“Sir, I owe my allegiance to Bangladesh and not to Pakistan. I want to resign from my service.”
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দাফন হয়েছিলো পাকিস্তান করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে। কবরের সামনে লেখা ছিলো- ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’। প্রায় ৩৫ বছর ওখানে ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান।
ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট মতিউর রহমান শহীদ হবার আগে ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে ছিলেন। স্বাধীনতাও ছিল মতিউরের কাছ থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে।
এই ঘটনার পরে পাকিস্তানে অবস্থানরত, বিশেষ করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীতে কর্মরত বাঙালিদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। পাকিস্তানিরা বাঙালি অফিসার ও কর্মচারীদের দেখলে বিদ্রুপ এবং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতো। কেউ কেউ মুখ খিস্তি করেও গালি দিত। জাত গোলামরা প্রভুদের গালিগালাজে তেমন কিছু মনে করেনা, এমন কিছু বাঙালিও পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ছিল। যদিও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম।
এমন অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত বাঙালি অফিসার উইং কমান্ডার সাইদ আহমেদ বেগ পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধানের বাণী নিয়ে উপস্থিত হল। করাচির ড্রিগরোড বিমানঘাঁটির সকল বাঙালি অফিসার এবং কর্মচারী একত্রিত করে দারুণ এক বক্তৃতা রাখলো। তার মূল প্রতিপাদ্য ছিল , ‘ভাইসব, আমাদের বাঙালিদের উচিত পাকিস্তান নামক রষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা। মতিউর রহমানের মত বিশ্বাসঘাতকতা না করে পাকিস্তানের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই তাদের উচিত হবে বিমানবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা’ । পাকিস্তান-প্রেমিক উইং কমান্ডারের বক্তব্য শুনে বেশিরভাগ বাঙালি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মনে যথেষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেও কেউ তা প্রকাশ করতে সাহসী হলেন না। সবাই চুপ করে রইলেন।
শুধুমাত্র এক জন ছিলেন এর ব্যতিক্রম।
সাইদ আহমেদের বক্তব্য শেষ হলে, হালকা পাতলা গড়নের চুপচাপ স্বভাবের মানুষ ফ্লাইং অফিসার ওয়ালীউল্লাহ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “Sir, I owe my allegiance to Bangladesh and not to Pakistan. I want to resign from my service.” পরের দিনই তিনি চাকুরি থেকে পদত্যাগ করলেন।
ফ্লাইং অফিসার ওয়ালীউল্লার সাহস দেখে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল। বর্তমান অবস্থায় চিন্তাও করা সম্ভব না যে, একাত্তর সালে পাকিস্তানে অবস্থান করে সমবেত জনতার সামনে কোনো বাঙালি অফিসার বলতে পারে, “I owe my allegiance to Bangladesh and not to Pakistan. ”
শত্রুর ঘাঁটিতে বসে এমন অসীম সাহসী বাণী উচ্চারণকারী এ বীর কে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কতটকু সম্মান দিয়েছি বা তাঁকে আমরা কজনই জানি? বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কেবল উইং কমান্ডার পদ প্রাপ্ত হয়ে তিনি অবসর গ্রহন করেন। আর পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত, পদলেহনকারী এবং বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক বলে সম্বোধনকারী উইং কমান্ডার সাইদ আহমেদ বেগ বাংলাদেশে এসে বিমানবাহিনীতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উন্নিত হয়। তারপর বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সেক্রেটারির পদমর্যাদায় পৌছে অবসর গ্রহন করে।
আর প্রাণের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমিতে মাত্র সাড়ে তিনহাত জায়গা পেতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের লাগে ৩৬ বছর।
– আমি মতিউর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত অস্তিত্বে আমার দেশ ফিল্মের শুটিংয়ের সময় মিলি ম্যাডামের এস্কর্ট ছিলাম বিমান ঘাটি মতিউর রহমানে। যখন মতিউর রহমানের মরদেহ এনে ফেলে রাখা হয়েছিল একটি পরিত্যক্ত ঘরে – এই দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় ম্যাডামের কান্না ….
