প্রাইভেট শেষ করে সন্ধ্যায় হেঁটে হেঁটে বাসায় আসছিলাম!!
ঔষধের দোকানে একটা কাজে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন একটা ছেলে বাজে ভাবে আমার দিকে তাকায় ছিল!!
যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণই বারবার বুক থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছিল!!
কয়েকবার চোখাচোখি হওয়ার পরও কোনো ভাবান্তর নাই ঐ ছেলের!!
তো আমি বললাম, “ভাই আমি তো দেখতে এত সুন্দর না!! এইভাবে অভদ্রদের মত তাকায় থাকার তো মানে নাই!! ”
ঐ ছেলে বলে, “অসুন্দর তো!! তাই দেখতেছি!!”
দোকানদারও ব্যাপারটা দেখতেছিল!!
আমি দোকান থেকে আসার সময় বলছি, “রাস্তা ঘাটে দৃষ্টি টা একটু সংযত রাখার চেষ্টা করেন!! সবাই তো একরকম না!! অনেকেই ছেড়ে দিবে না!! ”
বেয়াদপ টা মুখটাকে বাজে রকমের করে আমাকে বলে, “পক পক পক ”
মেজাজ টা গেছে আরো খারাপ হয়ে!!
বের হওয়ার সময় আমি বলছি, “পক পক একদম বের করে দিব!!”
বলে চলে আসতেছিলাম!!
ও আমাকে বলে, “দেখি আসেন না সাহস থাকলে!! ”
আমি ফিরে গিয়ে হাত ধরে একটা টান দিয়ে কলার টা ধরে বলছি “হুম,আসছি!! কি করবি তুই?? দেখি কর যা পারোছ কর!! ”
ওই ছেলে প্রথমে পুরা থ হয়ে গেছিল!!
পরে চিৎকার করে শাসানো শুরু করছে!!
আশে পাশে মানুষ জমে গেছে!!
সবাই এসে আমাকে ব্লেইম করা শুরু করছে!!
একজন বলতেছিল, আমি ভালো মেয়ে হলে নাকি ঐদিক থেকে মাথা নামায় চলে আসতাম!!
আমি ঐ লোককে বললাম আজকে যদি আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকতো তাহলে আপনার বুঝি ব্যাপারটা খারাপ লাগতো না যে ছেলেটা এইভাবে তাকায় ছিল!!
উনি আমাকে বললো, “তোমার সমান আমার একটা মেয়ে আছে!! ও এত টা অভদ্র না যে রাস্তায় মানুষের সাথে ঝগড়া করবে!! ”
আমি বললাম,”আমি যে কাজটা করলাম সেটা তো আপনার মেয়ের জন্যই করলাম!! আমি যদি আজকে আপনার চোখে সত্যিই খারাপ হই তাহলে সেটা আপনার মেয়ের জন্য! দেখা যাবে এই ছেলেটাই একদিন আপনার মেয়ের ওড়না ধরে টানলো!! তখন?? এর চেয়ে ভালো না আজকেই শায়েস্তা হয়ে যাক?? ”
তখন সবাই বলা শুরু করলো “মেয়ে মানুষের এত জিদ থাকা ভালো না!! ”
আর ঐ ছেলে চিৎকার করে বলতেছিল, “তোমার গায়ে কি লিখা আছে যে তোমার দিকে তাকানো যাবে না??”
এই লাইনটা শুনার পরও সবাই ছেলেটার হয়েই সাফাই গাচ্ছিল!!
আমি অবাক হয়ে গেছিলাম!!
আমার পুরা শরীর জিদে কাঁপছিল!!
তারপর দোকানদার একটা বলতেছিল,”উনার পক্ষ থেকে আমি স্যরি বললাম!!
আপনি যান!! আর আপা, ব্যাপারটা কিন্তু আপনিই ঘাটালেন!! ”
আর ঐ ছেলেও বারবার সবাইকে শুনিয়ে বলতে লাগলো, “দোকানের সবাই দেখছে,আমার পাশের আঙ্কেল টা দেখছে আমি কিছু করি নাই!! ”
সবার কথা শুনে মেজাজও খারাপ হচ্ছিল,মনটাও হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেলো!!
জিদে ঐ ছেলেকে প্রায় দিচ্ছিলাম কষিয়ে এক!!
কিন্তু পাশে আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল, ও আমার হাত ধরে ঐ দিক থেকে নিয়ে আসছে!!
আর আমি চাইলেও কিছু করতে পারতাম না সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছিলাম!!
কারণ ওখানে এত মানুষ ছিল যারা সবাই…. সবাই ঐ ছেলের পক্ষে ছিল!!
পুরা লেখাটা আমার ফেসবুক বন্ধু ” তানহা সামাদ রিধিতা’র। আমাকে ইনবক্স করা। https://www.facebook.com/tanha.samad.79
এটা হচ্ছে ধর্ষণের প্রথম ধাপ। এভাবেই এরা ছাড় পেয়ে পেয়ে সাহস পেয়ে ধর্ষণের মত কাজে উতসাহী হয়।
এভাবেই ছাড় দেয়ার কারণে এরা প্রকাশ্যে জামা খুলে নেয়ে।
রিধি কাওকে পায়নি সেদিন।
রিধি কার জন্য করলো এই প্রতিবাদ!
রিধি কি তার এভাবে ফুষে ওঠা কন্টিনিউ করে যাবে?
কাকে এভাবে আশকারা দিয়ে সাহস জোগিয়ে যাচ্ছেন !
যে একদিন নির্জন রাস্তায় আপনার বোন, পত্নী, ভালোবাসার মানুষ্টাকে খুব সহজেই বিনা বাধায় ভোগ করে নিবে!
