মেয়েটার দোষ সে ডিভোর্সি মায়ের সন্তান। মেয়েটার দূর্ভাগ্য যে, সে তার জন্মদাতার কুকর্মের ফল ভোগ করছে। (সুন্দরী শিক্ষিতা মা ঘরের গৃহকর্মির সাথে স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি তাই আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তিতে পিতার সে গৃহকর্মিকে বিবাহ এবং স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ) শৈশব কাল থেকেই পিতাহীন সংসারে মাথা নত করে প্রায় বেড়ে উঠেছে দুই বছরের বড় আরেক বোনের সাথে। যদিও আত্মমর্যাদা সম্পন্না মা তাদের মাথা উঁচূ করে বাঁচবার সবক দিয়েছেন, তবুও পিতার উশৃংখলতার দায় যেন কন্যাদের বহন করতে না হয় তার জন্য কঠোর অনুশাষনে বড় করেছেন মেয়েদের। সুশিক্ষিত এবং মার্জিত করে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের সংষ্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে জীবন ধারন করবার মত করে।
অনেকটা সময় রূপ/গুনবতি এই দু বোনএর পরিকল্পনাই ছিলো ‘জীবনেও বিয়ে করবোনা’। এই কারনেই, পড়াশোনার সুবাদে এবং পরবর্তিতে কাজের সুবাদে ছেলেদের সাথে মেলামেশা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলেও ‘প্রেম’ বিষয়ক কোন মানসিক সম্পর্কে জড়ানো হয়ে ওঠেনি। ভালোই চলছিলো তিন মা-মেয়ের সংসার। বিপদ হলো এই দেশের হিসেবে মেয়েরা বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠবার পর। ‘মেয়েরা তো বুড়ো হতে চললো বিয়ে দেবে কবে?’ ‘মেয়েদের কি বাড়ির খাম্বা বানাবা?’ টাইপের কথার খোঁচায় মা’ও মেয়েদের চাপ দেওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে মেয়েরাও মেনে নেয় মা’য়ের ইচ্ছে।
মেয়েটার বড় বোনের ডাক্তারি পড়াতেই মন বেশি, তাই তার উপরেই বিয়ের চাপ বেশি। বিবিএ শেষ হতেই একদিন সব দেখে শুনে ‘নিজেদের সত্য’ জানিয়েই একজনের সাথে মেয়েটার আংটি বদল হয়ে গেলো। বিয়ের তারিখ ফিক্সড, বিয়ের শপিং করা শেষ, আচমকা ছেলে আংটি ফেরত দিয়ে চলে গেলো। হতভম্ব মেয়েটি লজ্জায় ভেঙ্গে পড়লো। কুঁকড়ে গেলো। যা হোক, সেই ছেলের সাথে কোন রকম সম্পর্ক তৈরী হবার আগেই সম্পর্কটা শেষ হয়েছে বলে আবার স্বাভাবিক হলো কদিন পর। বছর খানেক পরে আবার সম্বন্ধ এলো। দুই পরিবারের অনেক দেখাশোনার পরে এবার কেবল আংটি বদল নয়, সরাসরি আকদ করানো হলো। ছেলে আক্দ শেষে বাবা-মায়ের সাথে বাড়ি চলে গেলো বিয়ের তারিখ এক মাস পরে ঠিক করে। সেই ছেলে গেলো তো গেলো। মেয়ের বাড়িতে আসা তো দূর, ফোনও করেনা। ফোন করলে ফোন ধরেনা ! আজব! কাহিনী কি?!
না, ‘যার বাবা কাজের বেটিকে বিয়ে করেছে তার সাথে ছেলের বিয়ে করানো সম্ভব না। এই মেয়েকে বিয়ে করালে সভ্য সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা’ সাফ জানিয়ে দিয়ে গেলো একদিন ছেলের বাবা-মা এসে! অথচ ছেলের পরিবারের থেকেও মেয়ের পরিবার মর্যাদায় অনেকই বড়!
____________
ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই যুগে এই সময়ে এসেও একটা মেয়েকে শাস্তি পেতে হয় পিতার কৃত কর্মের! যেখানে একজন ডিভোর্সি পুরুষ ‘কুমারি মেয়ে বিয়ে করবো’ ঘোষনা দিলেও মেয়ের পিতা-মাতাদের উৎসাহের কমতি দেখিনা। মেয়েদের লাইন লেগে যার আর এই সব সো কল্ড শিক্ষিত পাত্রেরা মেয়েদের অনায়াসে রিজেক্ট করে চলে যায় গুণী মেয়ের নিজস্ব ‘দোষ’ না থাকার পরেও সভ্যতার দোহাই দিয়ে!
হায় সভ্যতা !
