প্রিয় দুপুর,
সমস্ত কিছু শেষ করে দিয়ে এসে এইমাত্র এসে বসলাম। খুব এলোমেলো ছিলাম, মাথায় কাজ করছিলো না, কি করা উচিৎ এখন আমার! দেখলাম ভেবেচিন্তে কোনো লাভ হচ্ছে না। তাই আর ভাবনাকে বেশী ঘাঁটাতে গেলাম না। এই যে লিখছি ফুরফুরে সন্ধ্যায়, খুব ভালো লাগছে। আমার চারদিকে সবুজ অন্ধকার, জোনাকির আলো, আর আকাশে বিশাল বড়ো চাঁদ। এর মধ্যে লিখছি তোমায় মোমের আলোয়। তুমি তো জানো এমন আবহ আমাকে পাগল করে দেয়! নিজেকে একেবারেই তখন আর একা লাগেনা। সমস্ত পৃথিবী যখন ভার্চুয়াল জগতের উপর নির্ভর করে মন আর মস্তিষ্ককে মরুভূমির মতো শূন্য করে ফেলছে, আমি এ সময়ের আধুনিক জীবনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখানে চলে এসেছি। এখন ভাবছো তাহলে কি শেষ করে এলাম? সমস্ত দুঃসহ ভাবনাকে খুন করে দিয়ে এসেছি। ভাবা যায়?
তুমি এখন গভীর ঘুমে। নয়তো অনেক ভালোবাসার স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত, এমন কিছু একটা হবে হয়তো। এছাড়া তোমার তো আর কিছুই করার নেই। বৃত্তবন্দী জীবন তোমার। আর এই দেখো আমি খোলা আকাশের নিচে বসে আছি। এমন একটা সুন্দর সময়ে কেন তোমাকে লিখছি জানো? আসলে তুমি আমাকে অনেক সুন্দর সময় দিয়েছিলে। যে সময়গুলো এ জীবনে আমাকে কখনও কেউ দেয়নি। তুমি আমার নও, এ কথা জানতাম আমি। জেনেও কেন তোমার হাতে হাত রেখেছিলাম, অনেকেই বলবে এ আমার বোকামি, নয়তো চরিত্র খারাপ। আমার তাতে কিছু যায় আসেনা। জীবনে আনন্দ কুড়াতে হলে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়। আর আমি বহুকাল কোনো সুন্দর স্মৃতির মুখোমুখি বসিনি। আজ সেসবকে সামনে নিয়ে বসেছি। আমার টেবিলে বেশ কয়েকটি বই, একটা ডায়েরী, চিঠি লেখার প্যাড, দুটো কলম, সুগন্ধী মোমবাতি, সিগারেট আর ভদকা। “শেষের কবিতা” পড়ছিলাম আরেকবার। শুনেছি এই বইটি যতোবার পড়া যায়, ততোবারই নাকি নতুন লাগে। কিশোরী বয়স থেকে এই মধ্যবয়সে যতোবারই পড়েছি, এই প্রথম আমি কেটি মিত্তিরকে ভালোবেসে ফেললাম। আর যে দুজন পুরুষ চরিত্র একেবারেই আর সহ্য করতে পারিনি। একসময় লাবণ্য হতে চাইতাম। কেতকীকে ঘড়ায় তোলা জল হিসেবে উপমায়িত করার পরেও খেয়াল করে দেখেছি ওর কষ্ট সবচেয়ে বেশী। আর লাবণ্যকে বিশাল দিঘী করে ঘরের বাইরে রেখে দিলো অমিত রায়, কতো জঘণ্য একজন! তার মানে ঘরেরটাকেও খাবে আবার বাইরে গেলে তৃষ্ণা পেলে দিঘীর জল পান আর গরম লাগলে স্নানও করবে।