আমার আরা আপনার কি এইসব মুখুশধারী ,ভোল পরা জানোয়ারদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসা উচিত?
আমাদের কি এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলা উচিত?
এই ব্লগটা যারা পড়েছেন আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যাই, রিধির মত এমন সাহসী কোনো বোনকে যখন দেখবেন প্রতিবাদ করেছে তখন আপনি আওয়াজ তুলবেন???
রাখবেন রিধির হাতে হাত???
আওয়াজ তুলবেন রিধির সাথে ” এই জানোয়ার ! চামড়া তুলে নিবো !”
আই লাভ ইউ আপু <3
[উল্লেখ্য, ঘটণাটি কমিল্লার রানীরবাজার নামক এলাকায় ঘটে।]
১৮টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
লেখাটা দুইবার হয়ে গেছে। একটু দেখবেন।
ইমন
মোবাইল থেকে ফেসবুকের ইনবক্সের পেষ্ট করে ছিলাম। দুঃখিত অনাকাংখিত ভুলের জন্য। 🙂
অনিকেত নন্দিনী
এইগুলি নিত্যকার ঘটনা। ভুক্তভোগী মেয়েরা প্রতিবাদ করলেও দোষ, কিছু না বলে চুপ করে চলে গেলেও দোষ। মেয়েরা যাবে কোথায়?
ইমন
মেয়েটার সাথে আমারকথা হয়েছে। ওখানে জনা-পাচেক মাঝ বয়েসী মহিলাও ছিলো যারা উলটা তাকে শাসিয়ে গেছে। মেয়েদের যাওয়ার জায়গা তাহলে আর কোথায় হবে! যখন স্বজাতি তার পাশে না দাঁড়ায় !
তবে সান্তনা এই যে তারা প্রতিবাদ করতেছে।
আর আমারা যারা লিখি তাদের স্বার্থকতা হচ্ছে এই, মেয়েটা আমার এই ব্লগে এবং ফেসবুকে লেখা ” মাই হেরোইন নং-২ ” এর ঘটণা থেকে অনুপ্রানীত হয়ে ছিলো।
এভাবে যদি আমারা রেগুলার লিখে যাই তাহলে এই নতুন প্রজন্ম যেটা বেড়ে উঠতেছে , তারা মাঝ বয়েসে গিয়ে রিধিদের পাশে দাঁড়াবে।
এদের তৈরী করার দায়িত্ব আমার, তোমার সকলের 🙂
জিসান শা ইকরাম
আমাদের মানসিকতা এটিকে মেয়েদের দোষ ভাবে।
সবাই সচেতন হয়ে ঐ বদমায়েশের চোখে দুটো ঘুষি দিয়ে চোখে দাগ ফেলে দিলে দ্বিতীয় দিন আর সে এসব করবে না।
তানহা সামাদ রিধিতার সাথে আছি।
শ্রদ্ধা তার প্রতি -{@
ইমন
আপনার শুভেচ্ছা, সাহস, শ্রদ্ধা তানহাকে পৌছে দিয়েছি । ও আপনাকে দোয়া করতে বলেছে। 😀
জিসান শা ইকরাম
তানহার প্রফাইল দেখলাম।তাকে এমনই থাকতে বলবেন
কেউ না আসুক, সে একা চলুক, দু একজন না থাকলে প্রতিবাদ শব্দটাই তো বিলীন হয়ে যাবে।
ইমন
তাই 😀 ওকে বলবো। \|/ \|/ \|/ \|/
শুন্য শুন্যালয়
কি যে লিখবো বুঝতে পারছিনা, অসহায় বোধ করছি নারীর অবস্থানে। কিভাবে চোখ দিয়েও ধর্ষণ করা যায় একে একে দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছে। এদেরকে মানুষ সাপোর্ট করছে এটা দেখে অবাক হচ্ছিনারে ভাই। যতদিন পর্যন্ত নিজের ঘরের কারো ভুগতে না হবে ততদিন পর্যন্ত অন্যের বেলায় অভদ্র গালাগালি শুনতে হবে। রিধি তোমাকে স্যালুট জানাচ্ছি আপু। সব মেয়েকেই এখন রিধি হয়ে উঠতে হবে।
ইমন
রিঢি আপনার এপ্রিছিয়েশনে খুব খুশি হয়েছে। দোয়া চেয়েছে আপনাদের। 🙂
মেহেরী তাজ
রিধির মত সবায় কে সচেতন হতে হবে। তা না হলে মেয়েদের মুক্তি নেই।
রিধিকে স্যালুট ও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইমন
রিধি আপনাকে ধন্যবাদ জানিইয়েছে আমার মাধ্যমে 🙂
ছাইরাছ হেলাল
এ লেখায় আসলে কী বলে মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না।
রিধি আসলে আমাদের আইকন। অসংখ্য অব্যবস্থার মধ্যেও আলোকবর্তিকা।
শ্রদ্ধা তাঁকে।
ইমন
হেলাল ভাইয়া, রিধি আপনাদের সবার কাছে দোয়া চেয়েছে। ওয় জন্য দোয়া করবেন। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
রিধির মতো মেয়েদের এ সমাজের জন্য প্রয়োজন। নারী আরোও জেগে উঠুক। (y)
রিধির জন্যে ভালোবাসা -{@ (3
ইমন
ঠিক বলেছেন। আপনার ভালোবাসা রিধির কাছে পৌছে দিলাম 🙂
ব্লগার সজীব
শ্রদ্ধা জানাই এই সাহসী আপুকে।
ইমন
(y) -{@ 😀