ফরাসী বিপ্লব (French Revolution)
২০০ বছর আগে ফ্রান্সে, মানব ইতিহাসে ঘটে যায় এক বিরাট রক্তক্ষয়ী বিপ্লব যা ছিল দশ বছর ধরে চলা এক মহা বিপ্লব । ১৭৮৯ সালে আরম্ভ হওয়া এই রক্তাত্ত বিপ্লব মানুষের মনে দাগ কেটে আছে ।
“স্বাধীনতা, সম-অধিকার এবং দেশ পরিচালনার নীতি থেকে ধর্ম কে দূরে রাখা ”
এটি ছিল ফরাসী বিপ্লবের বিখ্যাত স্লোগান ।
বিপ্লবের উদ্দেশ্য :
“Inspired By Liberal and Radical Ideas” নুতুন জীবন ধারা ,নুতুন চিন্তা চেতনা ,নুতুন রাজনীতি তে উৎফুল্লিত হওয়া দেশ এবং সমাজের জন্য একটা নুতুন আবিষ্কারের দিকে ধাবিত হওয়া ছিল এই ছিল বিপ্লবের লক্ষ্য ।
পুরানো চিন্তাধারা বাদ দিয়ে, মান্ধাত্তা আমলের রীতিনীতি এবং প্রথা বাদ দেয়া এবং এক নুতুন ধরনের রাজনীতি চালু করা, একটা নুতুন জীবন ধারা প্রচলন করে মানুষের স্বাধীনতা ,অধিকার প্রতিষ্ঠা করা । যা ব্যাক্তি জীবন,পরিবার, সমাজ এবং দেশ কে যুক্তি দিয়ে পরিচালিত করবে ।
যা দ্বারা পুরানো রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং একটা রিপাবলিকান সরকার পদ্ধতি চালু করতে সহায়তা করে। এই বিপ্লবের আগে মানুষের সম অধিকার ছিলনা, স্বাধীনতা ছিলনা। ধনী দরিদ্রের মধ্যে অনেক দূরত্ব ছিল এবং ধনী শ্রেণি সব সুবিধা ভোগ করতো। শ্রেণী বৈষম্য ছিল প্রকট। নারী পুরুষে সমতা ছিলনা ।
ধর্ম কে শাসন ব্যাবস্থা থেকে দূরে রাখা হয় । কারন অনেক সময় রাজা ধর্ম কে নিজের মত ব্যাখ্যা করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতো ।
ফরাসী বিপ্লবের প্রধান সাতটি কারনঃ
সাত বছর ধরে কলোনি রক্ষা করার যুদ্ধঃ
১৭৮৯ সালে ফ্রান্স ছিল ইউরোপের মধ্যে একটি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভালো অবস্থায় থাকা একটি দেশ ।
উপর থেকে দেখলে মনে হতো ফ্রান্স একটি প্রসপরাস উন্নত দেশ ,জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়ন । রাশিয়া বাদ দিয়ে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকের বাস।
ফ্রান্সের জিডিপি সে সময় ব্রিটেনের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল । শক্তিশালী আর্মি আর নেভি ছিল ।
তা ছাড়া তাদের দেশের বাইরে অনেক কলোনি তো ছিলই ।
ফ্রান্সের আর্ট, কালচার, সাহিত্য,লিটারেচার এবং খাবার বিখ্যাত ছিল ইউরোপের মধ্যে।
সাইমন সিটিজেন (১৯৮৯) এই অবস্থার কথা এই ভাবে বলেছেন “A rapidly modernising nation with early industrialisation ,growing commerce, and scientific progress.” এতো ভালো থাকার পর কেন বিপ্লব হয়েছিলো তার কারন ফ্রান্সের অধিবাসী সরকার ব্যাবস্থার একটা পরিবর্তন চেয়ে ছিল ।
এতো কিছু থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ক্রাইসিস আরম্ভ হয় যে কারনে তার একটি কারন ১৭৫৬-১৭৬৩ লেগে থাকা সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয় । যা চলেছিল ব্রিটেনের সাথে আমেরিকার কলোনি রক্ষা করার ব্যাপার নিয়ে। চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্সকে তার দখলকৃত স্থান ছেড়ে দিতে হয়। দূরের সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে গিয়ে ফ্রান্স তার নিজের দেশের লোকজন কে দেখাশুনা করতে পারেনাই ।
আমেরিকার কলোনি রক্ষা করতে গিয়ে ফ্রান্স আর্মি এবং নেভিকে শক্তিশালী করতে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। এই অর্থ যোগাড় করতে জনগণের উপর ট্যাক্সের বোঝা বেড়ে যায়। যা জনগণকে রাগান্বিত করে।
