কিছুদিন আগে মজনু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী মনোয়ারা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে, আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
যে স্ত্রী মজনুকে ভীষণ ভালোবাসতো, তার এই অপমৃত্যুতেও যেন মজনুর তেমন মাথাব্যথা নেই। সে বরং তার তৃতীয় বিয়ের পরিকল্পনায় মগ্ন।
মজনু মিয়ার বয়স ৬২ বছর। গ্রামের সবচেয়ে ধনী আর প্রভাবশালী লোক সে। তার কথায় গ্রামবাসী ওঠে আর বসে। তবে লোকটার বৌ ভাগ্য ভাল না। আগের দু টা বউ ই আত্মহত্যা করেছে।
প্রথমটার নাম ছিল তাহেরা। খুব সহজ সরল মহিলা ছিল। মজনুকে বাঘের মত ভয় পেত। দিনরাত মজনুর সেবায় মগ্ন থাকতো। কিন্তু মজনুর অত্যাচারে কীটনাশক পান করে কোনো এক পূর্ণিমার রাতে আত্মহত্যা করেছিল।
তাহেরা কিংবা মনোয়ারার ভালোবাসা মজনু মিয়াকে কখনোই আকৃষ্ট করতে পারেনি। এসব নিয়ে মজনু মিয়ার ভাবনারও সময় নেই। নিজের প্রভাব, প্রতিপত্তি আর পুরুষত্বে তার অগাধ বিশ্বাস।
মজনু মিয়া প্রায়ই তার বন্ধুদের বলে,
“আরে মিয়া, বউ হইলো গিয়া স্যান্ডেলের মত। সব সময় পায়ের নিচে রাখবা, আর মাঝেমধ্যে পাল্টাবা”
মজনু কারণে অকারণে বৌ গুলোকে ইচ্ছেমত পেটাতো। মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেও পেটাতো। তার এই অমানুষিক অত্যাচার সইতে না পেরেই বৌ গুলো যে আত্মহত্যা করেছে, সেটা সবাই জানে। কিন্তু ভয়ে কেউই কিছু বলেনা।
দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার ৪৩ দিনের মাথায় মজনু মিয়া তৃতীয় বিয়ের জন্য কনে ঠিক করে ফেলে। কনের নাম নাহার। বয়স ১৮/১৯ হবে। বৈশাখের ১৭ তারিখ মজনু মিয়া বর বেশে বৌ আনতে রওনা দেয়। সাথে প্রায় ৫০/৬০ জন বরযাত্রী। তরুণী বৌয়ের স্বপ্নে বিভোর মজনু মিয়া, যাত্রাপথে বুকে বেশ ব্যথা অনুভব করে। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে, সবাই তাকে গঞ্জের হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার জানায় মজনু মিয়া স্ট্রোক করেছে। তার শরীরের অর্ধেক প্যারালাইজড হয়ে গেছে। আর ডাক্তার এটাও জানায় যে, মজনু হয়তো আর কখনো ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারবেনা।
মজনু মিয়ার আর তৃতীয় বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। ঠিক ১ বছর পর ১৭ই বৈশাখ, বিছানায় শুয়ে প্যারালাইজড মজনু উদাস ভঙ্গিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। বাগানের কাঠ বাদাম গাছটিতে বসে দুটি ঘুঘু অদ্ভুত ভঙ্গিতে ডাকছিল। বড্ড মায়ার সে ডাক!
