বিরূপ বসন্ত (ধারাবাহিক) পর্ব-পাঁচ

মাহবুবুল আলম ৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১১:৪০:০৫পূর্বাহ্ন উপন্যাস ১৪ মন্তব্য

খাওয়ার পর্ব শেষ হওয়ার পর এতক্ষণের মানুষের থিকথিকে ঘনত্বটা এখন বেশ হালকা হয়েছে। গ্রামের লোকজন যারা এসেছিল, তারা সবাই চলে গেছে যার যার মতো। তবু ঘরে এখনো ষাট-সত্তুর জন মেহমান। এখন চলছে শোবার আয়োজন। কে কোন ঘরে ঘুমোবে বলে দেয়া হচ্ছে। মৃদুলের এলটে পড়েছে বাংলো ঘরের বারান্দার একটি রুম। একটু আগে পিউর মা রাশেদা ভানু এসে মৃদুলকে অনেকটা অনুনয়ের সুরেই বলেছে-

বাবা মৃদুল! এত মানুষের ঘুমোনোর আয়োজন করতে তো বেশ সমস্যা হচ্ছে। তোমার সাথে যদি বাবুকে একটু রাখ ভাল হয়।

মৃদুলও খুবই বিনয়ের সাথেই বলে-

না আন্টি বাবু আমার সাথেই শু’বে। কোনো অসুবিধা নেই।

তাই এই রুমে সে শুধু একা থাকবে না। সাথে রাখতে হবে বাবুকে। মোটামুটি সবার থাকার ব্যবস্থা হলেও ঝামেলা বাঁধিয়েছে নাসিমার মামাতো ভাই ও তার বউকে নিয়ে। আমিনের বউ সাদিয়ার এক কথা তাদেরকে আলাদা রুম দিতে হবে। কারো সাথে শেয়ার করে সে থাকবেনা। এই নিয়ে হাসি তামাশা হচ্ছে। আবার অনেকে যে যেভাবে পারছে তীর্যক কথা বলতেও ছাড়ছেনা। কে যেন একজন গলা উচিয়ে বলছে-

এমন বিয়া বাড়ির ঝামেলার মধ্যে একদিন জামাইর গলা জড়াইয়া না ঘুমাইলে কী হয়। হের জামাইরে ত কেউ ছিনতাই কইরা নিয়া যাইত না।

এ কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। কিন্তু এমন ধরনের তীর্যক কথাবার্তা শুনেও সাদিয়ার কোন ভাবোদ্বয় হয়েছে বলে বলে মনে হয় না। আমিনও বউয়ের এমন জেদের জন্য জোর গলায় কিছু বলতে পারছেনা। তার কোথায় যেন একটা সমস্যা আছে। দাওয়াতী মেহমান কেউ আবার বেশী কিছু বলতেও পারছে না। শেষে এই নিয়ে যদি কোনো সিন ক্রিয়েট হয়ে যায়। রাত ও হয়ে গেছে অনেক। প্রায় বারটার মত বাজে। আটটার মধ্যেই গ্রামের রাত অনেক গভীর হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে আলাদা একটা রুম দেয়ার কারণে কয়েকজনকে মাটিতে বিছানা করেও শু’তে হয়েছে।

বাবু ক্ষাণিকটা আগে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাটা দিন সে যেভাবে রেনডম দৌড়াদৌড়িটা করেছে বেচারা বিছানায় শু’তে শু’তেই ঘুম বেশ জমে গেছে।

রুমে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে মৃদুল তার পকেট টর্চটা জ্বেলে দেখে মোটামুটি প্রায় সারাটা বিছানা জুড়েই হাত পা ছড়িয়ে বাবু বেশ আয়েশ করে ঘুমুচ্ছে। সে বাবুকে টেনে টোনে একটু জায়গা করে পরনের জামা কাপড় গায়ে রেখেই তার পাশে শু’য়ে পড়ে। বিছানাটাও বেশ আটসাট। একদিকে কাত হয়ে শুয়েছে সে কোনভাবে।

