পুরোনো ঘরের গন্ধ গা ঘেঁসে দাঁড়িয়েছে, এই তো এখানে ওরা সবাই ছিল, একে অন্যতে একাকার হয়ে,
এই বিশাল শব্দ না তোলা স্বপ্নপালংকে শুয়ে শুয়ে বসে বসে হাঁটু মুড়েও কত কী না ভেবেছে, করেছে, অন্য রকম করে আরও অনেকক্ষণ কত কিছু ই করার কথাও ভেবেছে,
খিস্তিমৈথুন থেকে শুরু করে ধানি বা খিল পড়ে থাকা জমা জমির নিকেশি হিসাব, মস্ত ওলানের দুধেল গাইটির দুধ কেন কমে যাচ্ছে? সাপ-কোপ আসে কী না অগোচরে, বাড়ীর সোমত্ত কাজের মেয়েছেলেরা শীতের রাতে খড়ের গাদার আড়ালে গেল কী না, গেলেও কে কার সাথে কখন যায় খোঁজাখুঁজির অজুহাত তুলে, গঞ্জের ধান বিক্রির হিসাবে গোলমাল হলো কী না, অমনোযোগী গাছিরা রস নামাতে দেরি করে সব নষ্ট করে দিচ্ছে কী না, রসে ভেজা চিতই আর বেশি করে দেয়া নারকেল সহ গরম শিরণির ম ম ঘ্রাণের নাকে লেগে আছে, উত্তরের ভিটেয় কলা গাছে এবার ভারী ভারী কলার বিশাল কাঁদি পড়েছে, শীত এলোনা এবার জাঁকিয়ে, বর্ষায় কী হয় কে জানে!! চিনা হাসের ডিম বেশি বেশি খাওয়া বারণ।
পালঙ্কের পাশে অতিকায় মাটির ঘড়ায় শিশু বেশে পুতুল খেলার ছলে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে জামাই-বউ খেললে বেশ হতো, ভারী কুয়াশায় উঠোনে আগুন জ্বেলে ভুত-পেত্নী খেলব,
ভাবছি থেকেই যাব, এই এখানে, এখানে,
সময়ের ক্রূরতাকে উপেক্ষা করে অঘটনঘটনপটীয়সী হয়ে,
সোঁদা মাটির ঘ্রাণে, সোনালী মাঠ আর সবুজের মাঝে, কুয়াশা-মোড়া শীতসকালে;
একপাল বিমিশ্র শয্যারতন এখানে, ক্ষয়িষ্ণু বিকেলের নোনাজল পেছনে ফেলে,
তরুণীসময় কাঁদে মন্থনাকাঙ্খায়, ক্ষরণবিপন্নতার মগ্নজলে এ কার! কিসের আহ্বান!! সময়ের দোলাচলে!!
দু-পায়ে পা ফেলে আর কোথাও যাচ্ছি না, যাবোও না, হারাবো এই সবুজের শ্যামলিমায়,
ঘন হব খুব, মাটির বুকে লেপ্টে, নিস্পন্দনে;
২৭টি মন্তব্য
মিষ্টি জিন
দু-পায়ে পা ফেলে আর কোথাও যাচ্ছি না
যাবো ও না, হারাবো এই সবুজ শ্যামলীমায়
ঘন হব খুব, মাটির বুকে লেপ্টে, নিস্পন্দনে। অসাধারন লাইন গুলো।
আমার ও ইচ্ছে করে সবুজের মাঝে মিশে যাই। প্রথম বৃষ্টি পড়া মাটির সোদা গন্ধ, বুনো ফুলের গন্ধ নেই।
দরকার কি কোথাও যাওয়ার, থেকেই যান।
ছাইরাছ হেলাল
থেকে যেতে চাইলেই তো হবে না,
কেউ-ই কথা রাখে না, পগারপার হয়, টাইম মত,
মিষ্টি জিন
ঠীক পগারপার না, বিভিন্ন কারনে সাময়িকির জন্য যেমন যেতে হয় ,আবার ফিরেও আসে শিকড়ের টানে । আসতে হয়।
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, আপনি যখন বলছেন, ফিরে ফিরে আসুক, আপনাপন ভূমিতে।
প্রহেলিকা
কে যায় আপন ঘর ছেড়ে? ছেড়ে ছেড়ে যায় অতিথি পাখিরা। কেউ কেউ আবার শেকড়ের সন্ধানের আসে, খুঁজে।
সময়ের ক্রূরতা মনে হয় না থাকবে বেশিদিন, এই আঙিনা আবার জ্বলজ্বল করে উঠবে, উঠেছিল যেমন। কথার পিঠে সাজবে কথা, ব্যথার পিঠে ব্যথা।
লেখাটিতে অনেক কিছুই আছে, আকুলতা, মায়া কোনো কিছুরই কমতি নেই, যেমনটা থাকেও না। ”সোনেলা দিগন্তে জলসিঁড়ির ধারে” যতদিন থাকবে ততদিন এটাই ঘর। হোক তা ঘোর কুয়াশায় ঘেরা। মেলা জমবে, জমবেই।
ভাল হচ্ছি।
মিষ্টি জিন
শিকড়ের টানে খুব শক্তি থাকে প্রহেলিকা ভাই।
অনন্ত কাল পার হঁয়ে গেলেও কিছুতেই এই টানকে এডিয়ে যাওয়া যায় না। ফিরে আসতেই হয়।
ছাইরাছ হেলাল
কেউই যেতে পারে না আপন ঘর ছেড়ে, যায়ও না, যাওয়া ঠিকও না,
তবুও ছন্দের পতন আমরা কেউ-ই দেখতে চাই না,
লেখায় কী আছে কী নেই অতশত ভাবি না, ভাবতে পারিও না, সে আপ্নি/আপনারা দরাজ দিলে ভাবাভাবি করে দেখবেন
সময়ানুকল্য নিয়ে, তাতেই হাজার শোকর,
‘ভাল হচ্ছি’ কথায় না কাজে কে জানে!!
