বিকেলে নদী ফিরে এসে দেখে নাবিলার মুখ কালো, জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে, মন খারাপ কেন, দুপুরে খেয়েছো?
ফ্রুটস খেয়েছি, নাবিলা মনমরা হয়ে বললো।
সুইটি ড্যাড কেমন আছে?
ড্যাড খুব সিক, কথা বলেনা।
ওকে আসো, বলেই নদী নাবিলাকে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজ খুলে একটা সেন্ডউইচ নিয়ে হাতে দিলো আর গ্লাসে করে জুস দিলো, বললো, তুমি খাও আমি ড্যাডের কাছে যাচ্ছি, ওকে ডোন্ট ওরি।
নদী তাড়াহুড়ো করে উপরে গেল, দরজায় হাল্কা নক করেই ভিতরে প্রবেশ করলো, জীবন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছে দেখে বললো, এখন কেমন লাগছে বলেই কাছে গেল, মাথায় হাত দিয়ে আৎকে উঠলো।
ইশ আপনার গা তো পুড়ে যাচ্ছে, আমি আসছি বলেই নদী তাড়াহুড়ো করে আবার বেড়িয়ে গেল, যখন এলো একটা বাটি আর দুইটা ছোট হ্যান্ড টাওয়েল নিয়ে এলো, বাথরুম থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে টাওয়েল গুলো ভিজিয়ে রাখলো, তার একটা নিয়ে চিপে জীবনের কপালে দিলো, কিছুক্ষণ পর পর এমন করতে লাগলো, পানি গরম হয়ে উঠলে আবার গিয়ে নতুন করে পানি নিয়ে আসতে থাকলো।
ঘন্টা খানেক পর জীবনকে উঠে বসিয়ে দিয়ে টিশার্ট খুলে নিলো আর পুরা শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিয়ে ফ্রেস একটা টিশার্ট পড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিছু খেয়েছেন?
না।
আচ্ছা আপনি শুয়ে থাকুন, আমি আপনার জন্য স্যুপ নিয়ে আসছি।
নদী নিচে নেমে এসে ফ্রিজ থেকে কিছু ভেজিটেবেল আর মুরগির মাংস নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো, আধা ঘন্টা পর মুরগির স্টক দিয়ে ভেজিটেবেল স্যুপ রেডি করে নাবিলাকে ডেকে নিয়ে এক বাটি স্যুপ দিয়ে বললো, মামনি তুমি স্যুপটা খেয়ে নাও, আমি তোমার ড্যাডকে খাইয়ে আসছি।
ওকে, ড্যাড এখন কেমন আছে আন্টি?
তোমার ড্যাড ইনশা আল্লাহ্ ঠিক হয়ে যাবে, তুমি খাও।
নদী স্যুপ ভরা বাটিটা নিয়ে জীবনের রুমে এসে, জীবনকে উঠে বসতে হেল্প করলো।
আমি খাইয়ে দিই।
না থাক, আমি খেতে পারবো, জ্বর মনে হয় পড়ছে।
আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি খান আমি বসছি বলেই নদী স্যুপের বাটি এগিয়ে দিলো।
জীবন চামচ দিয়ে স্যুপ তুলে খেতে লাগলো।
কেমন হয়েছে?
খুব ভালো, গরম গরম খেতে ভালো লাগছে।
আচ্ছা, আমি পানি ঢেলে দিয়ে যাচ্ছি, আপনি খান, আমি ফ্রেস হয়ে রান্না করতে যাচ্ছি।
ওকে যান।
নদী উঠতে গেলেই জীবন বললো, নদী।
জি বলুন।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদের কিছু নেই, আমি আসছি, বলেই নদী বেড়িয়ে নিজ রুমে গেল ফ্রেস হতে।
নদী ফ্রেস হয়ে এসে মেয়ের হোম ওয়ার্ক দেখিয়ে দিয়ে রান্নার জন্য ফ্রিজ খুলে চিকেন, ভেজিটেবেল নিয়ে মেয়ের পাশেই বসে কুটাকুটি শুরু করে দিলো, কাটাকুটি শেষ হলে রান্না শুরু করে দিলো, রান্না শেষ হয়ে এলে চুলায় ভাত চড়ালো, আগেই চাল ধুয়ে নিয়েছিল, ভাত চড়িয়ে দিয়ে উপরে গেল জীবনের খবর নিতে।
জীবনের দরজায় নক করে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো জীবন টয়লেটে তাই সোফাতে বসে পাশের টেবিলে রাখা ম্যাগাজিন দেখতে লাগলো, একটু পর জীবন বেরিয়ে এলে জিজ্ঞেস করলো জ্বরের কি অবস্থা।
জ্বর আছে বলেই জীবন ড্রয়ার থেকে ইলেক্ট্রনিক থার্মোমিটার নিয়ে কানে দিলো, এরপর বের করে বললো, ১০১।
স্যুপ পুরাটা খেয়েছেন তো?
