বয়স বাড়ছে; একটু একটু গার্জেনভাব বোধহয় চেহারায় এসেছে। ঘটকালি করার অফার আসে প্রায়ই। পরিচিত ছোট ভাই কিংবা ছেলের বাবারা মেয়ে দেখতে বলে। আমিও প্রাণপণে চেষ্টা করি কিন্তু সফল হতে পারিনা। কারন একটাই, এ কাজে প্রচুর পরিমাণে মিথ্যে কথা বলতে হয়। তিলকে তাল বানিয়ে ফেলতে পারলে তবেই কাজ হবে। আমি সব সত্যি বলে দেই, তাই হয়তবা কাজ হয়না।🤪🤪
যা হোক, এবার খুব কাছের একজনের মেয়ে দেখতে বলেছে। আমিও প্রানপণ চেষ্টায় আছি। কিন্তু দেখুন তো এমন মেয়ে পাওয়া যায় কিনা? থাকলে জানাবেন, খুব উপকার হবে!
ছেলে ঢাকা ভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রিতে পড়াশুনা করে এখন জব করছে জাইকায়। শ্যামলা গড়নের ছেলেটি পাঁচ ফুট, ছয় ইন্চি লম্বা। বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি। এতবছর বিয়ে করেননি কেন? সহজ উত্তর, “স্যাটেল হতে বয়স তো লাগেই।” বাহ্ অসাধারণ! খালি কোন মেয়েকে গতাতে পারলেই হল। জীবন এতদম ফকফকা।🥰🥰
আমি মোটামুটি কোমর বেঁধে নেমে পড়লাম ঘটকালীতে। দুএকটা ভালো ঘটকালী করতে পারলে বেশ হবে। মাঝে মাঝে দাওয়াতও খাওয়া যাবে। তাছাড়া করোনাতে কাজও তেমন নেই। চারিদিকে বিয়ের ধুম পরেছে। ধুমধারাক্কা বিয়ে করে সব সেটেল হয়ে যাচ্ছে। ঘটকালি তো করব কিন্তু তার কেমন মেয়ে দরকার। এটা জানা জরুরী। জানা গেল, মেয়ে লাগবে ভালো পরিবারের, সুশীল, সংসারী, ঘরোয়া।
ভালো পরিবার বুঝতে বংশটংশ আরকি! কিন্তু সুশীল, সংসারী, ঘরোয়ায় এসে বিপদ! একটু জানতে চাইলাম এ তিনটে বিষয়ে। কোনটাইপ মেয়েদের মাঝে এসব বৈশিষ্ট্য থাকে। কারন মেয়েরা যেহেতু বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে থাকে। একটু গটছাডা, বাবা-মায়ের আদরে- আবদারে বড় হয়। তাই বিবাহিত মেয়ে বা মহিলার সাথে কমপেয়ার করাও মুশকিল। পরিচিত ভাই বিভিন্ন আকারে, এঙ্গেলে আমাকে মেয়ের বিষয়টা বোঝাচ্ছে কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কারন যে মেয়ের কথাই বলি তাতেই তিনি অসম্মতিসহ কিছু এক্সট্রা বৈশিষ্ট্য যোগ করেন। এবার আমি নামলাম জলজ্যান্ত উদাহরণ নিয়ে। আমাকে যেহেতু বেশ কিছু বছর ধরে সে চেনে;তাই নিজেকেই প্রথম উদাহরণ হিসেবে নিলাম, “আমার মত হলে চলবে কিনা?”
উত্তর,” আপনি তো, সবই ঠিক আছে, তবে একটু পাতলা আর ফর্সা লাগবে”। ও আচ্ছা।
পাশেই পরিচিত ছোট বোন আছে। সে বছর দুয়েক হল দর্শনে মাস্টার্স শেষ করে চাকরী- বাকরীর চেষ্টা করছে। ফর্সা, পাতলা, মোটামুটি সুন্দর। সে চলবে কিনা?
