স

রূপকথার কোন গল্প বা হরর কাহিনী নয়। এসব আমার আমাদের মা বোনদের সত্যি কাহিনী।
আজকে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন । ।
এই বিজয় টা কিভাবে এসেছিল ?
নিচের লেখাগুলো একটু সময় নিয়ে পড়ুন । আশাকরি পড়ার পর মন্তব্য করার কোন ভাষা পাবেন না । ঘৃণার আগুনে জ্বলবে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ । আমি লেখাটা পড়ার পর কতক্ষণ কেঁদেছি মনে নেই ।

মেয়েদের ধরে নিয়ে এসে, ট্রাক থেকে নামিয়ে সাথে – সাথেই শুরু হত ধর্ষন,দেহের পোশাক খুলে ফেলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ধর্ষণ করা হত। সারাটা দিন ধর্ষণ করার পরে মেয়েদের হেড কোয়ার্টার বিল্ডিংএ উলঙ্গ অবস্থায় রডের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখ হত,এবং রাতের বেলা আবারো চলত নির্যাতন। প্রতিবাদ করা মাত্রই হত্যা করা হত,চিত করে শুইয়ে রড, লাঠি, রাইফেলের নল,বেয়নেট ঢুকিয়ে দেয়া হত যোনিপথে,কেটে নেয়া হত স্তন। অবিরাম ধর্ষণের ফলে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলেও থামত না ধর্ষণ ।
– রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সুবেদার খলিলুর রহমান।

২৭ মার্চ,১৯৭১,ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশ ঘর থেকে লাশ ট্রাকে তুলতে গিয়ে একটি চাদর ঢাকা ষোড়শী মেয়ের লাশ দেখতে পান পরদেশী। সম্পূর্ণ উলঙ্গ লাশটির বুক এবং যোনিপথ ছিল ক্ষতবিক্ষত, নিতম্ব থেকে টুকরো টুকরো মাংস কেটে নেয়া হয়েছিল। ২৯ মার্চ শাখারীবাজারে লাশ তুলতে গিয়ে পরদেশী সেখানকার প্রায় প্রতিটি ঘরে নারী, পুরুষ,আবাল বৃদ্ধ বনিতার লাশ দেখতে পান, লাশগুলি পচা এবং বিকৃত ছিল। বেশিরভাগ মেয়ের লাশ ছিল উলঙ্গ,কয়েকটি যুবতীর বুক থেকে স্তন খামচে, খুবলে তুলে নেয়া হয়েছে, কয়েকটি লাশের যোনিপথে লাঠি ঢোকান ছিল। মিল ব্যারাকের ঘাটে ৬ জন মেয়ের লাশ পান তিনি ,এদের প্রত্যেকের চোখ, হাত, পা শক্ত করে বাঁধা ছিল, যোনিপথ রক্তাক্ত এবং শরীর গুলিতে ঝাঝরা ছিল ।
– ডোম পরদেশী।

আমার পাশেই একটা মাইয়া ছিল। দেখতে যেমন সুন্দর, বয়সটাও ছিল ঠিক। আর তারেই সবাই পছন্দ করত বেশি। তাই তার কষ্টও হইত বেশি বেশি। একদিন দুই তিনজন একলগে আহে। এরপর সবাই তারে চায়। এই নিয়া লাগে তারা তারা। পরে সবাই এক সঙ্গে ঝাঁপায় পড়ে ঐ মাইয়াডার উপর। কে কি যে করবে,তারা নিজেরাই দিশা পায়না। পরে একজন একজন কইরা কষ্ট দেয়া শুরু করে। তখন সে আর সইতে না পাইরা একজনরে লাথি মাইরা ফেলাইয়া দেয়। তারপর তো তারে বাঁচায় কেডা। হেইডারে ইচ্ছামত কষ্ট দিয়ে মাইরা ঘর থাইকা বের হয়ে যায়। আমরা তো ভাবছি,যাক বাঁচা গেল। কিন্তু না, একটু পরে হে আবার আহে,আইসাই বুটজুতা দিয়ে ইচ্ছামতো লাইত্থাইছে। তারপরে গরম বইদা (ডিম) সিদ্ধ করে তার অঙ্গে ঢুকায় দেয়। তখন তার কান্না, চিল্লাচিল্লি দেখে কেডা। মনে হইছিল যে, তার কান্নায় দেয়াল পর্যন্ত ফাইটা যাইতেছে। তারপরেও তার একটু মায়া দয়া হলো না। এক এক করে তিনটা বইদা ঢুকাল ভিতরে। কতক্ষণ চিল্লাচিল্লি কইরা এক সময় বন্ধ হয়ে যায় –