দুর্ভিক্ষঃ
অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং অত্যাধিক গরমে ফসল উৎপাদনে ব্যাহত হয়। ১৭৭০-১৭৮০ পর্যন্ত ফসল উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি । কৃষি আধুনিকরন তখনো পুরাপুরি সম্ভব হয়নি । যার ফলে ইনফ্লেসান বেড়ে যাওয়াতে খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। কৃষক এবং সাধারন মানুষ খাদ্য সমস্যায় পড়েন । ১৭৮৯ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৮ মিলিয়ন হয়।
একদিকে মানুষের খাবারের অভাব আর অন্যদিকে রাজার বিরাট লাক্সারী প্যালেসে রাজ পরিবারের বিলাসী জীবন মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে দায় ।
এই দুর্ভিক্ষ ছিল রেভুলেসনের মূল কারন।
শ্রেণী বৈষম্য এবং অসম সামাজিক ব্যাবস্থা
দেশ পরিচালনায় সিস্টেম না থাকাঃ
দেশে ছিল তিনটি শ্রেণী ।
১) ধর্মীয় গুরু
২) নোবেল
৩) সাধারন জনগন
এই তিন শ্রেণীর রীতিনীতি ছিল মেডিভ্যাল সময়ের মত ।
ধর্মীয় গুরুর মধ্যে ১) Jean Mabillon, 2) charls de saint 3) Annebiget বিখ্যাত ছিলেন । ০.০৫% মানুষ এই ধর্ম গুরু হিসেবে কাজ করতেন । রোমান ক্যাথলিক বিসপ এবং নান ছিল এই শ্রেণীতে ।
তারপরে আসে নোবেল ,তাঁরা হলেন হাই র্যাঙ্কিং সরকারী উর্দ্ধতন কর্মচারী । এরা ছিলেন মোট জনসাধারনের ২% । ষোলতম রাজা লুইস এর আত্মীয় স্বজন এই দলে ছিলেন। ২০% ল্যান্ড রাজার পরিবারের দখলে ছিল ।
এই দুই শ্রেণীকে ট্যাক্স দিতে হতোনা ।
তৃতীয় শ্রেণী তে ছিল ৯৮% সাধারন জনসাধারণ এরা হলেন কৃষক, শ্রমিক এবং ব্যাবসায়ী। তারাকেই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয় কিন্তু তারাকেই সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স দিতে হতো ।
এই শ্রেণী বৈষম্য ফ্রেঞ্চ রেভুলেসানের অন্যতম কারন।
রাজার এককছত্র ক্ষমতা, চিন্তা ভাবনা না করে অর্থ ব্যায় এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাবস্থাপনার অভাবঃ
ষোলতম রাজা লুইস দেশ পরিচালনার ব্যাপারে অপরিপক্ব ছিলেন। তাছাড়া সে সময়ে একজন রাজা ছিলেন এককছত্র ক্ষমতার অধিকারী । যাকে বলা হয় ‘এক নায়ক তন্ত্র’ ।
যখন একজন শাসক দেশ পরিচালনার সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে রাখে এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং ভাবে সবায়কে তার আদেশ মেনে চলতে হবে তখন তাকে বলা হয় ডিক্টেটর । সেটা ভালো হোক বা খারাপ হোক সেটা ব্যাপার নয় ব্যাপার হল সব প্রজাকে তার ইচ্ছা মতো চলতে হবে। প্রজাদের বা জনসাধারনের কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকবে না ।
জনসাধারনের এই নীতি পছন্দ হচ্ছিলো না।
বাহুল্য খরচঃ
বেশির ভাগ ফ্রেঞ্চ বসবাস করতো দারিদ্র্যের মধ্যে । ষোলতম রাজা লুইস তাদের কথা চিন্তা না করে বাহুল্য খরচ করে বিরাট প্যালেস বানালেন । সেই বিলাস বহুল প্যালেসে ট্যাক্স পেয়ার দের অর্থ দিয়ে বাগান, চিড়িয়া খানা এবং সুইমিং পুল বানালেন। এই ভাবেই তারা বিলাসিতা করতো । একজন ফ্রেঞ্চ লেখক ‘পারিসিয়ান বজ’, ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদ কে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “Look at ours, He lives at Versailles. What is your king? He is badly lodged . To be pitied, in fact.” অর্থাৎ কোথায় তোমার রাজার রাজপ্রাসাদ আর দেখো আমাদের রাজার রাজ প্রাসাদ” । এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে এই রাজ প্রাসাদে কত টাকা খরচ হয়েছিল ।
