বলেছি না, এদেশে ধর্ষকের বিচার হয়না সহযোগীদের সহযোগিতার কারণে।
এখনো বেশিরভাগ নারী নষ্টপুরুষদের গতিবিধি চিনতে পারেনা বলে প্রায়শই ধোঁকা খায়। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, নারী ছলনাময়ী। কিন্তু এই ধর্ষণ সংক্রান্ত প্রায় কেইসেই দেখা যায়, ছলনার আশ্রয় নিয়েই পুরুষটি নারীটিকে ফাঁদে ফেলে। খোলা মনে পথ চলে নারীটি হয় প্রতারিত।
বরগুনার ঘটনাটি আরও তিনদিন আগেই পত্রিকায় পড়ি। কিন্তু আজকাল পত্রিকার খবরেও বিভ্রান্ত হতে হয়, তাই আরও কোন সোর্স থেকে খবরের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ দেখলাম একটি টেলিভিশন নিউজ করেছে। ঘটনার সাতদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। এভাবেই সমাজে নারীর প্রতি অন্যায়গুলো গুষ্টিবদ্ধ হয়ে করা হয়। আবার চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া হয়, নারীটিই সমস্যা।
এখানেও হয়তো বলা হবে, নারীটি কেন অইলোকের মোটরসাইকেলে চড়ে রওয়ানা হয়েছিল? কেউ বলবে না, এড়িয়াভিত্তিক এটাই অই এলাকার বাহন। বলা হবে নারীটি একা গেল কেন? কেউ বলবে না, সকালবেলা উঠে অদূরে বাবার বাড়ি ছোট্ট মেয়ে নিয়ে রওয়ানা হয়েছে, এখানে আবার কাকে সাথে করে নেবে?
এখানে নারীটির দোষ একটাই, সহজ দৃষ্টিতে জীবনকে দেখা। তার বুঝা উচিত ছিল পৃথিবী নারীর জন্য এক গহীন জঙ্গল, এখানে প্রতি পদেপদে তাকে হরিণের মতো করে সতর্কতা অবলম্বন করে পথ চলতে হয়। বনের হায়েনা নেকড়ে নয়, তার আশেপাশে মিষ্টি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেকোনো পুরুষের দ্বারাই সে যেকোনো সময় আক্রমণের শিকার হতে পারে। কারো মনের খবরই তো তার জানা নেই। সুযোগসন্ধানী চোখগুলো প্রতি মুহূর্তে ইতিউতি করে বেড়ায় কোথায় কাকে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।
আলোচ্য নারীটিকে লিফট দিতে গিয়ে মোটরচালক সুবিধাজনক স্থানে সাইকেলটি থামিয়ে কেউ একজনকে পেট্রোল আনতে কল করে। সহজসরল নারীটি বুঝতেও পারে না, পাম্পে না গিয়ে এখানে কেন? অথবা এলাকাটা এতোটাই নির্জন যে নারীটি সরে যাওয়ার মতো অবস্থানকে বেছে নেয়নি ধর্ষকের দল। খানিকপরেই তিনজন এসে হাজির। ব্যাস, চারজন জোটবদ্ধ হয়ে নারীটির সঙ্গে থাকা ৭/৮ বছরের মেয়েটিকে বেঁধে রেখে মেয়ের সামনেই মা’কে টানা কয়েকঘন্টা ধর্ষণ করে। উফফ! নারীটির অবস্থা তখন হয় জাস্ট প্রতিবাদহীন জড়বস্তু, একদলা জীবন্ত মাংসপিণ্ড, পৃথিবীর সর্বোচ্চ নিপীড়িত এক অনুভূতির নিঃশ্বাস। যে গহ্বর পৃথিবীকে পূর্ণ করে সেই গহ্বরেই পৃথিবীর বিভৎস অত্যাচার চলে।
এবারে দেখুন, ধর্ষণকালে চারজন পুরুষ, মামলা না নিয়ে কিছু পুরুষ, মামলা পরিচালনাকালে কিছু পুরুষ, সবশেষে বিচারকার্যেও যদি, তবে এতো সহযোগী থাকলে ধর্ষকের পরিমাণ কমবে কী করে? দিনেদিনে তো বরং জান্নাতই হয়ে ওঠছে, তাইতো কী রমজান আর কী করোনাকাল! তাদের জান্নাতি আনন্দোৎসব যখনতখন!!!
ও প্রসঙ্গে কয়েকটা নির্দোষ প্রশ্ন:
★ছলনাময়ী কেন শুধু নারীকেই বলা হয়?
★ভালোবাসার ক্ষেত্রে কেন নারী শর্তহীনভাবে পুরুষের ওপর আস্থা রাখতে পারে না?
★নারীর প্রতি পদেপদে বিপদের কারণ কারা?
★বেড়ে ওঠা আলোচ্য ছোট্ট মেয়েটি যতোদিন বেঁচে থাকবে তার চোখে পুরুষের রূপ কেমন হবে?
৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এখনো শুনতে হয় নারী ছলনাময়ী, নারী চাইলেই পুরুষের কাছ থেকে অনায়াসে সব আদায় করে নিতে পারে। অথচ পুরুষ এখনো প্রেমের ফাঁদে, বিয়ের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করছে। আপনার কথাগুলো হৃদয়ে গেঁথে গেল। ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
নারীর প্রতি আমাদের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের বানানো নারীদের সামাজিক অবস্থান সহ আরো বিভিন্ন কারনে নারীদের উপর এই নির্মমতা কখোনই কমবে না। গত প্রায় ত্রিশ বছর যাবত দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, এটি তিনশত বছর থাকলেও অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
নারীর প্রতি এমন নির্মমতা স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি আমরা।
নারীকেই পথ চলতে হবে হরিনীর মত।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা। খুবই ভালো লাগলো।
সুরাইয়া পারভীন
উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে কারো কাছে? কেউ কি দেবে এর উত্তর?
যা হয়ে যাক সব দোষ কেবল নারীদের। কারণ একটাই নারী বলে। এই অবস্থার পরিবর্তন কিয়ামতের আগে আর হবে না গো আপু। নারী কেবল একদলা মাংস।
বেচারী ৭/৮ বছরের মেয়েটা। ওর কথা ভাবতেই কেঁপে উঠল বুক
আরজু মুক্তা
আমার মনে গয়, ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি।
ভালো লাগলো লিখাটি
হালিম নজরুল
সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা জরুরী