কবি সাবিতের চোখ খুলছে না দেখে ব্রেনি ফিরিঞ্জি জোরে চেয়ার টেনে বসলো। একটু খকখক করে কাশলো।
” না বেটা কুম্ভকর্ণ। ঘুম ভাঙ্গে না। ”
এবার চোখের কাছে মুখ নামিয়ে ফুঁ দিলো। চমকে সাবিত সাহেব বললো, ” কে? কে? ”
: ভয় পেলি রে শালা ?
: কে রে তুই ?
: শুধু কে কে করছিস ? ডব্লিউ, এক্স, ওয়াই জেড বলে শেষ কর।
: কি করে?
: কী কি করে?
: আমার রুমে ঢুকলি কেমন করে?
: আমি ঢুকিনি।
: ঢুকিনি মানে?
: বাহির থেকে আসিনি। আমি ব্রেনি।
: হি হি ! তুই তো ছেলে।
: বাদ দে হেঁয়ালি। শালা আমি ব্রেনি ফিরিঞ্জি।
: আবার হাসালি।
: আমি এতোদিন তোর ভিতরে ছিলাম।
: বললেই হলো?
: ভাব নিস না। আমার কারণেই তোর নাম।
: মানে?
: মানে হলো, তুই যতো কিছু করে খ্যাতি অর্জন করেছিস। এই যে এতো সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট, টাকা…… সব তো আমাকে ভাঙ্গিয়ে।
: তুই আমাকে ছেড়ে দে। এই নে আলমারির চাবি। যা মন চায় তাই নে।
: গাধা রে। আমি কি ডাকু বনহুর? আমি ব্রেনি ফিরিঞ্জি।
: কই কে আছো? এই কুদ্দুস?
: ড্রামা থামা মামা। বোঝার চেষ্টা কর।
: আমি কিন্তু পালাবো।
: হা হা। আয় ‘ছি বুড়ি’ খেলি। কে জেতে?
এবার সাবিত সাহেব স্থির হয়ে বললো, ” তা তুই বাহিরে কেনো?”
: এতোক্ষণে মাথা খুললো। ব্যাটা গনেশ। আমি আর তোর সঙ্গে থাকবো না। চলে যাবো।
: চলে যাবো মানে? সকাল বেলা তোর রসিকতা।
: রসিকতা মনে হচ্ছে? তুই তো ছড়াকার। আয় মিলঝিল খেলি। আমি একটা শব্দ বলবো, তুই পরেরটা মিলিয়ে বলবি।
: এটা কোন ব্যাপার।
মুচকি হেসে ব্রেনি বলে, হাসু। এই শব্দের সাথে মিল দে।
সাবিত সাহেবের মাথা আউলায় গেলো। বললো, কচি।
ফিরিঞ্জি বললো, দেখলি তুই ও কচি গরু হয়ে গেছিস। এখন বুঝলি তো আমি তোর বস। আমি ছাড়া তুই ঢোরা সাপ।
: কিন্তু তুই বের হইলি কেমনে? আমি তো ২০২৪ শে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হবো।
: হাদারাম। মৌজ করে বেরাও। বিকালে কফি। সকালে সাজেক। আমি মুখে আঙ্গুল চুষি।
: কি মুশকিল ! এ্যাবসারড ! আমি আসলে এগুলো জানতাম না।
: শোন, এইসব ঢং বাদ দে। আমি চললাম খিদা পেয়েছে।
: আরে শোন, আমার বইটা শেষ হয়নি। এইবার বইমেলায় বেরোবে।
: গজা, পরের জন্মে বের করিস। ঘুমা বেশি করে।
আকবর, সাবিতের বন্ধু ফোন দিলো।” কি রে, তোর ছবি টবি দেখছি না ফেসবুকে। নতুন কিছু আপডেটও নাই। ”
ধুৎ শালা বলে লাইনটা কেটে দিলো, সাবিত সাহেব।
বাসা থেকে ফোন।
হ্যালো মা !
খবর কী বাবা?
কবিতা লিখতে পারছি না !
তো কী হয়েছে? সংবাদ সম্মেলন করে বলে দে, রিটায়ার্ড করেছি আর কবিতা লিখবো না।
আবারও ফোন কেটে দিয়ে, ভাবলেন ঐ বেটা ব্রেনিকে খুঁজে বের করতে হবে।
খুঁজতে খু্জতে দেখেন, টেক্সটাইল মোড়ের এক টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে বললো, অনেক হয়েছে। বাসায় চল। দেয়া আর নেয়াতে আয়।
: ও হুশের নাড়ি তো টনটনে। এতোদিন আমি শুধু দিয়েছি দিয়েছি দিয়েছি। তুই নিয়েছিস।
: ওকে। এখন থেকে গিভ এণ্ড টেক। বল কী খাবি?
: বিরিয়ানি আর কোক খাবো। সাথে একটা গোল্ড লিফ ও দিস।
এবার ফিরিঞ্জিকে ধরে এনে চেয়ারের সাথে বাঁধলো।
: এবার কেমনে পালাবি ?
: এভাবে বাঁধলি কেনো ?
: তাহলে কন্ট্রিবিউট কর।
: না করবো না।
: আমিও লিখবো না। আমি ও মরবো। তুই মর।
: ইস, যেখানে যেখানে দড়ি, সেখানে সেখানে চুলকাচ্ছে।
কলমের হেড দিয়ে চুলকায় দিলেন সাবিত সাহেব।
: শোন, আমার একটা কথা মানলে ; আমি আবার তোর কথা শুনবো।
: বল।
: তোর প্রেমিকাকে আমার মনে ধরেছে। আমি ওর সাথে থাকতে চাই।
: কি বলিস এসব !!