তার পরের দিন আবার হেইডা আহে। আর কয় চুপ থাকবে। চিল্লাচিল্লি করলে বেশি শাস্তি দিব। সেই মেয়ের কাছে গিয়ে দেখে তার অবস্থা খুব খারাপ। তখন বন্দুকের মাথা দিয়ে তার ভেতরে গুতাগুতি করছে। আরেকজন তার পেটের উপর খাড়াইয়া বইছে। আর গড় গড়াইয়া রক্ত বাইর হইতেছে। যেন মনে হয়,গরু জবাই দিছে। সে শুধু পড়েই রইল।প্ রথমে একটু নড়ছিল পরে আর নড়ল না। তারপরেও তার মরণ হইল না। ভগবান তারে দেখল না। এমন কত রকম নির্যাতন করে প্রতিদিন। এই অবস্থায় বাইচা ছিল সাত-আট দিন। পরের দুই দিন চেতনা ছিল না। এক সময় অবশেষে মরল –
– কিরণ বালা ( ভালুকা,ময়মনসিংহ )

কুত্তাগুলো আইসাই ঘরে ঢুকে পড়ে এবং আমাকে ডাক দিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। আমি তো ঘরে ঢুকি না। তখন ভয় দেখায় মাইরা ফেলবে। আমি আস্তে আস্তে দরজার কাছে যেতেই ছুঁ মাইরা ঘরে নিয়া যায়। কোলের বাচ্চাটাকে একজন ফেলে দেয়। আরেকজন কাপড়-চোপড় ধইরা টানাটানি শুরু করে। আমি চিল্লান দিতে চাইছি তখন আমার মুখ চেপে ধরে কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে শুরু করে ধর্ষণ। অন্যজন তখন দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। এভাবেই তারা আমার উপর নির্যাতন করে। এক ফাঁকে আমি অতিকষ্টে চিল্লাচিল্লি শুরু করি। তখন আমার আব্বা আসছিলেন। পায়খানায় গিয়েছিলেন, সেইখান থেকে। আব্বা যখন আমার দিকে আসছে,তখন আব্বার মাথায় বন্দুক ধরে আর বলে নড়লে গুলি করে দিব। আমাকেও বলে,যদি কোন শব্দ করি তবে গুলি করে দিবে। আমার ভাই পশ্চিম ঘর থেকে বাইরে দৌড় দিচ্ছে তখন তারা অন্য ঘরে ঢুকে। দুই জন তো আগে থেকেই ছিল ঐ ঘরে। এই ফাঁকে আমি পালাই পাটক্ষেতে, নির্যাতনের পরে। পালাবার সময় আমার পরনের কাপড়টা তুলে নিয়া যাই –

সকালে নাস্তা খাইয়া, গুছায়া-টুছায়া ঘরে যাব। স্বামীও চলে গেছে কাজে। তখন তারা আসে। যখন নির্যাতন করে তখন কেউ ছিল না। আর থাকলেই বা কি করার ছিল? না কিছুই করতে পারতো না। ছোট বাচ্চাটাতো কোলেই ছিল। আর বড় বাচ্চাটা মোহাম্মদ আলীর বয়স তখন ৭/৮ বছর হবে। আলী ভয়ে ঘরে চৌকির তলে ঢুকে ছিল। নির্যাতনের পর ঘরের সব জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলেছিল। মনে হয় কিছু তল্লাশি করছিল। ছোট বাচ্চাটা সেই থেকে অসুখে ভুগতে ভুগতে শেষ হইয়া যাবার ধরছে। বহু টাকা খরচ করে ভালো করছি। আর আমার পেটে যে আর একটা বাচ্চা ছিল সাত মাসের,এই নির্যাতনের দুই দিন পরে পেটেই বাচ্চাটা মারা যায়। সেটাও ছেলে ছিল। শুধু নির্যাতন করে নাই ছুরি চাক্কু দিয়েও মারছিল। অনেক মার মারছে। তার ওপর আবার প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাকে নির্যাতন করে –
– খতিনা ( হাতীবান্ধা,লালমনিরহাট )

