পৃথিবীর পথে পথেঃ ইন্দোনেশিয়ার ‘ বালি ‘ ভ্রমণ সাল ২০২২
“Don’t talk about heaven if you are never been to Bali”
“স্বর্গ যদি দেখতে চাও ইন্দোনেশিয়ার বালি তে যাও”।
হ্যাঁ বালির কথা বলছিলাম।বালি যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে রচনা করেছেন। যেদিকে চাও সবুজ আর সবুজ । আসলে প্রত্যেক দেশের একেকটি পৃথক সুন্দরের বৈশিষ্ট্য আছে। একেক দেশ একেক রকমের বিশেষ রকমের সুন্দর দিয়ে তৈরি ।
এখানে পর্বত গুলো সবুজ গাছ দিয়ে ঢাকা। চারদিকে ঠাসবুনানি ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট।এর ইউনিক কালচার ,স্কাল্পচার ,অসাধারণ ডিজাইনের বাড়িঘর ,ধানের ক্ষেত আর মন্দির আর মন্দির চারদিকে। সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে চম্পা ফুল গাছের আধিক্য ।
মানুষ কম কিন্তু পৃথিবীর চারদিক থেকে টুরিস্ট এসে ভিড় জমায় এই সুন্দর দ্বীপ টিকে দেখার জন্য।
এখান কার মানুষ জন অনেস্ট মিশুক আর ভালো মনের অধিকারি । তারা দুহাত দিয়ে মানুষকে কাছে টেনে নিতে যানে। ক্রাইম রেট খুব কম।
বালির জাতীয় motto হল ‘Uniti in Diversity”।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে এদের থাকার রিসোর্ট । ইকোফ্রেন্ডলী রিসোর্ট গুলো একেক টা একেক ডিজাইনের। লোকাল বাঁশ, কাঠ খড় দিয়ে তৈরি যা একটা আলাদা বিশেস্বত্ব দিয়েছে।
টুরিস্টদের পছন্দের জায়গা
আমাদের ইকো ফ্রেন্ডলী রিসোর্ট টি ‘উবুদে’ । এবার এই রিসোর্টটির বর্ণনা দেই। একটা বিরাট রেইনফরেস্ট ,যার আদি অন্ত নাই। সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা অর্থাৎ আস পাশে কোন জনবসতি নাই তার মধ্যে এই রিসোর্ট টি। এক নারিকেল আর কলা গাছ ছাড়া কোন গাছ আমাদের দেশের সাথে মিল নাই। বিরাট বিরাট জুরেসিক পার্কে এর মতো ফার্ন গাছ। অদ্ভুৎ সব পাখপাখালি । তবে হ্যাঁ ভোরের আলো ফুটার অনেক আগে থেকে মোরগের ডাকে আরম্ভ হয়ে যায় চারদিকে। তার মানে রাত শেষ।
বালিতে আমরা এনজয় করেছি এই ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট এর মধ্যে থাকা । এই রিসোর্টের দুইতলার বারান্দার ঝুলন্ত শক্ত দড়ী দিয়ে নেটের একটা দোলনা টাইপের শোবার ব্যাবস্থা ছিল । সেখানে শুয়ে শুয়ে নিচের জঙ্গল চারদিকের জঙ্গল দেখা সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
বাঁশের মেঝে ,বাঁশর দেয়াল আর নিচে নামার সিঁড়ি সেটাও বাঁশের । নিচে একটা ওপেন বসার ঘর, বাথরুম ।বাথ রুম অবশ্য টাইলসের । মাঝে একটা উঠোন। মাঝ খানে একটা পানির সরু বোয়ে যাওয়া স্রোত । সেখানে লাল রঙের মাছ। পানি আসছে একটা ঝরো ঝরো ঝর্না থেকে। চারদিকে চম্পা ফুলের গাছ ,যাকে কেউ কেউ কাঠ গোলাপ বলে । বড়ো বড়ো কচু পাতার কচু গাছ। উঠানের অপর পাশে একটা কিচেন আছে ইলেকট্রিক কেতলি চুলা এবং ফ্রিজ সহ। কিচেন টাও বাঁশ দিয়ে তৈরি । রিসোর্ট টির ছাদ অনেক পুরু মোটা খড়ের । সিলিং টা মোটা মোটা বাঁশ দিয়ে তৈরি । জানালা দরজা সব বাঁশের ।
বালি এতো নিরাপদ যে এই জঙ্গলে থাকা মোটেও ভয়ের নয়।কোন সিকিউরিটি গার্ড নাই। রাতে ব্যাঙ এর ডাক বেশ রোমান্টিক লাগছিলো । একদিন একটা কালো রঙের সাপও দেখেছিলাম এঁকে বেঁকে চলে গেলো উঠান দিয়ে। এই রিসোর্টে থেকে রেইনফরেস্ট উপভোগ করা এটাই ছিল এই হলিডের হাই লাইট।
