এখনো আমাবর্ষা নামে,
ঘোর অন্ধকার নিশিথে, ভাঙ্গা কবরে ডাকে ক্ষুধার্ত শেয়াল,
কখনো দুই চারটে, কখনো এক ঝাঁক জোনাকি নিরবতা ভাঙ্গে আঁধারের,
এক ঝাঁক মৌমাছি বাসা বদল করে নতুন রাণীর পিছু,
ডেকে উঠে কোনা ব্যাঙ,
নাহ্ – এ যেন আর্তচিৎকার।
দু’টি জোনাকি এগিয়ে গেলে,
আহার ফেলে আড়ালে লুকায় চকচকে লিকলিকে সরিসৃপ।
মচমচ শব্দে শুকনো পাতা মাড়িয়ে, খানিক দুরে থমকে দাড়ায় নেড়ে ইঁদুর।
দু-ইঞ্চি মাটির নিচে, অন্ধকার সুরঙ্গ পথে নড়েচড়ে উঠে শীতার্ত পিপড়ের বাসা।
যে মাটিতে শিউলি ঝড়ে, সে মাটি ভিষণ ভেজা।
তবুও একপিঠ ঠান্ডা হলে, ঘন্টা শেষে টোকাই ঘুড়েই শোয়,
গেল রাতের চটের বিছানা কুকুর ভিজিয়েছে মুতে।
আজ যেন অন্ধকার আর কুয়াশার মহাসন্ধি,
দেহের তড়িৎ কম্পনের সাথে লম্বা নিদ্রা বিরতি,
দু-চোখের মেঘে’ জোড়া লাগে না পাপড়ি।
চোখ বলে,
পথের ওপাশে ল্যাম্প পোষ্টের নিচে আছে খানিক ওম !
ঠিক হলুদ আলো পড়েছে যেখানে।
এতোক্ষনে নিচের ইঁটগুলো অনেকটা গরম হয়েছে নিশ্চই।
ন’বছরের টোকাই ভাবে, আটটি পৌষ মাস কেমনে গেল !!
এতগুলি বসন্তের আগে,
মায়ের ছেড়া, ফাঁড়া আঁচলের নিচে পৌষের পরশ পায়নি মলিন দেহ।
অতঃপর আধুনিক লোডশেডিংএ নিয়ন আলোর তাপ লাগানো চোখে নামে অন্ধকার-
এতোক্ষনে নিরেট আমাবস্যার স্বাধ পায় নামিদামি শহরের গলি।
দুরত্ব জয় করে দুরের আকাশ ছোঁয় টোকাইয়ের দৃষ্টিসীমা।
মা-গো, এক কাপড়ে বিদায় নিয়ে তাঁরা হলে আকাশে,
ওখানে কি পৌষের মেঘ জমে না ?
তোমার পাশেও আজ কেউ নেই-
সব তাঁরারা লুকিয়েছে আমাবস্যার পিছনে-
একা একা শীত লাগে না তোমার ?
তুমিও আজ চলে যাও, আর সব তাঁরাদের সঙ্গে।
আমার যে আলোর বাতি আছে পথে পথে,
তোমার আঁচলের মত না হলেও,
আছে গাড়ির কালো ধোঁয়ায় গরমের পরশ।
কাল সকালের সূর্য্য দেখতেই বেঁচে আছি।
তুমিইতো বলতে,
মা ছাড়া টোকাইদের নাম হয় না,
পথের টোকাইদের পৌষ আর ভাদ্র হয় না,
টোকাইদের এভাবেই বাঁচতে হয়,
টোকাই’রা এভাবেই বাঁচে।
-০-
২২টি মন্তব্য
তৌহিদ
পৌষের বেদনাকাব্য পড়ে আপ্লুত হলাম ভাই। পৌষ যেন সবার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। এই তীব্র শীতে সকলেই যেন ন্যুনতম ঠান্ডা নিবারণের সুবিধা পায় এটা সমাজের সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।
জগতের সকল মায়েরা ভালো থাকুক এটাই প্রার্থনা।
পৌষ সংক্রান্তি উৎসবে লেখা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কবিতা ভালো লেগেছে।
এস.জেড বাবু
বিত্তবান বিবেক গর্জে উঠুক,
অসহায়দের উপর তাদের করুনার বদলে মায়া দৃষ্টি পড়ুক।
শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
আগে, আগের মন্তব্যের উত্তর চাই।
এস.জেড বাবু
আগে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি ভাই,
চলমান সময়ে আমি সোনেলার সবচেয়ে অনিয়মিত একজন। সময় বের করতে পারছি না। জীবনের দৌড় ভিন্ন পথে যাচ্ছে। এবং কেটে যাবে খুউব জলদি।
অনেক মিস করি আপনাকে / আপনাদেরকে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা রইলো ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে আপনাকে মিস করি বলেই এমন করি।
ফিরে আসবেন স্বমহিমায়, এ অপেক্ষা থাকল।
ইসিয়াক
মা-গো, এক কাপড়ে বিদায় নিয়ে তাঁরা হলে আকাশে,
ওখানে কি পৌষের মেঘ জমে না ?
