@@প্রতিবন্ধী কি– জানতে হবে, জানাতে হবে, হতে হবে সচেতন ?—২
http://sonelablog.com/archives/9810 পর্ব–১
>>ওয়েলসারের বুদ্ধি অভীক্ষা অনুযায়ী বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার স্তর-
১। মৃদু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্কে গড়ে ৭০-৫০ হয়। বিশেষ যতœ নিলে এরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
২। মধ্যম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্কগড়ে ৪৯-৩৫ হয়। এই ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের অনেকের ডাউন সিন্ডোম থাকে। অনেকের শারীরিক বৈকল্যও থাকতে পারে।
৩। গুরুতর মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্ক ৩৪-২০। এদের জন্মগ্রহণের পরপরই শনাক্ত করা যায়।
৪। চরম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী- এদের বুদ্ধাঙ্ক ২০ এর কম। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশুর শারীরিক ও অন্যান্য বৈকল্য থাকতে পারে।
>>নিুলিখিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখে সাধারণভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু শনাক্ত করা যায়।
(ক) হাঁটা, চলা, বসা, কথা বলা ইত্যাদি বিকাশগুলো বয়সের তুলনায় কম হয়।
(খ) কোনো বিষয়ে শিশু মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
(গ) কোনো নির্দেশনা সহজে বুঝতে পারে না। একই নির্দেশনা বারবার দিতে হয়।
(ঘ) শিশু কোনো কাজ করতে পারে না। এমনকি মল-মূত্র ত্যাগের শিখণও সহজে গ্রহণ করতে পারে না।
(ঙ) সুক্ষ্ম কোনো কাজ করতে পারে না। অবাঞ্চিত আচরণ করে।
(চ) সমবয়সীদের সাথে মিশতে পারে না। সামাজিক আচরণ ঠিকমতো প্রদর্শন করতে পারে না।
(ছ) ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যায় বা খিচুনি হয়।
@@বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কিছু রোগ যা দেখে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা সহজে শনাক্ত করা যায়।
(ক)মাইক্রোসেফালি—মাথার আকৃতি অস্বাভাবিক ছোট হয়। এরা গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(খ)হাইড্রোসেফালি— মাথার ভিতরে তরল পদার্থ জমে থাকে ফলে মাথার আকৃতি অস্বাভাবিক বড় হয়।
এরাও গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(গ)ডাউন সিন্ডোম— গোলাকার মুখোমন্ডল, তীর্যক চোখ, চোখের পাতা পুরু হয়। জন্মের সময় শিশু দূর্বল ও শিথিল থাকে। হাত, পা ও ঘাড় খাটো হয়। উপুর হতে, বসতে ও হাটতে দেরী হয় এবং এরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(ঘ)ক্রিটিনিজম— শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বিলম্ব হয়। শিশুর দেহে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন কম হয়। ফলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়- শিশু খুব ধীরে বেড়ে ওঠে। কপাল ছোট, মুখমন্ডল হাত-পা ফোলা এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা থাকে।
পাঠ-৩ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা ও শ্রবন প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ ও প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ
——————————————————
বাংলাদেশে দৃষ্টি ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর এই দুই প্রতিবন্ধী জন্ম নেবার পর পড়ে সনাক্ত করা সম্ভব যদি আমরা বাবা মারা একটু সচেতন হয়।
চোখের ও কানের নিু লিখিত অবস্থা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রতিবন্ধিতার ধরন শনাক্ত এবং পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
>>দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ—-
(ক) চোখের পাতা লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া। চোখের পাতার কিনারে শুষ্ক আস্তরণ।
(খ) চোখ থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া।
(গ) ঘন ঘন রগরানো ও চোখ কুচকানো।
(ঘ) বর্গ চিনতে ভুল করা। বর্ণ উল্টা দেখা।
(ঙ) লেখার সময় অসম ফাঁক দেয়া, সারি সোজা রাখতে না পারা।
(চ) কাছের বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া বা দেখতে না পারা।
>>শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা সনাক্তকরণ—-
(ক) কানের গঠনগত ত্র“টি বা বিকৃতি থাকলে কান পাকা রোগ ইত্যাদি সমস্যা থাকা।
(খ) উচ্চারণের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সুবিধা বা কথা কম বলা।
(গ) কিছু শোনার সময় কানে হাত দিয়ে শোনার চেষ্টা করা। রেডিও, টিভি শোনার সময় শব্দ বাড়িয়ে দেয়া বা কাছে গিয়ে শোনা।
(ঘ) কোনো প্রশ্ন বারবার করা বা এক প্রশ্নের অন্য উত্তর দেয়া।
(ঙ) কথা না বলে হাত ও মুখ ভঙ্গিমার মাধ্যমে ইশারায় ভাব বিনিময় করা।
>>প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধঃ
——————— ———–
প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিবেশী শিশু যাতে জন্মগ্রহণ না করে এবং শিশু জন্মগ্রহণের পর যাতে প্রতিবন্ধতার শিকার না হয় সে দিকে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। এই জন্য যা করণীয় তা হচ্ছে-