করাপসান বা দুর্নিতিঃ
১৭৭৫ সালে, হাতে নাতে ধরা পড়ে একজন নোবেল রাজকোষের অর্থ দিয়ে ২০ টি ঘোড়া কিনে নিজের ব্যাবহারের জন্য। ষোলতম রাজা লুইসের উচিৎ ছিল আইন করে এগুলো বন্ধ করা। কিন্তু তা তিনি করেন নাই। পুরো মনার্কির কোথায় কি হচ্ছে তা তিনি ম্যানেজ করতে পারেন নাই । ফলস্বরূপ পুরো দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে চলে যায় ।
দেউলিয়া বা ব্যাঙ্ক ক্রাপ্সিঃ
১৭৭৫ সালের ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের যুদ্ধে জয়লাভের জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয় নৌবাহিনী এবং সেনা বাহিনী কে শক্তিশালী করার জন্য । আর এই অতিরিক্ত টাকা খরচ করাতে দেশ ব্যাঙ্ক ক্রাপট বা দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
ইনফ্লেসানঃ আর্থিক ব্যাবস্থায় অস্থিরতাঃ
আর্থিক ব্যাবস্থার অস্থিরতা আরম্ভ হয়। ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার ব্যাপারে রেস্টরিকশান আরম্ভ হয়। দেশের ভিতর আভ্যন্তরীণ কাস্টমার কে কেনা বেচার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া আরম্ভ হয়। সাধারন মানুষের ট্যাক্স দিতে অপারগতা।১৭৭০- ১৭৮০ পর্যন্ত ফসল উৎপাদন না হওয়াতে কৃষকের টোল দিতে অসুবিধা। ইনফ্লেসান বেড়ে যায়। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে সাধারন মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্ট সৃষ্টি হয়।
বেকারত্বঃ
ফ্রান্স তখন ইন্ডাস্ট্রিআল কান্ট্রি হতে সবে শুরু করেছে । আর্থিক ব্যাবস্থার অবনতির জন্য কাঁচামাল সরবরাহ কমে যায়। যার ফলে কারখানা বন্ধ হতে শুরু করে এবং হাজার হাজার কর্মী বেকার হতে শুরু করে। ১৭৮৯ সালে প্যারিস ছিল একটি ওভার ক্রাউডেট সিটি। বেকারত্ব,কাজ চলে যাওয়া, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ সমাজে মানুষে মানুষে হানাহানি মারামারি এবং বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায় ।
দেশ, সমাজ এবং মানুষ নিয়ে নুতুন দর্শনের উৎভবঃ (Enlightenment Ideas)
ফ্রেঞ্চ রেভুলেসানের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য কারন হলো নুতুন দর্শনের উৎভব এবং তার বহুল প্রচার ।
রুশো(Rousseau), মন্তেস্কু (Montesque) এবং ভলটেয়ার(voltaire) এই তিনজন বিখ্যাত পলেটেসিয়ান এবং দার্শনিকের জন্ম এই ফ্রান্সেই । ১৮ শতকে তাদের দর্শন, “ধর্মকে টলারেন্স, স্বাধীনতা এবং যুক্তি পূর্ণ কারন দর্শানো” এই তিন আইডিয়া মানুষের মনকে প্রভাবিত করে। চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করতে আরম্ভ করে।
আর এই তিন বিষয় নিয়ে পুরানো চিন্তা এবং ধ্যানধারণার পরিবর্তন শুধুমাত্র ফ্রান্সেই নয় পুরো ইউরোপে মানুষের মনকে ব্যাপক ভাবে নাড়া দায় । মানুষ পুরানো চিন্তা ধারা এবং মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে থাকে।
যা সমাজ ব্যাবস্থায় পরিবর্তন আনে এবং রাজতন্ত্রর বিরুদ্ধে মানুষের বিরূপ ধারনা চলে আসে।
১৮ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্সে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তখন এই ফিলসফার দের দর্শন “power of reason” লেখার মর্ম ছড়াতে থাকে । দার্শনিক দের আইডিয়া মানুষ নিতে থাকে । তাদের চিন্তা চেতনা পরিবর্তন হতে থাকে । বেশির ভাগ লোক বুঝতে শিখে রাজা তার ইচ্ছা মতো চলতে পারেনা এবং ইচ্ছা মতো দেশ চালাতে পারেনা।
