তরিকানুযায়ী ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না বলে এ দেরি,শেষ পর্যন্ত সেই মিস্ত্রিটি এলো,আমিও গেলাম।
কালো টেকো বেটে শুকনো,দেখতে ও ভালো না,ঋজু ঋদ্ধ ঋদ্ধি। সামান্য কাঠমিস্ত্রি সেভেন/এইট ফেল,চল্লিশোর্ধ্ব। দৈনিক মজুরীতে অন্যের দোকানে কাজ করতেন,এখন নিজের একটি ছোট্ট দোকান দিয়ে উদয়াস্ত কাজ করেন। ভাড়ার বাসায় থাকেন স্ত্রী ও দু’টি সন্তান নিয়ে।ছেলেটি স্কুলে,মেয়েটি সম্মান পড়ছে।
শিবের গীত গাইছি না।
স্বশিক্ষিত মানুষটি বিরাট লাইব্রেরী গড়ে তুলেছেন ধীরে ধীরে।নিজে পড়াশোনা করছেন নিয়মিত,লিখতে শুরু করেছেন।একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেছেন,লেখার জন্য আরও পড়ছেন। চুপিচুপি একটি খবর বলে রাখি,তাঁর লেখাটি লেখা চলাকালীন ই আমাকে পড়তে দেবেন,একদম হাতে গরম অবস্থায় তা বলেই রেখেছেন।ইতিহাস ও ধর্ম তার পছন্দের বিষয়।কিছু প্রায় দুর্লভ বই কায়ক্লেশে সংগ্রহ করেছেন।নিজের কেনা বই কেউ পড়তে চাইলে সাইকেল চালিয়ে তার বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসেন এবং পড়া হলে আবার ফেরত নিয়ে আসেন।
আমি বই দেই না,নেই ও না,আমার সাকুল্যে খান আষ্টেক আটপহুরে বই তাঁর প্রয়োজন হলে নিয়ে পড়তে বলেছি।
দুঃখ একটাই পাঠক পান নাই মনের মত,তৈরিও করতে পারেন নি।
দাগাদার দাগাবাজ দুর্বৃত্ত,দুর্লভ দুর্মূল্য বই পড়ার কথা বলে নিয়ে অনেকদিন ঘুড়িয়ে আর ফেরত দেয়নি,হারিয়েছে বলে।কিন্তু থেমে যাবার মানুষ তিনি নন।
না পড়ার জন্য সিন্দাবাদের লাল-চোখা দৈত্য দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে একটুও ট্যাঁ-ফোঁ করতে না দিয়ে চুলের মুঠি ধরে সটান দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াং প্রজন্মকে ফট করে ছুটে গিয়ে বইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পড়বে সকাল সন্ধ্যা দুপুর বা রাত্রে খুচখাচ বিড়বিড় করে পয়েন্টলেছ ভাবে,তা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।
বনেদী টিভি চ্যানেলে ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎকার প্রচারের পর ও বৈরাগী পাঠকের ধনুর্ভঙ্গ না পড়ার পণে সামান্য চিড় ধরাতে পারেনি।
তাঁর তাবৎ বইকুল আমার জন্য উন্মুক্ত উন্মুখ হলেও ঈশ্বর প্রতিটি দিন মাত্র চব্বিশটি ঘণ্টায় কৃপণের মত বেঁধে রেখেছেন।
প্রশ্ন রেখেছিলাম– কেন পড়েন?
বিনয় নিয়ে বলেছিল– নিজের মধ্যে অনেক অন্ধকার,যদি কিছুটা দূর হয়।
ফোন করি,খোঁজ রাখি।
=====================================================================
কবে যে প্রহেলিকার মত ঝরঝরে ঝকমকে গদ্য লিখতে পারব কে জানে।
৪৩টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
1st
ছাইরাছ হেলাল
ঘাপ্টি?
প্রহেলিকা
নেট স্লো নাহলে কতটুকু ঘাপটি মারতে পারি পরমান হতো। প্রথম হইছি খুশি খুশি বাকিটা পরে।
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর আমিও বইয়ে ভাগ বসাতে পারি?