পিউ চিঠিটা দেয়ার পর থেকেই তা পড়ার জন্য মনটা কয়েকবারই বেশ খচ্খচ্ করেছে। কিন্তু একবারের জন্য কোনো চান্সই পায়নি সে। বাবুর ঘুম আরো জমে উঠেছে। মৃদুল পাশ ফিরে একবার বাবুকে দেখে পকেট হাতিয়ে পিউ’র দেয়া চিঠিটা বের করে। এ’তে একটা কাগজের খসখসে আওয়াজ ওঠে। পাশ ফিরেই দেখলো বাবু জাগলো কিনা। নিশ্চিত হয়ে টর্চের আলোয় চিঠি পড়া শুরু করে মৃদুল।

মৃদুল ভাইয়া !

নাসিমা আপুর বিয়ের দাওয়াত নিয়ে খালা আমাদের বাসায় যাওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আপনারা বিয়েতে আসছেন কিনা। খালা যখন জোর দিয়ে বলল আপনারা আসবেনই তখনই কেন জানি নিজের অজান্তেই আমার মনের মধ্যে এক ধরনের শিহড়ণ জেগে ওঠে। সেই শিহড়ণটা যে আপনাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল তা আরো বেশী করে বুঝতে লাগলাম বিয়ের দিন তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছিল। সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল আমার নিজের ভেতরের অস্থিরতা বাড়ছিল সমান তালে। মনে মনে ভাবলাম যেহেতু নিশ্চিত হওয়া গেছে নাসিমার সাথে আর আপনার বিয়ে হচ্ছেনা। তাই আমি এখন নির্দ্বিধায়  আমার কথা বলতে পারবো।

বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। ছোট বেলায় খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আমরা যখন খেলতাম, আর নাসিমা আপু সব সময়ই বর হিসাবে আপনাকে বেছে নিত, আমার তখন নাসিমা আপুর প্রতি ভীষন রাগ হতো। মনে মনে বলতাম, যাও মৃদুল ভাইয়াকে তুমি এখন বর বানাও ঠিক আছে। কিন্তু বড় হলে আমি তাকে আমার আসল বর বানাবো। কিন্তু আরো একটু বড় হয়ে যখন শুনতাম  খালা আপনাকে জামাই জামাই বলে ডাকে, তখন আমার অনেক কষ্ট হতো। ভাবতাম আপনাকে বোধ হয় আর আসল বর হিসাবে পাওয়া সম্ভব নয়। তারপর ও আমি হাল ছাড়িনি। ভাবলাম একটা এসপার ওসপার না দেখে আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবোনা। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলাম একটা সময় সুযোগ মতো আপনাকে প্রপোজ করার জন্য। সেই ছোট বেলা থেকে যে আপনাকে আমার মনের মধ্যে বসিয়েছি। সেই আসনে আর কাউকে কোনোদিন বসাতে পারিনি আজও।

সেই দিন নাসিমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমার কী যে আনন্দ লেগেছিল তা আপনাকে চিঠির ভাষায় বুঝানো কখনো সম্ভব হবে না। খালার কাছে যখন শুনলাম আপনারা স্বপরিবারে বিয়েতে আসছেন আমার কিছু জরুরী ক্লাশ ও এ্যাসাইনমেন্ট থাকা সত্বেও বিয়েতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফেলি। আর ভেবে ঠিক করেছি এ যাত্রায় যে করেই হোক আমার আবেগ অনুভুতির কথা গুলো আপনাকে লিখে জানাবোই। তাই আজ আপনাকে আমার এ চিঠি লিখা। আমি আমার কথা লিখে জানালাম। এখন আপনার পালা। ভাল থাকবেন। ইতি

