Google এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেবার মধ্যে অন্যতম একটি সোস্যাল সেবা হচ্ছে Google+
ফেসবুক, টুইটার এর মত এটিও একটি সোস্যাল প্লাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের লেখা, স্থিরচিত্র, এনিমেটেড চিত্র কিংবা ভিডিও প্রকাশ করতে পারত। শুধুমাত্র গুগলের একাউন্ট ব্যবহার করেই অন্যান্য অনেক সুবিধার সাথে গুগল তাদের এই সোস্যাল সেবাটি ব্যবহারীকে ব্যবহার করতে দিত।
কিন্তু গেল বছর গুগলের ডেভেলপার প্লাটফর্মে গুগল প্লাসের নিরাপত্তা ত্রুটির কারণ দেখিয়ে বন্ধ করার ঘোষনা দেয় তারা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-কে তারা জানায়, গুগল গত মার্চেই তাদের এই নিরাপত্তা ত্রুটিটি ধরতে পেরেছে। আর এই ত্রুটির কারণে নতুন করে কোন সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘনের জটিলতা এড়াতে ও টেক ওয়াল্ডে নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতেই প্রাথমিক ভাবে তারা ত্রুটির এই ব্যাপারটি গোপন করে। কিন্তু যখন ত্রুটির এই ব্যাপারটি লিক হয়ে গনমাধ্যমে চলে আসে, তখনই গুগলের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ কমে যায়।
২০১১ সালে প্রকাশের পর গত বছর পর্যন্ত গুগল প্লাস সকলের জন্যে অবমুক্ত থাকলেও অন্য সকল সোস্যাল মিডিয়ার তুলনায় গুগল প্লাসের ব্যবহারকারী ছিল খুবই নগন্য। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন রেজিস্টার্ড ইউজারের বিপরীতে সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল ৩৯৫ মিলিয়ন। কিন্তু এই বিশাল ব্যবহারকারীরা দিনে গড়ে মাত্র ৫ মিনিট (প্রায়) সময় কাটাতো গুগল প্লাসের পেছনে।
গুগল প্লাস বন্ধ হলে বর্তমান সকল ব্যবহারকারীর প্রোফাইল(একাউন্ট) ও পেইজও মুছে যাবে। গুগল প্লাসে পোষ্ট করা সকল ছবি, ভিডিও গায়েব হবে গুগল প্লাস বন্ধ হবার সাথে সাথেই। তাই গুগল তাদের ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে তাদের সকল গুগল প্লাস ডাটা ব্যকআপ ও ডাওনলোডের সুবিধা চালু করেছে। যাতে গুগল প্লাস বন্ধ হলেও তাদের পোষ্ট, ছবি আর ভিডিও গুলো ব্যবহারকারী থেকে হারিয়ে না যায়। তবে এই সুবিধাটি কাজ করবে গুগল প্লাস বন্ধ হবার আগেই। গুগল প্লাস বন্ধ হলে এই সুবিধাটি আর কাজ করবে না।
গুগল প্লাসের ডেটা ব্যাকআপ নেবার জন্যে প্রথমে ব্রাউজারে আপনি আপনার গুগল একাউন্টে লগইন করুন। লগইন শেষে নিম্নবর্ণত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন-
⦿ গুগল প্লাস ডেটা ডাওনলোডের জন্যে এই পৃষ্ঠাটিতে প্রবেশ করুন।
⦿ সাধারণ ভাবে এই পৃষ্ঠাটিতে আপনার গুগল প্লাসের সকল পোষ্ট, ছবি, ভিডিও, কম্যুনিটি ডেটা ব্যাকআপ করার জন্যে পূর্ব থেকেই সিলেক্ট করা থাকবে। তারপরও যদি আপনি কোন নির্ধারিত বিষয় বন্তু বাদ দিতে বা যুক্ত করতে চান তাহলে ‘All Google+ Stream data included’ লেখাটিতে ক্লিক করুন। তারপর লিস্ট থেকে পছন্দ মত ডেটা সিলেক্ট করুন কিংবা বাদ দিয়ে দিন।
⦿ পছন্দমত ব্যাকআপ করার ডেটা সিলেকশনের পর ‘Next step’ বাটনে ক্লিক করুন।
⦿ নতুন ফর্মে থাকা Delivery method থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী Delivery মেথড পছন্দ করুন। এখানে ৫ ধরণের মেথড রয়েছে-
— Send download link via email
(আপনার ফাইল গুলোর ডাওনলোড লিংক আপনাকে মেইলের মাধ্যমে পাঠাবে)
— Add to Drive
(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ ফাইল আপনার Google Drive -এ সংরক্ষণ করবে)
— Add to Dropbox
(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার Dropbox একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
— Add to OneDrive