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই পারেন। অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
শ্রদ্ধা এমন মানুষটির প্রতি।
এমন মানুষটিকে দেখেও শান্তি,
নিজে পড়তে পারিনা বলে দেখে যদি কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়।
দেখা করে অবশ্য তার সাথে একখান যুগল ফটুক তুইল্যা
ফেইসবুকে আপলোডাইয়া
নিজের মহাত্ব প্রকাশ করার সুপ্ত ইচ্ছে কাউকে বলা হবে না।
ছাইরাছ হেলাল
এদিনে এমন মানুষ রেয়ার। আলাপ হলে আরও ভাল লাগবে।
তা ফটু আপ্লোডাইলে মন্দ হবে না।
অবশ্য উনি কিছুই জানতে পারবেন না।
মাহামুদ
পড়ার রোগ ভয়ঙ্কর রোগ
ছাইরাছ হেলাল
কিন্তু পড়ার কোন বিকল্প আমরা জানি না। তাই এ রোগ নিয়েই জীবনের পূর্ণতা।
জিসান শা ইকরাম
বিশ্বস্ত খবরে প্রকাশঃ
একজন নতুন ঔপন্যাসিকের আভির্ভাবের অপেক্ষায় বাংলা সাহিত্য।
প্রহেলিকা সে নতুন ঔপন্যাসিক তা আমি বলতে চাই না।
ছাইরাছ হেলাল
সে তো আমাদের পরম চরম সৌভাগ্য।
তাই আগাম বুকিং দিয়ে রাখলাম,অবশ্যি মুফতে।
প্রহেলিকার কথা আমাদের আগে এভাবে বলা ঠিক না।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
ব্যাপার কিছুই বুঝিনাই।
লাস্টের লাইনের উপরের দুই লাইনে ভালোলাগা
ছাইরাছ হেলাল
খাইছে কয় কী? গদ্য লেখা শিখছি মাত্র।
অপেক্ষা করুণ, দেখি কতদূর বুঝিয়ে বলতে পারি।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
এবার বুঝছি। আগে মনসং যোগে ঘাটতি ছিল।
নুসরাত মৌরিন
আপনিও খুব ভালই গদ্যে পটু।
ঝকমকে গদ্যে তো মন ভাল হয়ে গেল ভাইয়া…।
যিনি পড়ুয়া হয়েছেন তিনি মরেছেন-এ নেশা ভীষন নেশা।আর সেই নেশাখোরের লেখা হবে আরো বেশি নেশা জাগানিয়া।
আমিও কিন্তু পড়তে খুব ভালবাসি।আর উপন্যাস আমার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে,তাই গরম গরম এক পিস উপন্যাস আমিও যেন পাই।
কিন্তু যার কথা বলছেন সেই মহতী মানুষটি কে?
নুসরাত মৌরিন
তাঁকে দেখার খুব ইচ্ছা পোষন করলাম।
সেই সাথে তার জন্য বিনয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা। -{@
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় পটু হওয়া এত সহজ নয়। গদ্য লেখা অনেক কঠিন আমার কাছে।
মনে হল তাই লিখে ফেললাম। উপন্যাস লেখা শেষ হতে এক-দু বছর লেগে যেতে পারে।
উনিতো লেখক নন। সে নিজে পাঠক ও সংগ্রাহক। শুধু পাঠক তৈরি করতে পারেন নি। এটি আক্ষেপ তার।
খুব সাধারণ কাঠ মিস্ত্রি, কিছুদিন আগে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে একজন।
দেখা হওয়ার সম্ভবনা নেই,তবে আপনার শ্রদ্ধা জানিয়ে দেব।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শ্রদ্ধা রইলো অচেনা মানুষটির জন্য।
তাঁরা নিজেরা পড়াশুনা করে সার্টিফিকেটধারী হতে না পারলেও জ্ঞান আহরনের কাজটি তাঁদের থেমে থাকেনা।
প্রবল জ্ঞান অন্বেষণের নেশায় নিজে কষ্ট করে বই যোগাড় করে বেড়ান বলে, আগামী প্রজন্মকে বই পড়ায় উদ্ভুদ্ধ করতে নিজেই ছুটে গিয়ে বই তাদের দোরগোড়ায় রেখে আসেন।
এমন মানুষের সংখ্যা দিনেদিনে কমে যাচ্ছে।
ছাইরাছ হেলাল
আসলেই এমন মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।আপনি ঠিকই বলেছেন।
