আমরা তরুন প্রজন্ম ।আমাদের সামনে অপার সুযোগ। আমরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে, দেশ নিয়ে ,সমাজ নিয়ে অনেক ভাবি। আবার অনেকে ভাবনার মধ্যে আটকে না থেকে ভালো ভালো অনেক কাজও করে। কিন্তু বৃদ্ধ মা বাবার কথা কি আমরা ভাবি?? বা কতটুকু ভাবি?? আমার ফেসবুক বন্ধু Muhd Anwar Hossain এর একটি স্ট্যাটাস এ উঠে এসেছে বৃদ্ধ মানুষদের এক দুঃসহ যন্ত্রণার কথা। ওনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য অনেক,এমনকি আমরা একজন আরেকজনকে ঠিকমত চিনিও না। তা হলেও তার এই লেখাটি আমার হৃদয় ছুয়ে গেছে। তাই ওনার অনুমতি নিয়ে লেখাটি ব্লগে প্রকাশিত করলাম।
বৃদ্ধ নিবাস বলতে আমরা সাধারনত বুঝি, যে সমস্ত বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাদের নিজেদের বাড়ীতে থাকার ব্যবস্থা নেই বা যেকোন কারনেই হোক তাঁদের ছেলেমেয়েরা তাঁদের বাড়ীতে না রেখে অসহায় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাদের জন্য রাস্ট্রীযভাবে বা কোন দানশীল ব্যক্তি কতৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রদ্ধ নিবাসে বা আশ্রমে রেখে আসে। মাঝেমাঝেই এসব বৃদ্ধ নিবাস সম্পর্কে খবরের কাগজে নানা খবর প্রকাশ করা হয়।
গতকাল হতে আমার চোখে নতুন এক বৃদ্ধ নিবাস বা ওল্ড হোমস্ এর চেহারা ভেসে উঠছে।আমার সরকারীচাকুরী হতে অবসরপ্রাপ্ত সেজ ভাইয়ের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটি বিবিএ এবং ওর বউও বিবিএ। দু’জনেই প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরী করত। ৩ মাস আগে উচ্চ শিক্ষার নামে ওরা জার্মানি চলে গেছে।
মেয়ে সদ্য এমবিবিএস। গত মাসের শেষদিকে আমিরিকায় উচ্চ শিক্ষা অধ্যয়নরত এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।মেয়ে গতকাল স্বামীর কাছে আমিরিকায় চলে গেল।
আমরা ৬ ভাইবোন একই বাড়ীতে থাকি ভিন্ন ভিন্ন এপার্টমেন্টে। আমি দেখেছি ছেলেমেয়েদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমার ভাই ও ওর ওয়াইফ কত মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে, ওদের চোখের পানি নাকের পানি এক হয়েছে। কিন্তু সে ছেলেমেয়েরাই চলে গেল সাত সমুদ্র তের নদীর পারে। ওরা দুজন একা হয়ে গেল।ওদের কোন বিপদে আপদে ছেলেমেয়েদের পাশে পাবেনা। যদিও আমরা ভাইবোনেরা একই বাড়ীতে থাকি, কিন্তু ভাইবোন কি ছেলেমেয়েদের অভাব পূরণ করতে পারবে ? কোন কোন বাবা মা হয়তবা এ অবস্থায় বুক ফুলিয়ে বলবেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা ইউরোপ আমিরিকায় থাকে”।
অনেক ভিভিআইপি বন্দীদের সরকার বন্দীর নিজের বাড়ীকে সাব-জেল ঘোষনা করে ঐ বাড়ীতেই বন্দী করে রাখে।যেমন, পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক পারভেজ মোশারফকে তাঁর নিজের বাড়ীতেই বন্দী করে রেখেছে ঐ বাড়ীটিকে সাব-জেল ঘোষনা করে। আমার ভাই নিজের বাড়ীতে থেকেও আমার মনে হচ্ছে ওর ছেলেমেয়েরা ওদের বৃদ্ধ নিবাস বা ওল্ড হোমস্ রেখে গেছে। ছোট ভাইয়ের কথা ভেবে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে।
Muhd Anwar Hossain এর ফেসবুক লিংক
১৮টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
নিজেকে ওই বাবা বা মায়ের জায়গায় দাঁড় করিয়ে ভাবতে পারার
সাহস নেই ।
"বাইরনিক শুভ্র"
আমারও নেই ।
জিসান শা ইকরাম
খুব কঠিন এবং নিঃসঙ্গ জীবন
নিজের বাড়িতেই একা নিঃসঙ্গ দুঃসহ জীবন ।
ভাবা কষ্টকর ।
"বাইরনিক শুভ্র"
মৃত্যুর আগেই কবরের নিরাবতা ।
ছাইরাছ হেলাল
এখানে দু’টি বিষয় পাশাপাশি ।
বাবা মায়ের জীবন ও সন্তানদের জীবন ।
শেষ ও শুরুর দ্বন্দ্ব ।
দু’টি কঠিন সত্যের সমন্বয় সহজ নয় কোন ভাবেই ।
এটিকে বলা হয় এম্পটি বার্ড নেস্ট সিনড্রম , অনেক আলোচনা পড়েছিলাম ।
সহজ কোন সমাধানে পৌছাতে পারেনি ।
"বাইরনিক শুভ্র"
এই সমস্যার সমাধান বের করা আসলেই কি অসম্ভব ??
