কিরে মন খারাপ কেন?
না মামা এমনিই! বলেই ভাগ্নে ঠোঁট উল্টালো!
আমি বললাম, কারণ তো একটা কিছু আছেই, নাহলে তো তোর মন খারাপ থাকে না কখনো! বল কি হইছে?
আমার বলার তেমন কিছু নেই মামা, তুমি কি খবরগুলো পড়েছো?
কোন গুলো?
এই আল জাজিরা বলেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নাকি তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছে! আবার বিএনপি’র প্রধানের উপদেষ্টা এডভোকেট মাহবুব আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছে, ১৯৭১ সালে নাকি বাংলাদেশে কারো কোন ক্ষতি হয়নি, যুদ্ধাপরাধ হয়নি; মানে আমাদের দেশে কিছুই ঘটেনি! তারেক জিয়া তো বঙ্গবন্ধু ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্রমাগত ভুল তথ্য দিয়েই যাচ্ছে! ২০১৪ সালের পৃথিবীতে বাস করেও যদি এই সব বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করা হয়; তাহলে আগামী দশ বছর পরে হয়ত কেউ বলবে, ১৯৭১ সালে বড়জোর হাজার তিনেক মানুষ মারা গেছিলো! অন্য কেউ এসে বলবে, মুক্তিযুদ্ধ আবার কি? সেটা আবার কবে হয়েছিল? এসবই মিথ্যা প্রচারণা! এবং তা এক শ্রেণীর মানুষ বিশ্বাসও করবে, যা এখনই করছে! – আমি আসলে এসব দেখেশুনে চিন্তিত, আর মন খারাপের এটাই কারণ!
আমি বললাম, শোন! সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই প্রচারণা শুরু হয়েছে। তুই কি জানিস যে, রেডিও-টিভিতে শেখ মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলা নিষেধ ছিল এই ১৯৯০ সাল পর্যন্ত! ‘জাতির জনক’ বলা তো ছিল কল্পনার বাইরে! সেই সময়গুলিতে সরকারি তথা অধিকাংশ বেসরকারি পত্র-পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড-ধর্ষণের বর্ণনায় ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী’ না বলে বলা হত ‘হানাদার বাহিনী’। আর মাঠে ময়দানে কথা-বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধকে বলা হত ‘গণ্ডগোল’, ১৯৭১ সালকে বলা হত ‘গণ্ডগোলের বছর’! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমি আমার হাইস্কুল জীবনে দুই-তিন জন শিক্ষক পেয়েছিলাম যারা ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘শান্তি কমিটি’র সক্রিয় সদস্য ও রাজাকার! তারা ক্লাসেই কি দম্ভ নিয়ে যে বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধকে তাচ্ছিল্য করত তা এখন মনে পড়লে গা গরম হয়ে ওঠে! এখানে আর একটা মজার তথ্য তোকে জানিয়ে রাখি, এই স্যারদের মধ্যে এক স্যারের ছেলে ‘মুক্তিযোদ্ধা’র সার্টিফিকেট নিয়ে সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপর্যায়ে চাকুরীতে নিয়োজিত আছে বর্তমানে; যার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আসল বয়স ছিল মাত্র ৫-৬ বছর! এখন তারা বাইরে পুড়াই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে! এটা আমি কিভাবে জানলাম তা তোকে পরে বলবো!
আর শোন! এখন তো পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। তোদের মত নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অন্তত মিথ্যা ধরতে পারছিস! আমরা ছোটবেলায় তো তাও পাড়তাম না; লোকে যা বলত অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাইই বিশ্বাস করতে হত। ভাগ্যিস আমি পরিবার থেকে কিছু আর বইপত্র পড়ে জেনেছি অনেক সত্য।
মামা, আমি তোমার সব কথাই মেনে নিলাম কিন্তু তাই বলে এই বর্তমান সময়েও বিনা বাঁধায় এইরকম মিথ্যা প্রচারণা চালাবে?
