প্রত্যাশিত সময় এবং স্থানে দেশের কয়েকটি বড় দলের সাধারণ সম্পাদক, মহা-সচিবগণ গুলশান এর একটি আলিশান বাড়িতে রাতে সমবেত হয়েছেন। প্রকাশ্য বিবাদমান দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের একত্র সমাবেশ অবাক করার বিষয় হলেও আসলে অবাক হবার কোন ব্যাপার নেই। ”তলে তলে টেম্পু চালাও, আমি বললেই হরতাল”- এই সিস্টেম এরা কঠিন ভাবে মেনে চলেন। এনারা সমবেত হয়েছেন আসলে দেশের মৃত নেতাদের আত্মার সাথে মত বিনিময় করার জন্য। সবাই সমবেত হবার পরে হাতে হাত রেখে ত্রিভূজাকৃতি প্লেটের উপর হাত রাখলেন, যে প্লেটের মাথায় একটি পেন্সিল দেয়া, আত্মা উপস্থিত হবার পরে তিনি এই কলমের মাধ্যমে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে দিবেন। নিবিষ্ট মনে আত্মাকে ডাকছেন সবাই, যার যার দলের। আত্মার জগতে রাজাকার কাদের মোল্লার বিশাল প্রভাব। এই লোকটার রায়ের বিরুদ্ধাচারণের মধ্য দিয়েই দেশে স্বাধীনতা পরবর্তীসময়ে সবচেয়ে বড় গণজাগরণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জাগতিক জেলখানায় যে যত বড় অপরাধী তার তেমন সমীহ জাগানো ভাব, ঠিক তেমনি আত্মার জগতেও। এত বড় বড় জীবিত নেতারা তাদের মৃত নেতাদের আত্মাকে ডাকছেন, ভালোই আলোড়ণ পরে গিয়েছে আত্মার জগতে। মৃত নেতাদের আত্মারা সবাই গুলশান এর সেই বাড়িতে চলে এসেছে। রাজাকার কাদের মোল্লাকে কোন নেতা স্মরণ না করলেও সে আত্মাদের মধ্যে প্রভাবশালী হওয়ায় চলে এসেছে দেখতে, কেন এত ডাকাডাকি?

কক্ষের মধ্যে পিন পতন নিস্তব্ধতা। কক্ষের বাইরে আত্মাদের ভিড়। হঠাৎ মৃত আত্মাদের কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে, কাদের মোল্লার আত্মা কয়েকজন আত্মাকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে চিতপটাং করে কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করলো। একজন আত্মাই কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করার নিয়ম। কাদের মোল্লার আত্মার এত এগ্রেসিভ হবার কারণ হচ্ছে তার নামেই নাম একটি দলের সেক্রেটারী আছেন এখানে। কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাতে চায় তাকে দিয়ে। কক্ষে প্রবেশ করে প্ল্যানচেট এর সিস্টেমে নেতাদের হাতে না বসে সে একদম আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী কাদের সাহেবের  মধ্যে প্রবেশ করল। প্রবেশ করার পূর্বে প্লানচেট এর সিস্টেম ব্রেক করে দিয়ে ফেলল। আত্মা আসলো অথচ প্রশ্ন করার সুযোগ পেলো না কেউ। আত্মাটা কই গেলো তারও কোন হদিস পেলো না। প্লানচ্যাট স্থগিত করে যে যার বাসায় গিয়ে ঘুম। আর কাদেরের আত্মা কাদেরের মধ্যেই থেকে গেলো।

পরেরদিন কাদের কাদেরকে দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলাল  “৪৭ বছর পর এসে পরিবারের ব্যাক গ্রাউন্ড কি ছিলো, জামাত না যুদ্ধাপরাধী তা আমলে না নিয়ে বর্তমান অবস্থান দেখেই দলের সদস্য করা হবে”।
“বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং এর সংশ্লিষ্ট অঙ্গ সংগঠনগুলোতে পদ পদবী পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাক্তির পরিবারের কেউ যুদ্ধ অপরাধী ছিলো কিনা, সাম্প্রদায়িক দলের সাথে জড়িত কিনা, কেউ জামায়াত করতো কিনা, ৪৭ বছর পর এসে এসবের কোন যৌক্তিকতা নাই ,আমরা যাকে সদস্য করবো তার ব্যাকগ্রাউন্ড টাই মূলত দেখবো ”


কাদের মোল্লার আত্মা খুশীতে বাকবাকুম। যা বলাতে চেয়েছে তা বলাতে পেরেছে। এখন হতে গোলাম আজম, মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাইদি, সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লাদের সন্তানদের আর লীগের নেতা হতে সমস্যা নেই। এমনকি তারা একদিন লীগের সভাপতিও হতে পারবে।

 অথচ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলে আসছেন ‘ দলে কেউ আসতে চাইলে তার পরিবারের ব্যাক গ্রাউন্ড দেখেই বিবেচনা করা হবে।’ এটি কোন ব্যাপার না। সভানেত্রী কত কিছুই তো বলেন, বাস্তবায়ন তো উনি করেন না।

প্রচুর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে লীগ সাধারণ সম্পাদক পরেরদিন আবার বললেন যে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত ইসলামীর পরিবারের কাউকে দলে নেয়া হবে না।

কাদের মোল্লার আত্মা এতে বিচলিত নয়। তার আসল বার্তাটি দেয়া হয়ে গিয়েছে। এখন আর উল্টো বললেও কাজ হবে না। সে আবার আত্মার জগতে প্রত্যাবর্তন করেছে বিজয়ীর বেশে।

আত্মার জগতে শ্লোগান হচ্ছে জোরসে ‘ এক কাদের লোকান্তর ……

 

১জন ১জন
0 Shares

৪৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