সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা । এটা কি কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় ? পরিমাপ করার মত কোন যন্ত্র কি এখনও বের হয়েছে ? বা ভাষার কোন ক্ষমতা কি আছে যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় মা কতটা তাঁর সন্তান কে ভালোবাসে ? একজন মানুষ হিসাবে আমি মুর্খ প্রকিতির । আমি হয়ত কখনই বলতে পারব না আমার প্রতি আমার মায়ের ভালোবাসা কত আলোক-বর্ষ জুড়ে ছিল । মা অনেক রকমের হয় , কোন কোন মা নিজের অবৈধ যৌনতা চরিতার্থ করার জন্য সন্তান কে খুন করে । তবে পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ আমার মত ভাগ্যবান/বতী । যারা না চাইতেই ভালোবাসার অনন্ত দুয়ার “মা” পেয়ে যায় ।
আমার মা বলা যায় একদম বীনা কারণে আমার প্রেমিকাকে অপছন্দ করে বসলেন । সভ্যতা প্রেম কে সহজলভ্য করে দিয়েছে । বিড়ি সিগারেটের মত প্রেম সহজলভ্য নয়,তবে খুজলে প্রেম ও কামের ককটেল খুজে পাওয়া এখন খুব কঠিন নয় । এরপরেও ভালোবাসে এবং ভালোবাসি এমন মনের মানুষ খুজে পাওয়া কি এতই সোজা ? মোটেই সহজ নয় । সামান্যে প্রেম বা ভালোবাসার দেখা পাওয়া যায় না । তাই তো শত বছর আগে লালন সাই এর রচিত “মিলন হবে কত দিনে” গানটি এখনো কর্পোরেট বাজারে মানুষের মুখে মুখে ফেরে । আমি হয়ত সেই মনের মানুষ বা Soul mate এর দেখা পেয়েছিলাম । প্রথম যখন তাঁর সাথে আমার দেখা হয় তখন সে ছিল নিতান্ত ভয়ে ভীত কিশোরী । ফিরেও দেখি নি , কারণ আমার চোখ ছিল তারই কাজিন সম্প্রতি উড়তে শেখা একটি রঙিন শীতের পাখির উপর । শীতের পাখিটি যে আমাকে অপছন্দ করেছিল তা নয় , তবে শীত ফুরালেই সে উড়ে গিয়েছিল । আর আমিও পরিযায়ী জীবন ছেড়ে বাসায় ফিরেছিলাম । তারপরেও সেই ভীত কিশোরীটির সাথে আমার কিভাবে কি হয়ে গেলে নিজে যেমন বুঝতে পারি নি , আমার ধারনাও সেও গুছিয়ে বলতে পারবে না । “নবীন প্রনয় উদ্যম” ব্যাপারটার মধ্যে আলৌকিক কিছু আছে । আমরা সেই উদ্যমে পৃথিবীর পঙ্কিলতা এড়িয়ে মহাকাশে ভেসেছি বেশ কয়েকটা বছর । তবে দেশটা বাংলাদেশ, বিশ্বটা তৃতীয় বিশ্ব । আর সঙ্গী নির্বাচন করার অধিকার আমরা প্রাক-আর্য যুগেই খুইয়ে বসে আছি । বর্তমানে প্রেম মানেই অপরাধ, সমাজের চোখে যতটা পরিবারের চোখে ঢের বেশি । একসময়ে আমাদের দুই পরিবারেই ব্যাপারটা জানাজানি হল । এবং দুই পরিবারই আমাদের প্রেমের ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে অভির্ভুত হল । অনেক টানা পোড়েন , পারিবারিক শাসন,অপমান , অত্যাচার কোন কিছুতেই যখন আমাদের প্রেম থেমে থাকল না , তখন আমার বাবা-মা বেছে নিল ইমোশলান ব্ল্যাকমেইলিং পদ্ধতি আর তাঁর পরিবার এতেও ব্যর্থ হয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া শুরু করল ——“ছেলে সামলাও,না হলে কাটিয়া ফেলিব,পুতিয়া ফেলিব” । ব্যাপারটায় পুরোপুরি বাংলা সিনেমার ঘ্রাণ আছে । তারা বেশ শিক্ষিত ও