জ্ঞানের আলো পৌছে দেয়ার এ এক অনন্য প্রচেষ্টা।
অবশ্যই শ্রদ্ধা তাঁকে।
স্বপ্ন
স্বশিক্ষিত মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা।আপনি যখন তার প্রসংসা করছেন,অবশ্যই তিনি অনেক গুণী হবেন।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যি অনেক গুনী তিনি। শুধু আমি না,অনেকেই তাঁর প্রশংসা করে এখন।
প্রহেলিকা
একাধিক দুশংবাদে মন খারাপ হয়ে আছে খুব তবে এমন মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে ভুলবো না।
ছাইরাছ হেলাল
দোরের দীন দুর্বৃত্ত দুঃসংবাদ কে দ্রুত দুয়ো দিয়ে দীপ দ্যুতি দারুণ দুনু-তনু সুসংবাদ
বয়ে আসুক সে অপেক্ষায় আমরাও।
অবশ্যই শ্রদ্ধা করা উচিৎ এই অসাধারণ মানুষটিকে।
খেয়ালী মেয়ে
এমন মানুষ আজো আছে ভাবতেই ভালো লাগে–উনার প্রতি সালাম রইলো……..
বিনয় নিয়ে বলেছিল– নিজের মধ্যে অনেক অন্ধকার,যদি কিছুটা দূর হয়—-কেউ বিনয় নিয়ে বলে আর কেউ বিনয় নিয়ে লিখে, দারুন (y)
কবে যে প্রহেলিকার মত ঝরঝরে ঝকমকে গদ্য লিখতে পারব কে জানে—প্রহেলিকার নামের সাথে এমন আরো কয়েকটা নাম যুক্ত হয়ে আমারও বিরাট আফসোস হয় যে, কখনো কি পারবো লিখতে?..
ছাইরাছ হেলাল
আর কারো নাম যুক্ত হোক বা না হোক আপনার নামটি যে ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়ে গেছে
তা দেখতেই পাচ্ছি।অবশ্যই তাকে শ্রদ্ধা।
প্রহেলিকা
উনার সদিচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানাই, একজন খুব সাধারণ কাঠ মিস্ত্রি হয়েও যিনি নিজের মাঝে থাকা সুপ্ত অন্ধকার দূরীভূত করার জন্য যার শরণাপন্ন হয়েছেন, বলতে দ্বিধা নেই তিনি সঠিক বন্ধুকেই পেয়েছেন। উনার মতো এমন কিছু কিছু ব্যক্তি কিন্তু এখনো আমাদের মাঝে আছে তবে তাদেরকে তুলে আনতে আমরা সব সময়ই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকি।
আপনি তুলে এনেছেন দেখে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
গুণীর কদর এখন আর আমরা দিতে পারি না, গুণীর কদর দিতে পারে একমাত্র সময়ই, উনার বিষয়ে আরো জানতে চাই এবং উনার উপন্যাসটিও পড়তে চাই আপনার মতোই গরম গরম, কিছুটা ঠান্ডা হলেও সমস্যা নেই আমাদের।
সবার শ্রদ্ধার মতো আমার শ্রদ্ধাটিও পৌঁছে দিবেন উনার কাছে।
এখনতো দেখছি আপনার জন্য প্রার্থনা করতেই হবে ইশ্বরের কাছে, অন্তত যেন প্রহেলিকার ঝরঝরে ঝকমকে গদ্যের অশুভ প্রভাব যেন বিন্দুমাত্রও না পরে।
ছাইরাছ হেলাল
ইশ্বরের সাথেও ভাও করে ফেলছেন দেখছি। আপনাদের লেখা দেখে গদ্যাকারে গদ্যে প্রবেশের
পথ আগলে দাঁড়ানো ঠিক না। সবার ই থাকে দেখাদেখি করে লেখালেখি করার শেখার সাধ-আহ্লাদ।
আসলে সে অর্জন করেছে নিজ যোগ্যতায়, আমার সাথে সামান্য দিনের পরিচয়। তবে নূতন বই সংগ্রহ হলে
আমাকে জানায়। দু’একটি দেয়। আমার সময় হয় না তা পড়ার। আমার নিজের যে পড়ার বাকী অনেক।
কালকেই আর একটি টেলিভিশনের জন্য তার সাক্ষাতকার নিয়েছে,আমাকে সে জানিয়েছে।
সচ্ছল নয়,তাও কত ত্যাগ,ভাবতেই অবাক হই।
প্রহেলিকা
ইশ্বর উনি বহুদূরের একজন, এতো সাহস কই, আমিতো শুধু ভেক ধরি, আমি কি আর আপনার মতো !
