এই হাসপাতালেই আমার জীবন… কথা শেষ করতে দেয়নি মিনতি ডাবুর মুখ চেপে ধরেছিল একহাতে … চোখে বন্যা নামে ডাবুর … ডাবু মিনুর হাত ধরে নিজের বুকের উপর টেনে নেয়, বলে আমি বাঁচতে চাই মিনু আমায় ছেড়ে যেওনা।
মিনতি বলেছিল, ডাবু … ডাবু মনে সাহস আনো ভয় কি আমি তো আছি কিছু ভেবনা সব আমার উপর ছেড়ে দাও তোমাকে আমি কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবনা। তুমি আবার উঠে দাঁড়াবে … আবার আমরা দুজনে সিনেমা দেখতে যাব।
ওর দুটো কিডনীই ড্যামেজড্ ডাক্তার বলেছেন অন্তত একটা রিপ্লেস করতেই হবে না হলে বাঁচানো যাবে না। সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। কোথায় পাব অতো টাকা প্রায় লাখ খানেক টাকার ব্যাপার।
গরীব ঘরের মেয়ে মিনু। একটা ছোট বেসরকারি ফার্মের টাইপিস্ট।
… কি করবো ভাবতে পারছি না। ওকে বাঁচাতেই হবে ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে চাইনা … ওকে আমি ভালবাসি … আমার কিডনী … ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলতে হবে আজই … ভিজিটিং সময় শেষ হোল। নার্স একটা শ্লিপ ধরিয়ে দিয়েছে ওষুধ আনতে হবে। মিনু ছাড়া আর কেউ ওকে দেখতে আসেনি। নিচের তলায় ডিস্পেন্সারী আছে।
বর্ষা কাল বাইরে ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। টেস্ট রিপোর্ট এ মিনুর কিডনী পাস হয়েছে। ট্রান্সপ্লান্ট করা যাবে। রাতের শহর নিস্তব্দ।
হাসপাতালের দেওয়াল ঘড়ীতে ঢং ঢং করে রাত ১২টা বাজল। যাঃ আলো টা নিবে গেল, লোডশেডিং। অনর্গল বৃষ্টি পরে চলেছে। অগত্যা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা। কড়ড়ড় কড়াৎ ভীষণ শব্দ করে বাইরে বাজ পড়ল। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে …
চোখের উপর ভেসে উঠছে ইন্টেন্সিভ এর কাঁচের ওপারের দৃশ্য। ঐ তো ডাবু যেন একটু নড়াচড়া করছে। দুজন নার্স ঘোরাফেরা করছে … মনেহয় কি যেন খুঁজছে, ডাক্তার এলেন।
হাসপাতালের আধোঅন্ধকার করিডোর। মৃদু সরসর আওয়াজ একটা কালো ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে … ট্রলি … স্ট্রেচার থেকে অপারেশন টেবল্ … চোখের উপর তীব্র আলো। চোখ আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে গেল … ।
দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল, অপারেশনের পর থেকে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছি। বিছানা থেকে উঠতে পারিনা।
ডাবুর মা … কেমন আছো মিনু ? জানো এন জিও থেকে কিডনী ফ্রি দিয়েছিল। ডাবু ভালো হয়ে বাড়ী এসেছে। চাকরীর চেষ্টায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলে মিনু অনেক খরচ করেছিল আমার জন্য, প্রথম ওর ঋন শোধ করতে হবে। একদম সময় পায় না কোথাও যাওয়ার।
হে প্রভু আমার ; আমাকে নাও … আমার ভালবাসা কে বাঁচিয়ে রেখো। -{@
৫টি মন্তব্য
খসড়া
ভালবাসার আত্মত্যাগ কে মূল্য দেবে? কজনই বা এর মূল্য জানে।
আদিব আদ্নান
ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখা খুব কঠিন ।
আমীন পরবাসী
ভাল হয়েছে অনেক। শুভ কামনা।
নীহারিকা
দারুন!
শুন্য শুন্যালয়
গল্পের আবেগ ছুয়ে গেলো. আত্মত্যাগের কোন মূল্য কিন্তু আদৌ কোনদিন শোধ করা সম্ভব নয়.