“একটি অন্ধকার রাত তোমার জন্যে , জেনেও চলে যেতে হচ্ছে । স্বপ্ন আমায় তুমি যদি পারো ক্ষমা করো । —মনে মনে বললো রাত্রি । প্রেম , এ শব্দটা যে কেন এলো ওর জীবনে !”
—এটুকু লিখে থেমে গেলো প্রতীতি । তরুণ গল্পকারদের মধ্যে বেশ একটি পরিচিতি গড়ে উঠেছে তার । কিন্তু আজকাল আর নতূন কিছু লিখতে পারছে না । একই ঘটনা ঘুরে-ফিরে একই বিষয় । এভাবে চলতে থাকলে লেখার জগত থেকে হারিয়েই যাবে । কিন্তু চাওয়া তো অনেক উঁচুতে ওঠার । ওর নাম ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা সাহিত্যের জগতে অন্যতম লেখিকা হিসেবে । এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রিমাইন্ডারের মিষ্টি সুর । চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো প্রতীতি , কাল আবর্তর জন্মদিন । কেমন জানি অপরাধবোধে ভুগছে সে । প্রিয় মানুষটির জন্মদিনে এই যে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখা । “ধ্যৎ কি সব ভাবছি আমি ?” প্রতীতি আজ নিজে গিয়ে কেক কিনে এনেছে , আবর্তর প্রিয় ফুল হাস্নুহেনাও । এবার ভেবেছে অন্যরকমভাবে সারপ্রাইজ দেবে । এমন ভাব করবে , যেনো ভুলেই গেছে । যখন আবর্ত শুয়ে পড়বে , গিয়ে ওঠাবে ।
ঘড়িতে এখন এগারোটা । তার মানে আবর্ত ফিরে শুয়ে পড়েছে । সময়ের বাইরে খুবই কম যায় । তাই আগে মাঝে-মধ্যে বেশ মনোমালিন্য হতো । কিন্তু আবর্ত চুপ করেই থাকতো । আর এখন প্রতীতি যখন লেখায় থাকে , সেসময় একটুও বিরক্ত করে না । একটু খারাপ লাগলো । কাল জন্মদিন মানুষটার সাথে একটু কথাও হলোনা । আস্তে আস্তে পা বাড়ালো , আবর্তর রুমে গিয়ে দেখে সেখানে সে নেই । এ সময় তো বাড়ীর বাইরে থাকে না ! আর দেরী হলে ফোন করে জানিয়ে দেয় । কোথায় গেলো মানুষটা ? মনে হলো হয়তো প্রতীতিকেই চমক দিতে ছাদে নয়তো ব্যালকনিতে গেছে । কিন্তু সেখানেও নেই । অস্থিরতা যেনো বুকের ভেতর , ফোনও বন্ধ । কি করবে প্রতীতি ? কাজের মেয়েটা কিচেন পরিষ্কার করছে ।
–“টুনী সাহেব কোথায় রে ? ”
মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে টুনী বললো , “ম্যাডাম দেখিনি আমি ।”
–“কি করিস তুই , দেখিসনি মানে ? এমন রাত কখনোই করেনা । নিশ্চিত বাইরে গেছে , আর তুই বলছিস দেখিসনি !”
টুনী মাথা নীচু করে রইলো ।
–“যা তো দারোয়ানকে গিয়ে জিজ্ঞেসা করে আয় ।”
প্রচন্ড ভয়-দুশ্চিন্তা নিয়ে এদিক-ওদিক পায়চারী করতে লাগলো প্রতীতি । বহু বছর হয়ে গেছে আলাদা রুমে ঘুমোয় দুজনে । তবে কোনো দাম্পত্য কলহ থেকে নয় । লেখার জন্যেই আলাদা ঘর । আবর্ত ঘুমোবার আগে প্রতীতির কপালে ছোট্ট করে একটা আদর দিয়ে শুভরাত্রি জানিয়ে যায় । তবে ব্যস্ত থাকলে প্রতীতি ওসবের কিছুই করেনা । একটা গভীর আবেগ দুজনকেই জড়িয়ে রেখেছে , সেটা দুজনেই বুঝতে পারে ।
–“ম্যাডাম দারোয়ান ভাই সাহেবকে বাইরে যেতে দেখেনি ।”
–“কি বলিস এসব ?”