প্রসঙ্গ পাল্টে নেই এবার। আসলে তোমাকে লেখার ইচ্ছে ছিলোনা। আচ্ছা আজ পর্যন্ত জানা হয়নি তোমার নাম দুপুর কেন? জন্মেছিলে তো সকাল বেলায়। অবশ্য আমিও তো এমনই অবস্থায় আছি। আমার এই নাম ঝিনুক, অথচ আমি তো ঝিনুক নই! বাবা-মায়েরা পারেও বটে, যা মন চায় নাম রেখে দেয়! আমার মতে একটা শিশু যখন জন্ম নেয় তখন বড়ো হবার পরে তাকে তার নাম রাখতে দেয়া উচিৎ। আমাকে সেই সুযোগ দেয়া হলে নিজের নাম রাখতাম জল। আমাদের শরীরে জল আছে। কী দারুণ হতোনা যদি আমার নাম জল হতো? তুমি বলতে, “এই আমায় একটু জল দাও।” আমি ঠোঁট ভিঁজিয়ে তোমায় জল দিতাম! তুমি বলতে, “এখন স্নানে যাচ্ছি।” পরিশ্রান্ত আমি শরীরের ঘামে তোমাকে নাইয়ে দিতাম। অশ্লীল কথা বলছি, তাই না? আমাকে তো ওসব কথায় মানায় না। কিন্তু এটা তো চিঠি, মনে যা আসে সেসবই লেখা যায়। আজ ঠিক করেছি নিজেকে একেবারে উজাড় করে দিয়ে সবরকমের কথা বলবো। মাঝে-মধ্যে নির্লজ্জ্ব হতে বাধা কোথায়, বলোতো? আমার লজ্জ্বা তো তুমি। তোমার সামনে দাঁড়ালে পৃথিবীর তাবৎ লজ্জ্বা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার দিকে চাও যখন তুমি, ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে তোমার বুকে মুখ লুকোই। পারিনা, তাই কি আমায় তুমি টেনে নাও? আর চোখে যখন চুমু দাও, জানো কতো কতোভাবে যে নিজের চোখের দিকে চেয়ে দেখি! আমার চোখ আহামরি কিছু নয়। কখনও কেউ বলেনি টানা টানা চোখ, কিংবা আয়তনেত্র, অথচ তোমার কাছেই কেবল এ চোখ অমূল্য। তুমি আমাকে এসব সুন্দর স্মৃতি দিয়েছো দুপুর। পুরুষ নাকি কেবল নারী শরীর খোঁজে! আমি উপমাহীন আদর পেয়েছি। যার জন্য আজও তোমাকে ভালোবেসে যাচ্ছি।
চিঠিটা কালই ডাকে পাঠাবো। যদিও এই অরণ্যে কোনো ডাকবাক্স নেই। যেতে হবে শহরে, চিঠিটা পাঠিয়েই ফিরে আসবো। হুম এখানে অনেকদিন থাকবো। নাহ তোমাকে এই ঠিকানা জানাবো না আমি। আমি চাইনা তোমার স্পর্শগুলো শারীরিক চাহিদা মেটাক আমার। কারণ আমি খুব বন্য, তুমি জানোনা। এই পরিবেশে পারবোনা তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। অনেক সুযোগ পেয়েও আমার মহাসাগরে তুমি ডুব দাওনি, তাই জানি এখানে এলেও এমন রোমান্টিক বলয়ে আমার জলে সাঁতার কাটবেনা। বরং এভাবেই কিছুদিন থাকি তোমার স্পর্শকে জড়িয়ে। ওহ শোনো, আমি না আবার ডায়েরী লেখা শুরু করেছি। দুপুর ফিরে এসে তোমার সামনে বসে সেই ডায়েরী পড়ে শোনাবো। মোটেও হাসতে পারবেনা। তোমার ভিলেন কন্ঠের সুন্দর মিষ্টি হাসিটা আমাকে খুব এলোমেলো করে দেয়, বুঝেছো?
