গত তিনঘন্টা যাবত আমি এই দোকানের ভেতর আটকে আছি। বাইরে থেকে শাটার বন্ধ। মাঝে মাঝে শাটারের ওপাশে মানুষজনের শব্দ পাই। কেউ কেউ আমাকে উদ্দেশ্য করে দুই একটা কথা বলে হেসে গড়িয়ে পরে। কেউ গালি দিচ্ছে। আমি আতংকিত হই। খুব পাতলা এই শাটারের এই ব্যবধান মনে হচ্ছে মানুষের জগত থেকে আমি যোজন যোজন দূরে আছি। না, ভুল বললাম। আমি মনে হয় এই দুনিয়ার বাইরে আছি। মোটর পার্টসের এই ছোট্ট দোকানঘরটাই এখন আমার পৃথিবী। চুরি করতে ঢুকে বোকার মত আটকা পড়েছি। কলে আটকা ইদুরের মত অবস্থা আমার এখন।
প্রচন্ড পিপাসায় গলা বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। দোকানে একটা খালি মামের বোতল দেখে পিপাসা যেন আরো বেড়ে গেল। ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে। বাইরে এখন মনে হয় একজন দাঁড়িয়ে আছে। শাটারের নিচের সামান্য ফাক দিয়ে তার ছায়ার নড়াচড়া দেখছি।
– ভাই, পানি খামু
কোন উত্তর আসে না।
– ও ভাইগো! তিয়াস লাগে। পানি খামু। সব ট্যাকা দিয়া দিমু!
– আমারে ৫ শ দিবি!? তাইলে তোরে খুইল্যা দিমু খ্যাক খ্যাক খ্যাক
– হ ভাই, সব ট্যাকা দিয়া দিমু। তালাডা খুইল্যা দেন….
ওপাশ থেকে আর কোন শব্ধ আসে না। আজকে শুক্রবার জুম্মার দিন। এখন ভর দুপুর। আজকে দুপুর ১২ টায় দোকান বন্ধ হয়েছে। আমিও বন্দি হয়েছি। দোকানের মালিক নামাজ পড়ে নিশ্চই এখন রেস্ট নিবে। আজকে আর দোকান খুলবে না। কালকে সকালে খুলবে। আমি মনে হয় ততক্ষনে পিপাসায় মরেই যাব।
র্যাকে সাজানো মবিলের বোতল দেখে ইচ্ছে করছে এক ঢোক খাই। সাহসে কুলাচ্ছে না।
ঘরে কোন এমন ফাক ফোকর নেই যে আমি পালাবো। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।
– ও ভাই, আমারে মাফ কইরা দেন ভাই!
– চুপ থাক হারামজাদা। চুরি করার সময় হুশ আছিলো না!!?? এখন আটকা থাক। কালকা সকালে মহাজন দোকান খুলবো। তখন বুঝবি আসল মজা….খ্যাক খ্যাক খ্যাক
শাটারের নিচ থেকে লোকটার ছায়া সরে গেল। আমি চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন স্বর বের হল না।
১৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বন্দীর আর্তনাদ টা খুব ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
শিপু ভাই
ধন্যবাদ
আপনার জন্যও শুভকামনা
ফয়জুল মহী
Stay home, best wishes
শিপু ভাই
you too
সাবিনা ইয়াসমিন
ভয় পাওয়া আর ভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ার তফাৎ এমনই হয়। প্রানের মায়া ত্যাগ করে চুরি করতে এসেছিলো বেচারা, এখন সেই প্রান হারানোর ভয়েই সব দিয়ে দিতে চাচ্ছে। বাস্তবতা কত নির্মম!
শিপু ভাই
হুম। আমরা পরিনতি না ভেবেই অনেক অপরাধ করে ফেলি
তৌহিদ
লেখা পড়ে নিজেরই তৃষ্ণা পেলো ভাই। আপনি এত ভালো লেখেন অথচ নিয়মিত না লিখে আমাদের সুন্দর সুন্দর লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত করেন। মোট্টেও উচিত নয় কিন্তু।
ভালো থাকবেন ভাই।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ ভাই।
আসলে ব্লগিং আমার কাছে একটা স্পেশাল ব্যাপার। স্পেশাল লেখা মাথায় এলে সেটা ব্লগে দিতে ইচ্ছে করে।
ফেসবুকে যা ইচ্ছে তাই লেখা যায়।
কামাল উদ্দিন
ভয়ঙ্কর অনুভুতিটার বাস্তব রূপ দিলেন আপনার লেখনিতে ভাই। আসলে এমনটা করে কখনো ভেবে দেখিনি…….ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ কামাল ভাই
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ শিপু ভাই
জিসান শা ইকরাম
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে………
সামান্য রিস্ক নিতে গিয়ে এখন ভয়ে মরে না যায়।
শুভ কামনা।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ মামা
হালিম নজরুল
শুভকামনা রইল।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