আগের দু বউয়ের কথা মাঝেমধ্যে মজনুর খুব মনে পড়ে। কী যত্নটাই না করতো তারা মজনুর! মুখ খোলার সাথে সাথে মজনুর ইচ্ছে পূরণ করতে তারা সদা সচেষ্ট থাকতো।
আজ অথর্ব মজনুর দেখাশোনার জন্য দুজন বেতন ভোগী লোক রাখা আছে। কোনো প্রয়োজন হলে মজনু মুখ দিয়ে পশুর মত ঘোৎ ঘোৎ আওয়াজ করে, কিন্ত মজনুর চাওয়া বুঝতে ওদের অনেক সময় লাগে। যেন ওদের করুনায় আর অবহেলায় ই বেঁচে আছে মজনু। মজনুর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। প্রতাপশালী মজনুও আজ বুঝতে পারে, টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে হয়তো সেবা কেনা যায়, কিন্তু ভালোবাসা ভিন্ন জিনিস। ভালোবাসা কেবল ভালোবাসায়ই বিনিময় যোগ্য।
#নোট_: মানুষের শক্তি, ক্ষমতা কিংবা প্রতিপত্তি কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এগুলোকে চিরস্থায়ী ভেবে প্রায়ই হিংস্র জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করে। তবে ‘সময়ের প্রতিশোধ’ বলে একটা কথা আছে। সময় তার হিসেব একদিন ঠিকই মিলিয়ে নেয়। আপনার প্রতিটি অন্যায় আচরণের হিসেব, আপনি কড়ায়গণ্ডায় একদিন অবশ্যই ফেরত পাবেন। কারণ সময় এবং নিয়তি কখনোই পক্ষপাতিত্ব করেনা।
৬টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার লিখেছেন।সময় এবং নিয়তি কখনোই পক্ষপাতিত্ব করেনা। টাকা পয়সা ধন দৌলতে আর সব কিছু কিনা গেলেও ভালোবাসা কেনা যায় না।
নুর হোসেন
মজনু মিয়া প্রায়ই তার বন্ধুদের বলে,
“আরে মিয়া, বউ হইলো গিয়া স্যান্ডেলের মত। সব সময় পায়ের নিচে রাখবা, আর মাঝেমধ্যে পাল্টাবা”
-আফসোস শয়তান মজনু বউয়ের মিনিং জানেনা!!
নইলে স্ত্রীর মত পবিত্র সম্পর্কে কেউ এমন উপদেশ দিতো না।
-সাজেশন, মাফ চেয়ে নিচ্ছি প্লীজ।
ভাই গল্পের উদ্দেশ্য/ঘটনা চমৎকার লিখেছেন;
তবে, একাধিক স্হানে “মজনু মিয়া” পড়ে পড়ে সুন্দর গল্পটা মজনুর রচনা হয়ে গেছে।
স্পাইলিং অবজেক্ট অদারস করলে ভাল হতো।
জিসান শা ইকরাম
বউ পিটানো মানুষ এই যুগেও আছে, শিক্ষিত সমাজেও আছে।
টাকা দিয়ে সেবা কেনা যায়, ভালোবাসা কেনা যায় না।
গল্প ভালো লেগেছে।
সঞ্জয় মালাকার
মজনু মিয়া প্রায়ই তার বন্ধুদের বলে,
“আরে মিয়া, বউ হইলো গিয়া স্যান্ডেলের মত। সব সময় পায়ের নিচে রাখবা, আর মাঝেমধ্যে পাল্টাবা”
টাকা দিয়ে সেবা কিনা যায়’না, সবি আফসোস একে বলে যেমন কর্ম তেমন ফল,
ভালোবাসা বুঝে-না ভালো বাসতে জানেনা।
কামাল উদ্দিন
‘সময়ের প্রতিশোধ’ এটা বাস্তব কথা। আপনার গল্প লেখার হাত খুবই ভালো……….শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম ভাই।
এস.জেড বাবু
পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে যাদের ভেতর এতো “নিকৃষ্ট ভাবনা” কাজ করে এদের শেষ পরিণতি এমনি-
ভালবাসার প্রতিদান ভালবাসায় হয়- যারা বুঝে, ওরা ভোগ করতে পারে।
অসাধারণ লিখেছেন।
চারপাশে এমন গল্প আজও আছে। শত ধিক্কার এমন বিচারবোধের পুরুষদের।