“ঠোঁটের কথাগুলো আজকাল নিখোঁজ। হাওয়াদের সাড়া-শব্দও পাওয়া যায়না। গাড়ীর হর্ণে, রিক্সার টুংটাং-এ, ডিজেলের কালো ধোঁয়ায় ছাওয়া নীল আকাশ। এরই মধ্যে প্রাণ ভরে পেট্রোলের গন্ধ নিচ্ছি। এতো প্রিয় এই গন্ধটা আমার।
ওহ বলে নেই, আমার নাম সিঁথি। বন্ধুরা বলে আমি একটা প্রজাপতি, চুপচাপ বসে থাকতে জানিনা। নেচে বেড়াই। অস্থির এবং চঞ্চল। অনেক গুরুগম্ভীর পরিবেশকে মুহূর্তে হাল্কা করে দিতে জানি।
আসলেই কি তাই? বুকের কোনো প্রান্তে কি একটুকুও মেঘ নেই? বিদ্যুৎ চমকায় না? গোপনের দীর্ঘশ্বাস একান্ত আপন রাত্রি শোনে। জানে, চেনে। এসব কথার কোনোই মানে নেই।
এই ডায়েরী লেখা ছেড়ে দিয়েছি সেই কবে। কিন্তু আজ না লিখে পারলাম না। মনের কথা সকলকে বলা মানে সমস্যার শুরুকে অনেক বেশী দ্রূত টেনে নিয়ে যায় আরোও গভীরে। দু:খ বলা মানে কতোগুলো মানুষের হা-পিত্যেশ। সাথে থাকে মানসিক নির্যাতন। আহারে মেয়েটির এমন অবস্থা? অন্য কেউ বলবে, “হবেনা? যেমন কর্ম, তেমনই তো ফল পাবে।” তাই ডায়েরী। বড়ো নি:শব্দে সে হজম করে, আর মরে গেলে কারোও হাতে পড়লেও তখন কিছুই যাবে-আসবেনা। অন্যান্য দিনের মতোই সকালটা শুরু হয়েছিলো। এমন কিছু ঘটবে তা যে কেন আগে জানিয়ে দেয়না সময়। মানুষ অন্তত প্রস্তুতি তো নিতে পারে।”
এরপরের পাতাগুলো শূণ্য। আর জানা হয়নি কি ঘটনা ঘটেছিলো সেদিন, কি এমন যন্ত্রণা যার জন্যে ওর কথাগুলোও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলো? সিঁথির সাথে দেখা হয়, কথাও। কিন্তু জিজ্ঞাসা করিনি। একটা গভীর কুয়াশায় ঢেকে রেখেছে সে নিজেকে। ওটা ভেদ করে যাওয়া শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবপ্রায়। স্মৃতির খাতা ভরে গেলে আর কি কাজ করে? আমার স্ত্রী সিঁথি এখন অনেক শান্ত, যা সবাই চাইতো। ও সবাইকে সব দিয়েছে, ফিরিয়ে দিতে জানেনা আমার প্রজাপতি।
গ্রীনলাইফ হাসাপাতাল
ঢাকা ১২ মার্চ, ২০১৫ ইং।
২০টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
এমন কোন দুঃখই যেন না আসে, নেচে বেড়ানো প্রজাপতি থমকে যায়।
স্মৃতির খাতা কি কখনো ভরে যায়?
মন খারাপের লেখায় মন খারাপ হয়েছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন খারাপের লেখায় মনই যদি খারাপ না হয়,তবে কিসের লেখা? 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আমি মন খারাপের লেখা লিখলে কারো মন খারাপ হয়না, তখন আমার আরো বেশি মন খারাপ হয় 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আহারে আপু এমন অবস্থা! তাহলে তুমি শুধুই আনন্দের কথা লিখো। বুঝেছো গো আনন্দবতী মেয়ে?
রিমি রুম্মান
স্মৃতিরা ফুরায় না… কভু
নীলাঞ্জনা নীলা
স্মৃতিরা থেকে যায় হৃদয়ের একান্ত কক্ষে…………
ছাইরাছ হেলাল
স্মৃতিরা ফুরোবার নয়, তাই ফুরাবে ও না।
নীলাঞ্জনা নীলা
স্মৃতিরা অফুরান………
খেয়ালী মেয়ে
প্রজাপতি, খুব সুন্দর উপমাই দিয়েছে সিঁথির বন্ধুরা..
কেনো ডায়েরীর পাতাগুলো শুন্যে রয়ে গেলো?, কেনো শান্ত হয়ে গেলো?, কিভাবে স্মৃতির পাতা পূর্ণ হয়ে যায়?-কৌতূহলী মনের প্রশ্ন…
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই খেয়ালী মেয়ে…….
জিসান শা ইকরাম
মন খারাপের লেখা আপনাকে মানায় না।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন খারাপ করলে কি করবো? 🙂
ব্লগার সজীব
দেশে এসে এ কেমন লেখা লিখলেন আপনি!!
নীলাঞ্জনা নীলা
মাঝে মাঝে টেষ্ট একটু পাল্টাতে হয় 🙂
স্বপ্ন
স্মৃতিরা ফুরিয়ে যায়না (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
যাক,তা অবশ্য চাই না।
লীলাবতী
স্মৃতি ফিরে ফিরে আসবেই আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
এসব যে অমূল্য রতন……
মেহেরী তাজ
এর পরের পরের পাতা গুলো শুন্য কেনো? তবে কি আপনার স্মৃতি ফুরিয়ে গেছে???
ডাইরি লেখা ছেড়ে দিলে মানবোই বা কেনো?
মন খারাপ হয়ে গেলো…… 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
সবাই হয়ত এমন চেয়েছিল……