বৃষ্টি বৃষ্টি আর বৃষ্টি । কয়েক দিন
ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। নাম তার বর্ষা তবুও
বৃষ্টি তার একটুও ভাল লাগেনা। তার সাথে অন্য
যারা কাজ করে বৃষ্টি তাদের অনেক পছন্দের।
কারন বৃষ্টি এলে বাইরের কাজ করা লাগেনা।
ঘরে বসেই খাবার পাওয়া যায়। খদ্দেররা ভিড়
জমায় না। সবাই আরামে গল্প করে। তবুও তার
বৃষ্টি ভাল লাগে না। তবে আজকে তার
মনটা অনেক ভাল। কারণটা তার জানা আছে।
আসলে বৃষ্টি এলেই হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে খুব
বেশি মনে পড়ে। পাড়ার মধ্যে বৃষ্টির সাথেই
তার বেশি ভাব ছিল। নামের কারনেই
বা চেহারার মিলের কারনেই সবাই ওদের
সবাই দুইবোনই ভাবতো। আর ওরাও নিজেদের
বোনের মতই দেখত। যদিও ওদের কেউই
নিজেদের আসল নামে পরিচিত না এই পাড়ায়।
সর্দারনীর দেওয়া নামেই তারা পরিচিত।
বৃষ্টির হারিয়ে যাওয়ার পিছনে কারণটাও তার
জানা। সেদিন অনেক বড় এক পার্টি থেকে কল
এসেছিল। সর্দারনী বর্ষাকেই যেতে বলেছিল,
ঐদিন ওর তলপেটে প্রচুর ব্যাথা ছিল তবুও
সে সাজছিল কারন সর্দারনীর হুকুম অমান্য
করলে যে শাস্তি দিবে সেটা এই ব্যাথার
থেকে বহুগুন বেশি কষ্টদায়ক। বৃষ্টি ওর কষ্ট
দেখে নিজেই যেতে রাজি হল এবং জোর
করে চলেও যায়। সেই যাওয়াটাই তার শেষ
যাওয়া আর ফিরে আসেনি সে… ।
বর্ষা জানে যে সে আর ফিরেও আসবেনা।
না ফেরার জগতে যারা চলে যায় তারা আর
কখনও ফিরে আসেনা।
বৃষ্টি ফিরে আসেনি সেটা নিয়ে কারো কোন
কথা নেই। সবার অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রায়ই
তাদের মাঝে কেউ কেউ হারিয়ে যায় এভাবে।
তাদের কোন খোঁজ হয় না। আর পতিতাদের
হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন থানায় কোন কেসও
হয় না। ভদ্র সমাজের মানুষেরা পতিতাদের
মানুষের দলেই রাখেন না। তবে সেই ভদ্র মানুষ
গুলোয় তাদের নোংরা খায়েস পূরণের জন্য
ছুটে আসে তাদের কাছে।
বৃষ্টি মারা যাবার পর সে এক বোতল বিষ
সংগ্রহ করেছিল মরে যাবার জন্য। কিন্তু
মরেনি সে। অপেক্ষায় আছে…
সে জানে যা করেছে তাতে তাদের এই
হারিয়ে যাওয়া বন্ধ হবে না। তবুও সে আজ নিজ
হাতে পায়েস রান্না করেছে। বাটিতে করে বড়
ঘরের সবার হাতে দিয়ে এসেছে কিছুক্ষণ আগে।
দাড়িয়ে আছে জানালার ধারে…
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে… চোখ বন্ধ
করে বৃষ্টির আলিঙ্গন সে উপভোগ করছে… নিচ
থেকে প্রচন্ড চেঁচামেচি ভেসে আসছে। চোখ
খুলে হাতে থাকা বোতলটির দিকে তাকাল
সে সেখানে এখনও একটু তরল মৃত্যু নড়ছে… আর
তারপর ?
তারপরের অংশটুকু না ফেরার জগতে……
১১টি মন্তব্য
মর্তুজা হাসান সৈকত
শেষটা অনেক বেশী সুন্দর এবং মার্জিত । ভালো লাগা রেখে গেলাম, ভালো থাকুন ।
আদিব আদ্নান
আত্মহননের আত্মত্যাগের বেদনা সুন্দর ভাবেই প্রকাশ করতে পেরেছেন ।
জিসান শা ইকরাম
” ভদ্র সমাজের মানুষেরা পতিতাদের
মানুষের দলেই রাখেন না। তবে সেই ভদ্র মানুষ
গুলোয় তাদের নোংরা খায়েস পূরণের জন্য
ছুটে আসে তাদের কাছে।” ———- লেখায় কঠিন বাস্তবতা ।
বৃষ্টিদের নিয়ে লেখা ভালো লেগেছে খুব ।
ছাইরাছ হেলাল
বৃষ্টির আড়ালে কান্নার তীব্র স্পষ্টতা অনুভব করতে পারছি ।
মিসু
ভালো লেগেছে খুব ।
যাযাবর
সমাজের আড়ালে থাকা বৃষ্টির কথা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ভালো লিখেছেন।
শিশির কনা
শেষটুকু পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো ।
অন্তরা মিতু
সমাজের মধ্যেই গোপন কিন্তু সবার পরিচিত এই অধ্যায় নিয়ে লেখার সাহস আমার আজ পর্যন্ত হয়নি, চেষ্টা করেছি বহুবার…… যারা লিখেছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অসীম….
সুখী মানুষ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ…. আপনার লেখাটি খুব দীর্ঘ নয় , কিন্তু এইটুকুতেই সেক্সওয়ার্কারদের জীবনের সীমাহীন অশেষ সমাধানহীন পরিণতির চাপাকষ্ট আপনার লেখায় নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে…..
আরেকটা কথা না বললেই নয়… আপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে দৃশ্যগুলো আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি…….
বনলতা সেন
বৃষ্টি বর্ষার জীবন কথায় বাস্তবতা ছড়িয়ে আছে ।
ব্লগার সজীব
অন্তরা মিতু খুব সুন্দর করে লিখেছেন লেখা সম্পর্কে , এর বেশী আর কি বলা যায় । অনেক ভালোলাগা জানালাম।
খসড়া
বাহ দারুন তো।