কদিনের মধ্যেই ফরহাদ জানতে পারে তার নামে মামলা হয়েছে। যোগাযোগ করে নীলিমার সাথে। নীলিমা এবার জোসেফের পরামর্শমতো কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়। ফরহাদ জানতে চায়, মামলা দিয়েছো কেনো?
-কি করবো? তোমার কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না।
-আসবো, এদিকটা একটু সামলে নিয়েই আসবো।
-ঠিক আছে, তুমি আসো।
-মামলা মাথায় নিয়ে আসবো? কি করে?
-আচ্ছা, ও যখনতখন তুলে নেয়া যাবে।
ফরহাদ এখন নিয়মিতই নীলিমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। ভাবের আদানপ্রদানের মাধ্যমে গল্প খুনসুটির ছলে পরিস্থিতি বুঝতে চায়। একদিন জানায় সে বাংলাদেশে আসতে চাইছে। অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে তাই জরুরীভিত্তিতে আসতে হচ্ছে। কথাবার্তার মাধ্যমে নীলিমার কাছে মামলার পরিস্থিতি জানতে চায়। নীলিমা তাঁকে আশ্বস্ত করে আসতে বলে। কয়েকদিন পর ফরহাদ আসে বাংলাদেশে। অফিসে নিয়মিত যাওয়াআসা করছে। মূলত এককালীন পাওনা টাকাটা দ্রুত বুঝে পাওয়ার জন্য সে খুব তৎপর কিন্তু নীলিমাকে এসবের কিছুই বুঝতে দেয় না।
এদিকে জোসেফও তৎপর। ফরহাদ চুপিচুপি নীলিমাকে ফেভারে রেখেই কাজ সমাধায় তৎপর থাকে। ফরহাদের টার্গেট থাকে অফিসের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে টাকাটা বুঝে পাওয়া। আর নীলিমার দৃষ্টি ফরহাদের দিকে। ছলচাতুরীপূর্ণ আচরণের কারণে খুব সন্তর্পণে সে ফরহাদের গতিবিধির দিকে নজর রাখছে। এমনিভাবে একদিন হঠাৎই ফরহাদের গতিবিধিতে নীলিমা টের পায় ফরহাদ বোধহয় চলে যাওয়ার পায়তারা করছে। জোসেফকেও সন্দেহজনক গতিবিধির খবরটা জানিয়ে রাখে। জোসেফ বাসায় আসে। দেখা হয় ফরহাদের সাথে। প্রসঙ্গ আসে মামলার। আলোচনায় উঠে আসে কোম্পানী থেকে ফরহাদের এককালীন প্রাপ্য টাকাপয়সার বিষয়টিও। ফরহাদ বুঝে যায়, কিছুই আর চেপে থাকা যাবে না। জোসেফের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয় ফরহাদ অফিস থেকে যে এককালীন টাকা পাবে এর একটা অংশ সে নীলিমাকে দেবে। ওদিকে ফরহাদের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়। অফিসসহ সবগুলো বর্ডারে তা জানিয়ে রাখা হয়।
একদিন হঠাৎই নীলিমা টের পায় ফরহাদ চলে যাচ্ছে। সারক্ষণ চোখেচোখে রেখেও দুপুরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই ব্যাপারটা টের পায় সে। সাথেসাথে জোসেফকে ফোনে কল দিতে দিতেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ে। সোজা চলে যায় সায়েদাবাদ বাসস্টেশনের বেনাপোল কাউন্টারে। ছবি দেখিয়ে এবং নাম বলে জানতে চায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে এ নামে কেউ বেনাপোলের টিকেট কেটেছে কি না। কাউন্টার থেকে নেগেটিভ উত্তর পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনুরোধ করে বাকী কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিতে। একজন নারীর এমন অস্থিরতা দেখে কাউন্টারে বসা লোকটি শহরের অন্য কাউন্টারগুলোতেও যোগাযোগ করে। কয়েকটি কাউন্টারে যোগাযোগ করতেই হদিস মেলে। কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে এ নামের একজন সন্ধ্যা সাতটার টিকেট ক্রয় করেছে। নীলিমা যা সন্দেহ করেছিলো, তাই ঘটতে চলেছে। হাতঘড়িটার দিকে চোখ বুলায়। চারে চারটা বাজে। যথেষ্ট সময় আছে যদিও তবুও যে জ্যামের শহর। খবরটা জোসেফকে দিয়েই একটা সিএনজি নিয়ে সোজা কল্যাণপুর রওয়ানা।
