তীব্র বাতাস আর কন্কনে শীতের মাঝে গাড়িটি স্টার্ট দিয়ে বসে আছি। পাশের পার্কিং স্পেসটি মিস্টার ওয়াং এর। তাঁর নিত্য সঙ্গী বিশালাকৃতির কুকুরটিকে নিয়ে সেও এসে হাজির। কোথাও যাবে হয়তো। প্রায়ই দেখা হলে টুকটাক কথা হয়। প্রতিবেশী ওয়াং এর পরিবার বলতে সে আর তাঁর কুকুরটি। দু’বার সংসার পেতেছিল। বলল, বনিবনা হয়না স্ত্রী’দের সাথে… হু কেয়ারস… আমি বলি, আমাদের কালচারে কেয়ার করতে হয়। মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিয়েগুলো বাবা-মা’য়ের পছন্দের পাত্রের সাথে হয় শুনে সে দু’চোখ গোলাকৃতি করে বিস্ময়ে বলে উঠে___ ওহ্ রিয়েলি ! কেমন করে এটি সম্ভব ! ছেলে-মেয়েদের কি নিজস্ব কোন পছন্দ থাকে না ! কেমন করেই বা একটি মেয়ে কিংবা ছেলে এটি মেনে নেয়__ একঝাঁক প্রশ্ন তাঁর।
তাঁকে বলি__ মেয়েরা তাদের পছন্দের প্রেমিককে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর থাকে হয়তো কিছুকাল। সেই স্বপ্ন দ্রুতই বাস্তবতার যাঁতাকলে উবে যেতে থাকে। প্রেমিকটির জব হয় না, বা হলেও উপস্থাপন করার মতন হয় না। কিন্তু পরিবার থেকে যখন উপযুক্ত পাত্র ঠিক করা হয়, তখন সামনে অনেকগুলো বিষয় এসে দাঁড়ায়। ছোট ভাই-বোনগুলোর কথা… বাবার আর্থিক অবস্থা…মায়ের চোখ রাঙ্গানি… বাবার অসহায় মুখ সব-ই ভীষণ পোড়ায়। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে না বলার উপায় থাকে না। ছেলেটিও মুখবুজে তাঁর অক্ষমতা, অসহায়ত্ব মেনে নেয়।
ওয়াং একখণ্ড বিস্ময় চোখে মুখে ছড়িয়ে দিয়ে বলে, ফাইনালি কি তাঁরা হ্যাপি হয় ! আমি বলি, হ্যাঁ হয়। অনেকগুলো মানুষকে সুখী দেখার জন্যে যে মেয়েটি কিংবা ছেলেটি সেক্রিফাইস করে, সেও কিন্তু শেষমেস ভাল-ই থাকে, সুখী সংসার গড়ে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি শিশু যেমন বেড়ে উঠে, তেমনি একটু একটু করে ধীরে ধীরে পুরনো প্রেম এবং প্রেমিক/ প্রেমিকাকে ভুলে যেতে থাকে। শুধু মাঝে মাঝে মধ্য দুপুরের ঝুম বৃষ্টির সময়ে… একাকি বিকেলে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে … কিংবা বিরহী বিষণ্ণ রাত্রিতে আধখানা চাঁদের মত ভেসে উঠে মনের কোনে সেইসব সোনালী সময়…
এবার ওয়াং এর বিস্ময় কাটে। পাশেই লং আইল্যান্ড রেল লাইনের উপর দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেনের দিকে তাকায়। তাঁকে অনুসরন করে আমিও সেদিকে ফিরে চাই। জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে আসা ওয়াং বলে, “সে-ই ভালো, তোমার কালচারই ভাল। বাইরে থেকে ফিরে অন্ধকার ঘরে অন্ধভাবে হাত্ড়ে হাত্ড়ে বাতি জ্বালানোর মাঝে প্রতিনিয়ত দীর্ঘশ্বাস ঝরে… একটি সুন্দর পরিবার না থাকার হাহাকার গুমরে উঠে প্রায়শই নিজের মাঝে… ”
হুম… সবকিছুর পরেও আমার দেশ, আমার কালচার-ই ভাল…
১২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
শুধু
মাঝে মাঝে মধ্য দুপুরের
ঝুম বৃষ্টির সময়ে…
একাকি বিকেলে কফির
কাপে চুমুক দিতে দিতে …
কিংবা বিরহী বিষণ্ণ
রাত্রিতে আধখানা
চাঁদের মত ভেসে উঠে মনের
কোনে সেইসব সোনালী সময়… সবার জীবনেই থাকে এমন উজ্জল সময়। শীতের মিষ্টি রোদের মত —- অতপর আবার সেই অন্যের জন্য জীবনে মিশে যাওয়া।
এমন ভাল লেখা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা ঠিক না।
রিমি রুম্মান
বঞ্চিত করিনি। অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল।
আবু জাকারিয়া
ভাল লাগল। শুভেচ্ছা!
রিমি রুম্মান
শুভেচ্ছা আপনাকেও
শিশির কনা
সবকিছুর পরেও আমার দেশ, আমার কালচার-ই ভাল… (y) একমত আপু।
রিমি রুম্মান
একমত না হয়ে উপায় কি ! 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হুম… সবকিছুর পরেও আমার দেশ, আমার কালচার-ই ভাল…
একটা বন্ধন.. পিছুটান… সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার সাথে একমত,
এ আমারই দেশ, এ আমাদের আচার।এই আমাদের জন্য ভাল।
কৃন্তনিকা
হুম… বেশ ভালো লাগলো…
অনেকটা সান্তনা ধরনের ভালো লাগা…
প্রজন্ম ৭১
আমার এমন কালচারই আসলে আমাদের জন্য ভালো। (y) -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বাস্তবতা এটাই -{@
লীলাবতী
এমনি করে লেখেন কিভাবে আপু?কত আবেগ থাকে আপনার লেখায়। -{@