দেখি-না কী কী হয়!!
নিহারীকা জান্নাত
“দু-পায়ে পা ফেলে আর কোথাও যাচ্ছি না।”
সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন আর চিন্তা কি?
ছাইরাছ হেলাল
সিদ্ধান্ত আমাদের নিতেই হয়, নে-ই-ও,
তবে অটল থাকা কিন্তু কঠিন, তবে অসম্ভব না।
নীলাঞ্জনা নীলা
চলে যাওয়া কি সম্ভব পুরোনো সব ছেড়ে?
তাই যেতে চাইলেও যেতে পারা যায়না কিছুতেই।
নাড়ীর টান বলে কথা! যতো দূরেই যাওয়া হোকনা কেন, পরিচয়টা ওই শেকড় থেকেই পাওয়া। আজীবন থেকেই যায়।
কুবিরাজ ভাই আজকাল বড়ো মন উদাস করা কবিতা লেখেন।
মন খারাপ নাকি? মন খারাপ থাকলে নিমপাতার শরবত বানিয়ে খান তিনবেলা। 😀
ছাইরাছ হেলাল
আসলে শিকড়ের টান উপেক্ষা করা যায় না, ফিরে যেতেই হয় সেখানে,
দেখুন ‘মনের’ নাগালই পেলাম না, তাই উদাস-ই ভরসা,
উদাসের দেখলেন কী!! টইটুম্বর বিষাদ লেখায় অপেক্ষা করছে।
কে আর নিম-নুম দেয়!! শুধু পাতায় তো হবে না, আস্ত গাছ খুব দরকার!!
নীলাঞ্জনা নীলা
বলেন কি মনের নাগাল পাননি!!! আহারে! 🙁
শুনিয়া বড়োই দুসখিত হইলাম।
নিমগাছ বাড়ীর উঠানে লাগাইয়া লন। তাইলে অশুভ হাওয়া ঘরে ঢুকতে পারবে না। 😀
ছাইরাছ হেলাল
মজা লওয়া ঠিক না,
গাছ লাগানোর জন্য মনের মত উঠান ই পেলাম না!!
রিমি রুম্মান
ভাবছি থেকেই যাব, এই এখানে, এখানে__ বেশ তো !
ছাইরাছ হেলাল
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য,
ভাল থাকুন,
অনিকেত নন্দিনী
খিস্তিমৈথুন! 😮
এই শব্দ দাদী-নানীর জন্মেও শুনিনি।
রসে ভেজা চিতই আর বেশি করে দেয়া নারকেল সহ গরম শিরণির কথা বলে তো নষ্ট মাথা আরো নষ্ট করে দিলেন। চীনা হাঁসের ডিম খাবো কী দেশি হাঁসের ডিমই খাইনা তবে জাতি জানতে চায় চীনা হাঁসের ডিম বেশি খাওয়া বারণ কেনো। কী হয় ওটা খেলে? ;?
আগুন জ্বেলে ভূত-পেত্নী খেলবেন? আমি তো শুনেছিলাম আগুন দেখে নাকি ওরা ভয় পেয়ে পালায়।
চাইলেই কি আর সময়ের ক্রুরতাকে উপেক্ষা করে ইচ্ছেমত সবকিছু করা যায়?
এতোসব ইচ্ছের পর একদম শেষে কেমন বিষাদের সুর ঠেকলো। মন বেশি খারাপ লাগলে লঞ্চের সুকানির এসিস্ট্যান্টের চাকরিটা আবার ধরেন আর হ্যাঁ সুকানিরে আমার সালাম দিয়া বইলেন চীনা হাঁসের ডিম কম খাইয়া চোখে চশমা লাগাইয়া কাঁটা বাইছা মাছ খাইতে।
ছাইরাছ হেলাল
এটি আমরা শুনি, বলি ও,
তবে ডিজিটাল ফর্মে!!