কল্যাণপুর পৌঁছেই টের পায় জোসেফের বাহিনী আগেই এসে পজিশন নিয়েছে। কাঙ্ক্ষিত টার্গেটে পৌঁছেছে কি না নিশ্চিত হতে কাউন্টারে খোঁজ নেয়। এবার জোসেফের পরামর্শ মতোই ওৎ পেতে অপেক্ষা করার পালা। এমন নাটকীয় কাজগুলো করতে নীলিমার খুবই আত্মসম্মানে বাধছে, কিন্তু তবুও যে জবাবটা না দিলে অপমানের গ্লানি তার মুছবে না। পাশেই একটা চায়ের স্টলে নিজেকে আড়ালে রাখতে পেপার নিয়ে বসে পড়ে। সাথে জোসেফবাহিনীর একজনও আছে। অপেক্ষার পালা চলতে থাকে। সময় বেড়ে চলার সাথেসাথে নির্ধারিত গাড়ীও পূর্ণ হয়ে উঠতে শুর করেছে। ঘড়ির কাটা পৌনে সাতটার ঘর পেরিয়ে চলায় নীলিমার হার্টবিট বাড়তে থাকে। অপমানবোধটা যেনো আরও ভারী হয়ে চেপে বসে। অস্থিরতা চাপ সৃষ্টি করছে কিচ্ছু করতে না পারার ক্ষোভে। সাতটা বাজার মিনিট পাঁচেক কেবল বাকী, এমন সময় গোধূলি অন্ধকারে ফরহাদের অবয়ব টের পায় নীলিমা। আড়াল থেকে বেরিয়ে মুখ আড়াল করতে করতেই যেনো গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নীলিমা নির্ধারিত গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাওয়া অবয়বের দিকে আঙুল নির্দেশ করতেই পাশের লোকটিসহ জোসেফবাহিনী তৎপর হয়ে উঠে। ফরহাদ পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের পা-দানিতে এক পা দিয়ে আরেক পা তুলতে যাবে অমনি হ্যাণ্ডকাপ ঝুলে পড়ে তাঁর সামনে।
নীলিমা আড়ালে থেকে সবই দেখে। তার খুব খারাপ লাগে। আবার রাগও তাকে তাড়া করে। এদিকে ফরহাদকে নিয়ে জোসেফবাহিনী রওয়ানা হয়। অন্যদিকে নীলিমাও রওয়ানা করে আলাদাভাবে। এমনসময় ফরহাদের ফোন আসে নীলিমার কাছে। ফরহাদ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে না গিয়ে নীলিমার কাছে জোসেফের সহযোগিতা চায় যেনো জেলহাজতে তাঁকে না দেয়া হয়। স্ত্রীর অসুস্থতার বিষয়টিও উল্লেখ করে। নীলিমাও দেখছি বলে ফোনটা রেখে দেয়। মিনিট বিশেকের ব্যবধানে দুদিক থেকে দু’গ্রুপ থানায় ঢুকে। নীলিমাকে দেখে ফরহাদ যেনো স্বস্তি পায়। পুরো পরিস্থিতি নিয়ে নানা কথাবার্তার পর উভয়ে একটা সিদ্ধান্তে এসে আপোষ রফা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ফরহাদ অফিস থেকে এককালীন যা টাকা পেয়েছে এর ৩০% ফরহাদের প্রথম স্ত্রী, ৩০% নীলিমা আর ৪০% থাকবে ফরহাদের নিজের। চেকটা সে ভাবেই অফিস থেকে পুনঃইস্যু হবে। আগামীকাল থানা থেকে অফিসে সেভাবেই নির্দেশনা যাবে।
বাসায় ফিরে দুজনেই চুপচাপ। বিব্রতভাবের কারণে নীলিমা একটি কথাও সহজভাবে বলতে পারছে না, ফরহাদও স্বাভাবিক হতে পারছে না। এমনি করেই রাত পার হয়। পরেরদিন দুজনেই অফিসে যায়। ওদিকে জোসেফও যথাসময়ে হাজির হয়। যথারীতি ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ হলে তারা বেরিয়ে আসে। জোসেফ চলে যায়। ফরহাদও নীলিমা থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
(শেষ পর্ব)
৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
লেখাটি কোন কারণে প্রথম থেকে মিস হয়েছে আপু, আজই পড়বো সব গুলো। 😆
ইঞ্জা
হুম মাঝের পর্বটা মিস হয়েছিলো আপু
জিসান শা ইকরাম
ভালো হচ্ছে, চলুক।
প্রফাইলে গিয়ে প্রফাইল পিকচার দিয়ে দিন প্রিয় ব্লগার।
শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন , মানুষ, চলে যায়।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার ভাবে বিচ্ছেদের যবনিকা টেনে লেখাটি শেষ করলেন।আসলে এখানে কিছুই বলার নেই এটাই হয় জীবন।
তৌহিদ
বিচ্ছেদ মাত্রই কস্টের ব্যাপার। তবে এটারও অনেজ সময় প্রয়োজন হয় বৈকি!
তৌহিদ
দুঃখিত, অনেক হবে।