চাচা এখানে বসেন,জানালা দিয়ে বাতাস আসছে, আপনার ভালো লাগবে।
ছেলেটার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলেন বারেক সাহেব,ইদের সময় বাসে যে পরিমাণ ভীর হয় তাতে বাসে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াই মুসকিল,সেখানে ছেলেটা নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিলো বারেক সাহেবকে।সত্যিই বড্ড ভালো ছেলে,আজকালকার ছেলেপুলেরা তো মুরুব্বিদের সম্মান করতেই জানেনা।বারেক সাহেব কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে ছেলেটার সীটে বসলেন।ছেলেটাও পাশেই গুটিশুটি হয়ে বসে রইলো।
বারেক সাহেবের ব্যাগে দুইলাখ টাকা,ছেলেরা তাদের সারা বছরের জমানো টাকাটা বাবার হাতে তুলে দিয়েছে কোরবানীর গরু কেনার জন্য,বছরে এই একবারই গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় বারেক সাহেবের।ছেলেরাও আসবে,আসবে পরিবারের সবাই তবে তারা আসবে ইদের আগের দিন,বারেক সাহেব প্রতিবছরই কয়েকদিন আগে চলে আসেন গরু কেনার জন্য।হাঁটে হাঁটে ঘুরে, বুঝেশুনে ভালো গরু কেনেন।
চাচা পানি খাবেন? বলেই ছেলেটা পানির বোতল এগিয়ে ধরলো,বারেক সাহেব খুশি হলেন,অনেক্ষণ ধরেই তার মনটা পানি পানি করছিলো,বাসে ওঠার সময় তাড়াহুড়োতে পানির বোতল কেনা হয়নি।পানির বোতলটা হাতে নিয়ে একমিনিটও দেরী না করে ঢগ ঢগ করে পুরো বোতলটাই শেষ করে ফেললেন।পানি খেয়ে বারেক সাহেবের মনে হলো দেহে আত্মা ফিরে আসলো।ছেলেটাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে না পেয়ে বললেন ‘বেঁচে থাকো বাবা, অনেক বড় হও”।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সেটা এখন মনে করতে পারছেন না,বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে যাত্রা বিরতী চলছে,এবং তারা কারও উপর বিরক্ত। কেউ একজন বাস থেকে নেমেছে কিন্তুু এখনও ফিরে আসছেনা,আর এজন্য বাস ছাড়তে দেরী হচ্ছে।বারেক সাহেব এতোক্ষণে খেয়াল করলেন তার পাশে বসা সেই উপকারী ছেলেটা নেই,তারমানে এই ছেলেটাই সবার বিরক্তির কারন।পাশে রাখা কালো ব্যাগটার দিকে তাকাতেই তার বুক ধক করে উঠলো।ব্যাগটা নেই।তিনি পাগলের মতো এদিক সেদিক ব্যাগটা খুঁজতে লাগলেন।কোথাও ব্যাগটা না পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন,অন্যযাত্রীরা কাছে আসলেন।শান্তনা দিতে লাগলেন।কিন্তুু টাকার ঘা শান্তনার মলমে সারে না।ছেলেটা একবোতল পানির দাম হিসেবে শুধু দুইলাখ টাকাই নিয়ে যায়নি,বারেক সাহেবের মোবাইলটাও নিজের মনে করে নিয়ে গেছে।।।
৭টি মন্তব্য
তৌহিদ
এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। কত মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছেন এহেন অমানবিক কর্মকান্ডে। মানুষের বিবেক, বুদ্ধি নৈতিকতা সব লোপ পাচ্ছে।
ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপু।
শামীম চৌধুরী
এতো নিত্য দিনের ঘটনা। ঘটনাগুলি গনমাধ্যমে প্রচার হবার পরও কেন যে আমরা সচেতন হই না। যতদিন আমাদের ভিতর সচেতনতা না আসবে ততদিন আমার প্রতারিত হবোই। বারেক সাহেবের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তার সন্তানদের সঞ্চিত টাকায় কোরবানীটা আর দেয়া হলো না।
শাহরিন
সব জায়গাতেই ব্যাপকভাবে এই বিষয়ে প্রচার হয়। মানুষ ভুলে ভুল মানুষকে বাড়ে বাড়ে বিশ্বাস করে ঠকে।
মনির হোসেন মমি
ভালর অন্তরালে মন্দের উকি।অতি ভক্তি যেমন চোরের লক্ষন তেমনি। এ জন্য মানুষ মানুষের হৃদয় হতে উঠে গেছে বিশ্বাস। সাবধানতার বিকল্প নেই। ভাল লাগল।
আরজু মুক্তা
সাবধানতা াঅবলম্বন করে সবসময় চলবো আমরা।
এটাই বড়!
সাবিনা ইয়াসমিন
আমরা যতই নিজেকে নিরাপত্তার খাতিরে সাবধান রাখার চেষ্টা করিনা কেন, প্রতারকেরা নিত্ত-নূতন কারসাজিতে প্রতারণা চালিয়ে যেতেই থাকে। এদের হাত থেকে কম মানুষই নিস্তার পায়। এখন ঈদের সময় হওয়াতে এই প্রতারকেরা আরও দূর্বার ও নির্মম হয়ে উঠেছে। কত মানুষ এদের হাতে সর্বোস্ব হারাবে/ হারাচ্ছে ভাবতেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।
আপনি অত্যন্ত ভালো লেখেন। নিয়মিত লেখা নিয়ে আসলে আমরা খুব খুশি হতাম। আরও লিখুন। শুভ কামনা। 🌹🌹
ইঞ্জা
এইসব অমানুষেরা গরীব দুঃখি কাউকে ছাড়েনা, যেমন ছড়তোনা ঠগেরা, কত মানুষ যে মেরে ফেললো ওরা। 😢