পিউ চিঠিতে কোন নাম ব্যবহার করেনি। মৃদুল ভাবে সে হয়তো অধিক সতর্কতার জন্য এটা করে থাকবে। আর পিউ নিজের হাতেই যখন চিঠি দিয়েছে সেখানে নামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তা ছাড়া আসার পর থেকে তারা দু’জন এক সাথে হলেই অনেকে আড় চোখে জরিপ চালায়। এরই মধ্যে সাদিয়া ভাবী ঠারে ঠোরে দু একবার বলেও ফেলেছে, কি গো নায়ক দেওরা। নায়িকা কই। না থাকলে কও জোড়া লাগাইয়া দিই। নায়িকা ত ঘুরঘুরঐ করতাছে।

কিন্তু কেন জানি মহিলাটিকে মৃদুলের মোটেই ভাল লাগেনি। কেমন গায়ে পড়া ভাব। বাচাল। নাসিমা নাকি পিউকে সাবধানও করে দিয়েছে এই মহিলা থেকে দূরে থাকার জন্য। কোন সময় কার সাথে ভেজাল লাগিয়ে দেয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। আর কথা চালাচালির অভ্যাস নাকি তার মজ্জাগত। তাই এই মহিলাকে যতটুকু পারছে এড়িয়ে চলছে তারা। পিউ চিঠিতে নাম ব্যবহার না করে ভালই করেছে।

চিঠি নিয়ে ভাবতে ভাবতে সারা রাত ঘুমোতে পারেনি মৃদুল। তার উপর আছে কতক্ষণ পরপরই বাবুর পা তোলে দেয়ার অত্যাচার। তদুপরি পাশের রুমে সাদিয়া ভাবীর খচরমচর। এ অবস্থায় কেউ কি ঘুমোতে পারে!

সারা বাড়ি নির্জনতায় ডুবে নিঝ্ঝুম ঘুমোচ্ছে। কিন্তু মৃদুল কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। পিউর চিঠি তার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে গেছে। পিউকে তো তার নিজের বেশ পছন্দ সেই ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু কেন সে এতদিন তাকে কথাটা খুলে বলতে পারেনি? সেকি নাসিমার কারণে, নাকি তার নিজের কোনো সীমাবদ্ধতার কারণে? মৃদুলের নিজের কাছে নিজকে এখন বেশ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। একটা অসম্ভব রকমের সুন্দরী মেয়ে তাকে এত দিন যাবত ভালোবাসে, অথচ সে কি বোকা এ সবের কোনো খবরই সে কোনো দিন রাখেনি।

এই করতে করতে বাথরুম পায় তার । দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আমিন আর আমিনের বউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে দেখে মৃদুল কেমন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তার সারা শরীরের রক্তে কেমন জানি ঢেউ খেলে যায় একটা। কোনোভাবে প্রাকৃতিক কাজ শেষ করে উঠোনের দিকে এগিয়ে যায় সে। বাড়ির সবাই ঘুমুচ্ছে। শুধু ঘুম নেই মৃদুলের। সে হাটা দেয় পুকুর ঘাটের দিকে। নাসিমাদের পোষা কুকুরটা তার সঙ্গি হয়। টাইগার ও তার পিছু পিছু যায়। মৃদুল এসে মামা বাড়ির শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের হেলান বেঞ্চে বসে। চারিদিকে নিঃসীম নির্জনতা। তার পায়ের কাছে কুকুরটি বেশ আয়েস করে শুয়েছে। আজকের এই রাত যেন অন্যদশটা রাতের মতো নয়। কেমন এক কপাটবদ্ধ রাতের প্রহর যেন থিতু হয়ে আছে। যেমন থিতু হয়ে আছে পুকুরের জল। এ মুহুর্তে মধ্য আকাশের শুক্লপক্ষের চাঁদ যেন নব পরিনিতা বধূর মতো পুকুরের জলে নাইতে নেমেছে। ঠিক তখনই মধ্য পুকুরে একটি বড় মাছ লাফিয়ে ওঠে এতে নিস্তরঙ্গ পানিতে ঢেউ খেলে যায়। চাঁদের অস্থিত্ব হারিয়ে যায় সেই ঢেউয়ে। সারা পুকুরের পানিতেই শুরু হয়েছে কেমন রুপোলী ঝিলিক। এর মধ্য থেকেই যেন মৎস্য কুমারীর বেশে  নাসিমা ভুঁস করে ভেসে ওঠে। সে তার ভেজা ভেজা আদ্র চোখ নিয়ে  মৃদুলের পাশে এসে বসে। ভীষন কাঁদছে এখন নাসিমা। কোনো প্রবোদ দিয়েই তার কান্না থামাতে পারছে না। বারে বারে তার হেচ্কী ওঠছে। এক সময় হেচ্কী থামিয়ে বলে-

