৮ আগস্ট
কয় দিন ধরে দেয়াল গুলি খুব বেয়াড়া আচরন করছে। আজ খুব বাড় বেড়েছে। কাপে চা ঢাল ছিলাম হটাত কানের কাছে আমার নাম ধরে এমন চিৎকার দিয়ে উঠলো … এখন আমি আমার নাম মনে করতে পারছি না, যতবার মনে করার চেষ্টা করছি ততোবার তারা অট্টহাসি দিয়ে উঠছে …
৯ আগস্ট
কবিতা পড়ছিলাম কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে বই রেখে উঠতে বাধ্য হলাম। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন খাবার পেলাম না। শেষে একটা ডিম চুলায় সিদ্ধ হতে দিয়ে আসলাম। কিছু ক্ষন পরে গিয়ে দেখি পাতিল খালি! ডিম নেই! ফিরে এসে দেখি কবিতার যে বইটা পড়ছিলাম , সেটাও কোথাও নেই! আমি নিশ্চিত দেয়াল গুলি এই কান্ড করছে।
১০ আগস্ট
একটু আগে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অদ্ভুত খস খস শব্দে । দেখি দেয়ালরা আমার প্রিয় বইগুলি খাচ্ছে … দৌড়ে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করলাম, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। ওরা একে একে সব গুলি বই খেয়ে ফেললো …
১১ আগস্ট
আজ প্রিয় মানুষগুলির কথা খুব মনে পড়ছে, তাদের মুখ আবছা আবছা মনে আসছে… দেয়ালরা মনে করতে দিচ্ছে না। তারা অনবরত ফিস ফিস করে কথা বলছে , থেকে থেকে অট্টহাসিও হাসছে … খুব বিরক্ত লাগছে। এখন আমি প্রিয়দের কাছে যাবো।
আমি যেতে পারছি না … ওরা আমাকে যেতে দিচ্ছে না। বাইরে যাবার দরজাটা কোথাও খুঁজে পেলাম না, ওরা দরজাটাও খেয়ে ফেলেছে … সব খেয়ে ফেলছে …
১২ আগস্ট
ওদের ফিসফিসানি আর থামছে না … ওরা আমার দিকে কিভাবে যেন তাকাচ্ছে! ওদের চোখের দৃস্টিকে খুব ভয় লাগছে … ওরা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে , কি বীভৎস! কি নিষ্ঠুর ! তাদের চেহারা… ওরা আসছে … আমার চারপাশ থেকে তারা এগিয়ে আসছে …আমাকে এক্ষুনি কিছু করতে হবে… কিছুতেই আমি তাদের কাছে হেরে যাবো না …
ইন্সপেক্টর ডাইরীর শেষ পাতাটা বন্ধ করলেন। পুরো ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে ফাঁকা বুক সেলফটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন । যেখানে যেখানে বই ছিলো সেই জায়গাগুলিতে ধুলি জমে নেই, তার মানে কিছু দিন আগেও বই ছিলো । ঘরের অন্য কিছু জায়গায়ও ধুলির কম ঘনত্ব দেখেও বোঝা যায় , সে জায়গা গুলিতেও কিছু আসবাব ছিলো … ডাইরীটা সহকারীর হাতে দিয়ে, মেঝেতে অদ্ভুত ভঙ্গীতে পড়ে থাকা লাশটার দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝে নেয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন ।
২৭টি মন্তব্য
আমীন পরবাসী
pore mone holo ekta govir vabna lukiye ache. ami besi vabte parina doya kore ektu khule dibenki rohossher jotta?
আফ্রি আয়েশা
আসলে গল্প কবিতার রহস্য বলে দিতে হয় না । এটা পাঠকের উপর ছাড়তে হয় , পাঠক যে ভাবে ইচ্ছে কল্পনা করে নিবেন ।
১। মানসিক অসুস্থতা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে …
২। অথবা আসলেই দেয়াল গুলি খুনি ।
গল্পটাকে বাস্তব অর্থে নিলে, একজন নিঃসঙ্গ মানুষের মানসিক অসুস্থতাকে ধরে নেয়া যায় ।
গল্পটাকে রুপক অর্থে নিলে, দেয়াল গুলি হচ্ছে একজন মানুষের বিভিন্ন যন্ত্রনার প্রতিক । যা মানুষের জীবনী শক্তিকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
আমীন পরবাসী
ধন্যবাদ আপনাকে অনেক। আসলে আমি না এমনি কেউ ভালোভাবে বুঝিয়ে না দিলে মাথায় ঢুকে না কিছু। আমাকে দিয়ে কিছুই হবে আসলেই একটা অপদার্থ আমি। এত মুগ্ধকর একটি লিখা বুঝতেই পারলাম না আপনাকে পরে আবার কষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হলো। আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। -{@
আফ্রি আয়েশা
এভাবে বলছেন কেনো ! 🙂 লেখাটা ইচ্ছে করেই জটিল করেছি । এটা আপনার সমস্যা না 🙂 । আমার লেখার সমস্যা ।
নিজেকে কখনো ছোট করে ভাববেন না প্লিজ । আপনাকে দিয়েই এমন অনেক কিছু হবে , যা হয়ত অন্যদের দিয়ে হবে না 🙂
আপনার চমৎকার একটা গুন দেখুন, আপনি কত সহজে স্বীকার করে নিয়ে বুঝে নিলেন । আপনার সরলতায় মুগ্ধ হলাম 🙂
শুভকামনা জানবেন ।
জিসান শা ইকরাম
দিনলিপি পড়লাম ।
এমন যেন ছন্দ পতন না হয় কারো জীবনে ।
আত্মহত্যা ভালো না
জীবন থেকে পালানোর কোন অর্থ হয়না ।
আফ্রি আয়েশা
জীবন যদি ঠেলে দেয় , দায় কার দাদা ?
