২০১৮/ ঢাকা।
*নাতাশা- বাবা গতবছরের চেয়ে এবার তোমাকে বেশী ভাল দেখাচ্ছে।
* আমি- বলিস কি মা? গতবছর তো আমি স্লিম ছিলাম, এবার ভুঁড়ি হয়েছে। বিশ্রি দেখাচ্ছে।
* নাতাশা- না বাবা এটুকু ভুঁড়ি বাবাদের থাকা প্রয়োজন। নইলে বাবা বাবা মনে হয় না।
* আমি- তুই আমার মেয়ে! কোথায় বলবি বাবা তুমি মটু হচ্ছো, ভুঁড়ি কমাও।
* নাতাশা- না বাবা ভুঁড়ি তে তোমাকে বাবা বাবা লাগছে।
* আমি- যা ভাগ……
* নাতাশা- ( আমার ধমক উপেক্ষা করে ) তোমার একটি ভালো ভুঁড়ি থাকবে, রিক্সায় যখন যাবে কোথাও, ভুঁড়িটা রিক্সার ঝাঁকুনিতে থলথল করে নাচবে। এমন না হলে বাবা বাবা লাগে বলো? 🙂
* আমি- আর যদি আমি আগের মত স্লিম থাকি? ভুঁড়ি না থাকে, তাহলে তোর বাবা বাবা লাগবে না?
* নাতাশা- না বাবা। ধরো যে সব বন্ধুরা তোমাকে চেনে না, তখন তারা তোমাকে আমার বড় ভাইও ভাবতে পারে, আবার বাবাও ভাবতে পারে। আর ভুঁড়ি থাকলে সবাই বাবা ভাববে।
* আমি- এখন তোর জন্য আমার ভুঁড়ি রাখতে হবে?
* নাতাশা- হ্যা বাবা, এখন যে ভুঁড়ি আছে তার চেয়ে আর একটু বড় লাগবে। তুমি তো আমার লক্ষ্মী বাবা 🙂
* আমি- তোর সাথে তো কথায় পারা যাবেনা। আচ্ছা রাখবো 🙁
২০০৩/ ব্যংকক
* প্লয়- ( পেটে আংগুলের গুতো দিয়ে ) বাবা তোমার ভুঁড়ি কই?
* আমি- ভুঁড়ি তো নেই মা।
* প্লয়- কেন নেই?
* আমি- মা, ভুঁড়ি আমি পছন্দ করি না। টি-শার্ট গায় দিলে ভুঁড়ি উঁচু হয়ে থাকে।
* প্লয়- থাকুক উঁচু হয়ে সমস্যা কি?
* আমি- এটা কি বলো মা? সবাই স্লিম থাকতে চায়। এজন্য কত এক্সারসাইজ করে মানুষ।
* প্লয়- কিন্তু আমার বন্ধু নায়না বলছে তোমাকে আমার বাবার মত লাগছে না। কিন্তু তুমি তো আমার বাবা। ( নায়না মিটি মিটি হাসছে তখন )
* আমি- মা, ভুঁড়ি হলে অনেক সমস্যা, হাঁটা চলায় সমস্যা, একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যেতে হবে।
* প্লয়- তোমার মেয়ের চাওয়ার কাছে এটি কোন সমস্যা বাবা? ( কান্না কান্না মুখ )
* আমি- আচ্ছা আচ্ছা ভুঁড়ি বানাবো। কিন্তু কিভাবে বানাবো বল।
* প্লয়- বাবা বেশী বেশী খাবা, দুপুরে খেয়েই ভাত ঘুম দিবা। রাতেও বেশী খাবা। পরিশ্রম কম, তাহলেই ভুঁড়ি হবে 🙂
* আমি- আচ্ছা ভুঁড়ি বানাবো, খুশী এবার? 🙁
* প্লয়- বাবা তুমি এত ভালো কেনো? 🙂 আগামী বছরেই যেন ভুঁড়ি দেখি তোমার।
*** এরপর ২০০৩ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গিয়েছি। আমার মেয়ে ব্যংকক বিমানবন্দর থেকে আমাকে রিসিভ করেছে। ভুঁড়ি নেই আমার। প্রথমেই আংগুল দিয়ে পেটে একটা গুতো। এরপর মুখ মন্ডল করুণ করে বলত ‘ তুমি আমার বাবা নও, আংকেল। আংকেল জিসান ‘ 🙁 একদিনের বেশী লাগতো তার মান ভাংগাতে। ওর তিন ভাই পাপ্পা, পৃথু, প্রিয় যে ওকে খুব মিস করে এসব বলে তার মন ভালো করে দিতাম।
২০১৩ এর পরে ২০১৭ তে ব্যংকক গিয়ে ওর সাথে দেখা হয়নি। থাইল্যান্ডের বাইরে ছিল। আবার যাবো আশাকরি আগামী মাসে। এবার নিশ্চয়ই ও খুশী হবে, পেটে গুতো দেবে না 🙂
আমার মেয়েদের কাহিনী শেষ।
এবার আমার গিন্নীর কাহিনী-
* আমার ভুঁড়ি হচ্ছে 🙁
** হোক
* প্যান্ট একটাও কোমড়ে ঠিক মত লাগছে না।
** বড় কোমড়ের প্যান্ট কিনে নাও
* হাঁটা চলায় সমস্যা হচ্ছে।
** হোক
* তুমি জানো যে আমার হাঁটুতে সমস্যা, হাঁটতে কষ্ট হয়।
** ক্যালসিয়াম+ ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খাও, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
* তুমি জানলে কিভাবে যে কিসে হাড়ের শক্তি বাড়ে?
