পথিক পথ হারায়নি

নীলাঞ্জনা নীলা ৩০ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার, ০৮:৩১:৫৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ৩৭ মন্তব্য
চিত্রপটের উপর চিত্র...
চিত্রপটের উপর চিত্র…

চিত্রপটের উপর চিত্রসমৃদ্ধ গহীনের ভেতর বালিয়াড়ীতে অস্পষ্ট অন্ধকারে একটি স্পষ্ট ছায়া, স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এমন এক ছায়া দেখে থমকে গেলো পথিক। যেনো তাকেই ডাকছে সেই ছায়া। দূর হতেই বুঝতে পারলো ওটি এক রমনী মূর্তি। দেহসৌষ্ঠবসম্পন্না এমন নারীকে এড়িয়ে যাবার জন্যেই ঘর ছেড়েছে। নাহ! কিছুতেই ওই ছায়ার মুখোমুখি হবে না সে। বানপ্রস্থে যাবার প্রাক্কালে এমন বৈপরীত্যের জঙ্গলে কোনোক্রমেই নয়। তবুও মন উচাটন। হাতছানি দিচ্ছে যেনো ওই ছায়া। নিজেরই অজান্তে কখন যে পা চলতে শুরু করলো, যেনো অন্য কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। গার্হস্থ্য আশ্রম ছেড়ে এ কোথায় যাচ্ছে পথিকের পা? অপলক দৃষ্টির সামনে বদলে যাচ্ছে এক একটি দৃশ্যপট। এবারে ওই ছায়া নড়ে উঠলো। আস্তে আস্তে স্থানবদল, সমুদ্রের দিকে হাঁটতে লাগলো সেই ছায়া। যতোই কাছে এগুচ্ছে, সেই নারী ততোই দূরে যাচ্ছে। পথিকের মনে ভয়, অশরিরী নয়তো! সে যা-ই হোক তার কাছে তবু যাওয়া চাই-ই চাই। কোনো স্পর্শচিন্তা আসেনি এখনও তার মনে। শুধু ওই ছায়াকে দেখার অদম্য ইচ্ছের জন্ম হয়ে গেছে, এমনকি নিজের মন রেখে হলেও ওই মনকে জানারও ইচ্ছে।

অবশেষে সারাটি রাত্রি পার করে পথিক পৌঁছুলো অ-যাত্রার গন্তব্যে।
“এ কি! এ তো সেই!!উফ নন্দিনী? তুমি এখানে!!!” শ্রীহীন কুরূপা ওই মুখ দেখার জন্যে এতো কষ্ট করতে হলো, ভেতরে ভেতরে গজগজ করছে পথিক। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত এতোটা পথ জল-খাদ্যহীন, নির্ঘূম রাতের পর এমন সকাল আসবে ভাবেনি।
/\কোথায় যাচ্ছো?
[] জলের সন্ধানে, তুমি পিপাসার্ত।
/\মায়াবী রহস্যপুরীর জল কোথায় পাবে এখানে?
[]সবুজ অরণ্যের ওদিকেই ঝর্ণা আছে, এসো।
/\সব বুঝি মনে রেখেছো?
[]ভুলে যাবার কি কথা ছিলো?

আবার নীরব-নিশ্চুপ, সুনসান চারিদিক। অনেক দূর থেকে পাখীর কিচির-মিচির। ঝর্ণার কাছে পৌঁছে গেলো দুজনেই।

/\সবুজের ভেতর যে লাল সে তোমার কাছে নেই নন্দিনী।

ডাগর কালো চোখের অমন স্থির দৃষ্টি আজ পথিককে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? অমন কুশ্রী মুখ অথচ দিঘীর কালো জলের মতো গভীর ওই চোখে হারিয়ে যাচ্ছে কেন? সবুজ শাড়ীটা ঝর্ণার পাড়ে। নিরাবরণ শরীর নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো নন্দিনী। পথিকের শরীরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেগে উঠলো সেই আবেগ, যে আবেগে ভেসে যায় সব। সত্যি কি এ নন্দিনী? নাকি অশরিরী?
/\তুমি নন্দিনী নও। এতো সুন্দর সে নয়! কোনো দেবী কি তুমি? নাকি আত্মা?
[]পথিক তুমি পথ হারিয়েছো। আমি কুন্তলা। ওখানে, ওই যে তোমার নন্দিনী।
/\নন্দিনীকে চাইনা আমি। আমাকে তোমায় দাও। তোমার অমন মোহনীয় রূপ দেখে আর ফিরে যেতে পারবোনা।  বানপ্রস্থ নয়, আসলে আমি নন্দিনীকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছি।
[]পথিক জানো, মানুষের স্বপ্ন সাজিয়ে রাখার একমাত্র জায়গা কোথায়? এই হৃদয়। এই হৃদয়েই প্রেম এবং ঘৃণা পাশাপাশি থাকে।
/\এসব কথা কেন হে দেবী? আমার সমস্ত প্রেম তোমাকেই দেবো।
[]তোমার কাছে আমি সময় হে পথিক, নন্দিনীর কাছে তুমি অনন্ত-অসীম। সময়ের আমায় ফেলে তুমি আরেক সময়ে চলে যাবে। নন্দিনীকে এড়াতে নয়, তুমি সুশ্রী মুখ খুঁজছো।
**কুন্তলা চুপ করো। ও পথিক নয়। আমার স্বপ্ননীল। ওর যেখানে ইচ্ছে মন চায় যাক। ও যদি কাউকে ভালোওবাসে, বাসুক। এই আমার সময়কে ফেলে আরেক নতূন সময়েই তো যাচ্ছে। তাহলে সময়ের বাইরে তো ওর আর যাওয়াই হলোনা। সময়ের সাথে একটি মুখের অভ্যেস আরেকটি মুখ পেলেই ভুলে কি যাওয়া যায় আদৌ?
[]চুপ করো নন্দিনী। তবে জেনে রাখো, আস্ত একটি প্রেমের অতীত ভুলতে একটি শরীরই যথেষ্ট। কাঁদছো না কেন তুমি? তোমার স্বপ্ননীল তোমাকে ভালোবাসেনা।
**কুন্তলা চোখের জল বিসর্জন দিতে গেলে কোনো একটা কষ্ট-যন্ত্রণার প্রয়োজন পড়ে। আজ আনন্দের দিন। স্বপ্ননীল গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। 

 

অ-যাত্রার গন্তব্য...
অ-যাত্রার গন্তব্য…

**”পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো?” বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুন্ডলার এই উক্তিটা বেশ কিছুদিন থেকে মাথার ভেতর খুঁচিয়েই যাচ্ছিলো। সেই ভাবনা থেকে নেয়া কিন্তু অবশ্যই তুলনা করলে আমার কপালে ঝাঁটাপেটার সম্ভাবনা। তাই আগে-ভাগেই করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার এই আউলা-ঝাউলা লেখাটি এখানে পোষ্ট আকারে পোষ্ট করার জন্য। পথিক পথ হারালে তাকে পথ ধরিয়ে দেয়ার মানুষ আছে, আমায় গালি-বকা-ঝাড়ি-ধুনা দেয়ার জন্য মানুষের অভাব নেই। তাই পথ হারালে কোনো নবকুমারও এসে হাত ধরে বলবে না হে দেবী চলো এই পথে।    😀    :D)

হ্যামিল্টন, কানাডা
২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ইং।

১৩৬৬জন ১৩৬৬জন
0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