রাত অনুমানিক ২টা হবে।ঘুমুচ্ছিলাম স্বপ্নের ঘোড়ে।বিশাল ডাইনিং রুমের এক পাশে একটি ঘূর্ণায়মান ডাইনিং টেবিল।অনেকগুলো কারুকার্য সন্ভলিত আধুনিক চেয়ার।চেয়ারগুলোতে কেউ বসে নেই,বসে আছি শুধু আমি একা।আমার চারপাশে দাড়িয়ে ছিল কাজের বুয়া চারজন, খানসামা দুইজন,গাড়ীর ড্রাইভার দুইজন,দাড়োয়ান চারজন,এবং একজন আমার ব্যাক্তিগত সেবক।টেবিলে বসে বসে আজকের বাংলা পত্রিকাটা হাতে নিয়ে চোখ বুলাচ্ছি।কোথাও কোন শান্তির কিংবা সূখের কোন কথা নেই,সর্বত্র কেবল ধর্ষন,খুন,রাহাজানি,আর নোংরা রাজনিতীর আশারবুলি।মনে রাগ এসে যায় -জিদ করে এলোমেলো পত্রিকাটি পাশের চেয়ারে রেখে কাজের লোকদের ফরমায়েশ দিলাম আমায় খানা দেবার জন্য ।সকালে সাধারনঃ আমি ফল বেশী খেতে পছন্দ করি।তো সেই মতে ওরা আমাকে প্রথমে রাজশাহীর ফজলী আম কেটে দিল,,মুখে দিতেই অন্যান্য দিনের চেয়ে এর স্বাদ একটু ভিন্ন আমার মুখ যেন তিতা আর পিপারমিনের মত ছেয়ে গেল।রাগ দেখালাম ক্রয়কারীর উপর।সে তার চাকরী বাচাতে বলতে থাকে-স্যার এগুলো ঐ প্লাজা থেকে এনেছি।আমার চোখ আবারও রাখা এলোমেলো পেপারের উপর।পিলে চমকে গেলো…..একি সর্বনাশ আমে ভেজাল….ফ-র-মা-লিন!কথাটা মুখ দিয়ে থেথলিয়ে বের হল কারন আমার ব্যাবসা যে ফরমলিন সাপ্লাই।এর ক্ষতির দিকটি আমার জানা।এরপর একে একে কাঠাল,লিচু,আপেল,মালটা,পেপেঁ,আঙ্গুর,ইত্যাদি প্রায় ১০/১৫ আইটেম আমার টেবিলে খানসামায় দিল।আমি শুধু ফলের চাকচিক্কের উপর চোখ বুলালাম খেতে আর ইচ্ছে হলোনা।এর পর এক এক করে বুয়াকে দিলাম আমের বাটিটা,খানশামাকে দিলাম লিচু,বাকীগুলো সবাইকে ভাগ করে নিতে বল্লাম।ওরা সবাই অবাক এতগুলো ফল আমাদের দিয়ে দিচ্ছে ,আজ স্যারের কি হইছে একে অপরের সাথে বলাবলি করছে।এত ফল এক একজনের ভাগে কি ভাবে নিবে তাতেও তারা চিন্তায় পড়ে গেলো,কেউ কেউ ফোন করে ফলগুলো নিতে অন্যকে আসতে বলছে।বিরাট এলাহী কান্ড ফলগুলো নিয়ে তাদের মাঝে।পেটটা হঠাৎ মোচর দিল।কি ব্যাপার পেটে আবার কি হলো,,ডাক্তারকে খবর দিলাম। ডাঃ এলো।আমাকে চেকআপ করে একটি ঔষদ লিখে দিল আর বল্ল -আপনি মনে হয় কোন ভেজাল কিছু খেয়েছেন।বলে কি ডাক্তার ,,,খেলাম কোথায়?মাত্রতো শুরু করেছিলাম…বলেই আর বল্লাম না ।চোখ গিয়ে পড়ল সেই পত্রিকার উপর।ওমা!বলে কি ভেজাল ঔষদ বিরোধী অভিযান!তাহলে ঔষদেও ভেজাল,,,,এখানেও কি ফরমানিল!!।ঔষদ আনতে দিয়েছিলাম চাকরটাকে।তার কাছ থেকে ঔষদের প্রেসক্রিপসনটা নিয়ে ছিড়ে ফেললাম।ডাঃ অবাক !কি ব্যাপার আপনি প্রেসক্রিপসটা ছিড়লেন কেনো?ঔষদ খাবেন না?না,ভেজালের খাবারের চেয়ে না খেয়ে মরা অনেক ভাল।অন্ততঃ শরীরে জ্বালা থাকবেনা..টাকা দিয়ে কি খেলাম?আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম তাহলে আমরা কি খেয়ে পুষ্টিকর জীবন ধারন করব।আমি আরো চিন্তিত হলাম -ঐ ফলগুলো ওদের দেয়া ঠিক হয়নি সঙ্গে সঙ্গে ডাক দিলাম তোমরা যে যা ফল নিয়েছ সব ফল ঐ ডাষ্টবিনে ফেলে আসো।ওরাতো অবাক বলে কি এতগুলো দামী দামী ফল ডাষ্টবিনে ফেলে দিবে!ওদের সাধ্যমত বুঝালাম ফরমালিনের অপকারিতা।ওরা ঠিকই বুঝেছে কিন্তু যেই প্রশ্ন করেছিল তার কোন উত্তর দিতে পারিনি ।বলেছিল ভালো কথা আপনার টাকা আছে একটা ফেলে আর একটা কিনে খাবেন কিন্তু আমরা কি করব,আমাদের ভাগ্যে কি ফরমালিন ছাড়া ঝুটবেনা?আর যারা ফরমালিনের ব্যাবসা করে যারা ফলে ,মাছে,ফরমালিন মেশায় তাদের কি বিচার হবেনা।এর কি কোন প্রতিকার নেই?এত ভেজালের মাঝে আমরা কি ভাবে বাচব বলতে পারেন?নাহঃ কোন উত্তর নেই।কারন আমি(নেতারা) নিজেইতো ভেজাল কথায় বলি এক করি আর এক।