** তুমি গতমাসে বলেছো যে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম+ ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খাবে।
* ভুঁড়ি তাহলে কমাবো না?
** না, ভুড়িই ভালো।
আমার মেয়েরা চায় ভুঁড়িওয়ালা বাবা, আর গিন্নী ভুঁড়িওয়ালা স্বামী।
কিএক্টাবস্থা 🙁
এই সব নিয়েই আমার দিন রাত্রি। জীবন কত সুন্দর।
৩১টি মন্তব্য
তৌহিদ
হা হা হা, লেখা পড়ে শুধু হাসছি। বাবা মেয়ের সম্পর্ক কত মধুর হলে এরকম কথোপকথন হতে পারে!! ভুঁড়ি নিয়ে ভাবনার শেষ নেই।
আর গিন্নীতো নিজের ভুঁড়ি থাকলেও গিন্নী, না থাকলেও তাই।
তবে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকবেন ভাই। আমাদের সবারই সচেতন থাকা উচিত।
ইয়ে মানে ভুঁড়ি কমানোর কোন ওষুধ আছে? আমারটা সামনের দিকে এগুচ্ছে যে! ☺
জিসান শা ইকরাম
ভুঁড়ি নিয়ে দারুন যন্ত্রনায় আছি ভাই, ভুঁড়ি ভাল লাগেনা আমার, কিন্তু এদের ভুঁড়ি লাগবে।
আপনার কিন্তু সাবধান হতে হয়, ভুঁড়ি ভালই বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনার।
কোনো ঔষধ নেই ভাই।
তৌহিদ
এখন হাঁটার উপরে আছি ভাই।
নাজমুল হুদা
বাবা মেয়ের কেমেস্ট্রি অনেক ভালো লাগলো। এই নাহলে বাবা । বাবা এমন হওয়া উচিত ঘরে ঘরে।
আর স্ত্রীর কথা বাদ দিলাম। লেখাটি অনেক সুন্দর ।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ এমন মন্তব্যের জন্য।
শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
কিছুটা পড়ে হাসলাম কেবল।খেলা দেখছি পরে আসছি।
মনির হোসেন মমি
আর কইয়েন্না যার ভুড়ি আছে সেই বুঝে ভুড়ি হওয়ার কত জ্বালা।খুব হাসালেন।
জিসান শা ইকরাম
ভুঁড়িতে খুবই জ্বালা ভাই,
যার আছে, সেইই বুঝে এর কস্ট।
জিসান শা ইকরাম
গতকালের খেলার ফলাফলে আমরা রিস্কে পড়ে গেলাম মনির ভাই।
বন্যা লিপি
তখন প্রাইমারীতে পড়ি। আব্বা’র ছোটখাটো একটা ভুঁড়ি। অনেক বান্ধবি আব্বাকে দেখিয়ে বলতো ওইটা তোর আব্বা? আমি কেমন হাসি হাসি মুখে বলতাম… হ, আমার ভুঁড়ি ওয়ালা আব্বা। আপনার লেখা পড়ে স্সৃতিটুকু মনে পড়ে গেলো। ঠিকই তো একটু আদটু ভুঁড়ি না থাকলে বাবাদের বাবা বাবা লাগেনা। তবে শরীরের যত্নে তাঁকে মোটেই কাঁঠাল কিংবা তরমুজ হতে দেয়া যাবেনা কিছুতেই 😀😀
জিসান শা ইকরাম
তুমিও ভুঁড়িওয়ালা বাবা পছন্দ করতে!