বনলতা সেন
লেখাটি পরে মন খারাপ হয়ে গেল ।
কিন্তু উত্তরণের কী পথ তা আমাদের জানা নেই ।
"বাইরনিক শুভ্র"
হুম। তবে বাবা মায়ের প্রতি আমাদের সবার একটু বেশি যত্নশীল হওয়া উচিৎ ।
মিসু
এ এক ভীশন শুন্যতা ।
"বাইরনিক শুভ্র"
মৃত্যুর আগের নিরাবতা আসলেই সহ্য করা কঠিন ।
অন্তরা মিতু
আসলে এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বোধ কাজ করে…. এই মূহূর্তে ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছি না….. আসলে ওল্ড হোম সম্পর্কে এদেশে যে ঋণাত্মক চিত্র আছে, তার কারণ মূলত আমাদের যৌথ পরিবারের মানসিক অভ্যাস…..
আসলে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না… তবে খুব মনে হয়, বৃদ্ধ পিতা-মাতা-পিতামহ-মাতামহী এই মানুষরা যখন আমাদের (আমাদের=উনাদের সন্তান-পৌত্র-পৌত্রী..) ঘিরে থাকেন একই ছাদের নীচে, তখন আমরা তাদের কতটা সম্মান/মূল্যায়ন করি? একসাথে থাকা হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের সন্তুষ্টির কথা কতটা ভাবি? শুধুমাত্র খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা ছাড়া আমরা তাদের আর কোন চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করি? এমন কয়টি পরিবার আছে যেখানে উনাদের বন্ধুরা মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে পারেন? বা, পুরোনো দিনের মুভি দেখার জন্য কেউ টিভিকে উনাদের হাতে ছেড়ে দেন কয়জন?
বৃদ্ধনিবাসের প্রয়োজনীয়তা কতটা আছে বা নেই জানিনা, তবে এইটুকু নিশ্চিত, বয়স্কদের সমবয়সীদের সাথে সময় কাটানো বা বিনোদনের সুযোগ এদেশে কম, পরিবারেরে সাথে থাকুন আর একাই থাকুন…. আমার সবসময়েই মনে হয়, এমন একটি জায়গা থাকা দরকার যেখানে বৃদ্ধরা সপ্তাহে একদিন বা নিজেদের সুবিধা অনুয়ায়ী সময়ে একত্রিত হবেন, গল্প করবেন, স্মৃতিবিজড়িত হয়ে উঠবেন…… এতে তাদের মন আনন্দিত থাকবে এবং শরীরী সুস্থতা বাড়বে।
এখানে আরেকটি বিষয়, লেখায় ৩টি উদাহরণ টানা হয়েছে যেখানে সন্তানরা প্রবাসী হয়েছেন….. আচ্ছা এটা আদৌ কি কোনো অভিযোগ? প্রচুর উদাহরণ আছে, সন্তানরা অন্যদেশে যেয়ে সুযোগ আসা মাত্রই (হয়তো ৩/৪/৫ বছর পরে) মাতা পিতাকে নিজেদের কাছে নিয়ে যায়। আর এই দেশের অনিরাপদ প্রেক্ষাপটে সন্তানদের বাইরে যাওয়াই তাদের ভবিষ্যত তৈরি ও অনাগত প্রজন্মের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন অভিবাবকরা। