– ভাইয়া কেমন আছেন?
– সে ভালো আছে।
– কি বলেন বুঝি না, অনেকদিন ধরে আপনাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
– আসলেই, আমি নিজেও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি না।
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। কি বলে উনি? হাবিজাবি। তরুন হেঁটে চলে গেল। সে জানে ছেলেটা কিছু বুঝেনি। নিজের ভিতরকার কথা তরুণ কাওকে বলতে চায় না, বুঝাতেও চায় না। জানি সবকিছুতে তুমি।
বিছানায় বেশ কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করলো। ঘুমানোর চেষ্টা মাত্র। কিন্ত কখনোই সেই ঘুমটা আর ধরা দেয় না। হাতড়ে মোবাইলটা বের করে দেখে রাত দুটো বাজে। কেন যেন মনে হয় ঘুমিয়ে গেলেই রাতটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। না ঘুমিয়ে সে রাতটাকে পাহারা দেয় অন্ধকার, নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব আর যন্ত্রণাকে ভালোবেসে। এই জিনিসগুলা কখনোই পিছু ছাড়ে না। সারারাত জেগে জেগে স্মৃতিগুলোতে হাত বুলায় তরুণ। যেন কখনোই ওতে ধুলো না জমে। স্মৃতি ঘেরা কষ্টগুলো তাকে জড়িয়ে ধরে। বড্ড আপনজন যে।
কতকি মনে পড়ে তরুনের। একটা সময় ছিল, একজনকে না দেখলে তার দিন যেতো না। যে কোনভাবেই হোক দেখা করতেই হবে। আর না হলে মনে হতো কে যেন ভিতরটা খুঁচিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছেমত। ঢাকার বাইরে গেলে দেখা হতো না। কিছুদিন পর যখন সে আসতো তরুণ তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো। আর সে বলতো, আমি আছি, হারিয়ে যাইনি তো। তারা দুজন হাত ধরে বসে থাকতো। সে কি জানতো সেই ছোট্ট হাতটাকে ছুঁয়ে দেখার কি প্রচন্ড ইচ্ছা করতো তরুণের? সে প্রায়ই হেসে বলতো, আমি কোথাও যাইনি তো। তোমাকে কতদিন ছুঁয়ে দেখা হয় না তরুণের। আজকে সে খুব একা, সবকিছুর মাঝেও বড্ড বেশি একা। অনেক কোলাহলের মাঝেও থমকে যায় সবকিছু, কোথায় যেন একটা ব্যাথা, একটা শূণ্যতা গিলে ফেলে সবকিছু। বইমেলা, ফাল্গুন কিংবা বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনগুলোতে সে নেই। তরুণের খুব ইচ্ছে করে দূরে কোথাও চলে যেতে। হারিয়ে যেতে। সমুদ্রের বিশাল শূণ্যতার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে ইচ্ছা করে তার শূন্যতা কি এর চেয়েও বিশাল? কষ্টের ঢেউগুলো কি এর চেয়েও মৃদু শব্দে আছড়ে পড়ে?
আজকে মেঘলা দিনগুলোতে তরুণ একা বসে থাকে। তার পাশে কেও থাকে না। পরম যত্নে স্মৃতিগুলোতে হাত বুলায় সে। কারো বারবার থেকে যাবার ইচ্ছাতে আজ সে বড্ড বেশি একা। অথচ এমন দিনগুলোতে তাকে নিয়ে বের হয়ে যেতো তরুণ। হাত ধরে চারুকলায় পায়চারী করতো। কি অপূর্ব ছিল সময়গুলো। কিছু ভুলে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। ভালোবাসাগুলো এতো তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায় কেন?