(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার OneDrive একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
— Add to Box
(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার Box একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
⦿ File type থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী ফাইলের ধরণ নির্ধারণ করুন। .zip ফাইল সাধারণত Windows অপারেটিং সিস্টেমে কোন এ্যাপ ছাড়াই এক্সেস করা যায়। আর .tgz ফাইল ব্যবহার করতে হলে windows অপারেটিং সিস্টেমে আপনাকে 7-zip বা PeaZip এ্যাপের মত কোন এ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
⦿ Archive size থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী আর্কাইভ সাইজ সিলেক্ট করুন। আপনি যদি স্বল্প প্যাকেজের নেট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে Archive সাইজ থেকে 1GB বা 2GB সিলেক্ট করুন। আর যদি ব্যান্ডউইথ নিয়ে ঝামেলা না থাকে তাহলে 10GB অথবা 50GB-র যে কোন একটি সিলেক্ট করতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ হিসেবে আমি বলবো আপনি আপনার Archive ফাইল গুলো 2GB করে আর্কাইভ করুন। এতে আপনার ফাইল ডাওনলোড এবং স্থানান্তর সুবিধা উভয়ই সহজ হবে।
⦿ এরপর ‘Create archive’ বাটনটিতে ক্লিক করুন। তবে আপনি যদি Delivery method সিস্টেমে Add to Dropbox, Add to OneDrive অথবা Add to Box সিলেক্ট করে থাকেন তাহলে সব শেষে ‘Link account and create archive’ বাটনে ক্লিক করে আপনার Dropbox, OneDrive বা Box একাউন্টের সাথে লিংক করে দিতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহজেই আপনি আপনার ব্যাকআপ ফাইলটি Dropbox, OneDrive বা Box একাউন্টে পেয়ে যাবেন।
এখন আপনাকে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আপনার গুগল প্লাসের এক্টিভিটি এবং পোষ্টের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে আপনার অপেক্ষার সময়ের দৈর্ঘ কম/বেশি হবে। ব্যাকআপ শেষে আপনাকে মেইলের মাধ্যমে আপনার ব্যাকআপ ডাওনলোড করার লিংক জানিয়ে দেয়া হবে।
২৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
Good post.
অলিভার
ধন্যবাদ 🙂
ইঞ্জা
😆
শুন্য শুন্যালয়
আবারো একটা বড় সাইট বন্ধ হয়ে গেলো। গুগল প্লাসে আইডি ছিলো, কিন্তু একটিভিটি নেই, তাই ব্যাক আপ করা লাগছেনা।
তবে অনেকের কাজে লাগবে পোস্টটি। সময় দিয়েছেন বেশ গুছিয়ে লিখতে। ধন্যবাদ আপনাকে।
অলিভার
বাংলাদেশে গুগল প্লাসের তেমন প্রচলন ছিল না। কিন্তু এটা দারুন একটা সোস্যাল প্লাটফর্ম তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদিও অনেকেই এটাকে গ্রহণ করতে পারে নি। তারপরও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে।
কারও কাজে আসলেই এই পোষ্ট সার্থক হবে 🙂
মাহমুদ আল মেহেদী
গুরুত্বপূর্ণ একটা পোষ্ট ধন্যবাদ ভাই।
অলিভার
আপনাকেও ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটি দেখার জন্যে 🌺
নাজমুল আহসান
আমি এই ব্যাপারটায় অবাক হয়েছিলাম। গুগলের মতো জায়ান্ট কোম্পানি কি বাজার পর্যবেক্ষণ না করেই এরকম একটা প্রডাক্ট এনেছিল? যদি প্রস্তুতি নিয়েই এসে থাকে, তাহলে ফেইসবুকের মতো সাইটগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করল না কেন? শুরু থেকেই কেমন যেন একটা হাল ছেড়ে দেওয়া অবস্থা ছিল। নতুন ফিচার কিংবা ইম্প্রুভমেন্টের চেষ্টা চোখে পড়েনি।
প্রথম থেকেই এই প্ল্যাটফর্মটাকে আমার ভালো লাগেনি। নিয়মিত ছিলাম না বললেই চলে। তবে কীভাবে কীভাবে যেন বেশ কিছু হোমরাচোমরা লোকজন আমার ফলোয়ার হয়েছিলেন। একজন মন্ত্রী আর দুইজন বিখ্যাত প্রফেসর আছেন এই লিস্টে!