আবার ফোন করলো , আবারও ঘরের এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগলো । বিশাল বাড়ীটায় এতো বেশী দমবন্ধ লাগছে । বাইরে এসে দারোয়ানকে নিজেই জিজ্ঞাসা করলো ,
–“সাহেব বাড়ীতে নেই , কি করে বলো যে সাহেব বাইরে যায়নি ? নিশ্চয়ই ঘুমিয়েছিলে ? এ সময় সাহেব কখনোই বাড়ীর বাইরে থাকে না । সবগুলোকে তাড়াবো ।”
মাথা নীচু করে দারোয়ান বললো ,
–“ম্যাডাম সাহেবকে তো বাড়ীতে ফিরতেই দেখিনি ।”
থমকে গেলো প্রতীতি । কোথায় গেলো আবর্ত ? ফোন বন্ধ কেন ? কাল একটা লেখা পাঠাতে হবে বলে খেয়াল করেনি আবর্ত যে ফেরেনি । অপরাধবোধ ঠিক না , খুউব বেশী যন্ত্রণা হচ্ছে । মনে হচ্ছে শ্বাস আটকে আসছে । ধীর পায়ে নিজের রুমে গেলো , টেবিলের ওপর লেখা কিছু কাগজ সেসব ছিঁড়লো । ল্যাপটপের সবগুলো লেখা মুঁছে ফেললো । আগে প্রতীতির যা কিছু লেখা সব আবর্তকে নিয়ে । একদিন আবর্ত বললো ,
–“তিথি আমাকে আর বিষয় হিসেবে দেখিওনা তোমার লেখায় । সাধারণ একজন মানুষ হয়েই থাকতে দাও ।”
সমস্তটি ফ্লোরে ছেঁড়া কাগজের টুকরো । সেসবের দিকে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ও । এরই মধ্যে গাড়ীর হর্ণ । সেই প্রথম দিককার মতো ছুটে গেলো । আবর্ত গাড়ী থেকে নেমে আসতেই , প্রতীতি ঝাঁপিয়ে পড়লো বুকে ।
–“কোথায় ছিলে তুমি ? কেন ফোন তোলোনি আমার ? এই , এই ড্রাইভার কোথায় ?”
–“একসাথে এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর কি দেয়া যায় ? আগে ঘরের ভেতরে চলো , এবার কি চমক আমার জন্মদিনে ? তারপর সব বলবো ।”
–“কি করে জানো আমি চমক দেবো তোমায় ? এবার কোনো চমক নেই ।”
–“আমার বৌকে আমি ভালো করেই চিনি । আরোও কিছু বলবো ?”
প্রতীতির এতো লজ্জ্বা লাগছিলো , কেমন জানি ! কিন্তু ঘরের ভেতর ঢুকেই আবর্তর বুকে মাথা রেখে কান্না শুরু করলো ।
–“আরে মেয়ে শোনো , জরুরী মিটিং ছিলো । তাই শহরের বাইরে যেতে হয়েছিলো । তোমাকে ফোনও দিয়েছিলাম , কিন্তু ধরোনি । দেখো টেক্সট ম্যাসেজও করেছিলাম । একটুকুও সময় ছিলোনা যে বাড়ী এসে তোমায় জানিয়ে যাবো । ফেরার পথে ড্রাইভার হলো অসুস্থ । ওকে ডাক্তার দেখিয়ে ওর বাড়ীতে নামিয়ে দিলাম । পরে দেখি সেল ফোনে চার্জ নেই । বুঝেছো কান্নাবতী মেয়ে ?”
–“কেন অন্য কোথাও থেকে তো ফোন করা যেতো ! সত্যি করে বলো কোথায় ছিলে তুমি ?”