হুম খেয়েছি, ওইটাই খেতে ভালো লেগেছে, ওইটাতেই খিদে বেড়ে গেছে দেখছি।
হুম জানতাম, ওইটা খিদে বাড়াবে, আমি কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসবো।
না না আমি নিচে নামবো।
একেবারেই নয়, আপনি রেস্ট করুন, আমি নিয়ে আসবো।
ঠিক আছে।
মেডিসিন কি কিছু খেয়েছিলেন?
দুপুরে খেয়েছি।
এখন আমি খাবার দিলে খেয়েই তারপর মেডিসিন খাবেন।
ঠিক আছে।
আর কিছু লাগবে আপনার?
না এখন কিছু লাগবেনা।
ঠিক আছে আমি খাবার নিয়ে আসছি একটু পর।
নদী নিচে নেমে এসে ভাত চেক করে পানি ঝরিয়ে নিলো, এরপর আরেকবার চুলায় দিয়ে পানি শুকিয়ে নিলো।
মামনি, তুমি কি এখন ডিনার করবে?
তোমার সাথে খাবো, আদুরে গলায় জবাব দিলো নাবিলা।
তোমার হোম ওয়ার্ক শেষ।
ইয়াপ।
ওকে তুমি ড্যাডিকে দেখতে চাও।
মাথা নেড়ে সায় দিলো নাবিলা।
তাহলে তুমি ড্যাডির কাছে যাও, আমি তোমার ড্যাডের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
ওকে বলে নাবিলা দৌড় দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগুলো।
আসতে মা, ব্যাথা পাবে তো বলাতে নাবিলা আসতে আসতে উপরে উঠতে লাগলো।
নদী বাটিতে করে ভেজিটেবেল, পাতলা করে রান্না মুরগি, ভাত ট্রেতে নিয়ে উপরে চললো, সাথে এক বোতল নরমাল পানিও নিলো।
উপরে এসে সব সাজিয়ে রেখে জীবনকে খেতে আসতে বললো।
জীবন মেয়েকে আদর করছিলো, উঠে এসে সোফায় বসলো।
নদী প্লেটের মধ্যে ভাত, ভেজিটেবেল আর চিকেন তুলে দিলো অল্প অল্প করে, জীবন খেতে শুরু করলে, নাবিলা এসে নদীর কোলে উঠে বসলো।
মুরগিটা আজ এতো পাতলা করে রান্না কেন, জীবন খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো।
আপনি বেশি মসলাদার খেতে পারবেননা।
ও আচ্ছা।
জীবন বেশি খেতেও পারলোনা দেখে নদী জিজ্ঞেস করলো, কি হলো?
খেতে স্বাদ লাগছেনা।
আচ্ছা, মেডিসিন কই রাখছেন?