এর জন্য রাষ্ট্রকৈই এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের নিয়োগ প্রাপ্ত সংস্হাগুলি যদি তাদের দায়ীত্ব ঠিক মত পালক করে তবে সন্ভব একে নির্মূল করা।সিঙ্গাপুরে দেখেছি ভেজাল কোন খাদ্যদ্রব্যে নেই বললেই চলে।সিঙ্গাপুরে প্রতিদন মুরগীর ডিম বিক্রয় হয় সবচেয়ে বেশী ।সেই ডিমগুলির উপর পিস টু পিস সিল মারা থাকে।সিল ছাড়া ডিম কেউ ক্রয় কিংবা বিক্রয় করবেনা।শুধু ডিম নয় সেখানকার বাজারজাত করা প্রতিটি পন্যে সিল থাকা বাধ্যতামুলক।এগুলো তদারকির লোক প্রতিদিনই তদারক করেন।সবচেয়ে আর্শ্চযের বিষয় হলো সেখানে যে নেশা জাতীয় দ্রব্য যেমন সিগারেট ,হুইচকি,বিয়ার,টাইগার সরকার এ সবের বৈধতা দিয়েছে কিন্তু এ্যালকোহলের নিয়ন্ত্রয়ন সরকারের হাতে।একটি লোক সারা রাত্র ড্রিংস করলেও সকালে তার ঘুম থেকে উঠতে কোন অসুবিদাই তার হয় না।মাঝে মাঝে ভেজাল অভিযানে বিশাল অংকের জরিপানা এবং জেল দেয়া হয়।এ ক্ষেত্রে জনসাধারনের প্রতিবাদের স্হলে সমর্থন থাকে অথচ আমাদের দেশে এর উল্টো ঘটে।ভেজাল বিরোধী কাজে রাগভ বোয়ালদের আতেঁ ঘা লাগলে ফুসলে উঠে ভেজাল বিরোধী কাজে নিয়োজিত সেই সব সৎ অফিসারদেরকে কর্মক্ষেত্র বদলিয়ে দেন।তেমনি একজন সন্ভবত আমার ভূল না হলে ব্যারিষ্টার রোকনদ্দৌল্লাহ ।তার দায়ীত্বে ভেজাল বিরোধী অভিযান থাকার সময় সে দেশকে দেশের অন্যসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়ীত্বের কর্তব্য কি।সারা দেশে সে আলোড়ন তুলে ভেজালকারীদের হৃদয়ে আতংক এনেছিলেন।সেও বেশী দিন আর সেই দায়ীত্বে থাকতে পারেনি।অদৃশ্য হাতের ছোয়ায় মনক্ষন চিত্ত্বে সেই দায়ীত্ব থেকে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছিলে।এটাই কি রাষ্ট্রের কাজ?গত কয়দিন আগে ঔষদে ভেজাল বিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকটা প্রতিষ্টানকে জেল ও জরিপানা করেছে ।তাতে তেলে বেগুনে ফুলে উঠে ফাম্মেসী সমিতিগুলি।তারা হুমকি দিচ্ছে যদি জব্দ করা ঔষদ ফেরত এবং মামলা প্রত্যাহার না করে তবে দেশের সকল ফাম্মেসী দোকান বন্ধ ঘোষনা করবে অনিদিষ্ট কালের জন্য।এবার বলেন কি আমাদের দেশের নৈতিকতা আর চিন্তাভাবনা।ভেজাল ঔষদের কারনে একজন তরতাজা প্রান অকালে ঝড়ে যাচ্ছে আর তারা ভেজাল অভিযানে বাধা দিচ্ছে।আমাদের চরিত্র কোথায় চলে গেছে।তাদের কাছে টাকাই মূখ্য জীবন নয়।এখন প্রয়োজন এ সব ক্ষেত্রের ঐক্যতা।রাষ্ট্রের পাশাপাশি সাধারন জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে এর প্রতিকার করতে।
৪টি মন্তব্য
খসড়া
ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ চাই সচেতনতা সেই সাথে তীব্র প্রতিরোধ।
জিসান শা ইকরাম
ভালো পোস্ট ।
ধন্যবাদ এমন পোস্ট দেয়ার জন্য ।
প্রজন্ম ৭১
(y) (y) (y)
তৌহিদ
এর জন্য রাষ্ট্রকৈই এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের নিয়োগ প্রাপ্ত সংস্হাগুলি যদি তাদের দায়ীত্ব ঠিক মত পালক করে তবে সম্ভব একে নির্মূল করা।