আসলে আমাদের সামরিক বাহিনীর কাধ থেকে পুর্বকার ভুত নামেনি এখনো। ব্রিটিশ আইনে চলে, কিন্তু সেটা রয়্যাল এয়ারফোর্স এক্ট না কলোনী গুলোর জন্য প্রনীত আইনগুলো এবং পাকিস্তান আমলের আইনও। বাংলাদেশ আমলে আইনকানুন তেমন ভাবে পরিবর্তন হয় নাই কেবলমাত্র কিছু পরিমার্জন ছারা।
– প্রথম অংশের কার্টেসি Lucky Aakhand
৩৮টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
পজিটিভ কি একজাম্পল দিয়েছি আমরা? আমার তো কিছু মনে পড়েনা। বরং সাইদ আহমেদ বেগের মতো অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। সত্য গুলো দেরি করে হলেও একদিন বের হয়ে আসবে। স্যালুট এই সাহসী বীর কে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সাইদ ভাই। একটু কম দেখছি আপনাকে।
সাইদ মিলটন
আমাদের পজিটিভ কোন এক্সাম্পল আসলেই নাই। বঙ্গবন্ধু এক অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন ।
নেটের ঝামেলায় ছিলাম 🙁
শুন্য শুন্যালয়
কথা সত্যি। রাজাকার কিভাবে এদেশ থেকে একটা ভোটও পায়, আমার জানার ইচ্ছা।
সাইদ মিলটন
ভুললে চলবে না, ৭০ এর নির্বাচনে ও কিন্ত আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলায় শতভাগ ভোট পায় নাই। মুস্লিম লীগের প্রেত্মাতারা এখনো আছে
মিথুন
প্রকৃত হিরোদের গান একদিন গাইবোই আমরা ———–
সাইদ মিলটন
সেটাই আশা 🙂
ছাইরাছ হেলাল
এ রকম বা এর থেকেও আরো অনেক কঠিন কাহিনী আমাদের আছে।
অ-নে-ক দিন পর!
সাইদ মিলটন
হ্যাঁ তা আছে বলেই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা পেয়েছি, এবং রাজাকারকে মন্ত্রীও বানিয়েছি 🙂
সঞ্জয় কুমার
তেমনি পাকিস্তানের দালাল আর পাকি কুত্তা দের পাবলিক টয়লেট এর পাশে কবর দিয়ে উপরে লেখা উচিত । এখানে শুয়ে আছে এক নরপশু সবাই এখানে থু থু ফেলুন ।
সাইদ মিলটন
(y) (y) সহমত
মরুভূমির জলদস্যু
শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে পেয়েছি নিজেদের মাটিতে অনেক অনেক বছর পরে।
সাইদ মিলটন
হ্যাঁ আমরা পেরেছি তিন যুগ পরে 🙂
বোকা মানুষ
এইগুলা পড়লে রক্ত টগবগায়! ওয়ালীউল্লাহ্-র মত বীরেরা এদেশে যোগ্য মর্যাদা হয়না, বেগদের হয়! রাজাকারের গাড়িতে ওড়ে জাতীয় পতাকা, আর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ী বানিয়ে দেয়ার জন্য কতগুলো বাচ্চা ছেলেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে হাত পাততে হয়! ধিক গোল্ডফিশ মেমোরীর বাঙ্গালী, ধিক তাদের বাংলাদেশ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের! থুঃ!
সাইদ মিলটন
🙁
স্বপ্ন
বীর ওয়ালীউল্লাহর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা।
আর ঘৃনা জানাই পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত, পদলেহনকারী এবং বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক বলে সম্বোধনকারী উইং কমান্ডার সাইদ আহমেদ বেগকে। দালাল সে।
সাইদ মিলটন
দালালেরাই বারবার জিতে যায় আমাদের গোল্ডফিশ মেমোরীর সুযোগ নিয়ে 🙁
বনলতা সেন
অনেক কিছুই আমাদের জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
রুমীদের যে ধরিয়ে দিয়েছে সে এখন বীরপ্রতীক ! আরো কত কী শুনব কে জানে।
সাইদ মিলটন
খেতাব প্রাপ্ত যোদ্ধাদে্র জন্য এইটার চে বড় পরিহাস আর নাই – পৃথিবীর কোথাও বেঈমান কে পুরস্কৃত করে না একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া 🙂
ব্লগার সজীব
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।পাকিস্থান থেকে ফেরত আসা আর্মি অফিসারদের সেনা বাহিনীতে নেয়াই উচিৎ হয়নি। এরা অধিকাংশ পাকি চিন্তা চেতনায় আচ্ছন্ন।
সাইদ মিলটন
এবং এরা এই বিষ কি গভীর পর্যন্ত ছরায়া গেছে ইউ কান্ট ইমাজিন 🙁
মেহেরী তাজ
“Sir, I owe my allegiance to Bangladesh and not to Pakistan. I want to resign from my service.”