স্মার্ট হওয়া স্বত্বেও এই পদ্ধতিটি কেন ব্যবহার করলেন আমি জানি না । আর এটাই কাল হয়ে দাড়াল । আমার মা খোলামেলা ভাবে বলে দিলেন , “ওদের এত দেমাগ আসে কোথা থেকে? আমার ছেলে কি ফ্যালনা? এই শহরে কি আমরা মধুমতির জলে ভেসে এসেছি? কেউ কোনদিন চোখ তুলে তাকাতে সাহস পেলো না,আর কোথাকার কারা এসে এত বড় কথা বলে !!! ওই বাড়ির মেয়েকে ঘরে তো তুলবই না , আর শুভ্র তুই যদি আর পা বাড়াস তাহলে আমাকে মা বলে ডাকবি না” ।আমারা মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও আমার মা গ্রামের বেশ ধনী ও বনেদী বাবার সন্তান । এইসব নিয়ে তাঁর ইগোটা একটু বেশিই ছিল । আর সেই সাথে যুক্ত হল আমার কিছু উটকো আত্মীয় স্বজন । তাদের পরিবার তো পা এগিয়েই দিয়েছিল , আর এদিক থেকে আমার পরিবারও পিছিয়ে যাওয়ার পাত্র নয় । ফলে কামান দাগা চলতে থাকল । যদিও কামান থেকে গোলা বের না হয়ে শুধু ফাকা আওয়াজ হচ্ছিল,আহত-নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছিল না । কিন্তু মাঝখান থেকে ফেঁসে গেলাম আমি আর সে ।
কি মেগা সিরিয়াল টাইপ গন্ধ বের হচ্ছে ? কিছু করার নেই । তবে ঘটনা পুরোপুরি সত্যি । অসহায় প্রেমিক হৃদয় শুধু সমধানের পথ খোজে , অন্য দিকে সম্প্রতি কৈশোর উত্তির্ন প্রেমিকাটি চোখের জল ফেলে । চোখের জলের মুল্য যেমন পৃথিবী দেয় না , একইভাবে প্রেমিকের সমাধান খোজার পথও বার বার পথ হারায় । এভাবেও বেশ কিছুদিন আমাদের প্রেম চলল । ঝড়-ঝঞ্চায় যদিও তরী টালমাতাল হয়েছে বহুবার । কিন্তু শক্ত ভাবে হাল যেমন ধরেছিলাম আমি , অন্যদিকে মেয়েটিও পাল ঠিক দিকে রাখার ব্যাপারে সচেতন ছিল ।
সে এক অসহ্য অনুভূতি । ভবিষ্যতের দিকে তাকালে শুধু নজরে আসে কৃষ্ণ গহব্বর । এদিকে মন কে কোন ভাবেই তাঁর দিক থেকে ঘুরিয়ে রাখতে পারি না । আর মেয়েটি ? বয়সে যুবতী হলেও , কৈশোরে সে যেমন চুপচাপ আমার ঘাড়ে মাথা দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিল । এইসময়েও মনে মনে ভাবত , নিশ্চয়ই আমি কোন পথ খুজে বের করতে পারব । কিন্তু দুই পরিবার এতটাই “ভারত-পাকিস্তান” মুডে ছিল যে আমি চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারতাম আমাদের বিয়ে পারিবারিকভাবে কখনই সম্ভব নয় ।
মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে খুব বেশিদিন বাঁচতে পারে না । একদিন আমার খোলা বুকে মাথা রেখে মেয়েটি বলে বসল “চল আমরা বিয়ে করে ফেলি” ।কাঙ্ক্ষিত গোপন প্রণয়ের পরে প্রেমিকা আলাদিনের চ্যারাগ চাইলেও প্রেমিক তা এনে দিতে ছোটে , আর আমাকে তো সে বিয়ে করতে বলেছে । আর প্রস্তাবটা শোনার পরে আমারও মনে হল আমিও হয়ত এই কথাটি বলতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু কিভাবে ? আমি তখন সদ্য স্নাতক শেষ করেছি । আর মেয়েটি ম্যাডিকেলে ২য় বর্ষ । বিয়ে করে খাওয়াবো কী? থাকব কোথায় ? সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের বয়সটাই তো আমাদের পুরোপুরি হয় নি । কিন্তু তারপরেও এই অনিশ্চয়তা আর কত দিন ? একটা সমাধান তো দরকার । প্রেমের বয়স তখন ৫ বছর ছাড়িয়ে গিয়েছে ।এদিকে মেয়েটির কথা হল “তোমার সাথে গাছতলায়ও থাকতে আপত্তি নেই”,তবে আমার বাস্তব জ্ঞান তারচেয়ে একটু বেশি ছিল । শেষে সিদ্ধান্ত হল আমরা কোর্ট ম্যারেজ করব । তবে বিষয়টা গোপন থাকবে ।