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব মন থাকে এবং তার মন সে কন্ট্রোল করবে । ১৮ শতকে প্যারিসে শিল্প কারখানায় কাজ করার উদ্দেশ্যে অনেক লোকের বসবাস আরম্ভ হয়। ১৭৯৩ সালে ৪০০০ খবরের কাগজ প্রকাশ হতো। দর্শনের কথা গুলো সহজ ভাবে বুঝানোর জন্য কার্টুনের সাহায্য নেয়া হতো। যাতে সাধারন মানুষ সহজ ভাবে বুঝতে শিখে ।
যে সমস্ত দর্শন মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিলঃ
“মানুষের অধিকার একটা স্বাভাবিক এবং জরুরী ব্যাপার”
“প্রত্যেক কাজের পেছনে একটি যুক্তি থাকতে হবে”
“সমাজ থেকে শ্রেণী বিভাগ দূর করতে হবে কারন কল্যাণ কামী রাষ্ট্র মানে সব মানুষের কল্যাণ করা শুধু ধনী বা নোবেল দের দেখাশুনা সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়”
রুশোকে বলা হয় “ফাদার অফ দি ফ্রেঞ্চ রেভুলেসান”
তার বিখ্যাত উক্তি “Humans are mostly good and that it is society that corrupts. Societal institutions and organisations oppress man and can lead to evil and that the natural ‘uncivilized’ state of human beings is the ideal human condition” অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষই ভালো কিন্তু দুর্নীতি গ্রস্ত সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাপে মানুষ শয়তানে পরিণত হয়।
“ Man is born free and everywhere he is in chains” অর্থাৎ মানুষ স্বাধীন ভাবেই জন্মে কিন্তু পরবর্তি জীবনে নানা ভাবে তাকে শেকল দিয়ে বাঁধা হয়”
In the spirit of Law’s তে মন্তেস্কু বলেন “The administrative powers were divided into the executive the judicial and the legislative. No power should be come stronger than another” অর্থাৎ শাসন ব্যাবস্থায় ক্ষমতা ভাগ করা হয়েছে বিচার,শাসন এবং আইন বিভাগের মধ্যে , এই বিভাগ গুলোর ক্ষমতা একটা থেকে আর একটার যেন বেশি না হয়”
তিনি আরও বলেন “নুতুন সরকার পদ্ধতি লিখিত হতে হবে আর তা হল কি হওয়া উচিৎ আর কি উচিৎ নয়”
Roger Bacon যাকে বলা হয় ‘ফাদার অব সায়েন্টিফিক মেথড’ তিনি বলেন সরকারকে হতে হবে “More Materialistik Then Spiritual”
ভলটেয়ার বলেন “দেশ পরিচালনার ব্যাপারে যে নিয়ম নীতি করা হবে তা হতে হবে যুক্তি যুক্ত , ধর্ম কে রাখতে হবে দেশ পরিচালনার বাইরে। কারন যুক্তি ছাড়া নিয়মনীতি মানব কল্যাণ করতে পারেনা”
লক (Locke)আর একজন পলিটিক্যাল দার্শনিক বলেন “All persons are endowed with natural rights to life liberty and property, and rulers who fail to protect those rights may be removed by the people, by force if necessary”. মানুষে জন্মতগত ভাবে তার স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির উপর অধিকার আছে । কোন শাসক যদি সেই অধিকার রক্ষ্যা করতে না পারে তবে মানুষ প্রয়োজন মতো সেই শাসকে অপসরণ করতে পারে।
নারী অধিকার
Olympede Gouges (১৭৪৮-১৭৯৩) নামক একজন ফ্রেঞ্চ নারী লেখিকা এবং পলিটিক্যাল একটিভিসট নারী পুরুষের সম অধিকার দাবী করেন ।
Victor Hugo তার নভেলে বলেন “ সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণীর প্রতি অবহেলা এবং তাদের জীবন মানের উন্নতি না করা হলে তা সমাজে অকল্যাণ বয়ে আনবে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক”