এবার বলল,” চাকরী হলে ভালো হতো। এখনকার সময়ে দুজনের চাকরী ছাড়া চলাটা একটু সমস্যা।”
এ রকম বেশ কতকগুলো মেয়ের ছবি, বর্ননা হয়ে গেল। সে সবটাতেই আর্জি পেশ করে। তার আসলে লম্বা, ফর্সা, শিক্ষিত, চাকুরীজীবী মেয়ে লাগবে। সাথে এক্সট্রা হবে সুশীল, সংসারী, ঘরোয়া।
ফাইনালী এরকম চাকরীজীবি মেয়ে পাওয়া গেল। আমার প্রতিবেশী বাংলা( সাঁইত্রিশ বিসিএস)। মেয়ে শ্যামলা, পাতলা, লম্বা, মোটামুটি দেখতেও। রান্না- বান্না ভালো জানে, কবিতা ভালোবাসে, পর্দা, নামাজ- কালাম সবই করে। এবার মেয়ে তার ভীষন পছন্দ হল। আমাকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে,”আপু খুব সুন্দর। তারাতারি কথা বলেন।”
এবার বুঝলাম তার কি চাই। আচ্ছা, এই অবস্থা। তুমি তো মিয়া বিসিএস নও। টাকলু, ভুঁড়ি, বুড়া কোথাকার। তারে বললাম আরে ভাই খারান, নি:শ্বাস নেন, তার সম্পর্কে বাকিগুলো তো বলি।
“আমার সাথে তার ভীষন ভাব; বন্ধু, বড়বোন সব আমি। একসাথে খাওয়া, বেড়ানো, সকল গল্পও হয়। আমাদের খুটখাট ঝগড়া প্রায়ই লাগে। ঝগড়ার সময় সে এত বেশী রেগে যায় যে, সামনে যা পায় তাই ছুঁড়ে মারে। বই- খাতা, মোবাইল যা সামনে পায় সব। একদিন তো বটিও ছুঁড়ে মেরেছিল। অল্পের জন্য আমাকে লাগেনি। কেন লাগলো না এ জন্য সে রাগে কান্না- কাটি শুরু করে দিল। আমি যে তার বয়সে অনেক বড় এটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। পরে অবশ্য আমাকে অনেক সরি-টরি বলেছে।”😜😜
বেচারা বড়ই হতাশ বোধ করল। আচ্ছা শিক্ষা দেবার জন্য হাসলাম,”বেটা বামুনের চাঁদে হাত।” আমারও ঘটকালি আবারও ফেল। এ জীবনে আর নতুন স্ট্যাটাস এড হবার সম্ভাবনা বোধহয় নেই।
ঘটকালি তো গেল কিন্তু মাথায় তখনো ঘুরতে থাকলো ভালো পরিবার, সুশীল, সংসারী, ঘরোয়া। এসবের মানেটা আসলে কি? কিংবা কোনধরনের মেয়েরা এমন হয়।
“এমন একটা মেয়ে হবে যে মোটামুটি শিক্ষিত। পরিবারের যে কোন বিপদে- আপদে কাজে লাগবে। বাচ্চা- কাচ্চা মানুষ করবে, রান্না- বান্না করবে॥ অহংকার, রাগ, জেদ এসব থাকা যাবে না। চাকরী করলে ভালো কিন্তু সেটাও করবে চুপচাপ। স্বামীর মুখের উপর কোন কথা বলা কিংবা প্রতিবাদ করবেনা। তার কোন বিশেষ মতামত থাকবে না। ওঠ বললে উঠবে কিংবা বসতে বললে বসবে। এমন মেয়েই আসলে ভালো পরিবারের, ঘরোয়া, সুশীল, সংসারী। কি পাওয়া যাবে?” একসাথে এতগুলো!
এরপরে আবার ঘরসাজানোর নামে ফার্নিচার, ফ্ল্যাটের নামে নগদ অর্থ, মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স, পাড়াপড়শি মুখ দেখাদেখির জন্য গাড়ি ভর্তি পিঠাপুলি, মন্ডা মিঠাই। মেয়েজন্ম যেন অভিশাপ, পাপ!