কোর্ট ম্যারেজ করতেও টাকা দরকার । আর আমি ? বিড়ি টানার পয়সার জন্য হাত পাততে হয় না । কিন্তু ৪-৫ হাজার টাকা একসাথে জোগাড় করব কোথা থেকে ? ফলাফলে এক বড় ভাই এর কাছে থেকে ৫ হাজার টাকা ধার নিলাম । কোর্ট ম্যারেজ করার যাবতীয় সব কিছু ঠিক করে ফেললাম । সম্ভাব্য একটি তারিখও ঠিক হয়ে গেলো । মোটামুটি এই নতুন এডভেঞ্চারের জন্য আমরা দুজনেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় রইলাম । এরমধ্যে যে বড় ভাই টাকা ধার দিয়েছিল তিনি ডেকে কিছু অমীমাংসিত সমস্যা আমার সামনে নিয়ে আসলেন । যেমন “বিয়ে জানাজানি হলে দুইজনের কেউই বাড়িতে থাকতে পারব না,তাহলে যদি জানাজানি হয় আমরা কোথায় যাবো” ? “আমার চাকরী নেই,সে তখনও পড়াশুনা করছে।বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে” ? “শত ঝামেলার মধ্যে আমাদের প্রেম অক্ষুন্ন আছে,আর কারো পরিবার থেকেই যখন বিয়ের চাপ নেই,তাহলে এই ঝুকিটা আমরা কেন নিচ্ছি” ? আর এই বলেও আশ্বস্ত করলেন “সময় যেতে দাও । যেহেতু তোমার বাবা-মা শিক্ষিত সেহেতু তুমি গো ধরলে ওই মেয়ে কে মেনে না নিয়ে কোন গতি থাকবে না । আর তোমার পরিবার যদি মেনে নেয় , তাহলে মেয়ের পরিবার মানলেই কী আর না মানলেই কী” ? ওনার কথা আমার যুক্তিযুক্ত মনে হল । এবং আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসলাম । কিন্তু অবুঝ বালিকাটিকে আমি কিভাবে বুঝাই ? কাঠ অনেক পোড়াতে হল । গঙ্গায় পদ্মায় অনেক জল বয়ে গেলো । শেষমেশ মেয়েটিকেও আমি বুঝাতে সক্ষন হলাম ।
কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে মেয়েটির মধ্যে একটা ঊদ্ধত্য ভাব দেখা দিল । নানান রকম বাতিকে সে আক্রন্ত হল । “এখনই খুলনা আসতে হবে,কিভাবে আসবা জানিনা” , “ওই মেয়ে তোমার পোস্টে এত কমেন্ট করে কেন? ওকে আনফ্রেন্ড কর” , “অমুকের বয়ফ্রেন্ড সকালে উঠে চিরতা পাতার জুস খায় তোমাকেও খেতে হবে” ইত্যাদি ইত্যাদি । তাঁর ছেলেমানুষিতে আমার অভ্যাস ছিল । কেয়ার করলাম না , কারণ যে সম্পুর্ন চাল-চুলাহীন একটা ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করতে রাজি হয় , তাঁর ভালোবাসা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করা যায় না । যেখানে ভালোবাসাটাই মুখ্য সেখানে এসব কোন ব্যাপার না । তাই মেনে যেমন নিলাম , মানিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা চালু রাখলাম ।