ডিম-ডুম খুব দরকার, শুধু ঘোড়ার ডিমটি বাদ দিয়ে,
আপনি ঠিক ধরেছেন, মনোলোভা জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনা যায় বা বলেই আমরা যন্ত্রণায় কুপোকাত হই,
বিষাদিত না হয়ে যে উপায় নেই যে,
সুকানি আপনার সাথে আড়ি দেছে, তয় চশমার পাউয়ার বাড়াবে বলছে,
টাইট সময়ের মধ্যেও কষ্ট করে সময় দিয়েছেন দেখে সত্যি সত্যিই আনন্দিত,
ইঞ্জা
রসে ভরা চিতই সাথে আর রসের কথা শুনে তো জিভে পানি এলো ভাইজান। ;?
ছাইরাছ হেলাল
ভাই জিভে পানি আসারই কথা,
ধন্যবাদ,
ইঞ্জা
তো খাওয়াইবো তো ভাবী নাকি, ভাবীজান ও ভাবীজান কই আফনে? 😀
ছাইরাছ হেলাল
কে কখন কী খাইয়ে দেয় ঠিক নেই কিন্তু!!
জিসান শা ইকরাম
ফিরে ফিরে আসা মাটির কাছে,
প্রাণের পাণ আছে যেখানে,
হৃদস্পন্দন তো সেখানেই।
ছাইরাছ হেলাল
শিকড়ের টানে ফিরে যেতেই হয়।
আমরা তা যাইও।
শুন্য শুন্যালয়
পুরনো কোন বাড়ি, কোন প্রাসাদ, কোন গ্রাম দেখেছেন বুঝি!! ভাবনার তল অতল কোথায় কতদূর যেতে পারে সে দেখছি আর দেখছি। আমি বড়জোর হয়তো একটা স্ন্যাপ নিতে পারবো।
খেলাখেলি তো বেশ চোখে পড়ার মতোই হয়েছে। খেলুন, খেলান, ঘুরে বেড়ান। আপনাদেরই দিন। লেখা কিন্তু মোটামুটি হয়েছে 🙂
ছাইরাছ হেলাল
মোটামুটি লিখতে পারাও বহু জনমের পূণ্যের ফল ভেবেই সান্তনা নিচ্ছি,
হ্যা, জনাব, একটি পুরোন খাট দেখেই এত ভাবের সমাহার হয়েছে,
তেমন খেলুড়ে আর হতে পারলাম কৈ!!
আপনার এক নয় আধা স্ন্যাপেই ঢের বেশি উঠে আসত, আমি নিশ্চিত।
মৌনতা রিতু
ওরেএএ! আপনি কখন আমার নানাবাড়ি গেলেন? বলে যাবোন না!
এটা তো রামপালে আমার নানা বাড়ির কথা কইছেন।
সত্যি, তখন গেরস্তের যে কতো হিসেব করতে হতো। একদম বাস্তব চিত্র। পুরানো চিত্র। আমার শৈশবের রঙিন চিত্র।
ব্লগে ঢুকে অনেক ভাল লাগছে এমন একটি লেখা পড়ে।
জানেন, নানাবাড়ির সবাই আমাকে প্রচন্ড ভালবাসত। গাছিরা অন্যান্য কাজের লোক, বিশেষ করে নানা নানাবু। আমার নানাদের প্রচুর জমি, গরা মহিষ ছিল। নানাবুর ছিল প্রখর দৃষ্টি শক্তি। নিজে হাতে সব কিছু সামলাতো। কে বসে থাকলো, কোন গরুটার কি হলো, সব থেকে মজা লাগতো, একবার নারকেল শুকাতে দিছে তেল করার জন্য তোমুরগি সেই না সেই নারকেল খেয়ে মরা মরা অবস্থা। নানাবুকে দেখলাম, একটা ব্লেড পুড়িয়ে মুরগীর খাদ্য নালী চিরে নারকেল বের করে খেজুরের কাঁটাদিয়ে কেমন করে যেন সেলাই করে দিল একটু হলুদ লাগিয়ে দিল। সেই মুরগী দুই দিন পরে দৌড়াতে লাগল। আমাকে বলতো, “দেখেছিস বুগো কেমন আমি ডাক্তার।” আমার নাম রেখেছিল নানা খুব সখ করে নামকরা তখনকার এক ডাক্তারের নামে। কিন্তু আমি তা পারি নি হতে।
আমার বড় বাবু মারা যাবার পর আমাকে নানাবু বলতো, “বুগো তোমার খুব ভাল হবে, তুমি মন খারাপ করবে না।” গত দুই দিন বাবুর রেজাল্টের পর থেকে খুব খুব মনে পড়ছে নানাবুকে। ভাল থাকবেন ভাই, অনেক ভাল হইছে লেখাটা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার নানাবাড়ি যেতে বলে যেতে হবে কেন!!
না বলে গিয়েই কত কি দেখে-টেখে এলাম,
আচ্ছা, পরের বার আপনাকে সাথে নিয়েই যাব,
সে সব দিন স্বপ্নের মত মনে হয়, কতটা অকৃত্রিম ছিল এখন তা ভাবাই যায় না,
সে সব নানাবুরা হারিয়েছে সেই কবেই,
ডাক্তার না হয়ে ভালই করেছেন, এখন লেখার ডাক্তার হয়েছেন, ভালই তো।