
” ন হন্যতে ” অথার্ৎ যার শেষ নাই, যার মৃত্যু নাই বা যা অবিনশ্বর।
প্রশ্ন জাগে, কী সেই বস্তু? যা অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। এর অর্থ …….. প্রেম! উপন্যাসে সেই চির শাশ্বত প্রেমের কথাই বর্ণিত হয়েছে। খাঁটি প্রেম আলোর মতো। যা আঁধার ভেদ করে আলোকিত করে।
” প্রেম কি একটা বস্তু যা তুমি একজনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে অন্যকে দেবে? একি বিষয় সম্পত্তি, সোনার গয়না? এতো একটা আলো, মির্চা, একটা আলো! যেমন বুদ্ধিরর আলো, জ্ঞানের আলো, তেমনি প্রেমের আলো! বুদ্ধির আলোরও সীমানা আছে, তার একটাই ক্ষেত্র, কিন্তু প্রেমের আলো সবচেয়ে জ্যোতির্ময়, তা সবকিছুর সত্যরূপ দেখায়। ”
মৈত্রেয়ী দেবীর আত্মজৈবনিক উপন্যাস ” ন হন্যতে ” সেই প্রেমেরি সন্ধান দেয়। ১৯৩০ সালের সোল বছর বয়সী লেখিকা ও তাঁর বাবার বিদেশী ছাত্র মির্চার প্রণয় কাহিনী ৪২ বছর পর ১৯৭২ সালে স্মৃতি রোমন্থনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে উপন্যাসে। আগের দিনগুলি এখনও তার কাছে অমিয়্রমান। খুব স্পষ্ট ভাসছে চোখের পাতায়। হাত বাড়ালেই এখুনি ছুঁয়ে ফেলবেনকে প্রিয় মানুষকে। বালিকা বয়সে দুই ভিন্ন সমাজের ভিন্ন সংস্কৃতির প্রেমিক প্রেমিকার অসমাপ্ত প্রেমের গভীর ব্যঞ্জনাময় চিত্র উপস্থাপিত।
সম্পূর্ণ ভিনদেশী ছাত্র মির্চা এলিয়াদ। ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়ছেন মৈত্রেয়ীর বাবার কাছে। মৈত্রেয়ীর পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত, উচ্চশিক্ষা আর জ্ঞান তপস্যায় বিশ্বাসী। সে সময়কার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের যাতায়াত ছিলো তাঁর বাড়িতে। মেয়েকেও সেইভাবে তৈরি করেছিলেন। রক্ষণশীলতার পর্দা ছিলো না তাঁর বাড়িতে। মির্চা, মৈত্রেয়ীর কাছে ভারতীয় ভাষা আর সংস্কৃতি রপ্তে মনোযোগী ছিলেন। আর মৈত্রেয়ী ভিন্নদেশি ভাষা শিখছিলেন। এর ফলেই বাড়ে বন্ধুত্বতা। হয়তো সম্পর্কটা তাদের বাড়ির কেউ মেনে নিবে না। তবুও চলে। মির্চা মাঝে মাঝে রবীন্দ্রনাথের প্রতি মৈত্রেয়ীর ভালোবাসা নিয়ে অভিমান করতেন, ঈর্ষান্বিত হতেন। তা দেখে মৈত্রেয়ী অনেক হাসতেন।
মৈত্রেয়ীর ছোট বোন বাড়িতে বুঝালো মির্চা তার দিদিকেই ভালোবাসে, তাকে না। আর তার কল্যাণেই সবাই জানলো। মির্চা অনেক বুঝালো। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না। মির্চাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে মৈত্রেয়ী মুর্ছা গেলো। একে ওকে ধরে চিঠি পাঠিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু মির্চা বাড়ি ছাড়ার আগে তার বাবাকে কথা দিয়েছিলো, কোন যোগাযোগ রাখবেনা।
মাঝে বয়ে গেছে অনেক সময়। সেদিনের যুবক যুবতী এসে পৌঁছিয়েছে পৌঢ়ত্বের দ্বারে। তবে, প্রেম কি মরে? দীর্ঘ সংসার জীবনে স্বামী সন্তান নিয়ে দিন কাটালেও, এ প্রেম থেকে যায় মনের গহীনে। উপরের বালির আস্তর সরালেই দেখা যায় প্রেমের আলো।
ভারতীয় সমাজে প্রেম আর পূজা মিলেমিশে একাকার। একের মাঝে দুই এর অবস্থান। এই উপন্যাসের আর একটি দিক সমকালীন সাহিত্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনযাপন। লেখিকা আর রবীন্দ্রনাথের কিছু জীবনচিত্র এখানে উঠে এসেছে।
জীবনের শেষ লগ্নে এসে পুরাতন প্রিয়তম মানুষকে সামনে রেখে সেই চির সুন্দর প্রেমের উদ্ভাস ঘটেছে উপন্যাসে। লেখিকার কাছে প্রেম জ্যোতির্ময়, উজ্জ্বল। এর দীপ্তি বহুদূর বিস্তৃতি।