আমার তখন একেবারে কাঁচা নাড়, ৩ দিন বয়স মেয়েটার। তখন আমার ওপর চলে এই অত্যাচার। আমি বসে বসে বাচ্চার তেনা ধুইতেছিলাম কলের পাড়। এইখানে ফালাইয়া আমার ইজ্জত মারে ঐসব জানোয়ার। মানুষ তো ছিল না। দেখতে যেমন শয়তানের মতো লাগছে,পরছিল কেমন পোশাক জানি। কাজগুলোও করছে শয়তান-জানোয়ারের মত। কোন মানুষের পক্ষে এই সময় এই কাজ করা সম্ভব নয়। আমি তো বসে বসে তেনা ধুইতেছি। হঠাৎ দেখি, হারামজাদা কুত্তাগুলো লাফাইয়া লাফাইয়া এসে আমার উপর পড়ছে। প্রথমে আমি তো ভয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করি। তারপর শুরু করে। আমি কিছু বলার, কওয়ার সুযোগ পাই নাই। আমার চিল্লাচিল্লিতে তখন অনেক লোক জড়ো হইছে ঠিকই। কিন্তু সবাই খাড়াইয়া খাড়াইয়া তামাশা দেখছে। কেউ আসেনি এগিয়ে হামারে সাহায্য করতে। এক সময় আমি মরার মতো অজ্ঞান হয়ে যাই। কতজন,কতক্ষণ তারা এইসব করছে আমি জানি না, আমার যহন জ্ঞান আইছে তখন দেহি,আমি ঘরে,আমার স্বামী আছে পাশে বসা। যখন এই ঘটনা ঘটায় তখন আমার স্বামী বাড়ী ছিল না,বাজারে গেছিল। কে বা কারা আমারে ঘরে আনছে, তারে খবর দিছে কিছুই কইতে পারি না। পরে ডাক্তার আইনা চিকিৎসা করিয়ে বহুদিন পরে হামারে সুস্থ করে। পরে শুনছি লোকমুখে তারা নাকি ৪/৫ জন ছিল। সবাই নাকি এই কাজ করেছে। আর বাইরে পাহারা দিতেছিল কয়েকজন। পরে কোন দিক দিয়ে কখন যায়, কিছু আমি জানি না। একে তো আঁতুর ঘরে কাঁচা নাড় তার ওপর আবার শত শত লোকের সামনে এই কর্মকাণ্ড করেছে। শরীরের অবস্থা কি,মনের অবস্থা কি,ঘর থেকে আর বাইরে বের হবার মতো পরিবেশ রাখেনি। এক দিক দিয়ে লজ্জা,অন্য দিক দিয়ে শরীর, কোনটাই ভালো না–
– কমলা ( ছদ্মনাম ) ( হাতীবান্ধা,লালমনিরহাট )

৩০ মার্চ ঢাবির রোকেয়া হলের চারতলার ছাদের উপরে আনুমানিক ১৯ বছরের একটি মেয়ের লাশ পাই মেয়েটি উলঙ্গ ছিল। পাশে দাঁড়ানো একজন পাক সেনা বলে যে – মেয়েটিকে হত্যা করতে ধর্ষণ ছাড়া অন্য কিছু করার দরকার পড়েনি, পর্যায়ক্রমিক ধর্ষণের ফলেই তার মৃত্যু ঘটে। মেয়েটির চোখ ফোলা ছিল, যৌনাঙ্গ এবং তার পার্শ্ববর্তী অংশ ফুলে পেটের অনেক উপরে চলে এসেছে, যোনিপথ রক্তাক্ত, দুই গালে এবং বুকে কামড়ের স্পষ্ট ছাপ ছিল”
– ঢাকা পৌরসভার সুইপার সাহেব আলী।

রূপকথার কোন গল্প বা হরর কাহিনী নয়। আমি এতক্ষন আমার এই বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস বলছিলাম । পতাকার সবুজ এর মাঝে লাল বৃত্তটা যে কত রক্তে ভেজা – আমরা কত্য সহজে সেইটা ভুলে যাই, কত সহজে আমরা বলি, আরে একাত্তরে সামান্য গণ্ডগোল হইছিল, এতদিন পর ওইসব পুরান ঘটনা নিয়ে এতো ফালাফালির কি হল… কত অদ্ভুত আমাদের চিন্তা-ভাবনা, সম্ভ্রম হারানো লাখো মা- বোনের কি বিচিত্র উত্তরসূরি আমরা…

ইতিহাসগুলো এক জায়গায় জড়ো করেছেন – Jannatul Ferdous Punna

৭২৬৯জন ৭২৭১জন
0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