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে কোনো দূরত্ব তৈরি হয় না। মা-বাবার বিপদে তারা শারীরিকভাবে পাশে না থাকলেও দূর থেকেই সামর্থ অনুযাযী করে,বেশিরভাগ সময়ে চলেই আসে । না আসার আরেক কারণ থকে যে, যে টাকা দিয়ে তারা দেশে আসা যাওয়া করবে, তা খরচ করল হয়তো চিকিত্সার টাকায় টানাটানি পড়বে, তার চেয়ে ওই টাকা ক্যাশ পাঠানোর সিদ্ধান্তই গ্রহণযোগ্য । আবার অন্য উদাহরণও আছে যেমন একই ছাদের নীচে রেখেও সন্তান পিতা মাতার প্রতি অবিশ্বাস্য খারাপ আচরণ করে… শুধু খাওয়া-পরা দিয়েই মনে করে সব দায়িত্ব শেষ হলো………
আসলে সন্তান দূরে থাকবে বা কাছে থাকবে, তার উপর মাতা পিতার সাথে সম্পর্ক এবং আন্তরিকতা নির্ভর করে না । সবকিছু নির্ভর করে, মানুষ কি চায়, সে কতটা শ্রদ্ধা সম্মান করে মা-বাবাকে, তার উপর । বাপের জমি-বেচা টাকায় বিদেশে যেয়ে পরিবারের কোনো খোঁজ রাখে না, এমনও আছে, আবার প্রথম সুযোগে বাইরে নিয়ে যায় এমনও আছে…
লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ……. লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা এমন একটি বিষয়কে উপস্থাপনের জন্য…..
"বাইরনিক শুভ্র"
লেখাটি আমার না, কপি করা। তাই লেখক আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমি বলতে পারব না। অসহায় অবস্থায় মানুষ তার প্রিয়জনকে পাশে পেতে চায়, অনেক সময় আর্থিক সহায়তার চেয়ে পাশে থাকাটাই বেশি আনন্দদায়ক হয় । বড়রা যেমন শিশুদের মানসিকতা বুঝে তাদের সাথে মেশে , তেমনি বৃদ্ধরাও আমার মনে হয় তাদের সন্তানদের কাছ থেকে এমনটাই আশাকরে । এবং এটা অন্যায় নয় ।
অন্তরা মিতু
একটি বাক্য আমার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে – “৩ মাস আগে উচ্চ শিক্ষার নামে ওরা জার্মানি চলে গেছে।” ….
উচ্চ শিক্ষার নামে=???
মানে, আসলে পড়তে যায়নি?
“পাঠ্য বই পড়ার নামে গল্পের বই পড়ছে….” এর অর্থ , এক কাজের কথা বলে আরেক কাজ করা যে বিষয়টিতে লুকানোর বা অন্যায়ের কিছু আছে…..
কিন্তু স্টুডেন্ট ভিসায় কোথাও যাওয়ায় অন্যায়টা কি, ঠিক বুঝলাম না, হয়তো আমারই বোঝার অক্ষমতা….
"বাইরনিক শুভ্র"
বাংলাদেশে কিন্তু আমরা বসবাস করি ।কিন্তু যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায় তারা কিন্তু আর ফিরে আসে না। বাংলাদেশে বসবাস করার কথা শুনলে আঁতকে ওঠে । হয়ত তিনি এটাই বুঝাতে চেয়েছেন ।
শিশির কনা
মনটা খারপ হয়ে গেলো । এমন অবস্থা তো আমারো হতে পারে কোন একদিন ।
"বাইরনিক শুভ্র"
হতেই পারে ।
প্রজন্ম ৭১
একটি নতুন চিন্তার ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলো , এভাবে আমরা কেউ ভাবিনি এতদিন। লেখককে ধন্যবাদ যে ভাবনার সুযোগ করে দিয়েছেন।
লীলাবতী
মন খারাপ হয়ে গেল ভাই । আমার বাবা মাও কিছুটা এভাবেই থাকেন । যদিও আমরা ভাইবোন দেশে থাকি।