Chandril Bhattacharya বক্তব্য অবলম্বনে –
আজকাল যে যুগ সংস্কৃতিমনা বলতে গেলে জীব জড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিয়ে যাচ্ছে তো বটেই। কিন্তু কমে যাচ্ছে কিনা তার উত্তর খুব ছোট করে বললে বলব- আমি জানি না। এ নিয়ে যতই ভাবছি গুলিয়ে যাচ্ছে এবং আমার ধারনা লেখার শেষে আপনাদের গুলিয়ে দিতে পারব। দেখনু সংস্কৃতি কথাটার মধ্যে একধরনের সংস্কারের ব্যাপার আছে। আমরা বলিনা ওমুক বাড়িটা সংস্কার হচ্ছে। তার মানে কি ? বাড়িটার মধ্যে দেয়াল-টেয়াল ড্যাম ছিল সারানো হবে। উইপোকার বাসা ছিল ফেলে দেওয়া হবে। পুরো বাড়িটাকে চমৎকার করে চুনকাম করা হবে। মানে ভেতর-বাহির দুদিক থেকে মজবুত ও পরিচ্ছন্ন করা হবে। আদৌও সংস্কৃতির যে ভারী সঙ্গা আসলেই তাই? যে নিরন্তর চর্চার মাধ্যমে সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন। এইবারে একটা জাতি সংস্কৃতিমনস্ক কিনা সেটাকে সে শুধু মাত্র নাচ গানকে ভালবাসে কিনা। ষ্টেজে উঠলে কেউ হাততালি দেয় কিনা তাই দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। তার আচার-ব্যবহার রীতি-নীতি বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে নির্ধারন করতে হয়। অটোওয়ালার সাথে ঝগড়া হচ্ছে একজন সাধারণ বাঙ্গালী কি ভাষায় কথা বলছেন তার শরীরের ভাষা কি? বডিল্যাঙ্গুয়েজ কি ? রাজনীতির মঞ্চে একজন বাঙ্গালী রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী বিরোধী একজন নেতা বা নেত্রীর সঙ্গে কি ভাষা প্রয়োগ করছেন ? যখন একজন বাঙ্গালী চোরকে ল্যাম্পপোষ্টে বেঁধে গনধোলাই দেয়া হচ্ছে। একজন সাধারণ বাঙ্গালী সেখান দিয়ে যাবার সময় ছুটে যাচ্ছেন চোরকে মারতে ? না বাঁচাতে ? সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন ইতরামির উৎসব চলছে সবাই মিলে কোন একজন মানুষকে, যে সময়টা এসেছে, একজন মানুষকে আক্রমন করলে ফ্যাশানেবল হওয়া যায়। কদরয্ ভাষায় আক্রমন করার জন্য বাঙ্গালীরা কতখানি ঝাপিয়ে পড়ছে । এই সমস্ত কিছু কিন্তু একটা জাতির সংস্কৃতিমনার লক্ষন। এই ভাবে আমরা সাধারণত সংস্কৃতিকে দেখি না। কিন্তু যদি দেখি- তাহলে বোধ বাঙ্গালীকে খুব সংস্কৃতিমনা বলে ভাবতে পারব। বাঙ্গালী যে ইমেজটা দেয়, সেটা হচ্ছে এই যে আমি তো রাস্তার কলে গোসল করতে করতে নিচ্ছি আওড়াই। সাধারণত নিচ্ছিতো তিন অক্ষর হল তার চেয়ে বেশি অক্ষর আওড়াতে তার বেশি ভাল লাগে। কিন্তু যদিও বা ধরি বাঙ্গালী চিরকাল এরকম, এটা আমাদের মানতে হবে – এখন বোধ হচ্ছে সেই সংস্কৃতিমনা আরো কমে যাচ্ছে । কেন ? কারন আপনারা খেয়াল করবেন – চারিদিকে তাকালে যে সমাজ জিবনে অভদ্রতা, অশ্লীলতা, হিংস্রতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতো বটেই, এমনিতেও। এবার এটার হয়ত অনেকগুলো কারন আছে । জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, লোকের তাতে বিরক্তি বাড়ে। জনসংখ্যা বাড়লে প্রতিযোগীতা বাড়ে, চাকরি না পাওয়ার দরুন তিক্ততা বাড়ে। আমি দরিদ্র চতুরদিকে শপিং মলে বিত্ত-বৈভবের প্রদর্শনী হচ্ছে । আমার লোভ বাড়ছে কিন্তু সেই লোভ মেটাতে পারছি না। তিক্ততা বেড়ে যাচ্ছে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে । তার থেকে সংস্কৃতিমনস্কতা কমে যাচ্ছে, হতে পারে । কিন্তু কি কারন সেটা ছেড়ে দিন। তবে সংস্কৃতিমনস্কতা কমে যাচ্ছে । এইবার আমরা বড় বড় কথা না বলে সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝি সাহিত্য-নাটক-সিনেমা এইগুলো নিয়ে। কি বলা হত আগে? সৌমমিত্ররা যখন নাটক করতেন সারারাত লোক লাইন ধরে, শুধু শহুরে লোক কেন মফস্বল থেকে লোক এসে লাইন দিয়েছে। এই হল বাঙ্গালীর সংস্কৃতিমনস্কতা। রদার ভাস্করয্ একজিবিশন হল, পানি জমে গেছে, এত বৃষ্টি হয়ে গেছে যে, পানির ভিতর দিয়ে শয়ে শয়ে লোক রদার ভাস্করয্ দেখতে আসবে। না