তরুণের খুব জানতে ইচ্ছা করে সেও কি তাকে অনুভব করে? দিনে একটাবারের জন্য হলেও? কোন স্মৃতি কি মনে পড়ে তার? একসাথে পার করে দেয়া দিনগুলো। সেই কথাগুলো, অনুভূতিগুলো? কিংবা হাত ধরে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানো? আজও চুড়ি দেখলে তরুণ থেমে যায়, তাকে এক থোকা চুড়ি দেয়া হলো না। কষ্টটা চাদর হয়ে মনটাকে মুড়ে দিচ্ছে। তরুণ হাঁটতে থাকে উদ্দেশ্যহীন, সে জানে না এর শেষ কোথায়। তরুণ ভাবতে পারে না, সে কোন একদিন অন্যকারো হয়ে যাবে। শরীরটা কেমন জানি করে উঠে, দমটা বন্ধ হয়ে যায়। চোখটা ভিজে আসে। সেই পুরনো হাসি, পুরনো দুষ্টুমি, পুরনো স্বভাব সবকিছুই থাকবে তার, তবে অন্যজনের জন্য। তরুণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ভিতরটা কেমন যেন করে উঠে। জীবনের আদ্যোপান্ত সবকিছুই যে তাকে নিয়ে গড়েছে তরুণ। সে কি বুঝে তরুণের কষ্টগুলো? তরুণের দিনগুলো? রাতে অন্ধকারকে সাথে করে বারান্দায় বসে থাকে তরুণ। যখনই সে একা হয়ে চায় কপালপোড়া একাকীত্বটা কখনোই তাকে একা হতে দেয় না। তরুণ মুক্ত হতে চায়। বাতাসে কতদিন অক্সিজেনের স্বাদ পায় না সে।
১১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এটাকে কি নস্টালজিয়া বলে!!
স্মৃতির পাতা হাতড়ে/আকড়ে ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বেড়াই,
হয়ত ভালোবাসাবাসি আছে বলেই।
অনেকদিন পরেই পেলাম।
হিলিয়াম এইচ ই
হুম। ভালোবাসা আছে বলেই হয়তো।
নীহারিকা
তরুণের জন্য মায়া লাগছে। যে তাকে ছেড়ে গেছে তার জন্য এখনও তরুণের মনে পাহাড় সমান ভালোবাসা। হারিয়ে ফেলেও খুঁজে ফেরা।
ভালো থাকুক তরুণ।
হিলিয়াম এইচ ই
তরুণরা ভালো থাকে না। তরুণদের ভালো থাকতে নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
একটা বিষম হাহাকার গল্পটি জুড়ে।
নিজেকে খুঁজে ফেরা আর পরিণামে ব্যর্থতা, ভালোবাসা বুঝি এমনই এক অপ্রয়োজনীয় প্রয়োজন। ওই যে মানবদেহে অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আছে বিবর্তনের সাক্ষ্মী হয়ে, ভালোবাসাকে আমি তেমনই মনে করি।
আপনি সবসময়ই ভালো লেখেন। আপনার মতো গল্প লিখতে পারবো যে কবে! ;?
হিলিয়াম এইচ ই
ব্যর্থতার বোঝাটা হয়তো একটু বেশিই।
আমি তো ভালো লিখতে পারি না। এখনও লেখার চেষ্টা করতেসি তো। আপনি কবিতা লেখা শিখান আমাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
শিখিয়েছি তো লেখা।
আজ যেটা লিখেছেন ওটাকেই কবিতা বলে।
হিলিয়াম এইচ ই
ওটা হ-য-ব-র-ল
আবু খায়ের আনিছ
রাত এলেই কি একাকিত্ব ঘিরে ধরে শুধু।
হিলিয়াম এইচ ই
কি যে বলেন!! রাত এলেই ধরবে কেন শুধু!?? ও তো সারাক্ষণ সাথেই থাকে!!! 🙂 🙂
অপার্থিব
একই শহরে বাস করা মানুষগুলোর কত বিপরীত অনুভুতি! রাত বাড়লে মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পায়। এই কারণে এসময় কষ্ট বা আনন্দের অনুভুতিগুলোর তীব্রতা তাকে ঘিরে ধরে।