আপনার প্রত্যাশা পুরন হোক – এমন যেন ছন্দ পতন না হয় কারো জীবনে ।
প্রজন্ম ৭১
বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছিল । অদ্ভুত লেখা । ভালো লেগেছে খুব । -{@
আফ্রি আয়েশা
বুঝতে সমস্যা হবার কারনে দুঃখ প্রকাশ করছি । গল্পের কারনেই দিন লিপিটাকে খানিকটা অগোছালো / খাপ ছাড়া ভাবে লিখতে হয়েছে 🙂
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ 🙂
শুভকামনা জানবেন ।
সীমান্ত উন্মাদ
তোমার ঘরে ভূত আছে, নাইলে ডিম কে নিবে। :p
ও ভালো কথা, লেখিকা আপনার দিনলিপির চরিত্রের এই সব আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়া ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে বলেন।।
আফ্রি আয়েশা
ভুত নেই নিশ্চিত । দেয়াল গুলি খেয়েছে , ওই গুলা খুব খাদক 😛
চরিত্রটি বলছে , সে চেষ্টা করছে , করবে …
আর সে এটাও বলেছে, আপনার জন্যে তার ইচ্ছেরা শুভ 🙂
খসড়া
বাপরে।
আফ্রি আয়েশা
🙂
বাপরে বলার জন্যে ধন্যবাদ ।
লীলাবতী
নিঃসঙ্গতা কেটে যাক । কেমন একটা ভয়ের অনুভূতি এসে গ্রাস করলো লেখাটি পড়ে । নিয়মিত লিখুন আপু এখানে ।
আফ্রি আয়েশা
হায় হায় ! ভয় দেখাতে তো চাইনি 🙂
হুম আপু , সকলের নিঃসঙ্গতা কেটে যাক 🙂
লিখবো আপু
শুন্য শুন্যালয়
সামান্য একটা ইট সিমেন্টের দেয়াল ভাঙতে পারলো না মেয়েটি?
হেরে যাবার গল্প শুনতে চাইনা 🙁
এমন পরিনতিও চাইনা…
আফ্রি আয়েশা
এটাই শুধুই গল্প , জীবনের গল্প । সব জীবন সফলতার হয় না , হেরে যাওয়ারও হয় 🙁
অবশ্যই কারো জীবনের এমন পরিণতি চাই না 🙂
নীহারিকা
ভয়ংকর। কত সহজে শেষ হতে পারে একটি জীবন।
আফ্রি আয়েশা
জীবন শেষ হয়ে যাওয়া খুব সহজ … জীবনের কঠিন পথ ধরেই সহজ 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আফ্রি আপনি বেশ ভালো লেখেন । নিয়মিত লেখা চালিয়ে যাবেন । লেখায় আপনি ভালো করবেন ।
আফ্রি আয়েশা
নীলদি, লিখবো
ধন্যবাদ । শুভকামনা জানবেন 🙂
রাসেল হাসান
অদ্ভুত, চমৎকার লেখা! ভালো লাগলো।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂
শুভকামনা জানবেন
হতভাগ্য কবি
আমারো একটা ব্যক্তিগত দেয়াল আছে তাতে পিঠ ঠেকিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করি। আপনার লেখায় আমার জীবন বর্ণনা পড়ে ফেলেছি বলে মনে হলো, ধন্যবাদ আপনাকে।
আফ্রি আয়েশা
কিছু কিছু মানুষের জীবন এমনই 🙂
আপনার জন্যে শুভকামনা রইলো দেয়াল ভেঙ্গে পড়ুক কোন প্রিয় মানুষের স্পর্শে, পরিণতি আনন্দের হোক ।
হতভাগ্য কবি
কৃতজ্ঞতা 🙂
আফ্রি আয়েশা
কিছু কিছু মানুষের জীবন এমনই 🙂
আপনার জন্যে শুভকামনা রইলো দেয়াল ভেঙ্গে পড়ুক কোন প্রিয় মানুষের স্পর্শে, পরিণতি আনন্দের হোক ।
পাগলা ঘন্টা
দেয়ালগুলোকে জীবনের জটিলতা হিসেবে ধরে নেওয়া যায়