অনেক বছর আগে এপ্রিলের এই দিনে আমার চিরচেনা ঘর, জন্ম শহর সব ছেড়ে স্বামী’র ঘরে যাই অন্য সব নারীদের মতো। ভোরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি, অচেনা ঘর, অচেনা মানুষজন। জন্মাবধি যারা আমার মনের ভাষা, চোখের ভাষা বুঝে নিতো, তাদের খুঁজে বেড়ায় আমার অবুঝ দু’টি চোখ নতুন ঘরের আনাচে-কানাচে। ভেতরটা গুমরে উঠে। আমার খেলার সাথী, স্কুলের সামনের কানু দা’র আচার, আমার সাঁতার শেখা লেক, ছাদে টবে যত্নে লাগানো ফুলের গাছ, বারান্দায় খাঁচায় অল্প অল্প কথা শেখা টিয়া, চেনা মানুষজন সব এক দস্তখতে দূরের হয়ে গেলো ! এই নিয়ম বড় বেশি নির্মম, নির্দয় মনে হলো …
যে মা আমার রাত জেগে পড়ার সময়টাতে নির্ঘুম পাশে বসে ঝিমিয়েছে দিনের পর দিন,
অসুখের সময়টাতে বিরামহীন সেবা’র পাশাপাশি রাতভর প্রার্থনায় দু’চোখের জল ঝরিয়েছে,
যে বাবা ঘুম থেকে জাগিয়েছে, কোলে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ” রি-মি… মা… মা… উঠ্”___ বলে,
যে বাবা অভিমানে না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকা আমায় সকলের অগোচরে মাঝরাতে ডেকে তুলে খাইয়েছে…
সব… স-ব ছেড়ে থাকা হুহু করা সময়টাতে কেবলই মনে হতো __
” আমি কি রকমভাবে বেঁচে আছি
তুই এসে দেখে যা, নিখিলেশ ! ”
## একজন নারীর এই ত্যাগ কিসের সাথে তুলনা দেয়া যায়, আমার জানা নেই।
ঘরে থাকা আপনার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা’কে ভালোবাসুন… সন্মান করুন।
১৮টি মন্তব্য
শিপু
অনেক ভাল লাগল।
রিমি রুম্মান
জেনে খুশি হলাম। ভাল থাকুন সবসময়।
নুসরাত মৌরিন
একটা মেয়েকে তার সব ছেড়ে ছুড়ে নতুন করে শুরু করতে হয়।ভাবতেই আঁতকে উঠি কি করে সম্ভব?
এতদিনের চিরচেনা সব ছেড়ে,শিকড় ছিঁড়ে হয়ত শুধু মেয়েরাই পারে এমন করে সব আপন করে নিতে।
ভাল লাগলো লেখাটি।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। শুভকামনা রইল।
লীলাবতী
আপু এসব ভাবলে আর বাবা মা ভাইকে রেখে অন্য কোথাও যেতে ভয় লাগে।কিভাবে থাকবো আমি?সম্পুর্ন নতুন একটি পরিবেশে 🙁
রিমি রুম্মান
নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষজনের সাথে মানিয়ে চলা যায় চেষ্টা করলেই। কিন্তু যাদের ছেড়ে যেতে হয়, তাদের জন্য ভেতরটা রক্তাক্ত হয় সকলের অগোচরে।
জিসান শা ইকরাম
এভাবেই চলে আসছে যুগের পর যুগ
মেয়েদের এই মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা অসীম
এটি পুরুষ পারবেনা।
কত অপরিচিত বৈরী পরিবেশে মেয়েরা ঠিকই বেঁচে থাকে
তাঁদের মনের খবর,অসহায়ত্ব আমরা তেমন ভাবি না।
এই ত্যাগের সাথে কিছুকেই তুলনায় আনা যায় না।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। ছেড়ে যেতে হয় বাবা-মা, ভাই-বোন, চিরচেনা সব স-ব। এটিই সবচেয়ে নির্মম নির্দয় মনে হয় নারী’র প্রতি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কই যাও রে ভাটির নাও বাইয়া
আমার ভাইয়েরে কইও নাইওর নিতো আইয়া–এককালে মেয়েদের জীবনটা এমনও ছিলো, ভাবতেই কষ্ট লাগে।
পরিবার-পরিজন ছেড়ে ভিন্ন একটা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া খুব সাধারন কথা নয়।
রিমি রুম্মান
অচেনাকে চিনে নেয়া যায়। মানিয়ে নেয়াও যায়। কিন্তু যাদের ছেড়ে যেতে হয়, তাদের অভাববোধ কুড়েকুঁড়ে খায় প্রতিনিয়ত।
আবু জাকারিয়া
এই নিয়ম বড় বেশি নির্মম, নির্দয় মনে হলো … আসলেই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়া খুব কষ্টকর। ভাল লাগল।
রিমি রুম্মান
ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো। শুভকামনা রইলো।
ব্লগার সজীব
নারীর এই ত্যাগ কোন কিছুর সাথেি তুলনা দেয়া যায় না আপু।শ্রদ্ধা জানাই সকল নারীকে।
রিমি রুম্মান
ভালো থাকুন মা, বোন, প্রিয়জনকে নিয়ে। শুভকামনা নিরন্তর।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সেই জন্যইতো নারীদের মর্যাদায় স্রষ্টা বরাবর অন্য সবের উপরে রেখেছেন।তবে এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
রিমি রুম্মান
নিয়মগুলো বড় বেশি নির্দয় মনে হয়। ভাল থাকুন।
ইমন
ওপ্স! হৃদয়টা ছুয়ে গেলো…. 🙁
রিমি রুম্মান
আমার ছোট লেখায় কারো হৃদয় ছুঁয়ে যায়__ জেনে ভাল লাগলো । ভাল থাকুন সবসময়।