শপিং শেষ করে অনেকগুলা ব্যাগ হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আজ শহরটা অন্যরকম! চারিদিকে আলোর ছড়াছড়ি! হৈচৈ ঝলমলে ফুটফুটে একটি শহর। ঈদের বাকী একদিন, সবাই ব্যস্ত শপিং নিয়ে। মানুষের কোলাহলে শহরটা অাজ অনেক খুশি। বুঝার কোনো উপায় নেই এখন রাত এগারোটা! সেফ গার্ডের ল্যামপোষ্টগুলো নির্বাক দাঁড়িয়ে অাছে। শহরের কুকুরগুলো এদিক ওকিদ দৌঁড়াচ্ছে গাড়ির বিরক্তিকর শব্দে। মানুষের পায়ের শব্দে পথের ধুলোগুলো লেপ্টে যাচ্ছে শহরের গায়। কেমন এক অদ্ভুত লাগছে প্রাণ প্রিয় শহরটাকে। প্রতিবছর ঈদ আসলেই শহরগুলো যেন প্রাণ ফিরে পায়।
আমি এখন হাঁটছি, সদর হসপিটালের পাশদিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছি। কিছু দূর যেতেই দেখতে পেলাম একটা এম্বুল্যান্স দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসছে হসপিটালের দিকে। আমি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে অাছি! গাড়ির ভেতর কাঁন্নার রোল, গাঁ ঘেষে গাড়িটা চলতেই নাকে এলো তাঁজা রক্তের ঘ্রাণ।! আমি জানিনা আজ কার জীবনের শেষ লগ্ন ফেরিয়ে গেল। জানিনা কোন বাড়ি ফেরত ভাইটা ঈদের আগে রক্তাক্ত ভাবে আহত হল। কৌতূহল করে এগুচ্ছি হসপিটালের দিকে। ইমারজেন্সি রুমের দিকে এগুতেই বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো! শুধু মানুষের কাঁন্না, হৈচৈ আর ছুটাছুটি। কিছু অসহায় মানুষ হসপিটালের বারান্দায় বসে অাছে। কেউ কেউ বসে বসে প্রিয়জনদের সুস্থতার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট গুমরে কাঁদছে।
হসপিটালের পাশেই ছোট একটি ফুটপাত। লক্ষ করলাম একদল ঘরছাড়া মানুষ গায়ে কাপড় দিয়ে শুয়ে অাছে! অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তাদের দিকে। হঠাৎ ছোট একটি শব্দ কান স্পর্শ করলো ‘আম্মা ঈদের জামা কোনদিন কিন্না দিবা? আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম মায়ের উত্তর শোনে চোখ ছলছল করছে! ‘হ মা জামা ত কিন্না দিমু! ঈদ আইতে মেলা দেরি, ঈদ আইলেই তোমারে নতুন জামা কিন্না দিমু।। অথচ ঈদের বাকী একদিন! কী বিস্ময় আর নির্মমতা লুকিয়ে অাছে ছোট একটি কথার ভেতরে। ঠোঁট কাঁপছিলো কী করবো ভেবে পাচ্ছিনা! ইচ্ছে হচ্ছে হাতের সব কয়টা ব্যাগ ওদের বিলিয়ে দেই। কিন্তুু এসব তো আমার জন্য নাহ। বাসায় মা-বাবা,ভাই-বোন ওদের জন্য কিছু কাপড়। মাইনিব্যাগটা খুলতেই মাত্র টকটকে দশটাকার নোট ভেসে উঠলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো এ দৌঁড়ে ব্যাংক থেকে সব টাকা লুট করে ওদের হাতে দেই! নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো তখন। আফসোস আর সীমাহীন কষ্ট নিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে। যখনই হসপিটাল রোড ক্রস করবো ঠিক তখনই বিকট শব্দে পুরো শহর অন্ধকার হয়ে যায়! আল্লাহ রে আমার পুত মুইরা গেছে! তারপর লাশবাহী এম্বুল্যান্সটা তরতাজা লাশটা নিয়ে শহর ফেরিয়ে দূরন্ত ছুটে যায় আপন ঠিকানায়!!
রচনাঃ ০৪ জুন ২০১৯
১২টি মন্তব্য
শাহরিন
সব সময় সম্ভব হয়না সবাইকে খুশি করার, কিন্তু অন্যের ব্যাথায় ব্যাথিত হওয়াই তো মানুষের ধর্ম।
মাছুম হাবিবী
যদি ইচ্ছে হয় ওদের জন্য কিছু করি কিন্তুু সাধ্য নাই। তাই বার বার ফিরে অাসি, অনেক ধন্যবাদ
তৌহিদ
ইচ্ছে করে অনেক কিছুই, সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কুলায়না। তোমার সকল মনোবাসনা পূর্ণ হোক ন্যায়সঙ্গত ভাবে।
শুভকামনা।
মাছুম হাবিবী
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
আর পারি-না বলেই অব্যক্ত যন্ত্রণা আমাদের বয়ে বেড়াতে হয়।
এ এক কঠিন বাস্তবতা।
শামীম চৌধুরী
ঈদ মোবারক।
আরজু মুক্তা
আমরা যা পারি তাই দিয়ে চলুন তাদের খুশি করি।।
মোঃ মজিবর রহমান
মানুস সেবা করা সাধ্যের দরকার। আবার অনেক গুনাবলিও দরকার। কারন মানুসের ভিতর থেকে অনুভুতি জাগিয়ে টাকা কালেকশন অনেক কঠিন কাজ। একা একা সব সেবা সম্ভব নয়। তাই সব ইছা পুরন নয়। আল্লাহ ইচ্ছা পুরনের সুযোগ দিক।
জিসান শা ইকরাম
ইচ্ছে করে এদের জন্য কিছু করি, কিন্তু করা হয়না নির্মম বাস্তবতায়।
ভালো লিখেছেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
নির্মম বাস্তব লেখনী দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
বাস্তব লিখনী ভাইয়া , ঈদের শুভেচ্ছা রইল🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রতিটি ঈদ এসে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাধ আর সামর্থের বাইরে যেতে আমরা কতটুকু অপরাগ। ছোট বড় পাওয়া আর না করতে পারা কর্ম গুলো আমাদের নিয়ে যায় আরেকটি ঈদ উদযাপনের পথে। গল্প গুলো সব সময় গল্প হয়না, হয়ে যায় জীবনের প্রতিচ্ছবি।
উপলব্ধময় লেখা। ভালো লেগেছে পড়ে। আপনি লেখাটি আরেকবার পড়লে ভালো হয়। কয়েকটি জায়গায় টাইপ মিসটেক হয়েছে। যেমন, এক জায়গায় প এর স্থানে ফ টাইপ হয়েছে। একটু দেখুন প্লিজ।
ভালো থাকবেন। ঈদের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। ঈদ মোবারক 🌹🌹