কাঠাল, তরমুজ ভুঁড়ি কোনক্রমেই বানান জাবেনা।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেল জিসান ভাই। তবে দারুন হয়েছে লেখাটি।
জিসান শা ইকরাম
আপনাকে আনন্দ দিতে পেরে আনন্দিত আমিও।
ধন্যবাদ ভাই।
শাহরিন
দাদা তোমার ভূড়ি নাই কিন্তু আছে ও, যেমন আছো তেমনই ভালো ☺
জিসান শা ইকরাম
কই নাই? আছেতো। টি-শার্ট গায়ে দিলেই বুঝা যায়।
শীত কালে বুঝা যাবে না শীতের পোষাকের জন্য।
শিরিন হক
ভুঁড়ি থাকিলে জ্বালা না থাকিলে ও জ্বালা।আহ্ ভুড়ি আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে দেন ছাপ্পড় খুলে দেন। দোয়া করি ভুঁড়ি বাড়িতে থাকুক। মেয়ের মন বাসনা পূর্ণ হোক।
জিসান শা ইকরাম
ভুঁড়ি বৃদ্ধির জন্য দোয়া এই প্রথম শুনলাম! এটা দোয়া না বদ্দোয়া।
মেয়ে দ্বয় এবং তাদের মা এর 🙂
নিতাই বাবু
চলুক না এভাবেই! যার যেটা পছন্দের তালিকায় থাকে, সেটা তো থাকতেই হবে! তবে বেশি ভুঁড়িওয়ালা মানুষ শেষ বয়সে অচল হয়ে পড়ে। আমাদের এলাকাতেও কয়েকজন ভুঁড়িওয়ালা মানুষ আছে দাদা। আজ তাঁরা একেবারেই চলতে ফিরতে পারে না। মোটকথা, ঘড় বসা মানুষ।
ভুঁড়ি নিয়ে দারুণ লিখেছেন শ্রদ্ধেয় দাদা। ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
ভুঁড়ি বেশি বড় করা যাবেনা, সমস্যা তো বলেই দিলেন।
ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ঠিকই আছে, ভুঁড়ি না থাকলে ভাইজান, ভাইজান মনেই হয়না। 😜
জিসান শা ইকরাম
আপনিও এমন বললেন ভাই!!
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
মেয়েদের কথা ফেলনা নয়, একটু ভুঁড়ি না থাকলে বাবা বাবা লাগেই না। দারুণ উপভোগ্য লেখাটা।
জিসান শা ইকরাম
আমার দুই মেয়েরই একই কথা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
মেদ ভুঁড়ি জিন্দাবাদ বলার টাইম হয়েছে মনে হচ্ছে।
জিসান শা ইকরাম
প্রায় হয়েছে টাইম।
মাসুদ চয়ন
ভুঁড়িতে বিশেষিত বয়সত্ব।খুব উপভোগ করলাম দাদা।দারুণ হাস্যরসাত্নক চিত্রায়ন/
জিসান শা ইকরাম
অনেক ধন্যবাদ চয়ন আপনাকে।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুঁড়ি কমাতে হলে ভুঁড়িভোজ ছাড়তে হবে। তবে আপনজনদের খুশি রাখতে এটুকু করা যায়। আপনার আপনজনরা চাচ্ছে ভুঁড়ি সঠিক স্থানে থাকুক। তাহলে কেন সেটা স্থানচুত্য করতে চাইছেন ?
জিসান শা ইকরাম
স্থানচুত্য করতে আর চাইনা,
আপনজনদের ইচ্ছের কাছে নিজের ইচ্ছেকে সমর্পন করেছি।
এখন ভুঁড়িই ভালো, এই নীতি নিয়েছি।
আরজু মুক্তা
ভুঁড়ির প্যা্চাল।।সাথে পাঁচ পোড়ন।।সাথে বাবা কথন।
চমৎকার।।ছবিটাও কি আপনার??
সঞ্জয় মালাকার
পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম ,
ধন্যবাদ ভাইয়া,
ভুঁড়ি কমানোর প্রয়োজন নাই ।