আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে…..
এটা তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা। আমরা এই কবিতা প্রথম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে পড়েছি এমন টাই ভাবছেন হয় তো অনেকেই। হ্যা ঠিক তাই। কিন্তু কাওকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই কবিতা কবিগুরু কোথায় বসে লিখেছিলেন? অনেকেরই হয়তো উত্তরটা অজানা। তাদের জন্য এবং যারা জানেন তাদের জন্য এই কবিতাটা কবিগুরু “পতিসরে” বসে লিখেছিলেন।
তালগাছ একপায়ে দাঁডিয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে……..
এই কবিতাটাও কবি “পতিসরে” বসেই লিখেছিলেন।
এখন কি ভাবছেন “পতিসর”আবার কি? আর এটি অবস্থিতই বা কোথায়??? এটি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের কালিগ্রাম পরগনার পতিসরে অবস্থিত কুঠিবাড়ি (কাছারি বাড়ি)। ১৮৯১ এর পর কবি তার এই কুঠিবাড়িতে বহুবার এসেছেন। এটি মূলত কবির পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জায়গা যেটাকে উনি কুঠির বাড়ি বা কাছারি বাড়ি বানিয়েছিলেন।
কলকাতা থেকে বজড়া করে আত্রাইয়ের নাগর নদীর উপর দিয়ে তিনি ১৮৯১ সালের পরে বহুবার এসেছিলেন আমাদের এই পতিসরে। এখানে তিনি লাল টালি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন একটা স্কুল যা এখনও চলমান। পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন অনেক কাব্য ও নাটক এবং বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাসে অনেকাংশ। ছোট গল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, ইংরাজ ও ভারত বাসী প্রবন্ধ।
গান ও লিখেছিলেন অনেক যেমন
“তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার নিভৃত সাধনা…
” বধূ মিছে রাগ করোনা, তুমি নব রুপে এসো প্রানে……
মাঝে মাঝে খুব রোমাঞ্চিত হয় এই ভেবে যে এই কবিতা, এই গান, নাটক হয় তো আমাদেরই কাও কে ভেবে লেখা।কবি তার একান্ত কিছু সময় কাটিয়েছেন আমাদের এই ছোট্ট শহর টাতে। আমাদের দিয়ে গেছেন বলার মত একটা নাম। নওগাঁ পতিসর। উনি সর্বশেষ ১৯৩৭ সালে এসেছিলেন এখানে। এখন তার ব্যবহার্য সব কিছু পরে আছে আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে।
সোনেলা ব্লগের সকল ব্লগার, পাঠাক,ও নাম না জানা, অচেনা মডুদের আমাদের প্রাণের শহর নওগাঁর পতিসরে আমন্ত্রণ রইলো।
এবার পতিসর কুঠিবাড়ির কিছু ছবি দেখিঃ
কুঠিবাড়ির প্রবেশদার
এটা দেখতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের মত হলেও এটা আসোলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা পতিসরের কুঠির বাড়ির দড়জা পেরুলেই দেখা যাবে।
এই বজরা করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা থেকে আত্রায় নদী র উপর দিয়ে আমাদের নওগাঁ জেলাই প্রবেশ করেছেন না জানি কত শত বার।
কবির বজড়া সদৃশ একটা কাঠের বজড়া কুঠির বাড়ির প্রবেশ দাড়ের বাম পাশে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা আছে।
কবিগুরুর ব্যবহ্রত গ্লোব। যার সম্পূর্ণ টাই বাংলায় লেখা।
কবির পতিসরে ব্যবহ্রত খাট। না উনি অনেক লম্বা ছিলেন এই খাটটার মাঝের অংশ এখনও পাওয়া যায় নি।
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
নওগাঁয় যেতেই হবে এসব দেখতে।
কবে যে যাবো?
পোষ্ট ভাল হয়েছে।
মেহেরী তাজ
চলে আসুন ভাইয়া।গাইড হিসেবে আমি খুবই ভালো 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
খুব ভাল লেগেছে এবং অজানা জানলাম।
শুভেচ্ছা অবিরত।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
নীলাঞ্জনা নীলা
জানলাম অনেক অজানাকে।দেশে গেলে যাবার ইচ্ছে আছে একবার।দাওয়াত তো দিলেনই,গ্রহন করলাম 🙂
সুন্দর পোষ্ট।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ আপু।চলে আসবেন আমাদের জেলার পতিসরে।আমি তো আছিই গাইড হিসেবে 🙂
স্বপ্ন নীলা
শিলাইদহ গিয়েছি কিন্তু নঁওগা যাওয়া হয় নাই — আন্তরিক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য
মেহেরী তাজ
সময় পেলে আসবেন আপু।আপনাকেও ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শিক্ষনীয় পোষ্ট ছবিগুলোও তুলেছেন চমৎকার।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আশা জাগানিয়া
কবি কত স্থানে বাড়ি করেছেন ! পতিসর,শিলাইদহ,শাহাজাদপুর।আপনার চোখে দেখলাম পতিসর।যেতে হবে নওগাঁ।আপু তো আছেনই ওখানে 🙂
মেহেরী তাজ
চলে আসবেন সময় করে,আমি তো আছিই 🙂
অলিভার
ছবিব্লগ
বর্ণনা, কিছুটা ইতিহাস আর ছবি দিয়ে পরিচয়। সব মিলিয়ে চমৎকার হয়েছে।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
খেয়ালী মেয়ে
অনেককিছু জানলাম দেখলাম….
কবে যে যাবো পতিসর কুঠিবাড়িতে?…কতো কিছু এখনো হয়নি দেখা 🙁
মেহেরী তাজ
যত তারাতারি পারেন চলে আসেন আপু,
অনেক মজা হবে….
মেহেরী তাজ
তারাতারি চলে আসেন আপু…….
অনেক মজা হবে….
শুন্য শুন্যালয়
আমিইতো দেখিনি এই কুঠিবাড়ি 🙁
খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছো তাজ, আমার নওগাঁয় গর্ব করার মতো কতকিছু আছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। ভাবছি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে আমাকে আর তোমাকে নিয়েও নিশ্চয়ই গান লিখে ফেলতো, ঠিক কিনা বলো?
মেহেরী তাজ
আমাদের নওগাঁয় গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে আপু।আমাকে নিয়ে কবিগুরু গান লিখলে আমি আনন্দে মরে যেতাম আপু 🙂 দেশে এলে অবশ্যই আসবেন এসব দেখতে।
কামাল উদ্দিন
যাবার ইচ্ছেটা মনের ভেতর গেথে নিলাম।