মামনি তুমি রেডি, নদী নাবিলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
মাথা নাড়িয়ে দাঁত বের করে হেসে হেসে নাবিলা বুঝালো সে রেডি, নদী নাবিলাকে পনি টেইল করে চুল বেধে দিয়েছে, দেখতে খুব সুইট লাগছে ওকে।
তাহলে চলো আগে ব্রেকফাস্ট করে নিই, তোমার ড্যাড নিশ্চয় ব্রেকফাস্ট নিয়ে বসে আছে।
ওকে বলে নাবিলা ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল আর নদীও পিছন পিছন নামতে লাগলো ধিরে ধিরে, নদী পা এখন অনেকটা ঠিক হয়েছে, ব্যাথা কমে গেছে কিন্তু এরপরেও তাড়াহুড়া একদম নিষেধ, সাথে লাঠি নিয়ে চলছে।
নিচে নেমে দেখলো জীবন ওভেন থেকে কি যেন নামাচ্ছে।
কি বানালেন ওইটা, নদী জিজ্ঞেস করলো।
আপেল পাই।
আপেল পাই, নাম শুনেছি কিন্তু খাইনি কখনো!
খুব টেস্টি, জীবন হেসে বললো টেবিলের গ্লাসে অরেঞ্জ জুস ঢালতে ঢালতে।
সুইটি বসে পড়ো, ব্রেকফাস্ট ইজ রেডি।
নাবিলা দৌঁড়ে এসে নিজ চেয়ারে বসে পড়লো।
নাবিলাকে দেখে জীবন বললো, খুব সুন্দর করে চুল বেধেছ তো তুমি!
আন্টি বেধে দিয়েছে, নাবিলা আদুরে গলায় বললো।
তাই, খুব সুন্দর।
উম্মম খুব মজা, নদী পাই মুখে দিয়ে বললো।
জীবন মুচকি হাসলো।
আপনাদের আমি নামিয়ে দেবো, আসার সময় আপনারা সোফিয়া ভাবীর সাথে চলে আসবেন, ভাবীও ওখানে থাকবে উনার ছেলের জন্য।
তাই, ঠিক আছে।
প্রোগ্রাম শেষে নদীরা সোফিয়া ভাবীর সাথে বাসায় ফিরলো দুপুর একটার সময়, সোফিয়াকে নদী জোর করে নিয়ে এলো বাসায় লাঞ্চ করার জন্য, খাওয়া দাওয়া শেষে নাবিলা রুমে গেল রেস্ট করতে আর নদীরা ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডায় বসলো।
ভাবী আজ একটা সমস্যা হয়েছে, নদী বললো।
কি সমস্যা, উদ্বিগ্ন হলো সোফিয়া।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হটাৎ এমন বমি হলোনা।
কি বলছো!
হুম, সত্যি বলছি।
কয়বার হয়েছে?
একবার।
আর বমি বমি ভাব লেগেছে কি?
না আর লাগেনি, গতকাল রাতে যা খেয়েছি সব বেড়িয়ে গেছে।
ওহ তাহলে হয়তো হজম হয়নি তোমার, বড় একটা নিশ্বাস ফেললেন সোফিয়া ভাবী।
কিন্তু ভাবী আরেকটা সমস্যা আছে।
কি?
শরীরটা খুব দুর্বল কিন্তু খুব খাচ্ছি, খেতেও ইচ্ছে করছে, যেমন কাঁচা আম, তেতুল, আইস্ক্রিম এইসব।
তোমার পিরিয়ড কি ঠিক মতো হচ্ছে?
এইখানে আসার পর হয়নি।
ওমা কি বলো, তাহলে তো সমস্যা আছে বলে ব্যাগ হাতড়ালেন এরপর একটা পেকেট নিয়ে নদীকে দিলেন।
তুমি এইটা নিয়ে টয়লেটে যাও, ইউরিন টেস্ট করে দেখো, নিয়ম প্যাকেটেই লেখা আছে।
ভাবী, মানে বুঝলাম না।
মানে মানে করো কেন, যা বলছি তাই করো।
নদী আর কথা না বলে চলে গেল উপরের রুমে।
ভাবী।
সোফিয়া ফিরে তাকালো নদীর দিকে, নদী সোফিয়ার কাছে এসে বললো, ভাবী পজেটিভ দেখাচ্ছে, নদী উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।
ওহ মাই গড, রনি?