গর্ভকালীন সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ- গর্ভকালীন সময় মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া। পুষ্টিকর খাবার না খেলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু পূর্ণাঙ্গ সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে অথবা শিশু কম ওজনের হয়। এসব শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। প্রতিবন্ধীতা রোধে গর্ভকালীন সময়ের প্রথম মাসগুলোর পুষ্টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে আয়োডিন যুক্ত লবণ গ্রহণ শিশুর মানসিক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ করে।
>।ঔষধ গ্রহণে সতর্কতা— গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ ও মাদক, সিগারেট থেকে বিরত থাকরে কিছু কিছু জন্মত্রুটি এবং মানসিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
>>প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ— বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা রোধ করতে হলে গর্ভধারনের আগে রুবেলা ভাইরাস বা জার্মান হাম প্রতিরোধক টিকা নিতে হবে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের সকল মহিলাকে ধনুষ্টংকার থেকে রক্ষার জন্য টিটি টিকা দিতে হবে।
>>শিশু কিশোরকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া— ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে শিশুদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। শিশুদের গাঢ় সবুজ রং এর শাক সবজি, হলুদ ফলমূল খাওয়ালে এই প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা যায়। জন্মগ্রহণের পর পরই মায়ের প্রথম দুধ শিশুকে দিতে হবে এই দুধে কলেস্ট্রাম নামক হলুদ বর্ণের পদার্থ থাকে যা শিশুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
>>স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা—ঘন বসতি ও অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গুরুতর প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
>>বেশি বয়সে সন্তান ধারণ রোধ— বেশি বয়সে সন্তান গ্রহণ বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার অন্যতম কারণ। তাই বেশি বয়সে সন্তান ধারণ নিরুৎসাহিত করতে হবে।
>>রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ রোধ— ঘনিষ্ট রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ বন্ধ রোধ করতে পারলে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
>>আঘাত ও রোগ সংক্রমণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ— শিশুর কানে, চোখে, মাথায় আঘাত বা রোগ সংক্রমণ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
>>রাসায়নিক পদাথ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন— পোকা মাকড় ধ্বংস করার জন্য যে সব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ। সমাজের অনেক লোকই বিভিন্ন ঝুঁকি ও পূর্ব সতর্কতামূলক ধারনা না নিয়েই সরাসরি ক্ষেতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পোকা-মাকড় নিধন করে। এর ফলে অনেকে দৃষ্টিহীন, পক্ষাঘাতগ্রস্থতার শিকার হয়।
>>বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশ— আমাদের দেশের অনেক শিশু বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে। যদিও দেশের শ্রম আইনে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয় ফলে আগুনে পুড়ে যাওয়া, অঙ্গ হানি, দৃষ্টিহানি হয়। মেরুদন্ডে আঘাত বা মাথায় পেয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়।
@@ শেষ কথাঃ যে পরিবারে একজন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে সে পরিবারের সদস্য বিশেষ করে বাবা-মায়ের জন্য প্রয়োজন বিশেষ সেবা-পরামর্শ। তারা যেন প্রতিবন্ধী শিশুটিকে নিজেদের বোঝা মনে না করেন অথবা শিশুর প্রতিবন্ধিতা লুকিয়ে না রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও বিশেষায়িত স্কুলের সাহায্য গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সকলেরই সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের দেশেও এখন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে, আসুন আমরা সকলেই সচেতন হই- এগিয়ে আসি এই একটু পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে।
৯টি মন্তব্য
তন্দ্রা
প্রতিবন্দ্বী নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
আসলে কি আমারা সবাই কোন না কোন ক্ষেত্রে প্রতিবন্দ্বী।
হয়তো সবাই বিশ্বাস করবেনা।
জি.মাওলা
hom …..
নীলকন্ঠ জয়
আমরা প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধী। তাই অন্যকে প্রতিবন্ধী হিসেবে হেয় করার সুযোগ নেই।। (y)
জি.মাওলা
amar lekha …… Manos ke soseto nata kora …… Apni @ joy valo kore poren ni
স্বপ্ন
ভালো পোষ্ট
জি.মাওলা
thanks
খসড়া
ধন্যবাদ।
জি.মাওলা
thanks dada
জিসান শা ইকরাম
ভালো লিখেছেন ।
সম্ভবত আপনি মোবাইল দিয়ে জবাব দিচ্ছেন ।
মোবাইলে জবাব দেয়ার আগে পৃষ্ঠার একদম নীচে ডেস্কটপ ভার্ষন এ ক্লিক করে নিন। এরপর প্রত্যেক মন্তব্যকারীর জবাব আলাদা আলাদা দিতে পারবেন।