আপনে এত পাষাণ! পুরুষ মানুষ পাষাণ হয় হুনছি। কিন্তু এত পাষাণ হয় কোনোদিন হুনি নাই। আপরেরে দেইখ্যা এতদিনে বুঝতে পারলাম পুরুষ মানুষ কতডা পাষাণ হইতে পারে।

মৃদুল কিছু বলতে পারে না। দুধে ধোয়া চাঁদটির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। নাসিমা তাকে ধাক্কা দেয়। কী আমার কতা হুনেন নাই। এখন যে বড় বোবা হইয়া গেলেন। কতক্ষণ আগে ত দেখলাম পিউর সাথে কি হাসাহাসি ঢলাঢলি। আর এখন আমি সামনে আসাতে এখন মুখে কুলুপ লাগাইয়া বইসা রইছেন। আমি কি আপনের ঘাড় মটকামু নাকি। আমি ত রাইত পোহাইলেই আমার কপাল নিয়া চইলা যামু। আপনার আর পিউর সুখের পথে কাটা বিছাইতে আসমু না কোনু দিন। আপনে পিউরে বিয়া কইরা সুখি হইয়েন।

এতক্ষণে মৃদুলের মুখ থেকে কথা বেড়–য়। সে অনেকটা জোর গলাই বলে-

: খুব তো কথা বলছো এখন। আগে কোথায় ছিল তোমার এত কথা। কেন বলনি মৃদুল ভাই আমি আপনাকে ভালোবাসি।

: কি ভাবে বলমু। বলতে যে সাহস পাই নাই। আপনারা হইলেন গিয়া বড় উচ্চ শিক্ষিত শহরের মানুষ। বললে যদি আপনে মুখের উপর না কইরা দেন। তাইলে ত আমার অপমানের সীমা থাকত না।

: কেন তুমি এমন ফালতু কথা ভাববে। আমি কী কোনদিন তোমার সাথে বিদ্ব্যান ও শহরের মানুষের ভাব দেখিয়েছি।

:  না দেখান নাই। আপনে না দেখাইলেও ফুফু তা দেখাইছে। মা আপনের সাথে আমার বিয়ার কথা তুলতেই তিনি মায়ের মুখের উপর না কইরা দিলেন। আপনের লাইগ্যা নাকি বড় বড় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার জজ বারিষ্টারের মাইয়ারা লাইন ধইরা রইছে। তাছাড়া আপনে তো কোনো দিন তো একবারও বলেন নাই যে, নাসিমা তোমারে আমার ভালা লাগে।

: তুমিও তো বল নাই।

: মেয়েরা কি কোন দিন তার প্রেম ভালবাসার কথা পুরুষ মানুষকে খুলে বলতে পারে। বুদ্ধিমান পুরুষেরা মেয়েদের হাবভাব দেইখাই বুইঝা নিতে হয়। কিন্তু আপনে কোনো দিন আমার মনের কতা বুঝার চেষ্টা করেন নাই। থাক আপনে পিউরে বিয়া কইরেন। সে খুব ভালা মেয়ে।

হঠাৎ করেই নাসিমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। সেই সময়টাতেই পাশে  এসে বসে পিউ। সে মৃদুলকে একরকম অপ্রস্তুত করে দিয়েই বলে-

: কি মৃদুল সাহেব! এতক্ষণ নাসিমা আপুর সাথে কি কথা হলো। নিশ্চয়ই পুরনো প্রেম-প্রণয়ের কথা।