তোমার পাশেও আজ কেউ নেই-
সব তাঁরারা লুকিয়েছে আমাবস্যার পিছনে-
একা একা শীত লাগে না তোমার ?
তুমিও আজ চলে যাও, আর সব তাঁরাদের সঙ্গে।
আমার যে আলোর বাতি আছে পথে পথে,
তোমার আঁচলের মত না হলেও,
আছে গাড়ির কালো ধোঁয়ায় গরমের পরশ।
কাল সকালের সূর্য্য দেখতেই বেঁচে আছি।
তুমিইতো বলতে,
মা ছাড়া টোকাইদের নাম হয় না,
পথের টোকাইদের পৌষ আর ভাদ্র হয় না,
টোকাইদের এভাবেই বাঁচতে হয়,
টোকাই’রা এভাবেই বাঁচে।
.চমৎকার উপস্থাপন।
এস.জেড বাবু
যদিও পৌষ মাস
তবুও কারো জন্য তা সর্বনাশ-
সামর্থবানদের বিবেক আর মমতাভরা দৃষ্টি পড়ুক অসহায় জীবনগুলোর দিকে।
শুভেচ্ছা রইলো ভাইজান।
সুরাইয়া পারভীন
যে মাটিতে শিউলি ঝড়ে, সে মাটি ভিষণ ভেজা।
তবুও একপিঠ ঠান্ডা হলে, ঘন্টা শেষে টোকাই ঘুড়েই শোয়,
গেল রাতের চটের বিছানা কুকুর ভিজিয়েছে মুতে।
আজ যেন অন্ধকার আর কুয়াশার মহাসন্ধি,
দেহের তড়িৎ কম্পনের সাথে লম্বা নিদ্রা বিরতি,
দু-চোখের মেঘে’ জোড়া লাগে না পাপড়ি।
মর্মান্তিক বেদনা মিশ্রিত পৌষ বন্দনা। আহা জীবন,
দারুণ লিখেছেন ভাইয়া
এস.জেড বাবু
ওদের কষ্টগুলো সীমানাহীন, আমি পথের দুই পাশে নিঃশ্বাস নেয়া মানুষগুলি দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না, কিছু করতেও পারিনা।
কষ্ট হয়- খুউব।
কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানাই আপু।
অনেক ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
“মা-গো, এক কাপড়ে বিদায় নিয়ে তাঁরা হলে আকাশে,
ওখানে কি পৌষের মেঘ জমে না ? “
কষ্টের পৌষের কবিতা
ভালই লেগেছে।
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
অশেষ শুভেচ্ছা সহ ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান
ফয়জুল মহী
অনুপম ভাবনায় নান্দনিক লিখনশৈলি ll
এস.জেড বাবু
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান-
অশেষ শুভেচ্ছা
নিতাই বাবু
“কাল সকালের সূর্য্য দেখতেই বেঁচে আছি।”
এই সুন্দর পৃথিবীতে আমরা কিছু মানুষ এভাবেই বেঁচে আছি।
সোনেলা ব্লগে পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের শেষদিকে দারুণ এক কবিতা নিয়ে আসলেন দাদা। সত্যি মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা-সহ শুভকামনাও থাকলো।
এস.জেড বাবু
মূল্যবান মন্তব্যে অনুপ্রাণিত ভাইজান-
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
মনির হোসেন মমি
মচমচ শব্দে শুকনো পাতা মাড়িয়ে, খানিক দুরে থমকে দাড়ায় নেড়ে ইঁদুর।
দু-ইঞ্চি মাটির নিচে, অন্ধকার সুরঙ্গ পথে নড়েচড়ে উঠে শীতার্ত পিপড়ের বাসা।
বাবু ভাই এতো গভীরভাবে ভাবেন কী করে! দারুণ।
এস.জেড বাবু
সবই আপনাদের অনুপ্রেরনার ফসল
এবং এটাই চিরন্তন সত্য আমার কাছে।
এজন্যই সবসময় কৃতজ্ঞতা আপনাদের কাছে।
শুভেচ্ছা ভাইজান
রেহানা বীথি
বড় মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা।
চমৎকার লিখেছেন।
এস.জেড বাবু
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
অশেষ শুভেচ্ছা
মোহাম্মদ দিদার
মা-গো, এক কাপড়ে বিদায় নিয়ে তাঁরা হলে আকাশে,
ওখানে কি পৌষের মেঘ জমে না ?
কতটা বেদনা চাপলে বুকে।
এমন কথা আসে মুখে??
এস.জেড বাবু
যারা মা’হারা – ওদের যন্ত্রনা কেউ বুঝবে না।
যারা ভীটে’হারা ওদের কষ্টের কোন সীমানা থাকে না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইজান।
কৃতজ্ঞতা রইলো
অনন্য অর্ণব
মা ছাড়া টোকাইদের নাম হয় না,
পথের টোকাইদের পৌষ আর ভাদ্র হয় না,
টোকাইদের এভাবেই বাঁচতে হয়,
টোকাই’রা এভাবেই বাঁচে।
হৃদয়ে দাগ কেটে গেলো। সত্যিই বড় করুন টোকাইদের পৌষ মাস।