মেয়েটি হাসপাতালের বারান্দায় ঘুমিয়ে পরেছে। গুটিসুটি, জড়োসড়ো হয়ে ঘুম। যে ঘুমে আত্মা কাছে থাকে না। দূরে বহুদূরে, স্বর্গরাজ্যে চলে যায়। যে স্বর্গরাজ্যে বাস করে পুরনো অতীত ঘুমের আত্মারা।
আধাঘন্টা খানেক পরে ডাক্তার এসে মেয়েটিকে খুঁজতে লাগলো। না, মেয়েটি যেখানে বসে ছিলো সেখানে নেই। তাহলে কি? না কোথাও যায়নি। বারান্দার কাছাকাছি যেতেই মেয়েটিকে দেখতে পেলো ডাক্তার। ডেকে বললেন, ‘তোমার বাবাকে বাঁচানো যায়নি।’
মেয়েটি এলোমেলো অগোছালো চুলের আড়ালে আবডালে একটু মুচকি হেসে উঠলো। তারপর বিড়বিড় করে কাঁদতে লাগলো। মায়াকান্না। ঢোল পেটানো কান্না। যে কান্নায় হৃৎপিণ্ড কাঁদে না। কাঁদে অভিনীত আত্মা।
মেয়েটি দৌড়ে রাস্তায় যেতে লাগলো। ডাক্তার ডাকছে। কিন্তু সে শুনছেই না। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে যেতেই লাগলো। বহুদূর দৌড়ে চলে গেলো। না, তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। শহরের ভীড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।
ডাক্তার মশাই অপারেশন থিয়েটারে এসে বললো, ‘চোখ, কিডনি…। কালকে অন্য রোগীর চিকিৎসা অপারেশন করতে হবে।’
মজনু মিয়া সিগারেট টানছে। খুশিমনে, চোঁচায় টানছে। অন্যদিকে কোন খেয়াল নেই।
ওস্তাদ দেহী! একাই টানবার লাগছুইন। আমাগোরেও একটু…।
না, কোন সাড়াশব্দ নেই। টানছে তো টানছেই। ডুবে ডুবে, নিশ্বাস গিলে গিলে টানছে।
লাল্টু আবার বলল, ‘ওস্তাদ, ও ওস্তাদ! শুনছেননি?
হ, শুনছি। তয় এখন থেকে ভালো কইরা কথা ক। সব ঝামেলা তো শ্যাস। না কিতা কস মানিক।
না ওস্তাদ। এখনো শ্যাস অয় নাই। আর একটা…।
মজনু মিয়া পকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করে লাল্টু আর মানিকের দিকে বাড়ালো। মানিক সিগারেট টানতে শুরু করলো। কিন্তু…, কিন্তু লাল্টু সিগারেট নিতে অস্বস্তি বোধ করছে দেখে মজনু মিয়া বলল, নে ব্যাটা নে। আইজকা আমগোর খুশির দিন। আইজকা লজ্জা দেহান লাগতো না।
লাল্টুও সিগারেট টানছে। এটাকেই সিগারেটের দাওয়াত বলে। যে দাওয়াতে সিগারেটের আগুন-ধোঁয়ায় জ্বলে। যে জ্বলনে দেহ অব্দি আনন্দে ভুগে ভুগে মরে।
ও টুনির মা তোমার টুনি…। রিংটোন বাজছে। মজনু মিয়ার মোবাইলের রিংটোন। লাল্টু বলল, ‘ওস্তাদ, আপনের ফোন বাজিছে। ধরে কতা কওন।’
হ্যালো।
আব্বু, তুমি কই আছো?
এইতো মা। কাছাকাছিই আছি।
তাড়াতাড়ি আইয়ো। আর আমার লিগাল মিষ্টি লইয়া আইয়ো।
হ, আনমনে। তা কি খবর মা?
খবর ভালো আব্বু। ডাক্তার বলছে বেঁচে নেই।
বাহ! বেশ খবর তো। তোমার আম্মুকে গরুর মাংস রানতে কও।
আম্মুরে বলা লাগতো না। গরুর মাংসই…।
তয় আমরা তারাতাড়িই…।
ওস্তাদ নামাজ…?
হ, নামাজ পড়মু। তুই আর মানিক বাসার দিকে আগাতে থাক। আমি নামাজ পড়ে আসি।
ঠিহক আছে ওস্তাদ। আমি আর মানিক ওস্তাদ বাসায় যাচ্ছি। না কিতা কন ওস্তাদ?
আমরা দাঁড়াইয়া থাইক্কা কি করমু।
নামাজ শেষ করে ইমাম সাহেব মোছাবা করে মজনু বলল, ‘হুজুর, আগামীকাল দুপুরে আপনার দাওয়াত রইলো।’
১৬টি মন্তব্য
এস.জেড বাবু
আগের পর্বটা পড়েছিলাম মনে হচ্ছে-
তার মানে মেয়েটা মারা যাওয়া লোকটার মেয়ের অভিনয় সেরে এলো – দুর্দান্ত।
বাহ্
নৃ মাসুদ রানা
এইতো, একদম ঠিক ধরেছেন।
এস.জেড বাবু
হচকিত ছিলাম-
পর্ব নাম্বার নেই যে-
ভালো থাকবেন।
নৃ মাসুদ রানা
পর্ব নাম্বার আমি নিজেই দেইনি। নতুন নতুন নাম দিয়ে উপস্থাপন করেছি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আজকের পর্ব টা অন্যরকম লাগলো। কারো মৃত্যু অন্যের কাছে এতটা সুসংবাদ দিতে পারে জানলাম। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, সুসংবাদ হয়।
সুপায়ন বড়ুয়া
অভিনয়টা কতটুকু সঠিক?
কিন্তু অমানবিক।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
সবটুকুই
জিসান শা ইকরাম
প্রথম লোকটার মৃত্যুতে মেয়েটির কি কোনো হাত আছে?
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, আছে।
ফয়জুল মহী
দারুণ লেখা ,বেশ ভালো লাগলো । ভালো থাকুন।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়
সুরাইয়া পারভীন
গল্প টা অমানবিক বটে
তবে কখনো কখনো কারো মৃত্যু খবর সত্যিই অনেক আনন্দের হয়।
সুন্দর লিখেছেন
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ
হালিম নজরুল
গল্প পড়ে ভাল লাগল।
নৃ মাসুদ রানা
ভালোবাসা রইলো