নারী-তুই জীবনভর চিতার আগুনেঃ২

বন্দনা কবীর ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৯:৪৮:০২পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৩ মন্তব্য


মেয়েটার দোষ সে ডিভোর্সি মায়ের সন্তান। মেয়েটার দূর্ভাগ্য যে, সে তার জন্মদাতার কুকর্মের ফল ভোগ করছে। (সুন্দরী শিক্ষিতা মা ঘরের গৃহকর্মির সাথে স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি তাই আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তিতে পিতার সে গৃহকর্মিকে বিবাহ এবং স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ) শৈশব কাল থেকেই পিতাহীন সংসারে মাথা নত করে প্রায় বেড়ে উঠেছে দুই বছরের বড় আরেক বোনের সাথে। যদিও আত্মমর্যাদা সম্পন্না মা তাদের মাথা উঁচূ করে বাঁচবার সবক দিয়েছেন, তবুও পিতার উশৃংখলতার দায় যেন কন্যাদের বহন করতে না হয় তার জন্য কঠোর অনুশাষনে বড় করেছেন মেয়েদের। সুশিক্ষিত এবং মার্জিত করে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের সংষ্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে জীবন ধারন করবার মত করে।

অনেকটা সময় রূপ/গুনবতি এই দু বোনএর পরিকল্পনাই ছিলো ‘জীবনেও বিয়ে করবোনা’। এই কারনেই, পড়াশোনার সুবাদে এবং পরবর্তিতে কাজের সুবাদে ছেলেদের সাথে মেলামেশা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলেও ‘প্রেম’ বিষয়ক কোন মানসিক সম্পর্কে জড়ানো হয়ে ওঠেনি। ভালোই চলছিলো তিন মা-মেয়ের সংসার। বিপদ হলো এই দেশের হিসেবে মেয়েরা বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠবার পর। ‘মেয়েরা তো বুড়ো হতে চললো বিয়ে দেবে কবে?’ ‘মেয়েদের কি বাড়ির খাম্বা বানাবা?’ টাইপের কথার খোঁচায় মা’ও মেয়েদের চাপ দেওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে মেয়েরাও মেনে নেয় মা’য়ের ইচ্ছে।

মেয়েটার বড় বোনের ডাক্তারি পড়াতেই মন বেশি, তাই তার উপরেই বিয়ের চাপ বেশি। বিবিএ শেষ হতেই একদিন সব দেখে শুনে ‘নিজেদের সত্য’ জানিয়েই একজনের সাথে মেয়েটার আংটি বদল হয়ে গেলো। বিয়ের তারিখ ফিক্সড, বিয়ের শপিং করা শেষ, আচমকা ছেলে আংটি ফেরত দিয়ে চলে গেলো। হতভম্ব মেয়েটি লজ্জায় ভেঙ্গে পড়লো। কুঁকড়ে গেলো। যা হোক, সেই ছেলের সাথে কোন রকম সম্পর্ক তৈরী হবার আগেই সম্পর্কটা শেষ হয়েছে বলে আবার স্বাভাবিক হলো কদিন পর। বছর খানেক পরে আবার সম্বন্ধ এলো। দুই পরিবারের অনেক দেখাশোনার পরে এবার কেবল আংটি বদল নয়, সরাসরি আকদ করানো হলো। ছেলে আক্‌দ শেষে বাবা-মায়ের সাথে বাড়ি চলে গেলো বিয়ের তারিখ এক মাস পরে ঠিক করে। সেই ছেলে গেলো তো গেলো। মেয়ের বাড়িতে আসা তো দূর, ফোনও করেনা। ফোন করলে ফোন ধরেনা ! আজব! কাহিনী কি?!
না, ‘যার বাবা কাজের বেটিকে বিয়ে করেছে তার সাথে ছেলের বিয়ে করানো সম্ভব না। এই মেয়েকে বিয়ে করালে সভ্য সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা’ সাফ জানিয়ে দিয়ে গেলো একদিন ছেলের বাবা-মা এসে! অথচ ছেলের পরিবারের থেকেও মেয়ের পরিবার মর্যাদায় অনেকই বড়!
____________
ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই যুগে এই সময়ে এসেও একটা মেয়েকে শাস্তি পেতে হয় পিতার কৃত কর্মের! যেখানে একজন ডিভোর্সি পুরুষ ‘কুমারি মেয়ে বিয়ে করবো’ ঘোষনা দিলেও মেয়ের পিতা-মাতাদের উৎসাহের কমতি দেখিনা। মেয়েদের লাইন লেগে যার আর এই সব সো কল্ড শিক্ষিত পাত্রেরা মেয়েদের অনায়াসে রিজেক্ট করে চলে যায় গুণী মেয়ের নিজস্ব ‘দোষ’ না থাকার পরেও সভ্যতার দোহাই দিয়ে!
হায় সভ্যতা !

৫১৬জন ৫১৬জন
0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