এর সাথে কোথ থেকে তাঁর দুইজন মন্ত্রক জুটে গেলো । পিরিয়ডের সময়ে কোন ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনবে এটাও যে আমার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করত , সেই মেয়ে তাঁর শিল্পী দি ও বীথি বৌদির কথা ছাড়া আমাকে ফোনে একটা হামি খেতেও এখন রাজি নয় । এটাও সহ্য করছিলাম কিন্তু যখন “বীথি বৌদি বলেছে ২ এর সাথে ২ যোগ করলে ৫ হয় , এটাই তোমাকে মানতে হবে” বা “শিল্পী দি বলেছে সিডনীর রাজধানীর নাম কিডনি,এটাই তোমাকে মানতে হবে” এই ধরনের আচরণ শুরু করল তখন আর সহ্য করতে পারলাম না । প্রেমিক হিসাবে আমি বরাবরই স্বৈরাচারী , আমার মনে হতে থাকলে তাঁকে আমি লাই দিয়ে মাথায় তুলেছি । ফলাফলে আমাদের মধ্যে একদম নিরর্থক বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলতে থাকল । একটা সময় এমন দাড়ালো আমাদের কথার তুলনায় ঝগড়াই বেশি হয় । পরিবার পরিবেশ এমনিতেই বৈরি ছিল,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম “আর না,এবার বিদায়” । কিন্তু পারলাম না , নিজেকে অপরাধী মনে হতে থাকল । জগত সংসার ফাঁকা হয়ে যেতে লাগল । ফলে আবার আমাদের সম্পর্কটা ৯ নাম্বার বাসের মত লক্কড় ঝক্কড় গতিতে চলতে থাকল ।
অভিযোগ দিনে দিনে বাড়তে থাকল । সম্পর্ক থাকলেও আমাদের দুরত্ব বৃদ্ধি পেল । কিছু কিছু বিষয় আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল । শুধু সেই বিষয়গুলোই চলতে থাকল । আর এই ঝাকুনিতে আমার টুনটুনি পাখি, পবিত্র জলের ঝর্না একটা ভুল করে বসল । এমনই একটা ভুল যা আমি মুখ ফুটে কোনদিনই অন্যকাউকে বলতে পারব না । মেয়েদের একটা বড় সমস্যা , নিজের ভুল বুঝলেও এরা স্বীকার করতে যায় না সহজে । অনেকে ভুলটাকেই সঠিক প্রমাণে ব্যস্ত হয় । কেউ কেউ যে ভুল ধরেছে তাঁকে ভুল প্রমাণ করতে যায় । শিশির বিন্দুর মত জ্বলে জ্বলে আমার প্রেমিকা ভুল শিকার করার বদলে বাকি সব কিছুই তাঁর উদ্ধত্যার সাথে করতে থাকল । কোনভাবেই সে স্বীকার করবে না । তাঁর বোন সাক্ষী দিচ্ছে , তাঁর নাচের ম্যাডাম সাক্ষী দিচ্ছে । আমার সাথে ঝামেলার কারণে না খেয়ে থাকছে । পড়াশুনা করছে না । রাতে চিৎকার করে কাঁদছে । এসব দেখে তাঁর মা(যাকে আমি আমার ২য় মা হিসাবে জানি) আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে “কি হয়েছে” ? অথচ সে স্বীকার করবে না ।
আমি সাধু-পুরুষ নই । ভুল কি আমি কখনও করি নি ? হ্যা করেছি । সে যা করেছিল তার চেয়ে ঢের বেশি ভুল বা অপরাধ আমি করেছি । তাই তাঁকে ক্ষমা করতে আমার কোন অসুবিধা ছিল না । শুধু অপেক্ষা করছিলাম তাঁর স্বীকারোক্তির । কিন্তু না , তাঁর তখন মন্ত্রক ছিল , তাঁর তখন স্বৈরাচারীর নেশা ছিল । ফলাফলে একদিন মুখোমুখি আমাদের তুমল লড়াই হয়ে গেল (আক্ষরিক অর্থেই লড়াই) । ঝগড়ায় মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাষা অস্ত্র ব্যবহার করে । যার মধ্যে কিছু শালীন,কিছু অশালীন । রুচি সম্পন্ন বালিকা কোন অশালীন শব্দ ব্যবহার করল