এই সময় শহীদ সাহেবের সাথে কয়েক জায়গায় আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীর সাথে শহীদ সাহেব হিন্দু-মুসলমান শান্তি কায়েম করার জন্য কাজ করছিলেন। তখন মুসলমানদের উপর মাঝে মাঝে আক্রমণ হচ্ছিল। সেদিন রবিবার ছিল। আমি সকালবেলা শহীদ সাহেবের বাসায় যাই। তিনি আমাকে বললেন, “চল, ব্যারাকপুর যাই। সেখানে খুব গোলমাল হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীও যাবেন।” আমি বললাম, ” যাব স্যার।” তাঁর গাড়ীতে উঠলাম, নারকেলডাঙ্গা এলাম। সেখান থেকে মহাত্মাজ্বী, মনু গান্ধী, আভা গান্ধী ও তাঁর সেক্রেটারি এবং কিছু কংগ্রেস নেতাও সাথে চললেন। ব্যারাকপুরের দিকে রওয়ানা করলাম। হাজার হাজার লোক রাস্তার দু’পাশে ভিড় করেছে, তাদের শুধু এক কথা, ‘বাপুজী কি জয়’। ব্যারাকপুরে পৌঁছে দেখি, এক বিরাট সভার আয়োজন হয়েছে। মহাত্মাজ্বী রবিবার কারো সাথে কথা বলেন না, বক্তৃতা তো করবেনই না। মনু গান্ধী ও আভা গান্ধী ‘আলহামদু’ সুরা ও ‘কুলহু’ সুরা পড়লেন। তারপরে রামবন্ধনা গান গাইলেন। মহাত্মাজ্বী লিখে দিলেন, তাঁর বক্তৃতা সেক্রেটারি পড়ে শোনালেন। সত্যই ভদ্রলোক জাদু জানতেন। লোকে চিৎকার করে উঠল, হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই। সমস্ত আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে গেল এক মুহূর্তের মধ্যে।
এর দু’দিন পরেই বোধহয় ঈদের নামাজ হল। মুসলমানরা ভয় পেয়ে গেছে ঈদের নামাজ পড়বে কি পড়বে না? মহাত্মাজ্বী ঘোষণা করলেন, যদি দাঙ্গা হয় এবং মুসলমানদের উপর কেউ অত্যাচার করে তবে তিনি অনশন করবেন। মহল্লায় মহল্লায় বিশেষ করে হিন্দি ভাষাভাষী লোকেরা শোভাযাত্রা বের করে স্লোগান দিতে লাগল, ‘মুসলমানকো মাত মারো, বাপুজী অনশন কারেগা। হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই।’ ঈদের দিনটা শান্তিতেই কাটল। আমি আর ইয়াকুব নামে আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধু পরামর্শ করলাম, আজ মহাত্মাজীকে একটা উপহার দিব। ইয়াকুব বলল, “তোমার মনে আছে আমি আর তুমি বিহার থেকে দাঙ্গার ফটো তুলেছিলাম?” আমি বললাম, “হ্যাঁ মনে আছে।” ইয়াকুব বলল, “সমস্ত কলকাতা ঘুরে আমি ফটো তুলেছি। তুমি জান না তার কপিও করেছি। সেই ছবিগুলি থেকে কিছু ছবি বেছে একটা প্যাকেট করে মহাত্মাজীকে উপহার দিলে কেমন হয়।” আমি বললাম, “চমৎকার হবে। চল যাই, প্যাকেট করে ফেলি।” যেমন কথা, তেমন কাজ। দুইজনে বসে পড়লাম।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৮১)
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৬৮)
৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এর পরের অপেখ্খা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
🙂 🙂
জিসান শা ইকরাম
জনতার উপর কতখানি প্রভাব ছিল মহাত্মাজীর! লিখিত ভাষন শুনেই জনতা হিন্দু- মুসলমান ভাই ভাই শ্লোগান দিয়ে উঠলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ইতিহাসের পাতায় নেতা তো তারাই।
নীহারিকা
এমন নেতারা কি আসবে আর কখনো এই ভূমিতে?
যাদের একটি মাত্র কথায় জনগণ তাঁদের মত পালটে ফেলতে পারে?
সঠিক দিন নির্দেশনা পেতে পারে?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
জানি না। তবে পুঁজিবাদ যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে আছে, মানুষ এখন স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝে না। আজকাল ‘নেতা’ সর্বাধিক লাভজনক একটি পেশা।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন মহান মানুষেরা আজ যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে এতো জঘণ্য রাজনীতির শিকার হতোনা আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
রাজনীতির বলির পাঠা আমরা।