: কি যা তা বলছো। ওর সাথে তো আমার কোন প্রেম ছিল না। প্রেম থাকলে তো ওকেই বিয়ে করতাম।

: তা হলে আমার কি হতো। আমি যে মরে যেতাম। এই ভয়েই তো ইন্দ্রজালিক জালে আপনাকে আটকিয়ে রেখেছিলাম। যাতে কখনো নাসিমার কথা আপনার মনে না আসে। যাতে সেকোন দিনই আপনার মনের গহনে গোপনে বাসা না বাধতে পারে।

সাদিয়া ভাবীর ডাকে পিউ সরে যায় মৃদুলের মন থেকে।

: কি গো দেওরা এখানে একলা একলা বইসা কার ভাবনা ভাবতাছ। পিউকে ডাইকা আনমু নাকি। আমি পাহাড়া দিমু। কোন অসুবিদা নাই।

মহিলার কথা মুনে মৃদুলের ভীষণ রাগ হয়। কিন্তু আচরনে সে তা প্রকাশ করতে পারে না। মনে মনে শুধু বলে একটা অসহ্য মহিলা। মৃদুলের এই ভাবনার ফাঁকেই সাদিয়া ভাবী একদম মৃদুলের গা ঘেসে বসে। মৃদুল একটু সরে বসতে চাইলে ও সাদিয়া ভাবী যেন আরো ঘন হয়ে বসে। মৃদুল ভাবে এতো রাতে দুজনকে এভাবে কেউ দেখলে অঘটান ঘটে যাবে। গ্রাম-গঞ্জের ব্যাপার কি না কি রটিয়ে দেয়।

মৃদুল উঠে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়। কিন্তু সাদিয়া ভাবী বলে-

: কি মিয়া মাইয়া মানুষরে ভয় পাও নাকি। যে মরদ মাইয়া মানুষরে ভয় পায় সে হইল গিয়া একটা কাপুরুষ। হিজরা।

মৃদুল থতমতিয়ে বলে-

: না আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে।

: তাইলে যে এমনে সইরা বইছো।

: না ভাবী চলেন ঘরে যাই। এখানে আপনাকে আমাকে কেউ দেখে ফেললে শুধু শুধু একটা বদনাম রটে যেতে পারে।

: এই সব বদনামরে এই সাদিয়া থোরাই কেয়ার করে। কত বেটারে জীবনে নাকে রশি বাইন্দা হেচরাইলাম। এই সাদিয়ারে নিয়া কোন মায়ের পুত কিছু কইতে সাহস পায় নাই, বুঝলা মিয়া। থাউকগা তোমারে এই দিক একলা আইতে দেইখ্যা একটা কথা বলার জন্য আইছলাম।

: কি কথা বলতে আসছিলেন তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।

: না তেমন কোন কথা না।

: তো কেমন কথা।

: এই ধরো। আমি তোমার আমিন ভাইয়ের মত এমন বেন্ডা ধরনের পুরুষ মানুষরে কোন দিন দুই চুক্ষে দেখতে পারি নাই। কিন্তু আল্লায় তেমনঐ একটা পুরুষ আমার কপালের চৌকাটে লাগাইয়া দিল। আমার পছন্দ আছিল তোমার মত এমন সুপুরুষ। যারে এক নজর দেখলেই চোখ জুড়াইয়া যায়।

মহিলাকে আর এগুতে দেয় না মুদুল। সে বলে-

: ঠিক আছে ভাবী আপনার কথা কাল শুনবো। এখন চলেন, আমার খুব ঘুম পেয়েছে।

মৃদুল এ কথাটা মিথ্যা বলে। মহিলাকে এ্যভয়েড করার জন্যই এ মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে।

সাদিয়া ভাবী নিরুৎসাহিত কন্ঠে বলে-

: ঠিক আছে চল যাই।

ঘরের ভিতর  এসে ঘুমোতে চেষ্টা করে মৃদুল। কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারে না। এক ধরনের মনোকষ্ট তাকে কাবু করে ফেলে। [চলবে…]

 

৬১৩জন ৫১০জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