: হ্যাঁ, তুই প্রেম করলি এতো বছর। এবার আমার পালা।
শেষ পর্যন্ত ফিরিঞ্জিকে বাসায় রেখে সাবিত সাহেবই পালালেন।
২৩টি মন্তব্য
তৌহিদুল ইসলাম
রম্য গল্পের স্বার্থকতা হচ্ছে পাঠকদের জন্য লেখার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একটা মেসেজ।
ব্রেনি ফিরিঞ্জি নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে গল্পের স্বার্থকতা। মানুষের ব্রেন নিজে যেভাবে চালাবো সেভাবেই চলবে এটাই নিয়ম। ব্রেনকে যা খাওয়াবেন সে সেভাবেই পুষ্টি দেবে, আর লেখার ক্ষেত্রেও তাই।
আপনার ব্রেনের সাথে ব্রেনি ফিরিঞ্জির সমন্বয় দারুণ!
রম্য ভালো লেগেছে আপু।
আরজু মুক্তা
দারুণ কমেন্টেে আপ্লুত। লেখকদের কলম কখনোই থামে না। সমসাময়িক বিষয় গুলো এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।
শুভ কামনা ভাই।
হালিমা আক্তার
এতোদিন প্রেম তুই করেছিস , এবার আমার পালা | সাবিত আর কী করবে , তুই এবার পালা | খুব ভালো লাগলো |
আরজু মুক্তা
আপা ধন্যবাদ অশেষ।
শুভ কামনা সবসময়
বন্যা লিপি
এটারে রম্য নাম দিলেন ক্যান বুঝলাম না। এই লেখা তো আপনার ফিরিঙ্গি ব্রেইনের ফিরিঞ্জি!! মারপ্যাচ যা যা কষা’র জুৎ মত কষে ছেড়ে দিয়েছেন ব্রেভো। খান এবার ব্রেনি ফিরিঞ্জির কোক বিরিয়ানি,,, গোল্ডলিফে টান দিয়েন না… খক খক কাশির সাথে ফিরিঞ্জি বাবাজি আবার চম্পট দিয়ে মার্লবোরো চাইয়া বইব। ট্রিপল 5এর জামানা নাই। ফাটাফাটি……
আরজু মুক্তা
বিড়ি টিরি অনেকদিন খাই না। বিরিয়ানি হলে অবশ্য কথা নাই।
ইন সেডে লেখলেই সেটা রম্য বলা যায়।
ভালোবাসা সবসময়
বোরহানুল ইসলাম লিটন
হৃদয়গ্রাহী নিবেদন
রম্য রসে ভরপুর সাথে একটু জানা
ব্রেনি ফিরিঞ্জি ছাড়া যেন জীবনটাই কানা।
আন্তরিক শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
আরজু মুক্তা
ব্রেন ছাড়া দুনিয়া চলে না।
শুভ কামনা ভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
তুই প্রেম করলি এতো বছর। এবার আমার পালা।
শেষ পর্যন্ত ফিরিঞ্জিকে বাসায় রেখে সাবিত সাহেবই পালালেন।
.
বেশ জম্পেশ রম্যগল্প দিদি।
ভালো লাগলো।
আরজু মুক্তা
এতো কিছু কী ভাগ দেয়া যায়?
শুভ কামনা দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
সাবিত নাম দেখে চমকে-থমকে গিয়েছি, আমাদের নবীজির প্রিয় কবি ছিলেন তিনি।
তাঁর কবিতা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, ভালেবাসি তাঁকে।
প্রেমিক ভাগাভাগি হতেই পারে, হচ্ছে ও আকছার, ভাগ্যিস স্ত্রীতে কেউ ভাগ বসায়নি। যা দিনকাল চলছে।
সুন্দর রম্য।
আরজু মুক্তা
হা হা। যা দিনকাল পরেছে।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
পপি তালুকদার
সব কিছু গিভ এন্ড টেক।ভালোবাসা ভাগাভাগি হলে তো মহা জ্বালা!
রম্য টা ভালো লাগলো।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলেই লেখা সার্থক।
শুভ কামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
মর জ্বালা। লিখলো রম্য তাও ব্রেনী কি সব নিয়ে। মাথা আউলায় গেল। আবার পড়ব মানে পরে যাব,,,
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
পরে আর একটা কমেন্ট পাবো??
তাহলে অপেক্ষাই করি।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মন্তব্য করার যুতসই ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। তবুও বলবো ভালোবাসা ভাগ করার চেয়ে মরণ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ। চমৎকার লিখেছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
আরজু মুক্তা
সেটাই ভালো। কিসের শেয়ারিং?
আপনিও ভালো থাকুন সবসময়।
শামীনুল হক হীরা
মনোমুগ্ধকর একটা গল্প।।ভাল লাগল খুব।
শুভকামনা রইল প্রিয়।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভকামনা
ইঞ্জা
লেখাটি বেশ মজার আপু, শেষ পর্যন্ত ফিরিঞ্জিকেই বেঁদহে রেখে পালাতে হলো, হা হা হা হা। 🤣
আরজু মুক্তা
কিছু করার নাই। বাঁধতে হবে এদের।
শুভ কামনা ভাই
ইঞ্জা
তা তো অবশ্যই।
শুভেচ্ছা রইলো। 💕