–“এখনও সন্দেহ ? সাত বছর হয়ে গেছে তিথি ।”—এ কথা বলে বেশ জোরে হেসে উঠলো আবর্ত । এরপর হাসি থামিয়ে গভীর চোখে চেয়ে জানতে চাইলো , “কি লিখেছো আজ ? দাও পড়বো ।”
ঘরময় ছেঁড়া কাগজ । আবর্ত ডাকলো টুনীকে , “ঘরটা পরিষ্কার করে ফেল ।”
প্রতীতি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে , আর চেয়ে চেয়ে দেখছে । আবর্তর সাথে দূরত্ত্বটা এখন আর এক হাতও নয় । কাঁপছে প্রতীতি ।
হ্যামিল্টন , কানাডা
২৪ জুলাই , ২০১৪ ইং ।
৩৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পে মুগ্ধতা ছেয়ে গেল। -{@ (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
মন জুড়িয়ে গেলো এমন মন্তব্যে…অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে… 🙂
খসড়া
যা বিলীন হতে চায় তা বিলিন করে দেয়াই ভাল।
নীলাঞ্জনা নীলা
তা-ই তো বিলীন হলো…বেশ সুন্দর মন্তব্য… 🙂
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
দুর্দান্ত —-!! (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
কি যে বলি ! ;? তবে ধন্যবাদটুকু প্রাপ্য…তাই দিলাম…
স্বপ্ন নীলা
ওরে আপু !! প্রথম হতে শেষ সবটািই ভাল লাগার ——দারুন হয়েছে — অনেক অনেক সুন্দর —–
নীলাঞ্জনা নীলা
কি যে বলি ! এই নাও তোমার জন্যে… -{@
ছাইরাছ হেলাল
বেশ টান টান উত্তেজনা শেষে রেখে লেখাটি শেষ করলেন । ভালোবাসার আকালে ভালোবাসা
বেঁচে থাকুক লেখালেখিতে হলেও ।
সুন্দর করে আপনি সব সময়ই লেখেন , এই যেমন এখন লিখলেন ।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনটা অনেক সুন্দর বলেই ভালো লাগাটুকু ঘিরে থাকে তোমায়…অফুরান ভালোবাসা 🙂
মিসু
নীলাদি, তুমি সব সময়ই ভালো লেখো। মাঝে কিছুদিন লেখার মাঝে ছিলেনা, আবার লিখছো আর আমরা পাচ্ছি এমন ভালো লেখা।
নীলাঞ্জনা নীলা
এতো মন দিয়ে ডাকো বলেই তো থাকতে পারিনা না লিখে… -{@
বেড়ালটার নাম কি ? খুব পছন্দ হয়েছে…
শুন্য শুন্যালয়
সুন্দর একটি গল্প নীলা আপু। এতো কম দূরত্বে কিভাবে আসা যাবে ভাবছি ;?
চমৎকার গল্পের জন্য একটি গোলাপ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভেবে কিছু পেলে জানিও কিন্তু…আর গোলাপের জন্যে গোলাপ… -{@
কৃন্তনিকা
কিউট… (y) (y) (y)
কিন্তু লেখিকা নিজের লেখা সব ছিড়ে কুটিকুটি করলো!!! ল্যাপটপের লেখা মুছে ফেললো!!! 😮 😮 😮
নীলাঞ্জনা নীলা
কৃন্তনিকা মানে কি ? নামটা সুন্দর… (3
লীলাবতী
প্রতীতি আর আবর্ত দুজনের জন্যই শুভেচ্ছা । এত সুন্দর একটি শেষ গল্পে, মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়না। আপনার জন্য এই গোলাপ নীলাদি -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
লজ্জ্বা পাচ্ছি…তাই গোলাপটা চোখ বুজে নিলাম… (3
স্বপ্ন
আপু এত ভালো লেখেন কিভাবে?
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া অনেক ভালোবাসা… -{@
শিশির কনা
আবর্ত প্রতীতির এমন ভালোবাসায় ডুবে গেলাম আমিও দিদি। কত সুন্দর সমাপ্তি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালোবাসার জয় হোক… (3
জিসান শা ইকরাম
ফেইসবুকে আগেই পড়েছি।
অনেক অনেক ভালো লেখা ।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তোমার নাত্নী বলে কথা… -{@
বনলতা সেন
দারুণ ভাবে সমাপ্তি টানলেন ।
শুধু কবিতা নয় অন্য লেখাও অনেক সুন্দর করে আপনি লিখতে পারেন ।
নীলাঞ্জনা নীলা
অসংখ্য ধন্যবাদ…সাথে একটি -{@ সহ (3
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
অদ্ভুত সুন্দর সমাপ্তি। ধারনাই করতে পারিনি এমন।
নীলাঞ্জনা নীলা
তাই ? ভালোবাসা অফুরান…
সীমান্ত উন্মাদ
বাহ অনেক সুন্দর গল্প’ত ভাললাগা খুব। উম্নাদিও শুভেচ্ছা।
নীলাঞ্জনা নীলা
উন্মাদিও শুভেচ্ছা ! ;?
নেবার পর এখন নাচছি \|/
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
অনুভুতির সুন্দর প্রকাশ ভালো লাগলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী…বাহ বেশ তো নামটা ! (y)
ব্লগার সজীব
লেখায় একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
মুগ্ধতাটুকু যত্নের সাথে সংরক্ষিত হলো 🙂
নুসরাত মৌরিন
কখনো কখনো গল্পকে কবিতার মত লাগে…।এক নিঃশাসে শেষ হয়ে গেল…।শেষ হওয়ার পর মনে হলো,আরে শেষ!!!!
ভাল লাগা টুকু শুধু রয়ে গেল…।।
একটা গোলাপ তাই রেখে গেলাম আপনার জন্য… -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আর দুটি গোলাপ আমিও দিলাম… -{@ -{@ (3
অন্তরা মিতু
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
কান্নাবতী মেয়ে
…………………………………. দিদিইইই… তুমি সবসময়ই তুলনাহীন….
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ মিতু… 🙂