প্রেম নিয়ে সস্তা লেখার ভীড়ে এ বইটি পড়ে আমাদের মনে হবে, এতো বছর ধরে আপনি যে ভালোবাসার সম্পর্কে আছেন, তার ভীত কতটুকু মজবুত।
মির্চা বলেছিলো, ” মৈত্রী— আমি তোমাকে না তোমার আত্মাকে ধরতে চাই! ”
সময় আমাদের শরীরকে জীর্ণ করে ঠিকই কিন্তু দেহস্থিত প্রেম বা সত্যজ্ঞান অমর। সময় বা পরিস্থিতি শুধু তার উপর প্রলেপ দিতে পারে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করতে পারেনা।
এ বই না পড়লে জীবনবোধের অনেক কিছুই অজানা থাকতো। উপলব্ধির কোন স্তরে পৌঁছিলে প্রেম শুধু শরীর সর্বস্ব থাকেনা, তা হয় অসীম। । চঞ্চল, জেদী, তরুণী মৈত্রেয়ী কী করে হতাশায় ডুবে ভালোবাসার মানুষটির অভাবে ধীরে ধীরে ধৈর্যশীল, শান্ত আর পরিণত হয়ে উঠেন, তারই সন্ধান মিলবে এই বইয়ে।
মির্চার প্রতি তার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার নিদর্শন এই ” ন হন্যতে “। যা আমৃত্যু।
★★ বই এর নাম : ন হন্যতে। লেখক : মৈত্রেয়ী দেবী।
অনলাইন প্রাপ্তি : রকমারি ডট কম।
৩৭টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অপূর্ব লেখা
ভালো থাকুন।শুভ কামনা I
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
মনির হোসেন মমি
ন হন্যতে
বইটির নাম শুনেছি কিন্তু এর অর্থসহ এতো সুন্দর রিভিউ পড়ে মনে হল বইটি সংগ্রহে রাখতে হবে।খুব সুন্দর হয়েছে বই রিভিউ।
আরজু মুক্তা
অনুপ্রাণিত। কমেন্ট ভালো লেগেছে।
শুভকামনা ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
বইয়ের পাতা উলটিয়ে পড়েছি অনেক বছর আগে। খুব আবেগীয় লিখা বইটিত্র। মরিচ খাওয়া অংশটুকু হাসিবেদনার দুটই আছে।
বইটির সুন্দর সারমর্ম তুলে এনেছেন আপনি।
ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
জি ভাই। ধন্যবাদ
মোঃ মজিবর রহমান
☝
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর দুটো বইই আমার সংগ্রহে আছে। কলেজেই পড়েছি তাই তখন ওদের মিলন না হওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন বুঝি প্রেম আর ভালোবাসা এক না প্রেম শরীর সর্বস্ব আর ভালোবাসা আত্নার মেলবন্ধন। দারুন লেগেছে আপনার রিভিউ। শুভ কামনা রইলো
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ দিদি। ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট
জাকিয়া জেসমিন যূথী
বই দুটোই আমার অও খুব প্রিয়। একটা বান্ধবী দিয়েছিলো আর আরেকটা নিজের কেনা।
ভালো লাগলো লেখাটা।
ইঞ্জা
ভিন্ন ধর্ণের এক লেখা পড়লাম আপু তাও অনেকদিন পর, অসভব রকমের ভালো লেগেছে লেখাটি, এমন আরও লেখা চাই আপু।
আরজু মুক্তা
আমি কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করি ভালো কিছু লেখার।
আপনাদের উৎসাহ পেলে আমি পারবো।
ধন্যবাদ ভাই
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ আপু, নিশ্চয় পারবেন।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক সুন্দর রিভিউ পড়লাম, প্রথম জৌবনে পড়া বই,
আপনি আবার মনে করিয়ে দিলেন।
হুম, ভালোবাসা এক কঠিন অনুভব , যা সবার হয় না, সবাই পায় না।
আরজু মুক্তা
জি, ভাই। বইটা যে কতোবার পড়েছি। শুধু কঠিন লাগে। তবু ও এতোটুকু খারাপ লাগে না পড়তে।
শুভকামনা আপনার জন্য
রোকসানা খন্দকার রুকু।
সত্যিকারের ভালবাসা কখনও শেষ হয় না।।।
অসাধারণ দুটি বই। একসাথে পড়ে ফেলতে হবে।
আপনিও দারুন লিখেছেন।।। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন
নীরা সাদীয়া
বইটা শেলফে আছে। পড়ে ফেলতে হবে।
আরজু মুক্তা
তাহলে দেরি কেনো?