হাঁ ভাবী।
ওহ গড, তাহলে এক কাজ করি, নাবিলাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলো ডাক্তারের কাছে যায়।
ভাবী আমার ভয় লাগছে।
কেন ভয় কিসের?
জীবন রাগ করলে?
জীবন রাগ করবে কেন, তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করোনা, এখন চলো ডাক্তারের কাছে যায়, ডাক্তার আবার আমার বান্ধবী।
তাই, তাহলে চলুন যায়।
নদী নাবিলাকে ডেকে নিয়ে সোফিয়ার সাথে বেড়িয়ে গেল।
গাড়ীতে উঠে নদী বললো, জীবনকে ফোন দিয়ে জানিয়ে যায়, কি বলেন?
ঠিক আছে বলো।
নদী, জীবনকে ফোন দিয়ে বললো, সে সোফিয়া ভাবীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।
কেন, কোন সমস্যা, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
জীবন কি যে বলি, নদী আমতা আমতা করলো।
কি হয়েছে খুলে বলুন, জীবন উদ্বিগ্ন হলো।
আমার শরীরটা ভালো না, সকালে বমি হয়েছে।
কি বলেন, হজমের সমস্যা?
না।
তাহলে?
আগে ডাক্তারের কাছে যায়, তারপর সন্ধ্যায় আপনি এলে জানাবো।
আমাকে আসতে হবে?
না না ভাবী সাথে আছে।
আচ্ছা যান, আমাকে জানাবেন।
ঠিক আছে।
মহিলা ডাক্তারটা সোফিয়া ভাবীর বান্ধবী, উনি ভারতের আর এই দেশেই সেটেল হোন ছোটবেলায়।
উনি দেখে কিছু টেস্ট দিয়ে বললেন, সামনের করিডোর ধরে সোজা চলে যাবেন ল্যাবে, টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে আসুন, আমি অপেক্ষা করছি।
আধা ঘন্টা লাগলো রিপোর্ট পেতে, তা নিয়ে নদীরা এসে ডাক্তারের রুমে এসে দেখালো।
হুম যা ভেবে ছিলাম, কনগ্রাজুলেশন, আপনি মা হতে চলেছেন।
আপনি সিউর, নদী ভয়ে ভয়ে তাকালো ডাক্তারের দিকে।
অবশ্যই আমি সিউর, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
নদী হাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
ভয় পাওয়ার কি আছে, পৃথিবীর সব নারীই মা হয়, ভয় পাবেন না, এখন থেকে প্রতি মাসে একবার করে আসবেন চেকআপ করতে, এ আপনার জন্য কম্পালসারি, আর কিছু আয়রন জাতিয় মেডিসিন দিচ্ছি যা রেগুলার খাবেন।
নদী আর সোফিয়া ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলো, নদী কিছুদূর হেঁটে এসে একটা সোফা পেয়ে দপ করে বসে পড়লো।
কি হলো নদী, অসুস্থ ফিল করছো?