এমন ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মতো মানুষদের বিবেকের জন্ম দেয়।
টেলিভিশনে যেদিন প্রচার হবে মনে করে জানাতে হবে কিন্তু। এবার ভুল করা চলবে না কিন্তু জানাতে হবে যথা সময়ে।
প্রজন্ম ৭১
কিছু মানুষ আসলে থাকেনই,যারা অনুপ্রেরনার উৎস হয়ে থাকেন,প্রেরনা যোগান।শ্রদ্ধা জানাই এই মানুষটিকে।
ছাইরাছ হেলাল
ভেতরে কিছু না থাকলে অনুপ্রেরণায় কাজ হয় না।
শেষতক অনুপ্রেরণাটি খাবি খায়।
নওশিন মিশু
শ্রদ্ধা রইলো অচেনা ঐ পূজনীয় ব্যাক্তিত্বের প্রতি….
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই শ্রদ্ধা তাঁকে।
ব্লগার সজীব
মানুষটি সম্পর্কে আরো জানতে চাই।এমন মানুষ আছেন এখনো?
ছাইরাছ হেলাল
এখনও কিছু এম মানুষ আছে বলেই হয়ত পড়াশোনা চালু আছে।
দেখি সময় পেলে আবার লিখব তাঁকে নিয়ে।
খসড়া
আপনার একান্ত অনুভূতি সব সময়ই হিট।
ছাইরাছ হেলাল
ভাইয়া ‘হিট’ কী যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
শুন্য শুন্যালয়
ব্যাটে বলে পেলেই বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি? আটপহুরে বই কি? মানুষটির জন্য অবশ্যই শ্রদ্ধা। তবে তাকে তুলে সেই ই আনতে পারবে যার ভেতর পড়ুয়া গুনের ছটা আরো বেশি। এরচেয়ে ঝকমকে না হলেও আমাদের চলবে। 24 ঘন্টা আসলেই অনেক কম। কতো কিছু পড়বার আছে!!!
ছাইরাছ হেলাল
আটপহুরে=আটপৌরে, ব্যাটে বলে হলে কট ও হয় মনে রাখি তা ও।
আমি কিন্তু কোন গুনের ছটা দেখতে পাচ্ছি না,বরং অ-গুন দেখতে পাচ্ছি এখন অনেক বেশি। এখনই এভাবে একজন একান্ত শিক্ষানবিশ কে কঠিন হাতে থামিয়ে দেয়া ঠিক না।
কত কী শেখার-লেখার বাকী এখনও আপনাদের থেকে। জানার বাকী এখনও অনেক।
অবশ্যই শ্রদ্ধা মিস্ত্রি মানুষটিকে।
শিশির কনা
এমন মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।
মিথুন
প্রথমে একজন মানুষের বাহির থেকে দেখা বর্ণনা, এরপর তার ভেতর। শ্রদ্ধা দুজনকেই, একজন আলো দেখায়, আরেকজন দেখতে পায়।
সত্যিকারের অন্ধকার দূর করবার জন্য পড়লেই চলবেনা, ভেতরে নেয়াও চাই।
আপনি সবসময়ই ভালো লেখেন———-
ছাইরাছ হেলাল
আপনার মাত্র দেড় লাইনে তো দেখছি আমার সারা লেখার চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে।
‘আপনি সবসময়ই ভালো লেখেন———-’
অনেক কাল পরে এই অলক্ষুনে মিষ্টি কথা কেউ একজন বলল।