না । কিন্তু আমার মাকে নিয়ে কয়েকটা ‘তপ্ত’ কথা বলে ফেলল , যা ভিত্তিহীন ও অবিবেচকের কাজ । আমার তাঁকে অপছন্দ করত , সে কারণে সে অনেক আগে থেকেই আমার মায়ের প্রতি একটু ক্ষিপ্ত ছিল । আজ তা সবিস্তারে আমার সামনে প্রকাশ করে ফেলল । আমি অবাক হয়ে গেলাম । যাকে আমি এতদিন ভালোবেসেছি,এত এত পারিবারিক অত্যাচার সহ্য করেছি , এত এত চোখের জল ফেলেছি সে কি না আমার মাকে নিয়ে !!!…………………………… না নিজেকে সামলাতে পারি নি আমি ।
এরপরে আমি আর কোনভাবেই ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে তৈরি ছিলাম না । ফলাফলে শত সমস্যার মধ্যেও আমাদের যে প্রেম কোনদিন একটুও উচাটন হয়নি সেই সম্পর্কটাই আমি ভেঙে দিয়ে বাড়িতে ফিরলাম । এর আগে যতবার আমাদের বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে ততবারই আমি হাপুস নয়নে কেঁদেছি । হ্যা মোটামুটি রাফ এন্ড টাফ ছেলে হয়েও আমি কেঁদেছি । বন্ধুদের সাথে বসে পার্কে বসেও বাইরের লোকের সামনে আমি কেঁদেছি । এতে আমার লজ্জা নেই কোন , কারণ ভালোবাসার জন্য কেঁদেছি , কয়জন পারে বলেন ? কিন্তু এরবারে আমার একটুও কান্না আসল না । শুধু মনে হতে লাগল “আমি যাকে ভালোবাসতাম সে আমার সাথে এরকম করল” ? “আমাকে একটুও বুঝল না” ? “ভালোবাসার কি মূল্য আমি পেলাম” ? এবং কিছুদিনের মধ্যে আমি আবিষ্কার করলাম ওই মেয়েটির প্রতি আমার সামান্যতম কোন “শ্রদ্ধাবোধ” অবশিষ্ট নেই । যেখানে শ্রদ্ধাবোধ থাকে না সেখানে কি ভালোবাসা টিকে থাকে ? থাকে না । তাঁর প্রতি আমার যে ভালোবাসা ছিল তা কোথায় উড়ে গেলো , কিভাবে বায়বীয় হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না ।
আকাশের মেঘ তো চিরস্থায়ী হয় না । কার কি ভুল তারও একটা উপলব্ধি আসে একসময় । মেয়েটি এর বেশ কিছুদিন পরে তাঁর ভুল বুঝতে পেরে আবার ফিরে আসতে চেয়েছে । মেয়ে যতটা নির্লজ্জ হওয়া যায় ততটা সে হয়েছে । কিন্তু ততদিনে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছিল । আমার মা মেরে গেলেন , এর বাইরেও আমার অনেক কিছু হতে হতেও হল না । বেকারত্ব ঘুচল না । ব্যবসায়িক প্রজেক্ট শুরু করেও পিছিয়ে আসতে হল । যে চাঁদ টাকে দেখে আমার প্রেম পেত,কাম পেত সেই চাঁদটাকেই আমার নির্থক মনে হতে শুরু হয়ে গিয়েছিল । এরকম একটা সময়ে পুরানো প্রেমিকা যতই নেশাদায়ক হোক না কেন , তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়ার মত অবস্থায় আমি আর নেই । সে এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে যেমন উদাসিনী হয়েছে , তাঁকে ছাড়া আমিও খুব একটা ভালো নেই । কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে,সেই ভালোবাসা,সেই ট্রাষ্ট নিয়ে আমি আর এই মেয়েটিকে চুমো খেতে পারব না ।
বিশ্বাস,ভালোবাসা,শ্রদ্ধাবোধ যেখানে হারিয়ে গেছে , সেখানে আমার মৃত মায়ের আদেশ লঙ্ঘন করে শুধু শুধু মেয়েটিকে কেন আমার জীবনে জড়াব ?