ভাবী, এ আমি কি করলাম, নদী ফুঁফিয়ে কান্না করতে লাগলো।
কেন এইসব বলছো, তুমি তো জানতেনা যে তোমার জীবনে এইসব ঘটবে, তুমি এইটাকে পজিটিভলি নাও।
ভাবী গত দুই বছরের কাছাকাছি আমি কন্ট্রোল করে এসেছি কিন্তু শেষের দিকে কেন অবহেলা করলাম আমি, মাথায় হাত মারতে লাগলো নদী।
ঘরে ফিরে আসার পর থেকে নদীর মন খুব খারাপ হয়ে রইল, সন্ধ্যার কিছু আগে ফিরে এসেছে, ড্রেস চেইঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে এসে নাবিলাকে কুকি আর জুস দিলো খেতে, নিজে এক কাপ কফি নিয়ে বসে পড়লো ড্রয়িং রুমে, কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নাবিলাই দৌড়ে গেল দরজা খুলতে, জীবনকে ঢুকতে দেখে নদী উঠে দাঁড়ালো, দাঁড়াতে দেখে জীবন বললো, বসুন আমি আসছি, বলেই জীবন সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল, জীবনের জন্য নদী কফি আর কিছু কুকি প্লেটে করে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।
জীবন নেমে এসে নদীর সামনা সামনি সোফায় বসে পড়লো আর জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার হটাৎ ডাক্তারের কাছে গেলেন বলেই কফির কাপে চুমুক দিলো।
জীবন বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে, নদী আমতা আমতা করতে লাগলো।
আরে কি সমস্যা খুলে তো বলবেন, আবার কফিতে চুমুক দিলো জীবন।
আমি প্রেগন্যান্ট।
বিষম খেলো জীবন, খাশতে শুরু করলো।
নদী দ্রুত পাশে রাখা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো।
জীবন পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়ে বললো, সত্যি?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নদী বললো, সত্যি।
জীবন হেসে দিলো, বললো এতো আনন্দের বলেই থমকে গেল, নিজেকে সামলে বললো, এখন কি হবে?
জানি না, বুঝতে পারছিনা কি করবো।
আপনার ফ্যামিলিকে বলেছেন?
না বলিনি এখনো বলেই কান্না শুরু করে দিলো নদী।
কি হয়েছে, কাঁদছেন কেন?
আল্লাহ্ই জানে আপনি কি মনে করছেন?
আরেহ না না আমি কিছু কি মনে করবো, আপনি চিনেন আমাকে, এক কাজ করুন, বাসায় কল দেন, আপনার বাবাকে জানান আগে তারপর মাকে বলুন।
বলবো?
অবশ্যই বলবেন, আপনি তো কোন অপরাধ করেননি, আপনি মা হবেন এতো খুশির কথা, ফোন দিন বাবা মাকে।
নদী ওর বাবার নাম্বারে কল দিলো ইমো এপস ব্যবহার করে, কয়েকটা রিং বাজার পর ওর বাবার কণ্ঠ শোনা গেল।
হ্যালো, নদী মা কেমন আছিস?
হাঁ বাবা ভালো আছি।
কাল থেকে তো চাকরীতে জয়েন করছিস নাকি?
হাঁ, বাবা তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
কি বলবি বল।
বাবা আমি মা হতে চলেছি।
কি, কি বলছিস তুই?
নদী চুপ করে রইল।
এইটা কিভাবে করলি মা তুই, তোর ডিভোর্স হলো?
বাবা কি করবো বলো, আমি শেষে শেষে এতো অসহায় ছিলাম, রনি একটা পয়সাও আমাকে দিতোনা আর সাথে সাথে তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল, আমি খুব অসহায় ছিলাম সেইসময়।
হুম বুঝতে পারছি, তা এখন কি করবি চিন্তা করেছিস কিছু?
বাবা বুঝতে পারছিনা কি করবো?
ঠিক আছে, তুই ফোন রাখ, আমি তোর মার সাথে পরামর্শ করে নিই, তারপর বলছি কি করতে হবে।
ঠিক আছে বাবা, বলে ফোন কেটে দিলো নদী।
কি বললো আপনার বাবা, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
বাবা খুব টেনশনে পড়ে গেছে।
সাভাবিক কিন্তু আপনি কি চিন্তা করছেন?
আপনি পরামর্শ দিন প্লিজ, নদী কাতর কণ্ঠে বললো।
দেখুন বিষয়টি একদম আপনার নিজস্ব, এই বিষয়ে আমি বা আপনার বাবা মার ডিসিশন দেওয়ার কোন মানেই হয়না, এরপরেও বলবো আপনি বুঝুন, এই শিশুটি কিন্তু আপনারই অঙ্গ, আপনার রক্তে গড়া, যা করবেন বুঝে শুনে করবেন।
———— চলবে।
ছবিঃ Google.