৩৩টি মন্তব্য
বনলতা সেন
মেকি সভ্যতার এ আর এক রূপ।
বন্দনা কবীর
এ থেকে নারীর মুক্তি নেই ।
বনলতা সেন
আমি অন্তত দেখি না।
বন্দনা কবীর
মনের আলোর জন্য কেউ পড়াশুনা করে না। লেখা পড়া চাকরীর জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু, কি লিখব ভেবে বুঝে উঠতে পারছিনা।
আমরা মেরুদন্ডহীন পুরুষ, না কি তা জানিনা।
কারন দুই পরিবারের জানাশুনার পর আকদ হয়েছিল, তারপর কেন আবার এই অবাঞ্চিত প্রশ্ন।
ধন্যবাদ।
বন্দনা কবীর
লেখা পড়া শিখে এদের শুধু সার্টিফিকেট হয়েছে, মন অন্ধকারই রয়ে গিয়েছে।
মোঃ মজিবর রহমান
সারটিকেট দিয়ে কি মন মানবতাবাদী হয় আপু, হয় না।
বন্দনা কবীর
না ।
শুন্য শুন্যালয়
নারী হওয়াটাই দোষের, আর প্রতিবাদী হলে তো কথাই নাই। এই ধরনের মানুষের সাথে বাকি জীবন একসাথে থাকার চেয়ে একা থাকাই ভালো। এ অবস্থার কোনই উত্তরন নেই। সব বলার জন্য শিরোনাম টাই যে যথেস্ট।
বন্দনা কবীর
একা থাকার বিড়ম্বনা আমাদের দেশে আরো বেশি শুন্য।
স্বপ্ন নীলা
পড়ে খুবই কষ্ট পেলাম মনে — উদাস হয়ে ভাবি ! হায়রে নারী !! আমার বান্ধবীর খালাত বোনের বেলাতেও এরকমন ঘটনা হয়েছিল –ওর তিনবার বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল — মেয়েটি পরে ঘর হতেই বের হতে চাইতো না —কারণ ওর বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গিয়েছিল –তারপর ওর মা কেন বিয়ে করলো !! এটাই ওর মার অপরাধ আর শাস্তি !! এত শিক্ষিত পরিবার !! এত মিষ্টি একটি মেয়ে !! ইংরেজী সাহিত্যে পড়ালেখা করেছে — তারপরও এই শাস্তি সমাজ দিয়েছে ওকে —
আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপুনি !!
বন্দনা কবীর
লাখো কাহিনী আছে এমনি দগ্ধ হবার স্বপ্ন নীলা ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
‘মেয়েদের কি বাড়ির খাম্বা বানাবা?’ :Approve: আসলে কি তাই?
বন্দনা কবীর
সেটাই ।
পুষ্পবতী
মেয়েরা এই সমাজে অনেক অবহেলিত।
তাই মাঝে মাঝে আমার খুব খারাপ লাগে।
জানিনা নারীরা কবে তার প্রাপ্য সম্মান পাবে ?নাকি কোনদিনও পাবেনা।
ভালো লাগলো আপু। -{@
বন্দনা কবীর
আপাতত কোন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না ।
প্রজন্ম ৭১
এই অবস্থা যদি উল্টো হতো, তাহলে তা হতো ছেলের যোগ্যতা। মেয়েটি যদি ছেলে হতো, তা হলে সবাই বলতো এত প্রতিকুলতা সত্বেও ছেলে মানুষ হয়েছে। আমাদের এই অন্ধকার অবস্থা থেকে মনে হয় মুক্তি নেই।
অন্তরা মিতু
আপনার কথায় সম্পূর্ণ একমত…..
অন্তরা মিতু
যেখানে একজন ডিভোর্সি পুরুষ ‘কুমারি মেয়ে বিয়ে করবো’ ঘোষনা দিলেও মেয়ের পিতা-মাতাদের উৎসাহের কমতি দেখিনা। মেয়েদের লাইন লেগে যার আর এই সব সো কল্ড শিক্ষিত পাত্রেরা মেয়েদের অনায়াসে রিজেক্ট করে চলে যায় গুণী মেয়ের নিজস্ব ‘দোষ’ না থাকার পরেও সভ্যতার দোহাই দিয়ে….
বন্দনা কবীর
আপনার কথাই সত্যি প্রজন্ম।
অন্তরা মিতু
“যেখানে একজন ডিভোর্সি পুরুষ ‘কুমারি মেয়ে বিয়ে করবো’ ঘোষনা দিলেও মেয়ের পিতা-মাতাদের উৎসাহের কমতি দেখিনা। মেয়েদের লাইন লেগে যার “
বন্দনা কবীর
সত্যি কথা ।
ব্লগার সজীব
লেখায় সমাজের বাস্তবতার ছাপ। এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি ? কিভাবে এ মানসিকতার পরিবর্তন হবে ?
বন্দনা কবীর
আপাতত মুক্তির কোন সম্ভাবনা দেখছি না ।
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় চিতার তাপ অনুভূত হচ্ছে । এ অচলায়তন ভাঙ্গা খুব .সহজ কাজ নয় ।
নিয়মিত আপনার লেখা চাই ।
বন্দনা কবীর
এ অচলায়তন ভাঙ্গা খুব .সহজ কাজ নয় । সহমত। দিচ্ছি তো 🙂
খসড়া
নারী তুমি কার? তুমি কারও নও তুমি নিজের, এসব নরকের কীটকে ছূঁড়ে ফেল এমন জীবন গড় যেন তারা তোমার পায়ে লুটায়।
বন্দনা কবীর
এটি বলা সহজ, করা কঠিন ।
শিশির কনা
নারীকে এই আগুনেই থাকতে হবে মনে হয় আমাদের দেশে।
বন্দনা কবীর
সত্যি এমনই থাকতে হবে।,
জিসান শা ইকরাম
এমন চলতেই থাকবে। নিস্তার নেই আমাদের ।
কৃন্তনিকা
বাস্তবতা এমনি…
মেয়ে হয়ে জন্মানোই সবচেয়ে বড় পাপ আমাদের…
মিসু
কৃন্তনিকা বলেছেনঃ বাস্তবতা এমনি…
মেয়ে হয়ে জন্মানোই সবচেয়ে বড় পাপ আমাদের…