয়ব নিয়েছিল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
মায়াবতী
স্যার , এতো মিষ্টি মিষ্টি প্রেম ভালবাসা কই থেকে আসে ! আহা কি মধুর প্রেমের গল্প ! এতো ছোট কেনো স্যার ? ওহ হ্যা , মিষ্টি তো একটু একটু ই মজা । 😀
আবার কবে মিষ্টি মিষ্টি ভালবাসার। গল্প পাবো স্যার ?
জিসান শা ইকরাম
প্রেম ভালবাসা সব সময়ই মিস্টি ম্যাডাম,
অনেক গল্প জমা আছে মিস্টি প্রেমের, মাঝে মাঝে আসবে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এরই নাম প্রেম
এরই নাম ভালবাসা…. -{@
ফেইসবুক বন্ধুটির একটু আপডেট কি জানা যাবে?
সুন্দর সকালে সুন্দর লেখায় মন ভরে গেল।
জিসান শা ইকরাম
আপডেট হচ্ছে, এই প্রেম পুর্নতা পায়নি।
মাহমুদ আল মেহেদী
প্রেমের গল্পটা পড়ে মনে যে আবার প্রেম উদয় হল!!!!
জিসান শা ইকরাম
সুযোগ থাকলে প্রেমে মজুন তাহলে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
প্রেম প্রেমই ভাল থাকুক প্রেম।
জিসান শা ইকরাম
প্রেম বেচে থাকুক সবার মনে।
শুন্য শুন্যালয়
সব ফ্রেন্ডশিপ প্রেমে চেঞ্জ হয়ে গেলে তো মুশকিল
আমার মনে হচ্ছে এরা আবার পরে বন্ধুত্বে ফিরে আসবে। 🙂
গল্প ভালো হয়েছে।
আচ্ছা এবার তাহলে আমার এক দুই তিন এইভাবে প্রেমের গল্পগুলো আপনারে ইনবক্স করতে থাকি 🙂
জিসান শা ইকরাম
হুম সব বন্ধুত্ব প্রেমে পরিনত হলে আসলেই মুশকিল, বন্ধুত্বই তাহলে থাকবে না।
কিভাবে বুঝলেন যে তারা আবার বন্ধুত্বে ফিরে গিয়েছিল!!
এক দুই তিন! বাপ্রে কত প্রেমের ঘটনা আপনার?! দিন দিন ইনবক্স করে 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা গো না-বোঝার কি আছে!
শুন্য আপুর চার নম্বর প্রেম কাহিনী মনে হয়। 😀
জিসান শা ইকরাম
আপনার প্রেমের গল্প গুলো পাঠাবেন্না ইনবক্সে?
জলদি পাঠান তো,
ছাইরাছ হেলাল
বেশ মিষ্ট-মিষ্ট প্রেমের গল্প!
তবে একটু সেকেলে, ডিজিটালি অচল!
এখন তো সময় ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ এর!
কুটুস করে প্রেম তো হয়ে গেল, তারপর কি!!
জিসান শা ইকরাম
কুটুস করে কিছুমাস পরে তারা আবার ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল 🙂
রিতু জাহান
বন্ধুত্ব ও প্রেম! আমি কি করব ভাবছি। আমি তো একটাও প্রেম করতে পারলাম না ;?
দারুন একটা গল্প। তবে এসব প্রেমে ব্যাথা বেশি থাকে।
জিসান শা ইকরাম
একটাও প্রেম করতে পারোনি?
তাহলে তো তোমার গীবনটাই বৃথা।
হ্যা, এমন প্রেমে ব্যাথা বেশী থাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
সিরিয়াস হয়ে একটা কথা বলি। বন্ধু প্রেমিক হতে পারে। কিন্তু একবার প্রেমিক হয়ে যাবার পর আবার বন্ধুত্বে ফিরে আসা যায়না। আর যদি বলাও হয় যায়, তাহলে প্রেম সম্পর্কীয় যতো দর্শন আছে, সেসবের সব মিথ্যে হবে।
আর আমার বন্ধুভাগ্য ঈর্ষণীয়। বন্ধুর সাথে প্রেমের কথা মাথায়ও আসেনি।
আমার প্রেম কাহিনীর চিঠি ইনবক্স করমু নানা? আমার তো হিসাব ছাড়া। আগে দেখি নাম-ধাম মনে আছে কিনা! আমি চাইনা কেউ বাদ পড়ুক। \|/
জিসান শা ইকরাম
ঠিক বলেছো নাতনী,
একবার প্রেমের সম্পর্ক হয়ে গেলে আর বন্ধুত্বে ফেরা যায় না।