২২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কিছু জটিলতার আভাস পাচ্ছি। দেখি কি হয় পরের পর্বে।
ইঞ্জা
জঠিল করতে চাইনি ভাইজান কিন্তু একটু টুইস্ট তো জীবনে থাকে, কি বলেন?
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাগ্য ভালো ডিভোর্স হবার পরে জানা গেছে নদী কনসিভ করেছে। তা নইলে আরোও অত্যাচারিত হতো নদী।
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া “ওহ গড, তাহলে এক কাজ করি, নাবিলাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলো ডাক্তারের কাছে যায়(যাই)।” একটা জিনিস খেয়াল করেছি আপনি ‘যাই’ লিখতে গিয়ে সবসময় ‘যায়’ লিখেন। কেন জানি মনে হচ্ছে এটা অটোসেভিং ওয়ার্ড। তাই কি?
ইঞ্জা
ঠিক বলেছেন আপু, এমনো হতে পারতো নদী সহ বাচ্চাটাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলতো পাষাণ্ডটা।
যায় – যাই
আপু এইটা আমারই ভুল, ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবো, ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া গল্পটা চলছে ভালো। (y)
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আপ্লুত হলাম। 🙂
প্রহেলিকা
এতো বড় গল্প টেনে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। তবে আশাবাদী। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ, আপনারা পাশে থাকলে গল্প কেন, রেইল গাড়ীও টেনে নিয়ে যেতে পারবো। 😀
ছাইরাছ হেলাল
জটিলতা দরকার, এত তেলের মত চললে হবে না।
ভাল করে প্যাঁচ-পুচ লাগান।
ইঞ্জা
ভাইজান এই জঠিলতা আমাদের অনেক নারীরাই ডিভোর্স পাওয়ার পর ভুগেন আর বাধ্য হয়ে স্বামীর ঘরে ফিরে নির্যাতিত হোন।
মিষ্টি জিন
একটু পেচিয়ে দিলেন মনে হচ্ছে।
সমস্যা নাই । আস্তে আস্তে প্যাচ খুলে যাবে আশা রাখি।
ইঞ্জা
পার্টনার প্যাঁচ দিলাম কই, এতো বাস্তব্যেও হয় আর পেটে বাচ্চা নিয়ে অনেক নারীকে স্বামীর কাছে ফিরতে হয় আর নির্যাতিত হতে হয়।
মোঃ মজিবর রহমান
এতো কস্টের পর হাসি আবার বিরহ আসছে মনে হয়। জীবন এতো জটিল কেনো???
ইঞ্জা
এই দেশের মেয়েদের জীবনে শান্তি কোথায় বলুন?
মোঃ মজিবর রহমান
আমি কোন দশ সম্পর্কে জানা নেয় তবে কোন দেশের মেয়েরা শস্তিতে আছে তাও জানিনা।
ভাল থাকবেন।
ইঞ্জা
ইউরোপ আমেরিকার আইন কিন্তু খুবই ফেবার করে নারীদের।
ইকরাম মাহমুদ
মনোস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ফেললেন দেখছি নদীকে।
ইঞ্জা
মনোস্তাত্ত্বিক জঠিলতা তো ডিভোর্স ও প্রেগন্যান্ট মেয়েদের জীবনে থাকবেই ভাই, কেউ বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ঘরকুনো হয় আর কেউ জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়।
মিষ্টি জিন
সবচেয়ে বড সমস্যা কি জানেন পার্টনার , প্রেজনেন্ট অবস্হায় কেউ ডিভোরস দিলে সেই ডিভোরস কার্যকর হয় না।
ইঞ্জা
এ কিন্তু বিপদজনক আইন, এই আইনের কারণে নারী কিন্তু বিপদাপন্ন হয়।
মৌনতা রিতু
এ কোন অবস্থায় নিবেন ভাইজু! নদিরই সিদ্ধান্তই নেওয়া উচিত।
ইঞ্জা
নদী সাহসী হবে এই তো চাই আপু। 🙂