প্রিয় অনুপম!
কেমন আছ তুমি? বেশ আছ, আন্দাজ করতে পারি, আমি ও তাই চাই। আমি খুব একটা ভালো নেই! এই ধরো কেবল বেঁচে আছি।
আজ আবারও তোমার দ্বারস্থ হলাম। কি করব বল? আমিত সেই খরা কবলিত অনুর্বর ভূমি যে ঘুরেফিরে বারেবারে ফিরে আসি তোমারই নদীতীরে! তুমি ও যে মরা নদী তাই হারিয়েছ অজানা কোন সমুদ্রে! কবি বলেছেন, “চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়”। আমার ও তাই মনে হয়। ভীষণ মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল ঘুমাতে পারছিলাম না। চিঠিটি তোমার হাতে পৌছাবেনা জেনেও যেই তোমায় লিখতে বসলাম সকল কষ্ট উধাও। বোঝ এবার, অস্তিত্বের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তুমি আছ, অথচ জীবনের কোথাও নেই! কেমন করে মেনে নেই, ভেঙ্গে যাওয়া প্রিয় গ্লাস, শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া অনুভবের নির্যাস! না’গো মানতে পারিনি, হয়তো পারবোনা আর কোনদিন। তুমি দূরের তারা হয়ে গেছো, ছুঁতে পারেনা ইচ্ছেরা আর।আজ হঠাৎ বহু দিন পর তোমার ছবিটি দেখে কি যে হলো বুকের ভেতর! পাড় ভাঙা তোলপাড়! সে আমি বর্ণনা করতে পারছিনা। শুধু জেনো তোমাকে আর ভুলে যাওয়া হলোনা। মন যেন কানে কানে বলে “বৃথা চেষ্টা করিসনে, যাকে এতো ভালোবাসিস তাকে কেন ভুলতে হবে? থাক্ না সে হৃদয়ের চিলেকোঠার ঘরে!
“আমি নিরুৎসাহিত হই কেননা তুমি তো দাওনা হৃদয়ের দাম। একাকী মধ্যরাতে তোমার স্মৃতিতে আমি কতোটা টালমাটাল বেসামাল সে-তো কেবল আমি জানি আর জানে রাতের আঁধার। তারও বেশি জানে অন্তর্যামী। অন্তর্মুখী আমি কেমন করে জড়িয়ে গেছি তোমার মাদকতায়! নিজের কাছেই মনে হয় পাগলামি। প্রলাপ বিলাপের অন্তরালে একবুক ভালোবাসা নিভৃতে কাঁদে! আর নিরাশার বালুচরে আশায় বুক বাঁধে। বিধাতা তোমায় ভালো রাখুক, সুখ সমৃদ্ধি ঢেলে দিক অবাধে। কি আর বলবো, যা-ই বলি, জ্বালাতনই করবো। তোমাকে দেখার সুতীব্র ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখা গেলেও ভুলে যাওয়া হলোনা।তুমি আছ হৃদয়ে! জানো, আজকাল তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে একটুখানি ছুঁয়ে থাকি প্রিয় মুখখানি। অপলক চেয়ে থেকে টু শব্দটি ছাড়া বলে ফেলি জমে থাকা সব ব্যাথা! আচ্ছা বলতে পার? কেন এমন করে দূরে চলে যেতে হলো? খুব বেশি কিছু কি চেয়েছিলাম?
এই টুকুনই তো মাত্র! না দেখেও দেখা, না ছুঁয়েও ছুঁয়ে থাকা। মনের উঠোনে শতরঞ্জি পেতে গল্পে মশগুল হওয়া। তোমার আকাশের জোছনার কিছুটা মুঠোয় পুরে নেওয়া। হীরা, জহরত মনি, মানিক্য কিছুই তো নয়!
তোমার একচিলতে স্মিত হাসির মূল্যের কোন বিনিময় পাইনি আজো। তাই তো রোজ তোমাকে লুকিয়ে দেখি, কখন ঘুমাও কখন জাগো, কখন কাজে যাও, কখন ঘুরতে যাও সবই দেখি। ইচ্ছে হলে সেই পথও বন্ধ করে দিতেই পার! মানা করেছে কে? নিজের সাথে চোখ মিলিয়ে দেখো কিন্তু ; আমার থেকে পালিয়ে তুমি খুব বেশিদূর যেতে পারোনি। তোমার স্মৃতি ছায়া হয়ে পাশে রয়ে গেছে অমলিন। বলেছিলে স্বশরীরে এসে ভালোবাসি বলবে, দূর আলাপনে এতো মূল্যবান বাক্যটি ব্যায় করে আমার প্রতিক্রিয়া দেখা থেকে বঞ্চিত হতে চাওনা।কতো পূর্ণিমা জোছনা বিলায়, শুক্লতিথির পঞ্চমীর চাঁদ আঁধারে মিলায়। কই তুমি তো আর এলেনা। আমি যে আজও অপেক্ষায়….।
আমরণ থাকবো, ভালোবাসি বলেই সেদিনও ফিরিয়ে দেবনা, শুধু একবার এসো! কথায় কথা বাড়াবোনা, কৈফিয়ত চাইবো না, তর্কের খাতিরে তর্কও করবো না। রঙধনুর মতো ছুঁয়ে দেওয়ার আগেই মিলিয়ে যেও। তবুও এসো! একবার ভালোবাসি শুনে হাজারবার মরে যেতে চাই। আজকের মতো বিদায় বন্ধু!