তবে আমরা মাঝে মাঝে বের হয়ে বানরের ফরেস্ট , কফি উৎপাদন ফার্ম, ঝুলন্ত দোলনা আর ওয়াটার ফলস দেখতে গিয়েছিলাম ।
দেখতে গিয়েছিলাম এদের বাড়ি ঘর আর গ্রাম । চারদিকে শুধু দেব দেবতার মূর্তি ।যা পাথর কেটে কেটে বানানো। দেব দেবীদের মধ্যে ব্রম্ভ, ভিস্নু, সিভা, সরস্বতী, লক্ষ্মী , দানু,বরুনা, বাতারা (মৃত্যুর দেবতা) দুর্গা, গণেশ, হনুমান, ইত্যাদি । বালি বাসি খুব ধর্ম পরায়ণ। পূজা অর্চনা তাদের প্রতিদিনের একটা কাজ। সকালে উঠে ধান দূর্বা, ফুল আর ধোঁয়া দিয়ে প্রসাদ দায় নিজ বাড়িতে থাকা পূজা করার জন্য একটা বিশেষ স্থানে ।যা দেখলাম প্রত্যেক বাড়িতে আছে। বাড়ি ঘরের ডিজাইন গুলো পাথর কেটে কেটে অন্যরকমের ডিজাইন দিয়ে করা।
বালি দের নাচ একদিন দেখতে গেলাম। যা কিনা ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল এবং থাই নাচের সংমিশ্রণ । দেখলাম অনেক টুরিস্টের ভিড় তা দেখার জন্য । একটু বোরিং ছিল নাচ টি আমার কাছে।
এখানে পাঁচ দিন থাকার পর দুইদিনের জন্য গিয়েছিলাম আরেকটা আইল্যান্ড যার নাম “গিলি মেনো” ।
গিলি মেনো
বালি আইল্যান্ডের পাদ্যাংবাই জেটি থেকে ৪/৫ ঘণ্টায় ফেরী যোগে যেতে হয় গিলি মেনো । এই খানে ছোটো ছোটো তিনটি আইল্যান্ড আছে ১) ত্রাও্যাঙ্গান (trawangan) ২) গিলি মেনো, ৩) ট্রাম্প ( Tramp) । তিনটি আইল্যান্ড খুব সুন্দর। তাঁবু আর কুঁড়ে ঘরের মতো সব রিসোর্ট । রিসোর্টের মালিক হয় অস্ট্রেলিয়ান অথবা ব্রিটেন।
মাঝের আইল্যান্ড গিলি মেনো তে আমরা দুই দিন ছিলাম। চারদিকে সমুদ্র । খুব নিরীবিলি । মানুষ খুব কম । যারা আছে তাদের জীবিকা ট্যুরিজম ,রেস্টুরেন্ট আর ফিশিং। এতো ছোটো আইল্যান্ড হেঁটে এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়। লোকাল লোকজন বেশ সাধাসিধা । আমরা সারা দিন সমুদ্রের ধারে বসে থাকতাম আর সূর্য উঠা আর ডোবা দেখতাম। পানি কুসুম কুসুম গরম। অনেক টুরিস্ট পানিতে ডুবে স্ক্যাইবিং করছে। কেউ মাছ ধরছে। আমরা একটা ঘোড়া টানা গাড়ীতে করে সারা আইল্যান্ড দেখে বেড়ালাম। দুইটি ঋতু এখানে শুকনো সময় আর বৃষ্টির সময়। মনসুন নভেম্বর থেকে এপ্রিল এবং শুকনো মাস মে থেকে অক্টোবর।
চার দিকে ফুলের গাছে ভরা। এখানেও চাঁপা বা চম্পা ফুল হাস্না হেনা আর রঙ্গন ফুলের সমারোহ চারদিকে। দুইদিন পর আমরা আবার ফেরী করে বালি এসে সোজা এয়ারপোর্ট । বালি দ্বীপ ভ্রমণ শেষ।
লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস, লন্ডন
৩টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
চমৎকার ভ্রমন বর্ননা পড়লাম। আপনি সবসময়ই অবশ্য উচ্চমান সম্পন্ন লেখা লিখছেন।
সবিনয়ে বলতে চাই মাননীয়া-🙏 লেখা প্রকাশের আগে বা পরে বানানগুলো একটু চেক করে দেখবেন।
সশ্রদ্ধা সহ শুভেচ্ছা রইল।🌺🌺
নার্গিস রশিদ
ঠিক করলাম যতদূর সম্ভব । এবার ঠিক ঠাক আমার মনে হয় হয়েছে । অনেক ধন্যবাদ ।
হালিমা আক্তার
ইচ্ছে করে ঘুরে ঘুরে দেখি সারা বিশ্ব। কবির ভাষায় বলতে হয় ” দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া। একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু”। আপনার লেখা পড়ে পৃথিবী ঘোরা হয়ে যায়। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।