শুভকামনা জানবেন
আকবর হোসেন রবিন
ইদানীং বই পড়া হচ্ছেনা। কখনও সুযোগ হলে বইটা সংগ্রহ করে পড়ব। মনটা কেমন তিতা তিতা হয়ে গেছে। দুই একটা প্রেমের উপন্যাস পড়া দরকার।
আপু, আপনার পড়া সেরা কয়েকটা প্রেমের উপন্যাসের নাম বলেন। সংগ্রহ করে পড়তে হবে।
আরজু মুক্তা
আমি বইয়ের ব্যাপারে চুজি। প্রথম পৃষ্ঠা আর শেষ পৃষ্ঠা ভালো না লাগলে বইটা খুব কম উল্টানো হয়। আর ভালো লাগলে কতোবার যে পড়ি।
ধন্যবাদ আপনাকে
খাদিজাতুল কুবরা
আপু রিভিউ পড়ে বইটি পড়তে ইচ্ছে করছে।
আপনি খুব মনোজ্ঞ বিশ্লষন করেছেন।
আশা করছি ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই পড়বো।
আরজু মুক্তা
আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্যই তো বুক রিভিউ দেয়া।
ভালো থাকবেন
বন্যা লিপি
রিভিউ পড়ে বইটা পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেলো দ্বিগুণ।
আরজু মুক্তা
আগ্রহ সৃষ্টির জন্যই তো রিভিউ দেয়া। আপনারা পড়লে লেখাও সার্থক।
ভালো থাকবেন সবসময়
বন্যা লিপি
হাতের কাছে পেয়েছিলাম বইটা একসময়, কিন্তু পড়া হয়নি, আর পড়লেও হয়তো তখন বুঝতামওনা এই বইয়ের আসল গুঢ়ার্থ। এখন কেমন করে কার কাছে পাই এ বই?
আলমগীর সরকার লিটন
প্রেম ও ভালবাসা দুটো দুই জিনিস আমার কাছে মনে হয়
প্রেম দুজনার মাঝে থাকতে হবে আর ভালবাসা অবিনশ্বর কে বাদা দিতে পারবেন কারণ নিজস্ব ব্যাপার
গল্পটা সুন্দর হবে ——অনেক শুভেচ্ছা রইল মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
জি। ধন্যবাদ
নিতাই বাবু
রিভিউ কিন্তু দারুণ হয়েছে। কিন্তু বইটা পড়া হয়নি। বইটির ব্যাপারে আপনার রিভিউ লেখা পড়ে মন চাচ্ছে আজই বইটি সংগ্রহ করি। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সংগ্রহ করবো।
বইটি সম্পর্কে জানানোর জন্য শুভকামনা থাকলো ।
আরজু মুক্তা
বই পড়ার আগ্রহ যেনো জাগে এজন্যই রিভিউ।
ধন্যবাদ দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
অনেক সুন্দর একটি বই রিভিউ পড়লাম। বইটি পড়ার ইচ্ছে রইলো আপু।
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
তবে দেরি কেনো?
শুভকামনা জানবেন
সুপায়ন বড়ুয়া
বইটির রিভিউ সুন্দর করে তুলে ধরলেন আপু।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
দাদা, শুভকামনা জানবেন
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দারুণ রিভিউ হয়েছে — ‘মির্চা বলেছিলো, ” মৈত্রী— আমি তোমাকে না তোমার আত্মাকে ধরতে চাই! ”’।
ভালো এবং সুস্থ থাকবেন। শুভ কামনা অফুরান।
আরজু মুক্তা
জি ভাই। দোয়া করবেন।
আপনিও ভালো থাকেন
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ফী আমানিল্লাহ। আপনিও ভালো থাকবনে। দোয়ার দরখাস্ত রইলো বোন।