মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে নাহিদের,ঘুমঘুম চোখে জানলার পাশে দাড়িয়ে আকাশে দেখে একরাশ কালো মেঘের ঘনঘটা।কিন্তু মনটা আজ খুব ভালো তার, চারদিন পরেই মনের মানুষটিকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে। অতীত স্মৃতি আজ তার কাছে যেন রুপকথার কোন গল্প মনে হচ্ছে। যেদিন প্রথম ক্যাম্পাসে রুপাকে দেখে সেদিন দুচোখ আটকে যায় তার,বৃষ্টিস্নাত এইদিনে যেন রুপকথার কোন পরী নেমে এলো পৃথিবীর বুকে। রুপাকে ভেবে গত কয়েক রাত তার ঘুম হয়নি,সামনে পরীক্ষা বইয়ের পাতা খুললেই যেন দেখে রুপার ছবি।নাহিদ কেমেস্ট্রির ছাত্র, রুপা চারুকলার। দুজনের তেমন দেখা হতো না,তবু ও রুপাকে ভেবে গত দুইটি বছর শুধুই স্বপ্ন বুনেছে নাহিদ,মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারেনি। দুচোখে দৃষ্টির সীমানায় শুধু রুপা আর রুপা। একরাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যেভাবেই হোক রুপাকে মনেরকথা জানাতে হবে। সারারাত জেগে মনের মাধুরী মিশিয়েএকটি চিঠি লিখে। পরের দিন সকালে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশে মেঘের গর্জন। যদি রুপা ফিরিয়ে দেয় তবুও ভয়ে ভয়ে রুপার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,হাতে একগুচ্ছ লাল গোপাল আর বুকপকেটে চিঠিটা।গোলাপ গুচ্ছ গুলো রুপার হাতে দিতেই রুপা বলে উঠে।
-এইগুলো কি জন্য?আমি আপনাকে চিনিনা।
-আমি নাহিদ, এই ভার্সিটির কেমেস্ট্রির ছাত্র। গত দুইটি বছর ধরে শুধুই আপনাকে ভেবেছি,মুখ ফুটে কখনও কিছু বলার সাহস পায়নি।এই নিন চিঠি পড়ে আমাকে জানাবেন । আগামীকাল এইখানে আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো।
ফুল গুলো হাতে নিয়ে দ্রুত চলে যায় রুপা।
মেঘের গর্জন আজ যেন ভয় হচ্ছে নাহিদের, দুচোখে পাতা এক করতে পারেনি সারারাত, শুধুই রুপা আর রুপা। অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে, শ্রাবনের আকাশ যেন সকাল থেকে শুধুই কেঁদে যাচ্ছে। সকাল হতেই রেডি হয়ে রুপার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু রুপা আসে না,নাহিদের শ্বাস যেন দ্বীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়। ক্লাসের সময় তো চলে যাচ্ছে রুপা এখনও আসল না কেন! অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও রুপা যখন এলো না।নাহিদ নিজের রুমে এসে কাঁদতে থাকে, চোখের জল যেন আছ শ্রাবনের বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে নাহিদ।নরম হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে নাহিদের, চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রুপা তার পাশে! নাহিদ হতবাক! নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখেএকি স্বপ্ন না সত্যি। রুপা বলে উঠে তোমার চিঠি পড়ে গতকাল রাতে একাএকা কেঁদেছি নীরবে। সকালে দেখা করিনি ইচ্ছে করে তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য। আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসার মানুষ হয়ে তুমিই এলে,তোমার ভালোবাসা দেখে সত্যি আমি অভিভূত। আমি চাই তোমার মত কেউ একজন আমার জীবন সঙ্গী হোক। নাহিদ আনন্দে আবার কেঁদে যাচ্ছে ,এতবেশি সুখী পৃথিবীতে আর কেউ কি আছে? রুপার হাত ধরে নাহিদ বলে চল না আজ একটু বৃষ্টিতে ভিজে মনের সুখে জীবনের গল্প বলি। নাহিদের কথা রুপা রাখলো।নাহিদের আজ গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে “আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম, শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যা টুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম “।
মা আবারও ডাকছে।
-কিরে নাহিদ কত কাজ তুই এখনও ঘুমে।
-আসছি মা।
চারদিকে আলোকিত নিয়ন আলোয়,আজ রুপা নাহিদ জুটির বিয়ে।সন্ধ্যায় দুজন যখন বরবধূ সেঁজে বিয়ের আসরে বসে আছে তখনও বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। নাহিদ রুপার হাত ধরে বলে, আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকে বৃষ্টি আমাদের কি সুন্দর ভাবেই না বরণ করে নিয়েছে।রুপা হেসে উঠে বলে চল না, আজও একসাথে দুজন বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিকে ধন্যবাদ দিয়ে আসি, নাহিদ হেসে বলে আজ না,অন্য আরেক দিন। আজ তো আমাদের শুভবিবাহ।
১২টি মন্তব্য
মিথুন
বিয়ের দাওয়াত কিন্তু পাইনি 🙂
ভালো লেগেছে গল্প.
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
বৃষ্টি ভেজা কোন সন্ধ্যায় :T দাওয়াত রহিল। :p
তন্দ্রা
খুব ভালো লেগেছে মনের মাধুরী দিয়ে নিজের মনটায় রাংগালে আমিও রাংগালাম আপনার লেখায় কিন্তু বাস্তবে পাইব না। জানি আর আমিত নাহিদ না হা হা আহা হা আহা আহা হাআ …………………… \|/
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
চাইলে কি আর সব হয় তন্দ্রা,শুভেচ্ছা -{@
ব্লগার সজীব
দাদা খুব ভালো লিখেন আপনি । আপনার লেখা পড়ে শিখছি । একদিন আমিও এমন গল্প লিখবো 🙂
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
আমি নতুন তাই কতটুকু ভালো লিখি জানিনা,শুভেচ্ছা আপনাকে। -{@
নীলকন্ঠ জয়
শীতের ভিতর ভালোবাসার বৃষ্টি নামিয়ে দিলেন? শুভ বিবাহ বার্ষিকী। -{@
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
শীতের দিনে বৃষ্টিকে মনে রাখার চেষ্টা মাত্র। ধন্যবাদ জয় দাদা। :T দাওয়াত চেয়েছিলাম আপনার কাছে, ভুলে গেলেন :p
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর লেখা ।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
ধন্যবাদ জিসান দাদা।
খসড়া
সুন্দর লেখা ও পরিচ্ছন্ন লেখা।
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
ধন্যবাদ -{@