এই সমস্ত দার্শনিক দের উক্তি ব্যাপক ভাবে প্রচার হয় কারন সে সময় শিক্ষার হার অনেক ছিল ,যার জন্য তা পড়তে সাহায্য করে এবং ফ্রেঞ্চ নাগরিক রা রেস্তোরাঁ,কফি হাউস, চুলকাটা সেলুন এবং পরিবারে একত্র হয়ে আলোচনা করতে থাকেন এবং তা ব্যাপক ভাবে মানুষের মন মগজে চিন্তা চেতনায় সাড়া ফেলে। সমস্ত কুসংস্কার থেকে বের হতে সাহায্য করে ।
গনমিছিল প্রতিবাদ
১৭৮৯ সালের ১৪ই জুলায় এক বিরাট গন বাহিনী প্যালেসের বাইরে প্রতিবাদ করার জন্য আসতে থাকে । সমস্ত রাজধানীর প্রতিবাদী মানুষ মিছিল আকারে প্যালেসের দিকে আগাতে থাকে। কোন দেশ বা জনসাধারণ তাদের ক্রোধ এবং অসন্তোষ যা থাকে তা বের করার জন্য একত্র হয়ে তার প্রকাশ ঘটায় তাকে রায়ট বলে।
১৭৮৯ থেকে ১৭৯৫ ফ্রান্সে এই মুভমেন্ট আরম্ভ হয় । ওয়ার্কিং ক্লাস এবং রাষ্ট্র পরিচালনা কারী দের মধ্যে প্রতিবাদী মানুষের দাবী ছিল “Plitical change” বা “রাজনীতির সংস্কার” ।
দুর্গের মধ্যে জমা ছিল অনেক গোলা বারুদ । মানুষের ধারনা হয়ে ছিল রাজা সে গুলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করবে আর্মি দিয়ে এবং তাদেরকে সাপ্রেস করবে ।
ফ্রান্সের ফাইন্যান্স মিনিস্টার জ্যাক নেকো, ষোলতম রাজা লুইসকে বোঝাতে ছেয়েছিল ব্যাপারটা তাদের সাথে আলোচনা করার জন্য। রাজা তা শুনেন নায় । বরং তাকে ডিসমিস করা হয় ।
যখন দাবী প্রথ্যাখান হয় জনসাধারণ দুর্গের মধ্যে ঢুকে পড়ে। নোবেলদের জীবন ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়ে এবং রাজার ক্ষমতা চলে যায়।
সারা দেশে আতংক, ভয়াবহ রক্তাত্ব (Reign of terror)
রাজা লুইসকে দেশ চালাতে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন তা যোগাড় করতে একটা মিটিং ডাকেন। তিনি ট্যাক্স বাড়ানোর চিন্তা করলে তাতে ব্যার্থ হন তার ডাকা মিটিং টাই প্রতিবাদে পরিণত হয়। তিনি পালাতে চেয়ে ছিলেন ,তাকে পালাতে বাধা দেয়া হয় এবং বলা হয় রাজতন্ত্র পরিত্যাগ করে নুতুন ধরনের সরকার ব্যাবস্থার প্রবর্তন করতে। লেজিসলেটিভ গভর্নমেন্ট করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। ১৭৯১ থেকে ১৭৯২ সাল পর্যন্ত “রিপাবলিকান ফ্রেঞ্চ” ঘোষণা করে একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কিন্তু এই বিপ্লব না থেমে আরও ভায়লেনট আকার ধারণ করে।
রাজা লুইসকে হত্যা করা হয় ১৭৯৩ সালে একুশে জানুয়ারী। তার সাথে ১,৪০০ মানুষ যারাকে শত্রু মনে করা হয়েছিলো তারাকে হত্যা করা হয় । মোট ১৭,০০০ লক কে হত্যা করা হয় এবং ১০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় জেলে ট্রায়াল ছাড়া।
কনক্লুসানঃ
অনেক ইতিহাসবীদ ফ্রেঞ্চ রেভুলেসান কে ইউরোপের ইতিহাসকে একটা
টারনিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করেন।
সরকারকে হতে হবে জনগনের সেবক। রাজার ক্ষমতা খর্ব করা। রুশোর “Genaeral Will” এ রুশো বলেন “রাজাকে সেবা করা নয়,রাজার কাজ জনগনের সেবা করা” । দেশের সব মানুষ সরকারের সেবা পাওয়ার সমান অধিকারী । যাকে বলা হয় “কল্যাণকারী রাষ্ট্র” বা ওয়েলফেয়ার কান্ট্রি ।
রাজতন্ত্র চলে যায় । তৎক্ষাণিক দেশ পরিচালনার ক্ষমতা না থাকায় শূন্যতা সৃষ্টি হয় । যার ফলে চারদিকে chaos শুরু হয় এবং মানুষে মানুষে হানাহানি,মারামারি এবং গোলমাল বৃদ্ধি পায় । এই সুযোগে ১৭৯৯ সালে মিলিটারি ক্যু এর মাধ্যমে ১৭৯৯ সালে নেপলিয়ান বনারপারট ক্ষমতা নিয়ে নায় ।
হুসনুন নাহার নার্গিস
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
আপনার প্রতিটি লেখা তথ্য বহুল। অনেক কিছু জানা হলো। শুভ রাত্রি।