অনেক ভালো থেকো।
আমি ঝিনুক
নূতন নাম “জল”
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৮ আগষ্ট, ২০১৭ ইং।
২২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
না পড়েই জানতে চাচ্ছি আপনি কেমন আছেন? কি রকম আছেন আপনাকে না পেয়ে বড় একা একা লাগে আপুনি। অনেকের অনুস্পস্থিতি কষ্ট দেয় জ্বালা দেয়। কেমন আছেন জানতে চাই। আপনাকে নিয়ে পোষ্ট লিখতে গিয়েও লিখতে পারিনি। আপনারা সবাই কেমন আছেন? জানাবেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই ভালো আছি। দেশে গিয়েছিলাম। আর তাই ব্লগে আসতে পারিনি।
ইস কেন এলাম আজ? তাহলে তো আমার জন্য আপনার লেখা একটা পোষ্ট পেতাম! 🙁
কেমন আছেন আপনি?
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল আছি আপু। দেশে আসলেন বেড়ালেন ভাল লাছে জেনে। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
বেড়িয়ে চলেও এলাম। 🙁 মনটা তাই ভালো নেই। এখনও এলোমেলো হয়ে আছি মজিবর ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এখন ভাবছো তাহলে কি শেষ করে এলাম? সমস্ত দুঃসহ ভাবনাকে খুন করে দিয়ে এসেছি। ভাবা যায়?
আমরা ভাবি আসতেই হবে ফিরে ফিরে রাগ অভিমানকে দুরে ঠেলে সোনেলা রৌদ্দুর উঠোনে…এ যে আমাদের প্রিয় লেখাভুমি।দুপুরের কাছে এত সুন্দর চিঠি ভাবা যায় এ নীলাকে দিয়েই সম্ভব।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই সোনেলার উঠোন ছেড়ে যাইনি। আসলে দেশে গিয়েছিলাম হঠাৎ করেই। তাই আসতে পারিনি ব্লগে।
কেমন আছেন আপনি?
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম ধন্যবাদ নীলাপু আপনাদের মত কিছু বোনদের ছাড়া ব্লগ জমেই না। (3
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই কী যে বলেন আপনি!
এই তো এসেই গেলাম। 🙂
ইঞ্জা
সুন্দর লেখাটি নিয়ে অনেকদিন পর এসেই জমিয়ে দিলেন আপু, আপনাকে সুস্বাগতম, খুব খুশি হয়েছি, আশা করি আপনি বাকি আপুদেরও ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন ইনশা আল্লাহ্।
ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া ইস এভাবে স্বাগতম জানাচ্ছেন, সত্যি মনটা প্রজাপতির মতো নেচে উঠলো। \|/ 🙂
ইঞ্জা
আপু, বিশ্বাস করবেন না, আপনার অনুপস্থিতি আমাদের পিরীত করছিলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া পীড়িত হবার কোনো কারণই নেই। এইতো চলে এলাম। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
অনেকদিন পর আসলেন জমালেন সেনেলা পরিবারকে সুন্দর একটি লেখনী দিয়ে।
ডায়েরীর শোনার অপেক্ষায় রইলাম দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঝিনুকের ডায়েরী দেখি আমাকে যদি পড়তে দেয়, অবশ্যই শোনাবো। তবে ডায়েরী বড়ো গোপন অনুভূতি। ও যদি অনুমতি দেয়, তবেই না লিখবো!
অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল ভালই দিলে ভাল নয়লে গোপনে চুরি বিদ্যা কাজে লাগানো যায় না? ভাল থাকুন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
“চুরি বিদ্যা ভালো বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা।” 🙂
আচ্ছা দেখি কী করা যায়!
শুন্য শুন্যালয়
আহা কেউ বুঝি বলেনি, টানা টানা চোখ কিংবা আয়তনেত্র? এই যে বললাম, “ও চোখে আমার শুরু আর শেষ, আমারই জীবন আর আমারই মরণ”। দেখো, আবার গলে যেওনা যেন, এটা গান, মানে গান।
বন্যতা কিন্তু ভালই প্রকাশ পেয়েছে। এক্কেবারে দুপুরের গরমে গলে যাওয়া মোম। :p দুপুর দুপুর কী শুরু করলে বলোতো!!