বেড টেবিলেই আছে।
নদী উঠে গিয়ে টেবিল থেকে মেডিসিন জীবনকে দিলে জীবন পেকেট থেকে বের করে খেয়ে নিলো।
আপনি খেয়ে নিন মেয়েকে নিয়ে, আমি রেস্ট করি, জীবন বললো।
হুম যাচ্ছি, সুইটি চলো আমরা খেয়ে নিই।
চলো, ড্যাড তুমি ঘুমাও, উঠবেনা।
ওকে বুড়ি মা, জীবন হেসে বললো।
আই এম নট ওল্ড।
আই নো, আই নো, দুই হাত তুলে জীবন বললো।
নদী হেসে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, নিচে নেমে এসে নদী নিজেদের জন্য খাবার রেডি করে, মেয়েকে নিয়ে খেতে বসে পড়লো।
আন্টি চিকেনটা আজ কেমন যেন, নাবিলা বললো।
এইটা বাংলাদেশের প্রিয় একটা রান্না, মিথ্যে বললো নদী।
তাই, বাট সো মাচ অফ গ্রেবি।
এইটা তোমাকে স্ট্রং এন্ড ইন্টেলিজেন্ট হবে।
রিয়েলি, তাহলে আরেক পিস দাও।
নদী আরেক পিছ তুলে মেয়ের পাতে দিলো আর নিজে কিছু ভেজিটেবেল নিলো।
খাওয়া শেষে নদী প্লেট, বাটি গুলো ধুয়ে মুছে রেখে দুধ গরম করতে দিলো, গরম হয়ে আসলে দুই গ্লাস দুধ নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসা মেয়েকে দিয়ে, আরেক গ্লাস নিয়ে উপরে চলে গেল, দরজা নক করে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো জীবন ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে কাজ করছে।
কি ব্যাপার, আপনি না রেস্ট করার কথা?
আর বলোনা, শরীর এমন ঘামা ঘামাইতেছিলো যে উঠে বসলাম, ভাবছিলাম কি করবো আর তাই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছি।
আচ্ছা এখন রাখুন, দুধটা খেয়ে নিন প্লিজ।
আবার দুধ।
দুধ খেলে শরীরে ভালো লাগবে, খান।
জীবন দুধের গ্লাসটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।
রাতে শোয়ার আগে নদী জীবনের খবর নিতে রুমে গিয়ে দেখে জীবন ফোনে কথা বলছে, নদীকে উকি দিতে দেখে জীবন হাতের ইশারায় ভিতরে আসতে বলে আবার কথা বলতে লাগলো।
মা, তুমি তো জানো আমি আসতে পারবোনা, আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো, ঠিক আছে মা?
ওকে আমি ফোন রাখছি, হাঁ মা মেডিসিন নিচ্ছি, নাবিলা ভালো আছে, দোয়া করো, আল্লাহ্ হাফেজ।
ফোন রেখে সোফায় বসা নদীর দিকে তাকালো, বললো, কি খবর?
এই দেখতে আসছি আপনি ঠিকঠাক আছেন কিনা?
খুব ঘামাচ্ছি।
জ্বর পড়ছে তাহলে।
হুম, আচ্ছা শুনুন, আগামী মাসের সাত তারিখ, আমার ছোট বোনের বিয়ে, মা বোন দুজনেই চাপাচাপি করছে যাওয়ার জন্য।
যেতে পারলে যাবেন।
হুম তাই ভাবছি, আগামী মাসে তো ছুটি নিতে আমার অসুবিধা নেই, নাবিলারও সামার হলিডে।
তাহলে তো ভালো, যান ঘুরে আসুন।
আপনিও চলুন, জীবন অনুরোধের সুরে বললো।
আমার তো ইউনিভার্সিটি খোলা।
আরেহ নাহ, ওই সময় আপনার ইউনিভার্সিটিও সামার হলিডের বন্ধ থাকবে আর আসছেন পর্যন্ত তো বাড়ী আর যাওয়া হয়নি?
না যাওয়া হয়নি।
তাহলে একবার ঘুরে আসুন, এরপরে তো ব্যস্ত জীবন।
আচ্ছা ভেবে দেখি, আপনার কোন কিছু লাগবে।
নাহ সব আছে, আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন, আমিও ঘুমাবো।
যদি জ্বর উঠে বা অসুস্থ লাগে, আমাকে ডাক দেবেন।
জি, আপনি যান।
ওকে গুড নাইট।
গুড নাইট।
………….. চলবে।
ছবিঃ Google.