অলিভার
গুগল এমন অনেক প্রোডাক্টই এনেছে বাজারে, আবার অনেকগুলো বন্ধ করেছে সময় অসময়ে নানা কারণ দেখিয়ে।
শুরুতে এটা গুগল প্লাস হিসেবে প্রকাশ পায় নি। সার্কেল হিসেবে ছিল। পরে একে ঘষে মেজে গুগল প্লাস নামে নিয়ে আসা হয়। আর এমন সাইট গুলো আসলে জোর করে কাউকে ব্যবহার করানো যায় না। ফেসবুক, টুইটারের বেলাতে যেমন হয়েছে গুগলের ব্যাপারে তাই ঐভাবে এটা কাজ করেনি। এছাড়া ফেসবুক শুরুতে যে লক্ষ নিয়ে তৈরি হয়েছিল পরবর্তীতে সেটা থেকে বের হয়ে এসে নানা ভাবে মানুষকে প্রভাবিত করেছে (এর পেছনে অনেক কন্সপারেসি থিউরিও আছে)। সে অর্থে গুগল প্লাস কেবল মাত্র নিজেদের স্বার্থ (ব্যবহারকারীর তথ্য গুগলকে আরও উন্নত আর বিজ্ঞাপনের কাজে লাগানো) দেখে কাজ করে গেছে। পেছনে পড়ে থাকবার জন্যে এই কারণটাই আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।
গুগল অবশ্য একটা সার্ভিস বন্ধ করে তার মত অন্য একটা সার্ভিস নিয়ে আসে কিংবা আগের সার্ভিসটাকে অন্য আরেকটা সার্ভিসের সাথে ইন্টিগ্রিট করে দেয়। দেখা যাক, গুগল প্লাসের বেলাতে তারা কি সিদ্ধান্ত নেয়।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ 🌺
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার আইডি আছে এখানে। অনেক কিছুই সেইভ করে রাখতাম/ রাখি। পোষ্ট টি দিয়ে উপকার করলেন।
ধন্যবাদ।
অলিভার
পোষ্টটি কাজে আসলেই সার্থক হবে 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
কাজে এসেছে। আবারো ধন্যবাদ দিলাম উপোকারি পোষ্টটি দেয়ার জন্যে।
মনির হোসেন মমি
উপকারী পোষ্ট ধন্যবাদ।
অলিভার
🌹🌹
নীরা সাদীয়া
আমারও একাউন্ট ছিলো, কিন্তু পাস ভুলে গেছি। মিগ ৩৩ এর মত এটিও তবে বন্ধ হয়ে যাবে?