অনেকদিন পরে তোমার লেখা। ঝিনুক এবার জল? তোমার নানা তেড়ে এলো বলে! 🙂
অনেক সুন্দর লেখা নীলাপু। কেউ আমাকে কেন কোন চিঠি লেখেনা? 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
ঝিনুকের চোখ কি টানা টানা থাকে? আর “জল” নাম নেয়ার অধিকার ছিলো বলেই নিয়েছি। তুমি তো জানো। 🙂
গলে যাবো কেন? আমার চোখ তো ঝিনুকের মতো না। আমার চোখের ভেতরের মায়া দেখে জানো কতো কতোজন প্রেমে পড়েছিলো? :p
বন্যতা লিখতে গিয়ে অবশ্য অনেক কষ্ট হয়েছে। কীভাবে আলো-ছায়া মায়ার দৃশ্য তুলে ধরবো।
ঠিকানাটা দিয়ে দাও। আর কিছু না পাও, চিঠি কনফার্ম! 🙂
শুন্য শুন্যালয়
কতোজন তোমার প্রেমে পড়েছিল কইতে পারিনা, তবে যে হাজারখানেকের প্রেমে পড়ে আছো তা দিব্যি দেখতে পাচ্ছি। এতো এতো নামতো কুবিরাজকেও হারিয়ে দিয়েছ। ঝিনুক? আচ্ছা হও ঝিনুক, জল যা খুশি শুধু পা ডোবালে তেড়ে এসোনা। জল কখনো নিজের হয়না।
ঠিকানা দেব, যেদিন জলজ্যান্ত চিঠি হয়ে আসতে পারবে সেদিন। ভালো থাইক্কো লেডিগুরু।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আর যাই করি ওইসব পেরেম-টেরেমে আমি নাই। তয় আমার বুড়া আর আনন্দ কবির লগে যৌথভাবে পেরেম চালাইয়া যাইতাছি। :p
জানি তো জল কখনও নিজের হয়না, শুধু বিলিয়েই যায়। তবুও ঝিনুক হতে চাইনা, ওটা আরোও অনেক কষ্টের। আমি নীলাঞ্জনা হয়েই থাকতে চাই গো শুন্য আপু। নচিকেতা আর শেখ ইশতিয়াকের নীলাঞ্জনা গান শুনে হাসতে চাই প্রাণভরে। নিজেই কিন্তু নিজেকে শোনাই। বুঝলে? 🙂
বুঝেছি ঠিকানা দেবেনা, বললেই হয়! 🙁 ভালো থাকবোনা, যাও! 🙁
জিসান শা ইকরাম
চিঠি লেখায় তুমি যে সেরা তা একবাক্যে অনেক আগেই স্বীকার করে নিয়েছি,
এমনি এমনি এমন করে বাস্তবের মত চিঠি লেখা সহজ কাজ নয়, অনেক অনেক কঠিনই।
অনেক দিন পরে তোমার লেখা পড়লাম,
তোমার লেখা এতটাই চিনি আমি যে, এই লেখায় লেখকের নাম পালটে দিলেও আমি বলতে পারতাম এটি তোমার লেখা।
আমার জল তুমি নিয়ে গেলে? কোন কিছুই আমার আর থাকে না, নিয়ে যায় অন্যে।
যাক নিলে নাও তুমি, আমার জল অবশ্য পুরুষ 🙂
শুভকামনা -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাকে চেনাটা খুব সহজ। মনের ভেতরে যা থাকে, সেটা মুখেও থাকে। আর এই মন থেকে এই লেখাটাও তোমার চেনার কথা!
তোমার জল নিয়ে যাইনি। ঝিনুক সমুদ্রে থাকে। সমুদ্রের জলের ভেতর।
চিঠি লেখায় সেরা হলে তো আমার অটোগ্রাফ নিতে অবশ্যই আমার সামনে আসতে।
যাক অসংখ্য ধন্যবাদ!
অনেক ভালো থেকো।