মেয়েরা কোননা কোন ভালো পরিবারেই জন্ম নেয়। পরিবেশ, পরিস্থিতির উপর তার অনেক কিছুই ডিপেন্ড করে। কারও রাগ বেশি, কেউ জেদী, অহংকারী এমন হবেই! বাবা-মা গরীব হলেও আদর যত্নেই যেহেতু বড় করে ।তাই সংসারও ঘরোয়া ব্যাপারটা তার মাথায় তখনো ঢুকে না। সংসার শুরু করার পর আস্তে আস্তে শিখে নেয় বা নিতে হয়। অল্প কিছু মেয়ে ব্যতিক্রম হয়ে তৈরি হয়। তারা সবকিছুই বোঝে।🥰🥰
বিয়েটা যদি হয় মনের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক, ভালোবাসার সম্পর্ক, প্রেমের সম্পর্ক, সর্বোপরি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাহলে সেখানে এতগুলো শর্ত কেন? আসছে নতুন বছর, আমরা সকল জরা- দুঃখ কাটিয়ে তৈরি করব নিজেকে আগামীর জন্য নতুন করে। সাথে আশা করছি, কোন একদিন আমরা সব কাটিয়ে মনে মন মিলিয়ে, আত্মায়, ভালোবাসায়, প্রেমে গড়ে তুলব এক একটি স্বার্থহীন সম্পর্ক। প্রজন্ম হবে ভালবাসাময়! সবাইকে নববর্ষের ফুলেল শুভেচ্ছা ।🌹🌹
২১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
চাওয়ার সময় ১৬ আনা দেওয়ার সময় ০ আনা এই আমাদের সমাজের ভাব। সবাই চাই মেয়ে হোক সংসারী, গোছালো, সুন্দরী, ভদ্র ব্যবহার, সুমধুর কন্ঠ কিন্তু ছেলেরও ঐগুলো থাকা প্রয়োজন তা ভাবেনা।
সুন্দর উপস্থাপন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
পাশে থাকবেন সবসময়। শুভ কামনা। শুভ সকাল🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
হুম!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মেয়েদের বেলায় দেবী দুর্গা লাগবে আর ছেলেদের বেলায় পথের ফকির , লুইচ্চা, অল্প শিক্ষিত, কালো, বেটে হলেও সমস্যা নেই। এই হচ্ছে আমাদের সমাজের চালচিত্র বিয়ের পাত্রীর বেলায়।
বামুন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরার মতোই অবস্থা। চমৎকার লিখেছেন বরাবরের মতই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
বরাবরের মতো আপনার জন্যও শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা।
ভালো থাকবেন দিদিভাই। শুভ সকাল🥰🥰
মোঃ মজিবর রহমান
ছেলের প্রতি এতো রাগ কি স্বাস্থের জন্য মঙ্গল দিদিভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা হা।
মোঃ মজিবর রহমান
হি হি হি
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব ভালো লেগেছে লেখাটি।
ফকিরচাঁন হয়ে নুরজাহানের খোঁজ।
পবিত্র বন্ধন অনেক কিছু মেনে নিয়েই গড়ে তুলতে হয়।
আগেই এতো কিছু বাছাবাছি নিজের অক্ষমতার পরিচয়।
অনেক অনেক মুগ্ধতা ও ভালোলাগা।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল অফুরাণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল।🌹🌹
তৌহিদ
মেয়ে যেন কোরবানি হাটের গরু। সব কিছু ঠিক চাই। অথচ পাত্রের নিজের অবস্থা ফোকলা গাধার মতন সেটা একবারও ভাবেনা। এই অবস্থার উত্তরণে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
ভালো লিখেছেন আপু। ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হাহা। দারুন বলেছেন ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল🌹🌹
আরজু মুক্তা
ঘটকালি করেন বেশি করে। কিছু না হোক লেখার উপাদান পাবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। একটা নাম দেন বিসমিল্লাহ বলে নামি। যৌতুক চাইলে তো পরের গল্প ” ঘটকের হাতে ধোলাই”
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
ঘটকালি এখন জগতের কঠিন কাজগুলির অন্যতম। ছেলে মেয়ে উভয়েরই এখন চাহিদার শেষ নেই।
তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে আমার। কখনো হয়তো লিখতে ও পারি।
বেশ গুছিয়ে লিখেছ।
ভাগ মানি তালগাছ আমার।
এই হলো অবস্থা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এবার মনে হল তুমি মনোযোগ দাওনি। ঘটকালি তো উপলক্ষ। আসল ঘটনা মেয়েদের দুরাবস্থা। শুভ কামনা রইলো। অনেক অনেক ভালোবাসা❤️❤️🥰🥰
খাদিজাতুল কুবরা
মনোযোগ দিয়েই পড়েছি, তবে গুছিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করতে পারিনি। আসলে ভাইয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে গিয়ে কিছু নিরপেক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে। মেয়েদের দুরাবস্থার পাশাপাশি ছেলেদের ও আজকাল বিয়ের বাজারে মূল্যায়নের অধপতন হয়েছে।
মেয়ে পক্ষের আকাশচুম্বী কাবিনের অংক সাথে ছেলের অর্থ সম্পদই যোগ্যতা হিসেবে অগ্রগন্য। অন্যদিকে মেয়ে সুন্দরী সুশীল শিক্ষিত যা-ই হোক না কেন তাকে অবলা হয়েই থাকতে হবে যেমন তোমার উপরোল্লিখিত প্রত্যেকরি কথা সত্যি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এবার খেপেছে॥ ধন্যবাদ॥😜😜
খাদিজাতুল কুবরা
এই যা বাবা খেপিনি তো। সত্যি বলছি
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর এক অনুভব প্রকাশ করেছেন রুকু আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