জাস্টিস ফর উইমেন গ্রুপে ডায়েস ভাইয়ের একটা পোস্ট দেখলাম। বিষয়টা সংক্ষেপে এমন যে,
একটি ছেলে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে, প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যায়।এবার দু’তিন সপ্তাহ যাবত সে বাড়ি যাচ্ছে না।কারণটা হলো, তার মা কান্নাজড়িত কন্ঠে ছেলেকে ফোন করে বলেছে, “তোর বাবা আবারো মেয়ে নিয়ে আসা শুরু করেছে। প্রতি রাতেই এটা করে”।
একথা বলার সময় নিজের কাছে নিজেই অপমানে নুয়ে পরছিল ছেলেটা।এসব কথা যে কাওকে বলা যায় না! তাছাড়াও সন্তানের কাছে সবচেয়ে করুণ দৃশ্য মায়ের চোখের জল, সেটা সে কি করে সইবে,তাই বাড়ি যেতে পারে না। আরো দুঃখের কথা হল,

এ পোস্টটির সঙ্গে কমেন্টে একমত হলেন শত শত নারী পুরুষ। অর্থাৎ তাদের পরিবারেও একই সমস্যা। চিন্তা করা যায় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে আমাদের নৈতিকতা?
এবার প্রসঙ্গ একটু ঘোরানো যাক। কিছু পুরুষবাদী পুরুষের কমেন্ট হলো, কেন এক নারী অন্য নারীর সংসার ভাঙে?তাহলেতো পুরুষরা সুযোগ নেবেই! বাহ! চমৎকার যুক্তি,যা দিয়ে অপরাধকে জায়েজ করে দিলাম!
আচ্ছা, যারা ভাড়ায় বা মজুরীতে খাটে তাদেরকে আমরা কি বলি সভ্য সমাজে? “বেশ্যা”। ছোট্ট একটা শব্দ,যা আপনি একটা ভদ্র মেয়েকেও গালি দিতে ব্যাবহার করে থাকেন, তার সেটা গায়ে লাগে। কিন্তু এটা যাদের পেশা, তাদের কিন্তু গায়ে লাগে না। এখন আপনি মজুরী দিয়ে শ্রমিককে আনবেন, আবার তারই দোষ দেবেন সে এল কেন? সে পেটের দায়ে বাধ্য হয়েছে বা তাকে কোন এক কচি বয়সে বাধ্য করা হয়েছে এটা করতে। কিন্তু আপনাকে কে বাধ্য করেছে?তা ছাড়াও যাকে বেশ্যা বলে গালি দিলেন, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, তার সাথেই নিজেকে তুলনা করছেন,নিজ অপরাধের সাফাই গাইতে গিয়ে?কিংবা কখনো কি এরা ভেবে দেখেছে, এদের অল্প সময়ের পৈশাচিক আনন্দে যন্ত্রণা ভোগ করে কতগুলো মানুষ?

এই যে ছেলেটা,কি পরিচয় দেবে বাবার? এই ছেলেটাও একজন পুরুষ, কি করে মুখ দেখাবে সমাজে? কী করে থামাবে মায়ের চোখের জল?
আর মেয়ে হলেতো কথাই নেই! যে মেয়ের বাবা এমন, সে মেয়ের চরিত্র আর কেমন হবে?এই বলে চারপাশের লোক তাকে টিটকারী দিবে, উঠতে বসতে খোঁটা দেবে। কেউ কেউ তো বলে বসবে, “তুই কতয় যাবি?” প্রতিবাদ করলে বলবে, “থাম, তোর বাপ কি করে তা মনে হয় আর আমরা জানি না!”

এবার আসি স্ত্রীর কথায়। কতটা অবমাননা সহ্য করে সেই স্ত্রীগন? কেউ কেউ মন্তব্যে বলছেন, স্ত্রীরা কেন সহ্য করে? তাঁদের কোন আত্নসম্মানবোধ নেই কেন? এর চেয়ে ভিক্ষে করা ভাল। থামেন ভাই বোনেরা, আবেগ দিয়ে পৃথিবী চলে না। তাঁদের আত্নসম্মান বোধ না থাকলে তাঁরা কান্নাকাটি করত না, বরং সেজে গুজে পার্লারে ঘুরে রাতে নাইট ক্লাবে গিয়ে নিজেরাও নাচানাচি করত। কিন্তু সমস্যা এখানেই, তাঁদের আত্নসম্মানবোধ থাকলেও জীবিকা নির্বাহের পথ খোলা নেই। যে সময়টাতে তাঁরা নিজেদের ক্যারিয়ারকে দাঁড় করাতে পারত, সে সময়টাকে তাঁরা বিসর্জন দিয়েছেন স্বামীর মন ভোলাতে, পেট ভরাতে,সন্তানের টিফিন বানাতে, রঙ তামাটে করেছেন উনুনের ধোঁয়াতে। তাই আজ তাঁর জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাই আজ তাঁর জন্য পরে রইল একগাঁদা অসম্মান। আর বাকি রইল ভিক্ষে করা। আপনারা যারা সুখে শান্তিতে সুবিশাল অট্টালিকায় বাস করেন, তারা হয়ত জানেন না একটা নারী ভিখারীর জন্যেও বাহিরের জগৎটা কত বিপদসংকুল।হোক সে যুবতী, হোক সে বৃদ্ধা। পদে পদে ওৎ পেতে রয় শিয়াল শকুনেরা। মধ্যবিত্ত, মানসম্মানসম্পন্ন একজন নারীর পক্ষে ভিক্ষের থালা হাতে মাঝ রাস্তায় বসে যাওয়া কোন সহজ কথা নয়।