চালাতে দে, বাংলার বুকে আজ যুদ্ধাপরাধীদের এই যে বিচার চলছে, কার্যকর হচ্ছে রায়, অপরাধীরা পাচ্ছে শাস্তি! একদিন দেখবি সব মিথ্যা প্রচারণাকে ‘মিথ্যা’ প্রমাণ করে দিয়ে এই রায়গুলোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’র ‘সত্য’ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে দিচ্ছে! মিথ্যার সরল অংক আর মিলবে না সেদিন। কারণ অংকের ফল লেখা হয়ে যাচ্ছে আদালতে।
ধৈর্য ধর !!!
০৭/১১/২০১৪ দুপুর ১১.৫৫
১৪টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
ভালো দিনের অপেক্ষায় থাকলাম ।
অপরাধী দের ইতিহাস কখনও ক্ষমা করেনি ভবিষ্যতে ও করবে না ।
ভালো লিখেছেন ।
সুকান্ত
ধন্যবাদ !!!
লীলাবতী
ভালো লিখেছেন ভাইয়া।
আপনি মনে হয় জানেন না যে এখানে ২৪ ঘন্টায় একজন ব্লগার একটি পোষ্ট দিতে পারবেন 🙂
সুকান্ত
না! দুঃখিত! আমি ভেবেছিলাম ২-৩ ঘন্টা! ২ নম্বরটা পোস্ট দিয়ে দেখি আমার আগে কেউ কোন পোষ্ট দেয়নি !!!
খেয়ালী মেয়ে
ভাল লিখেছেন–
আর আপনার স্যারের ছেলের যে কথাটি বললেন সেটা যদি সত্যি ঘটনা হয়, তাহলে আমি মনে করি তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত..
সুকান্ত
কে নিবে?
খসড়া
ইতিহাস কাউকেই ক্ষনা করে না, আর ইতিহাস সব সময়ই পরম্পরা।
জিসান শা ইকরাম
একদিন সত্যি প্রকাশ পাবেই।
শকুনেরা মারা পড়বেই।
ভালো লিখেছেন।
নুসরাত মৌরিন
মিথ্যার বেসাতি এদেশের জন্মের ইতিহাসকে পাল্টাতে পারেনি, কখনো পারবে না।
ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর চার লক্ষ বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগে পাওয়া এই বাংলায় সব আঁধার পেরিয়ে আলো আসবেই।
রক্তের নদী পেরিয়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস অবিকৃত থাকবেই।
মোঃ মজিবর রহমান
সুকান্তদা, এগুলো অহরহ ঘটনা।
আর কাকে দোষ দেবেন।
বলেন আওয়ামিলীগের ভুলের মাসুল দিতে হয়েছে অনেককে।
এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিমত।
যুদ্বের পর এই রাজাকার, বদর ওদের হত্যা করত তাহলে পরিস্থিতি এরকম হতনা।
শকুনদের সুযোগ দিলে পরে সোমারে।
তারা কাউকে সুযোগ দেয়না।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ইতিহাস বিকৃতির রাজনিতীর কারনে চেষ্টা কম বেশ সবাই করার করেন কি সরকারী কি বিরোধী দল।তবে ইতিহাসে যার যেই অবদান তাকে তার মূল্যায়ণ করতে হবে নতুবা ইতিহাস বিকৃতি হতেই থাকবে।ভারতের দিকে তাকালে দেখি মহা্ত্বা গাদ্ধীকে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই কিংবা গাদ্ধী পরিবারও বিতর্ক করার সুযোগ দেয়নি কিন্তু আমাদের তা হয় না কেনো?
আমরা জানি ঘরের কর্তা যে দিকে যাবে পরবর্তীরাও সে দিকেই যাবে এটাই পৃথিবীর নিয়ম।আর একটি বিষয় হলো মিডিয়া আমাদের অনেক ক্ষতি করে মিডিয়াতো জানে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যে তার প্রচারে না গেলেই পারেন।
রিমি রুম্মান
চাইলেই কেউ ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে না। ইতিহাস কথা কয় সময়ে…
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
ইতিহাস পাল্টানো এত সহজ নয়।
সুকান্ত
সবাইকে ধন্যবাদ !