আমাকে দেখতে হবে । এই হল বাঙ্গালীর সংস্কৃতিমনস্কতা। এ আর এখন কোথায়? আচ্ছা আমি যদি ধরি পাবলু পিকাশোর একটা একজিবিশন হবে কিংবা ষ্টিবেল ফিলবার্ড কোথাও এসে বক্তিতা দেবেন। ভীড় হবে না ? আমার তো মনে হয়, আগে যা হত তার চেয়ে দুশো গুন বেশি ভীড় হবে। মিনিটে মিনিটে ফেসবুক আপডেট ওয়েটিং ফর ফীলবার্ড, ফিলিং হ্যাপি, ফিলিং ডিজাপয়েন্টেট, ফিলিং ইমপেশেন। ওইখানে খাবার এনে, আরে রিতীমত মেলা বসে যাবে। আমার যা মনে হয়, আগে যা ভীড় হত তার থেকে অনেক বেশি ভীড় হবে। কিন্তু তাতে কি প্রমান হয় সংস্কৃতিমনস্কতা আমাদের মাঝে আছে? একটা হুজগ বিরাট নামের সাথে আমার নামের সম্পৃক্ত করে একরকম ফ্যাশান ষ্টেটম্যান্ট , এমপি মন্ত্রীর সাথে ছবি। বস সেদিন ওমক মন্ত্রীর সাথে কথা হল, ফিলবার্ড দেখতে গিয়েছিলাম এটা কি সংস্কৃতিমনস্কতা? মনে হয় না। উচু সংস্কৃতি, সংস্কৃতিমনস্কতাকে আমরা কি ভাবে সঙ্গায়িত করব। উচু সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী হওয়া। এটা কি সংস্কৃতিমনস্কতা? উচু সংস্কৃতির সাথে একটা জিনিস আছে । সেটা না, চট করে গিলে ফেলা যায় না। লোপালুপি করা যায় না। সেটা জানতে হয়, সেটা বুঝতে হয়, সেটা নিয়ে ভাবতে হয়্।
চলবে –
৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
মামুন চৌধুরি ভাই, আপনার এতো ভালো লেখাগুলোও এভাবে মন্তব্যসশূন্য পড়ে থাকবে, যদি আপনি ব্লগের স্বাভাবিক ব্লগীয় যোগাযোগ না জানেন।
আপনার আগের পোস্টগুলোতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, যাদের মধ্যে ব্লগের একাধিক মডারেটরও আছেন অথচ আপনি তাদের উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছেন না। এভাবে পোস্ট দিয়ে লাভ কী ভাই!
মন্তব্য করতে বা ব্লগ সংক্রান্ত কোন সমস্যা হলে ব্লগ টিমকে জানান।
মামুন চৌধুরী
আমি ভাই নতুন মানুষ এবং শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য। আমাকে পরামর্শ দিলে আমার জন্য সুবিধা হয়। আমি হয়ত সব সমস্যাই একসময় কাটিয়ে উঠতে পারব। তাদের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ বিঘ্ন হবার মুল কারন ব্লগে লেখার অভিজ্ঞতা না থাকা। আমার সকল অজ্ঞতাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে সবাই দেখবেন এবং পরামর্শ দিবেন। এ কামনা করছি।
রিতু জাহান
আমরা আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির মান ধরে রাখতে অক্ষম। তবে আগের থেকে আমাদের উৎসবের সংখ্যা বেড়েছে।
আপনার কথা ঠিক, আমরা উৎসুক জনতা। একটা বেঁধে রাখা চোরকে পারলে আমরা ভিড় ঠেলে আরো দু ঘা বসিয়ে দিতে চাই।
বেশ ভালো লেখা।
মামুন চৌধুরী
রিতু জাহান
আমার লেখা পড়েছেন সে জন্য ভাল লাগল। শুভ কামনা। ভাল থাকবেন।
রিতু জাহান
আপনার লেখা বা অন্য কারো লেখা বলে কোনো কথা না আসলে।
ব্লগে ভালো মন্দ লেখা আসলে তা পড়ে আলোচনা সমালোচনা করা অন্যান্য ব্লগারদের উচিৎ।
আমি সময় থাকলে পড়ার চেষ্টা করি মোটামুটি সবার লেখা।
অপার্থিব
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার আগ্রহের একটা বিষয়। সংস্কৃতি হচ্ছে মানূষের টিকে থাকার কৌশল। এই কৌশলগুলো ভৌগোলিক, সামাজিক, নানা বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সংস্কৃতির কোন উপাদান স্থায়ী নয়, প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে সংস্কৃতির ধারা। বাঙ্গালির সংস্কৃতি মনা কমে যাচ্ছে না , সেটা পরিবর্তিত হচ্ছে খুবই দ্রুত গতিতে। এই পরিবর্তনটা হচ্ছে মুলত দুই ভাগে, এক ভাগের মুলে রয়েছে ধর্ম তথা ইসলাম, সমাজের ইসলামীকরন হচ্ছে দ্রুত গতিতে, রাষ্ট্র, সমাজ , রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে, আর আরেক ভাগে মুলে রয়েছে ভোগবাদ আর বিশ্বায়ন।
লেখায় বানান ভুল প্রচুর, ভুল গুলো ঠিক করে দিলে ভাল হয়। পরের পর্বের অপেক্ষায়…