ব্রেনি ফিরিঞ্জি

আরজু মুক্তা ৭ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ০৯:৩০:১৭অপরাহ্ন রম্য ২৩ মন্তব্য

কবি সাবিতের চোখ খুলছে না দেখে ব্রেনি ফিরিঞ্জি জোরে চেয়ার টেনে বসলো। একটু খকখক করে কাশলো।

” না বেটা কুম্ভকর্ণ। ঘুম ভাঙ্গে না। ”

এবার চোখের কাছে মুখ নামিয়ে ফুঁ দিলো। চমকে সাবিত সাহেব বললো, ” কে? কে? ”

: ভয় পেলি রে শালা ?

: কে রে তুই ?

: শুধু কে কে করছিস ? ডব্লিউ, এক্স, ওয়াই জেড বলে শেষ কর।

: কি করে?

: কী কি করে?

: আমার রুমে ঢুকলি কেমন করে?

: আমি ঢুকিনি।

: ঢুকিনি মানে?

: বাহির থেকে আসিনি। আমি ব্রেনি।

: হি হি !  তুই তো ছেলে।

: বাদ দে হেঁয়ালি। শালা আমি ব্রেনি ফিরিঞ্জি।

: আবার হাসালি।

: আমি এতোদিন তোর ভিতরে ছিলাম।

: বললেই হলো?

: ভাব নিস না। আমার কারণেই তোর নাম।

: মানে?

: মানে হলো, তুই যতো কিছু করে খ্যাতি অর্জন করেছিস। এই যে এতো সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট, টাকা…… সব তো আমাকে ভাঙ্গিয়ে।

: তুই আমাকে ছেড়ে দে। এই নে আলমারির চাবি। যা মন চায় তাই নে।

: গাধা রে। আমি কি ডাকু বনহুর?  আমি ব্রেনি ফিরিঞ্জি।

: কই কে আছো?  এই কুদ্দুস?

: ড্রামা থামা মামা। বোঝার চেষ্টা কর।

: আমি কিন্তু পালাবো।

: হা হা। আয় ‘ছি বুড়ি’ খেলি। কে জেতে?

এবার সাবিত সাহেব স্থির হয়ে বললো, ” তা তুই বাহিরে কেনো?”

: এতোক্ষণে মাথা খুললো। ব্যাটা গনেশ। আমি আর তোর সঙ্গে থাকবো না। চলে যাবো।

: চলে যাবো মানে?  সকাল বেলা তোর রসিকতা।

: রসিকতা মনে হচ্ছে?  তুই তো ছড়াকার।  আয় মিলঝিল খেলি। আমি একটা শব্দ বলবো, তুই পরেরটা মিলিয়ে বলবি।

: এটা কোন ব্যাপার।

মুচকি হেসে ব্রেনি বলে, হাসু। এই শব্দের সাথে মিল দে।

সাবিত সাহেবের মাথা আউলায় গেলো। বললো, কচি।

ফিরিঞ্জি বললো, দেখলি তুই ও কচি গরু হয়ে গেছিস। এখন বুঝলি তো আমি তোর বস। আমি ছাড়া তুই ঢোরা সাপ।

: কিন্তু তুই বের হইলি কেমনে?  আমি তো ২০২৪ শে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হবো।

: হাদারাম। মৌজ করে বেরাও। বিকালে কফি। সকালে সাজেক। আমি মুখে আঙ্গুল চুষি।

: কি মুশকিল ! এ্যাবসারড ! আমি আসলে এগুলো জানতাম না।

: শোন, এইসব ঢং বাদ দে। আমি চললাম খিদা পেয়েছে।

: আরে শোন,  আমার বইটা শেষ হয়নি। এইবার বইমেলায় বেরোবে।

: গজা, পরের জন্মে বের করিস। ঘুমা বেশি করে।

আকবর, সাবিতের বন্ধু ফোন দিলো।” কি রে, তোর ছবি টবি দেখছি না ফেসবুকে। নতুন কিছু আপডেটও নাই। ”

ধুৎ শালা বলে লাইনটা কেটে দিলো, সাবিত সাহেব।

বাসা থেকে ফোন।

হ্যালো মা !

খবর কী বাবা?

কবিতা লিখতে পারছি না !

তো কী হয়েছে?  সংবাদ সম্মেলন করে বলে দে, রিটায়ার্ড করেছি আর কবিতা লিখবো না।

আবারও ফোন কেটে দিয়ে, ভাবলেন ঐ বেটা ব্রেনিকে খুঁজে বের করতে হবে।

খুঁজতে খু্জতে দেখেন, টেক্সটাইল মোড়ের এক টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে বললো, অনেক হয়েছে। বাসায় চল। দেয়া আর নেয়াতে আয়।

: ও হুশের নাড়ি তো টনটনে। এতোদিন আমি শুধু দিয়েছি দিয়েছি দিয়েছি। তুই নিয়েছিস।

: ওকে। এখন থেকে গিভ এণ্ড টেক। বল কী খাবি?

: বিরিয়ানি আর কোক খাবো। সাথে একটা গোল্ড লিফ ও দিস।

এবার ফিরিঞ্জিকে ধরে এনে চেয়ারের সাথে বাঁধলো।

: এবার  কেমনে পালাবি ?

: এভাবে বাঁধলি কেনো ?

: তাহলে কন্ট্রিবিউট কর।

: না করবো না।

: আমিও লিখবো না। আমি ও মরবো। তুই মর।

: ইস, যেখানে যেখানে দড়ি, সেখানে সেখানে চুলকাচ্ছে।

কলমের হেড দিয়ে চুলকায় দিলেন সাবিত সাহেব।

: শোন, আমার একটা কথা মানলে ; আমি আবার তোর কথা শুনবো।

: বল।

: তোর প্রেমিকাকে আমার মনে ধরেছে। আমি ওর সাথে থাকতে চাই।

: কি বলিস এসব !!

: হ্যাঁ, তুই প্রেম করলি এতো বছর। এবার আমার পালা।

শেষ পর্যন্ত ফিরিঞ্জিকে বাসায় রেখে সাবিত সাহেবই পালালেন।

 

 

 

 

 

৯৬৯জন ৫৭৪জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