ইতি
তোমার প্রতীক্ষায় আমি
১৫টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ফার্স্ট!
প্রত্থম হাজিরা দেয়ার জন্য আমি একখান গিফট পাইতেই পারি, তাই না?
খাদিজাতুল কুবরা
অশেষ ধন্যবাদ পড়ার জন্য। গিফট ইনবক্সে পাঠিয়ে দিব
মনির হোসেন মমি
আবেগঘন চিঠি।সত্যিই যদি হারানো স্মৃতি বাস্তবে ধরা দিত!
তা কি হয়
যেদিন গেছে তা কি ফিরে আসে!
আসেনা শুধু মনের কোণে জমে থাকে একগুচ্ছ দীর্ঘশ্বাস।
চমৎকার চিঠি।
খাদিজাতুল কুবরা
অনেক ধন্যবাদ মমি ভাইয়া
হালিমা আক্তার
অতীত আসে না। তবু অতীতে ফিরে যাই। সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে প্রতীক্ষায় দিন কাটাই। চমৎকার চিঠি। যদি চিঠির দিন গুলো আবার ফিরে আসতো। শুভ রাত্রি।
খাদিজাতুল কুবরা
ঠিক বলেছেন আপু। চিঠির মত আবেগ আর কিছুতে নেই।
পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু
জিয়া আল-দীন
খাদিজার গেছে যে দিন — একে বারেই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকী?
হঠাৎ দেখা হোক। ফুল ফুটে ওঠুক চারপাশ। প্রতীক্ষার হোক চির অবসান।
শুভ কামনা রইলো।🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়- একেবারেই সত্যি। মনের কোন না কোন পাশে থেকেই যায়। থাকুক সমস্যা কি?
চিঠি বরাবরের মতোই। শুভকামনা অশেষ!!
খাদিজাতুল কুবরা
অনেক ভালোবাসা রইল রুকু
রেজওয়ানা কবির
বার বার পড়ছি আর ভাবছি এও সম্ভব। কি মন্তব্য করব কাল থেকে বুঝতে পারছিলাম না।মনের পাশে থেকেই যায় এটাইতো বড় সমস্যা। ভিতর ভিতর যাই পুড়ে যাই আমারও যে একলা লাগে, মাঝে মাঝে বৃষ্টি দেখে হাত বাড়ানোর ইচ্ছে জাগে। চিঠি পড়ে ভিষন খারাপ লাগা কাজ করেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেছে তাই কাল মন্তব্য করিনি। তবে চমৎকার চিঠি আপু।শুভকামনা
খাদিজাতুল কুবরা
ধন্যবাদ ছোটু। এ ধরনের লেখা তুমি ও খুব ভালো লিখ।
সাবিনা ইয়াসমিন
একবার মন দেয়া হয়ে গেলে মন নেয়া মানুষটি যত দূরে যাক, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তার প্রতি ভালোবাসা কেবলই বাড়তে থাকে। একটা সময়ে সেই মন দেয়া ভালোবাসার বার্তাগুলো দুরত্বের সব পরিধি অতিক্রম করে ঠিকঠাক পৌঁছে যায় আরাধ্য জনের হাতে..মননে।
এটা ঠিক, দূরের ভালবাসায় অপেক্ষা বেশি থাকে। থাকে কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ-প্রহরের ব্যাথাতুর প্রতীক্ষা। কিন্তু যে ভালোবাসে সে ঐ সুখের ব্যাথা হৃদয়ে নিয়ে আজীবন পার করে দিতে পারে।
যাওয়া মানেই প্রস্থান হবে কেন! ঘর থেকে দু’পা বের হলেই তাকে যাওয়া বলে না। তাকে ঘরে ফিরতে হয়। আর হৃদয়ে যার বসবাস তাকে ফিরতেই হয় কারণে/অ-কারণে।
অনেকদিন পর সুন্দর একটা চিঠি পড়লাম।
ভালো থেকে আরও লিখো।
শুভ কামনা 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
বাক্যটা বড় ভালো লাগলো “কিন্তু যে ভালোবাসে সে ঐ সুখের ব্যাথা হৃদয়ে নিয়ে আজীবন পার করে দিতে পারে”।
সাবিনা আপনার মন্তব্য সবসময়ই অসাধারণ। আপনার এমন উৎসাহের জন্যই সোনেলায় লিখতে এত ভালো লাগে।
অসংখ্য ধন্যবাদ
নার্গিস রশিদ
মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
খাদিজাতুল কুবরা
অসংখ্য ধন্যবাদ আপা