২০টি মন্তব্য
নীহারিকা
বিরাট যত্ন নেয়া হচ্ছে।
দেখাযাক এরপর কি হয়।
ইঞ্জা
মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন আপনিও কি বসে থাকতে পারবেন, দাদী?
নীহারিকা
তাও তো ঠিক। ;?
ইঞ্জা
😀
জিসান শা ইকরাম
সহজ সরল বর্ননায় আপনি অত্যন্ত সফল একজন গল্পকার।
আপনার ধৈর্য্যের প্রশংসা করতেই হয়।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আমার কথা হলো, গল্প হবে বাস্তবে তা উঠিয়ে নিয়ে আসা আর সেই চিন্তাতেই গল্প এগিয়ে যায় ভাইজান, দোয়া রাখবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
কেমন করে এতো সুন্দর পরিপাটি গল্প লেখা যান গুনি। আমার ভীষণ ভাল লাছে। মনে হচ্ছে বইপড়ার নেশায় আবার ধরছে।
আগামী পরবের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
ভাই আমি চেষ্টা করি আর আপনারা অনুপ্রেরণা দেন, এইভাবেই গল্প লিখি, ধন্যবাদ ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
লিখে যান ব্রাদার এগিয়ে যান সুন্দর সুন্দর গল্পএর জন্ম দেন আমরা পড়ি।
-{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অবিরাম ভাই
মৌনতা রিতু
দেশে নদির যাওয়ারই দরকার নেই। গেলে দুনিয়ার কথা শুনতে হবে, এটা নিশ্চিত। ভাই এমন করে সহজ সরল বর্ণনায় মিলটা করিয়ে দিয়েন, প্লিজ লাগে।
ইঞ্জা
আপু, নদী দেশে না গেলে যে আমার গল্পই অপূর্ণ থাকবে, তাই নদীকে দেশে যেতে হবে। 😀
ইকরাম মাহমুদ
কি লিখব মন্তব্যে? শুধু ভাবছি, সুখের অসুখে ভোগার আগেই দুঃখের অসুখ গ্রাস করে আমাদের। নদীর জীবনেও আবার তেমন হয় কিনা। লেখক কী ভাবছেন!!! অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তীর জন্য
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই অসাধারণ এক প্রশ্ন রেখেছেন যার উত্তর নিয়ে নিজেও ভাবনায় পড়ে গেলাম, জানিনা কি করবো। ;?
নীলাঞ্জনা নীলা
দেশে যাওয়া মানে…বেচারি নদী! 🙁
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া নদী লন্ডনে থেকে চুলায় ভাত রান্না করে! রাইস কুকার না থাকলে এ জীবনে আমার ভাত রান্না করাই হতোনা। 😀
ইঞ্জা
আমি শেষ লন্ডনে যায় ২০১১তে, তখন দেখেছিলাম কাজিনের বউ ভাতের ডেকছিতেই ভাত রান্না করছে, আমিও একি পদ্ধতিতে ভাত রান্না করতে পারে, রাইস কুকার হলো আপনাদের জন্য, যারা আরো উন্নত ভাবে রান্না করেন। 😀
নদী যদি দেশে না আসে এই গল্পের কোন মূল্য থাকবেনা আপু, তাই দেশে পাঠাচ্ছি। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
না গো ভাইয়া আপনি হয়তো ভুল বুঝেছেন।
আমি ভাত রান্না করতে পারিনা এখনও। অবশ্য শেখার ইচ্ছেও নেই। দেশে থাকতে সবই রান্না শিখেছিলাম, কিন্তু চুলায় ভাত বানাতে গেলে একেবারে ভর্তা, নয়তো আধসেদ্ধ।
“আমিও একি পদ্ধতিতে ভাত রান্না করতে পারে(পারি হবে)।”
ইঞ্জা
হায় হায়, আমি হ্যামিলটনে গেলে আমারে কি খাওয়াবেন। 😮
ছাইরাছ হেলাল
এবারে দেশ পর্বের অপেক্ষা করতেই হয়।
ইঞ্জা
চেষ্টা করছি যেন ভালোভাবেই লেখাটি শেষ করতে পারি, দোয়া রাখবেন ভাইজান।