৮টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
যাক এটা তাহলে গল্প। শুভ্র তোমার সবচাইতে বড় গুন হচ্ছে জড়তামুক্ত হয়ে লেখা। যা খুশি অবাধভাবে সবাই লিখতে পারেনা, তুমি পারো। অনুরোধ থাকলো লেখালেখি টা সিরিয়াসলি নিও।
এই লেখা প্রসঙ্গে কিছু বলার নেই। উত্থানপতন থাকেই, কিন্তু রেসপেক্ট না থাকলে সেই রিলেশন শুধুই সমঝোতার মতো। ঠিক বেঠিক জানিনা। হয়তো ঠিকই করেছ নয়তো না। ভাল থাকুক সবাই যে যেখানে।
বায়রনিক শুভ্র
আমার অবাধ লেখার গুণ টা অনেকেই দোষ হিসাবে নেয় । আপনার মত হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আছে যারা আমাকে উতসাহ দেয় । ধন্যবাদ । তবে আমার প্রতিটা লেখাই আমার জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট । নিয়মিত লিখতে পারি না এই কারণে ।
মৌনতা রিতু
একটা ব্যক্তিত্বহীন মানুষই তার নিজের শারীরিক কোনো ব্যাপারে এমন ভাবে তার সম্পর্কের মানুষটিকে একান্ত পারসোনাল বিষয়গুলো বলতে পারে। আমরা অনেকেই যা এই ১৯/২০ বছরে অকপটে বলতে পারি না। এটা এমনি কিছু বিষয়। আর আমি একজন ছেলের মা হিসেবে বলছি, এমন মেয়ে আমি আমার ছেলের প্রেমিকা তো দূরে থাক গার্ল ফ্রেন্ড হিসেবেও দেখতে চাই না।
হ্যাঁ, অতি খবরদারি ভাল না। আমরা এই দীর্ঘ সম্পর্কে এখনো দুজন দুজনের একান্ত পারসোনাল কিছুতে আঘাত করি না। মানুষের একান্ত মনেরও কিছু ড্রয়ার থাকে যা যেচে খুলতে নেই।
অকপটে লিখে ফেলা গল্পটা ভাল লেগেছে। যা অনেকেই লিখতে পারে না।
বায়রনিক শুভ্র
এটা নিছক গল্প মাত্র । সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই ।
জিসান শা ইকরাম
তুমি কত ভালো লেখো তা কি তুমি জানো?
বায়রনিক শুভ্র
ভালো লিখতেন রবীন্দ্র নাথ । আমি তো পাঠক মাত্র ।
নীলাঞ্জনা নীলা
কি আর বলবো! সবাই তো বলে ফেলেছে। ভালো লেগেছে, আপনার লেখা বলে কথা!
বায়রনিক শুভ্র
হা হা হা হা । লজ্জা পেলাম ।