“রূপা-বৌদি
রূপা-বৌদিকে কবরই দেওয়া হল। রূপা বৌদি যে জাত হারিয়েছিল। এতদিন মুসলমানের ঘরে থেকে কি জাত রাখা যায়?
আসলে রূপা-বৌদির জাতটা সেদিনই চলে গিয়েছিল। মাঝরাতে চা-খাওয়ার নাম করে তিনজন শয়তান যেদিন তুলে নিয়ে গিয়েছিল হাইওয়ে রোডের ধারে। চা-ওয়ালি রূপা-বৌদি পারেনি নিজেকে বাঁচাতে।
সকালে বিধ্বস্ত দেহে বাড়ি ফিরলে সোনাদা মুখে থুতু দিয়ে বলেছিল ” বেশ্যা মাগি, এত তোর কুটকুটানি?” রূপা-বৌদির কাছে সে আঘাত তিনজন ধর্ষকের পাশবিকতার চেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক ছিল না।
মোমিন চাচা রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকা রূপা-বৌদিকে নিয়ে যায় নিজের বাড়ি। রূপা-বৌদি ‘ফুপু’ হয়ে ওঠে মাজেদ, নেহাদের। তারপর কেটে গেল ঐ বাড়িতেই ষোলবছর। মোমিন চাচা বাড়ি ফেরায়নি রূপাবৌদিকে। রূপা-বৌদিরও ফেরার গরজ ছিল না। এক ঘৃণা জন্ম নিয়েছিল স্বামীর উপর।
রূপা-বৌদি কোনদিন ‘নিষিদ্ধ মাংস’ খায়নি, হিজাব পড়েনি, নমাজ পড়েনি, তবু মুসলমানের ঘরে বাস করে তো?
বাজারে চায়ের দোকানে থাকতেই লক্ষ্মী-পূজায় বড় ভক্তি ছিল। মোমিন চাচার বাড়িতেও তাই করেছে। মাজেদ জিজ্ঞাসা করেছিল “এটা কি ঠাকুর ফুপু?”
রূপা-বৌদি হেসে বলেছিল, “আমাদের ধনসম্পত্তির দেবী”।
“কার ধনসম্পত্তি কামনা কর?”
“কেন তোদের?”
“আমরা তো মুসলমান। তোমার কথা শুনে তোমার ঠাকুর আমাদের ধনসম্পদ দেবে কেন?”
রূপা বৌদি হেসে বলেছিল “ঠাকুরের কাছে আবার হিন্দু মুসলমান কি রে? তিনি তো সবার”।
“তাহলে হিন্দুরা তোমাকে ঘৃণা করে কেন?”
অবোধ কিশোরের কথার জবাব দিতে পারেনি রূপা-বৌদি।
নদীতে স্রোত বয়ে যায় অনেক। রূপা-বৌদির অন্তিমসময় ঘনিয়ে আসে। একদিন নেভে জীবনদীপ। রূপাবৌদিকে মাজেদরা শ্মশানে দাহ করার জন্য গেলে অনুমতি মেলেনি।
রূপা-বৌদি যে জাত হারিয়েছিল মুসলমানের ঘরে গিয়ে।”
—– গল্পটি বিপ্লব কুমার দে দাদার লেখা।
প্রকৃতপক্ষে কী হিন্দু, কী মুসলমান, এটাই এ সমাজের বাস্তব চিত্র।
নারীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেলেও সমাজে নারী দোষী, পুরুষ ধোয়া তুলসীপাতা।
নারীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেলেও সমাজে নারী পরিত্যক্ত, পুরুষ সমাসীনই থাকে।
নারীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেলেও সমাজে নারীই বেশ্যা মাগি, পুরুষ সুপুরুষই থেকে যায়।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই বদলাবে না। বস্তুতঃ সুবিধা কেউ ছাড়ে না, ছাড়তে চায়না। এ ক্ষেত্রগুলোতে বোধসম্পন্ন বলে বিবেচিত পুরুষটিকেও অনেকসময় দেখা যায় অন্যায় জেনেও মৌনতা অবলম্বন করতে। কাজেই নারী, তোমার অসুবিধা সেদিনই দূর হবে, যেদিন তুমি নিজের মস্তিষ্কে ধারণ করবে যে, চরিত্র এতো ঠুনকো নয় যে ছুঁয়ে দিলেই ধুয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, তা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং জারি রাখতে হলে তোমাকে সর্বাগ্রে যা করতে হবে তা হলো, মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরজীবি বা পরনির্ভরশীল সর্বদাই দুর্বল। পরজীবিরা উল্লেখিত গল্পটির রুপা বৌদি চরিত্রের মতোই।
আর তাইতো এ যুগে এসেও মুনিয়ারা আত্মহননের পথ বেছে নেয় আর পরীমনিরা লড়ে যায়। পার্থক্যটা মনস্তাত্ত্বিক শক্তির।
৫টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
ঠিক বলছেন। একি ব্যাপার। অথচ পুরুষরা সুপুরুষ। নারীরা বেশ্যা।
নারী তুমি মানসিক শক্তি অর্জন করো। উঠে দাঁড়াও।
আপনার জন্য শুভ কামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
পুরুষের ভার্জিনিটি নেই এটা শুধু মেয়েদের। তবে পরিবর্তনের সময় এসেছে হবেও নিশ্চয়ই। শুভ কামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
কি হিন্দু, কি মুসলমান সব ধর্মেই নারীকে নিষ্পেষণ করা হয়েছে ভালো ভাবেই। রুপা বৌদি তার ধর্ম ত্যাগ করেননি, তারপরেও তাঁকে দাহ করা গেলো না।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দোষ সব নারীর। ধর্ষিতা হলেও নারীর দোষ।
অল্প কথায় খুব শক্তিশালী লেখা।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ লিখলেন আপু। নারী সবসময়ই অবজ্ঞা, দোষের পাত্রী। ডান-বাম হলেই আর রক্ষে নেই। পুরুষ যতই চরিত্রহীন, লম্পট হোক সে সবসময়ই সুপুরুষ, সমাজের মাথা হয়েই থাকে। এ থেকে আদৌ মুক্তি মিলবে কিনা আমার জানা নেই। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
হালিমা আক্তার
নারীর জন্মই যেন আজন্ম পাপ। পুরুষ তো বীরপুরুষ কোন পাপ তাকে স্পর্শ করে না। সব দোষ নারীর। দিনবদল হোক নারী তার প্রাপ্য সম্মান অধিকার পাক। খুব সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা।