অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ি। আমার ভার্সিটির সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক মেয়ের উপরে পুরোপুরি ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। মেয়ে ডিপার্টমেন্টের পরিচিত মুখ। চলনে বলনে একটা কিছু। সিনিয়র, জুনিয়র এবং আমার অনেক ব্যাচমেট তার উপর ফিদা। মেয়ে আমার বন্ধুর কাছ থেকে নোট নিত, পড়া বুঝিয়ে নিত। আমরা ব্যালকনিতে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় মেয়েটি তাদের ক্লাসে যাওয়ার সময় ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে অমন হাসি দিত। আর এমন সুরেলা কন্ঠে ভাইইইইইইইয়া বলে ডাকতো আমরাও ভাবতাম এই পোলার কপাল বুঝি খুলেই গেল! অনেকেই যারা আমাদের খুব ঘনিষ্ট না, তারা ভাবতো তাদের দুইজনের রিলেশন আছে।
—————
ফাইনালি আড্ডায় সিদ্ধান্ত হলো সে গিয়ে মেয়েকে প্রপোজ করবে। কিন্তু সাহসে কুলায় না।
আমি বললাম, যা তুই প্রস্তাব দিয়ে দেখ।
– সে বলে যদি না বলে?
না বললে কি? তোকে হ্যাঁ বলতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
– না দোস্ত, ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র মেয়ে। বুঝিস তো। আর প্রথমবারই না শুনলে আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগবে।
আরে যা বলে আয়। সাহসে লক্ষী, ভোজনে শ্রী(চেহারা)। বীরভাগ্য বসুন্ধরা। সাহস না করলে কিছুই হয় না। এইসব কথা বলে তাকে উস্কিয়ে দিলাম। আমি বলছি হবে।
– তুই বলছিস হবে?
হ্যাঁ হ্যাঁ হবে। তুই বলে দেখ। দেখিস না তোর দিকে কিভাবে তাকায়? আমাদের থেকে তো নোট নেয় না। তোর থেকে কেন নেয়? তোর চেয়ে আরও অনেক ভালো স্টুডেন্ট আছে। তাদের নোট তো নেয় না। বুঝিস না? যা, তুই একবার বলে দেখ।
অবশেষে একদিন সে মেয়েকে জানাল। মেয়ে উত্তরে বলল,
“আসলে ভাইয়া আমি তো আপনাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখি। অন্য কিছু ভাবিই নি।
————–
মাস চারেক পরে একদিন ঝুপড়িতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র একজন ভাইয়াও ছিলেন। হঠাৎ তিনি তাকে বললেন,
– তারপর সোহাগ, তোমার গার্লফ্রেন্ড নাসরিনের খবর কি?
আরে ভাইয়া। কি যে বলেন। সে আমার গার্লফ্রেন্ড হবে কেন? আমাদের তো ফ্রেন্ডলি ভাইবোন সম্পর্ক।
তার মুখে এটা শোনার পর হাসি চেপে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মূল ঘটনাও সবাইকে বলা সম্ভব ছিল না। তাই আসছি বলে আড্ডা থেকে উঠে বাইরে হেসে নিলাম।
প্রপোজ করে ভালোই ভালোই চান্স পেলেই হয়। না পেলে ভাইবোন সম্পর্ক আর কি।
৮টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
উস্কানি দিয়ে পরে আবার হাসাহাসি হচ্ছে? আহারে বেচারা !!!
হুট করে প্রেমিকা থেকে বোন ভাবা খুব কস্টের, মনের জোর বাড়া তারপরে প্রপোজ করিস। অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া ভালো :p 🙂
প্রজন্ম ৭১
ছেলেদের একটু সমস্যা আছে, কোন মেয়ে একটু ভালো ব্যবহার করলেই ভাবে, মেয়ে তাঁর প্রতি দুর্বল, নইলে এত হেসে হেসে কথা বলবে কেন? এই ধারনা ৯৫% সঠিক হয়না। যতই শিক্ষিত হই আমরা মেয়েদের মানুষ ভাবিনা, ভাবি মেয়ে, যার সাথে শুধু একটি রিলেশনই করা যায়।
আপনার লেখাটির শেষ লাইনটিই লেখার জিস্ট তা বুঝতে পেরেছি এবং মজাও পেয়েছি।
ব্লগার সজীব
মায়া হচ্ছে আপনার বন্ধুর জন্য, ইশ কত কষ্টের কাহিনী 🙁
জিসান শা ইকরাম
হিম্মত লাগে হিম্মত 🙂
অনেক দিন পরে পেলাম আপনাকে সোনেলায়–
শুভ কামনা —
মিথুন
এমন কত লক্ষ প্রেমিকা বোন হয়ে যায় :p
কৃন্তনিকা
মজা পেলাম। (y)
নির্মল বিনোদনের জন্য ধন্যবাদ 😀
সব ক্যাম্পাসেই বোধ হয় এমন ঘটনা ঘটে থাকে।
স্বপ্ন নীলা
হায়রে — এমনও হয় !!
ভাল থাকুন —–
মিসু
এমন অহরহ হয়, ছাত্র গুলো টুপ টাপ প্রেমে পরে যায়। পরে তাদের ভাই হয়ে থাকতে হয়।