এমন কথা যিনি বলেন,সেই বীরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই।আর বেঈমান অফিসারের প্রতি ঘৃনা।
সাইদ মিলটন
কিন্ত আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বীরদের মুল্যায়ন না করে বেঈমানদের মাথায় তুইলা নাচি 🙁
সঞ্জয় কুমার
কম দুঃখে বলিনা বাঙালী মিরজাফরের জাত । । আমি লজ্জিত আমি বাঙালী । যত ইতিহাস পড়ি ততই তাদের প্রতি সম্মানে মাথা হেট হয়ে আসে ।
সাইদ মিলটন
বাঙ্গালী হিসেবে আমি লজ্জিত নই গর্বিত বরং, আমি লজ্জিত বাঙ্গালীদের গোল্ডফিশ মেমোরির জন্য 🙁
লীলাবতী
আমাদের দেশেও উচিৎ রাজাকারদের কবরে লিখে রাখা ‘ এখানে এক গাদ্দার ঘুমিয়ে আছে, তার কবরে জুতা নিক্ষেপ ফরজ।’
বীর ওয়ালীউল্লার প্রতি শ্রদ্ধা। পোষ্ট ষ্টিকি করার জন্য ধন্যবাদ জানাই সোনেলাকে।
সাইদ মিলটন
আমার মতে সবচেয়ে ভালো হয় এইখানে শুয়ে আছে একজন পাকিস্থানি এইকথা লিখে রাখা উচিত 🙂
শুন্য শুন্যালয়
পোস্টটিকে স্টিকি করবার জন্য সোনেলা ব্লগ টিম কে অনেক ধন্যবাদ।
সাইদ মিলটন
ধন্যবাদ 🙂
নুসরাত মৌরিন
এমনই সব আনসাং হিরোদের গল্পেই গাঁথা আমাদের গৌরবের ইতিহাস।যদিও আমরা তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারি নাই।
এমন একজন আনসাং হিরো “ফ্লাইং অফিসার-ওয়ালীউল্লাহকে” আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
সাইদ মিলটন
আপনার আমার প্রার্থনায় থাকুক এইসব বীরেরা 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এমন সব অল্প আয়ের লোকদের মাঝেই লুকিয়ে থাকে দেশপ্রেম।আরো লিখুন অজানা যা আমাদের।
সাইদ মিলটন
ধন্যবাদ মনির ভাই এইটা একটা অংশ পুরোটা একবারে দিব 🙂
বনলতা সেন
স্টিকি হওয়ায় সোনেলাকে ধন্যবাদ।
সাইদ মিলটন
আপনাকেও ধন্যবাদ বনলতা
জিসান শা ইকরাম
আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরে ৩৫ বছর কি লিখে রেখেছিলো পাকিরা।
মাথায় আগুন ধরে যায় এসব শুনলে।
সব সভ্যতা,ভব্যতা বিষর্জন দিয়ে রাজাকারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গালাগালি দিতে ইচ্ছে হয়।
স্যাল্যুট রিয়েল হিরো ওয়ালীউল্লাহ এর প্রতি ।
আর গাদ্দার সাইদ আহমেদের মুখে একদলা থুথু।
সাইদ মিলটন
প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিয়ে যাবো রাজাকার আর পাকিস্থানের প্রতি ঘৃণা
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
প্রহেলিকা
যোগ্য বীরের সম্মান এই জাতির কাছে মূল্যায়ন না থাকলেও ইতিহাস কথা বলবে তাদের যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই সাহসী বীরের প্রতি।
সাইদ মিলটন
হ্যাঁ ইতিহাস একদিন এদের কথা বলবেই 🙂