একবার একটি ছেলে ব্ন্ধুকে বলছিলাম, “পুরুষরা কদিন পরেই আর নতুন বৌকে পছন্দ করেনা,তারা যেন উড়ু উড়ু স্বভাবের হয়ে যায়।” ছেলেটি উত্তরে বলল, “এর কারণটা নারীরা নিজেরাই।কেননা, যখন বেবী জন্ম দেয়, তখন নারীরা নিজ ফিগারের প্রতি যত্ন নেয় না। ফলে পুরুষের আকর্ষণ কমে যায়।”
বাহ, অত্যন্ত রুচিশীল উত্তর! আপনার স্ত্রীর ফিগারের প্রতি আপনার সমস্ত ভালবাসা, যখন আপনার সন্তানকে পৃথিবীতে আনবে,তখন ১০ মাসের কষ্ট, লেবার পেইন,পরবর্তী শারিরীক দূর্বলতা, সন্তানের যত্ন,আপনার যত্ন করে সবকিছুর পরও আপনার মন ভোলানোর জন্য তাকে ফিগার ম্যান্টেইন করতে হবে! এর চেয়ে নারী রোবট হলে ভাল হত না? সুইচ টিপলে রান্না করে দিবে,সুইচ টিপলে বাচ্চা দেবে, অতপর সুইচ টিপলে বাকিটাও বুঝে নেবে?

আরেক ব্ন্ধুর ইমোশনাল ডায়লগ ছিল এরকম, নারীদের ঘরের বাহিরে গিয়ে কাজ করার কী দরকার, স্বামীর যদি টাকার অভাব না থাকে? বরের টাকা মানেই বৌয়ের টাকা, দুজন মিলিয়ে একটিই মানুষ। দুজন কোন অালাদা সত্বা নয়।ইত্যাদি।

কিছু সুখী সমৃদ্ধ জুটিকে বাদ দিলে অন্যান্য প্রায় সকল ক্ষেত্রে এসব কথা বেমানান।এসব ইমোশনাল কথা কাল্পনিক জগতে আর যুক্তিতর্কেই মানায়, বাস্তবে নয়। বাস্তবটা বড়ই কঠিন। বাস্তবে প্রথম ঘটনার ঐ পুরুষটিকে শাস্তি দেয়া যেত, তাকে একা করে দিয়ে।তিনি যদি ঐসব খেলাতেই মেতে থাকতে চান তবে থাকুক। স্ত্রী তাঁর সন্তানদের নিয়ে আলাদা বসবাস করবে। তবে সে জন্য তাঁর যোগ্যতা থাকা চাই। “পড়ালেখা জানা আছে, যে কোন মুহূর্তেই চাকরী নেওয়া যাবে”, সেই ধারনা আদিকালেই সমাপ্ত হয়েছে।এখন চাকরী পেতে হবে উপযুক্ত বয়সেই। বয়স গেলে কেঁদে কূল পাওয়া যাবে না। সুতরাং যারা আপনাকে এসব ইমোশনাল ডায়লগ দিতে আসবে যে, “তুমি আমি একাত্না,এক প্রাণ ” বুঝে নেবেন, কী অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

তবে হ্যাঁ, সবাই যে অসুখী তা কিন্তু নয়। আবার চাকরী করলেই সবাই সুখী হবে তাও নয়। অনেকের সুন্দরী বউও কিন্তু যায় পাড়ার মোড়ের ছাত্রটির সঙ্গে অবসর যাপন করতে। সুতরাং সবাই এক নয়। তবে আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে কোনটা আপনার নিজের জন্য ভাল। আপনি আবেগ দিয়ে ভাববেন,নাকি বিবেক দিয়ে? আপনি কল্পনায় নদী পাড় হবেন, নাকি বাস্তব সাগরে সাঁতার দেবেন? আপনার জীবনের ভাঙা তরী আপনাকেই বৈঠা বেয়ে পাড়ি দিতে হবে। কতদূর যাবেন তা নির্ধারন করবে আপনার কর্মস্পৃহা এবং আপনার ভাগ্য।

৪৪০জন ৪৪০জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