অলিভার
হ্যা, এপ্রিলের ৪ তারিখের পর সাধারণ ব্যবহারকারী আর গুগল প্লাস ব্যবহার করতে পারবে না 🙂
মনির হোসেন মমি
আপনার শেষ পিকচারে এসে থেমে গেছি।এখন তিনটি ধাপে ডাউনলোড দেখাচ্ছে।কিন্তু ডাউনলোড এর সময় এত লাগছে যে বার বার ফেইল মারছে।এখন কি করা।ধন্যবাদ।
অলিভার
সম্ভবত আপনার নেট কানেকশন অথবা ব্রাউজার সেশন এর কোথাও গড়মিল হচ্ছে।
আপনি নতুন করে ব্যাকআপ করুন আর এইবারে Delivery method থেকে Add to Drive অপশনটি সিলেক্ট করুন। এতে করে আপনার ব্যাকআপ করা ফাইল গুলো সরাসরি আপনার গুগল ড্রাইভে সংরক্ষিত হবে। এখন সমস্যা হলেও পরবর্তীতে যে কোন সময় আপনি আপনার ব্যাকআপ ফাইল গুলো গুগল ড্রাইভ থেকে ডাওনলোড করে নিতে পারবেন।
জিসান শা ইকরাম
গুগলের একটি প্রডাক্ট এভাবে বন্ধ হয়ে যাবে ভাবাই যায়না। খুব আগ্রহ নিয়েই একটিভিটি চালু করেছিলাম, কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই হতাশ হলাম।
নিজের সহ সোনেলার সবার পোস্ট শেয়ার দিতাম গুগল প্লাসে। ব্যাক আপ রাখার পদ্ধতি এবং ধাপগুলো বিস্তারিত দেয়ায় সুবিধা হলো পাঠকদের।
অনেক ধন্যবাদ এমন জরুরী একটি পোস্ট দেয়ার জন্য।
শুভ কামনা।
অলিভার
আগে খুব ব্যবহার না করলেও গত দু’বছর ধরে সেখানে সময় দিচ্ছিলাম। ফেসবুক যখন বিরক্তি ধরিয়ে দিচ্ছিল তখন সেখানে কিছুটা ভিন্ন রকম পরিবেশের দেখা মেলে। ফটোগ্রাফি, ক্রিয়েটিভিট ব্যাপার স্যাপার, সায়েন্স, আর্ট সহ আরও অনেক বিষয় নিয়েই সেখানে লেখা পাওয়া যেতো। যদিও বেশিরভাগ বিভিন্ন সাইট থেকে তাদের আর্টিক্যালের লিংক শেয়ার করে দিতো। কিন্তু তাতেও বিভিন্ন ধরণের জিনিষ সম্পর্কে জানা যেতো।
পোষ্টটি কারও কাজে আসলেই পোষ্ট করা সার্থক হবে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে 🌻
জিসান শা ইকরাম
আমিও মাঝে মাঝে ফটোগ্রাফি দেখতাম,
ফেইসবুকে চরম বিরক্তি এসে গিয়েছে,
মোটেই আনন্দ পাইনা ফেইসবুকে।
একই ধরনের লেখা ও মন্তব্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত ফেইসবুকে। পেইজে সোনেলার লিংক অটো শেয়ার হয়, একবার আইডি কিছু দিনের জন্য বন্ধ করেছিলাম, এতে শেয়ার বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র সোনেলার জন্যই ফেইসবুকে থাকা, নইলে আইডিই রাখতাম না।
শুভ কামনা
তৌহিদ
গুগল প্লাসে আমার একাউন্ট ছিল, তবে ব্যবহার করিনি। আসলে ইন্টারেস্ট ফিল করিনি। তবে সাইটটি বন্ধ হওয়াতে অবাক হচ্ছি।
অলিভার
আমি মোটামুটি ২ বছরের মত টানা ব্যবহার করছিলাম। ইন্টারফেসের চেয়ে কন্টেন্ট আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। নানান পোষ্ট থেকে নানান ধরণের কন্টেন্ট আর আর্টিক্যাল পড়বার সুযোগ হতো সেখানে। এখন আর সেটা হবে না। কিছুটা কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ 🌷
নিতাই বাবু
উপকারী পোস্ট। তবে আমার জানামতে গুগল এর আগেই আমাকে মেইল করবে, আর সময় দিবে।
অলিভার
সম্ভবত সক্রিয় ব্যবহারকারীদের গুগল ইতোমধ্যে মেইল করে ব্যাপারটি জানিয়েছে। এই বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই আমি গুগল থেকে মেইল পেয়েছিলাম।
ছাইরাছ হেলাল
যদিও এখানে কিছুই নেই,
তবুও আপনি আমাদের জানিয়ে ভালই করেছেন।
তবে হ্যা, আপনাকে এখানে দেখে ভাল লাগছে।
সময় করে সামান্য উঁকিঝুঁকি দিলে ভালই লাগবে।
ধন্যবাদ।
জাহিদ হাসান শিশির
গুগল প্লাস অনেক চেষ্টা করেও ফেসবুকের মত হয়ে উঠতে পারেনি।