ডুবুরী

জিসান শা ইকরাম ২ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:৪২:১৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩১ মন্তব্য

গ্রামে গঞ্জে একটি পেশা আছে এখনো। পুকুরে স্বর্ণালংকার হারিয়ে গেলে তা খুঁজে দেয়া। এদের ডুবুরী বলা হয়, যদিও ডুবুরী শব্দের ব্যাপকতা অনেক। নারীদের কাছে স্বর্ণালংকার অত্যন্ত মূল্যবান। যাদের অনেক আছে তাদের তুলনায় যাদের খুব কম স্বর্ণালংকার আছে তাদের কাছে এর কদর অনেক গুন বেশী। দরিদ্র একজন নারীর হয়ত সম্বল একটি নাকফুল বা কানের ছোট একটি ঝুমকা, তা যখন কোনো পুকুরে পরে যায় বেখেয়ালে, তখন তার মনের হাহাকার এবং অলংকারের জন্য শূন্যতা ধনীরা ততটা বুঝতে পারবেন না। পুকুরে পরে যাওয়া স্বর্ণালংকার ডুবুরী দিয়ে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা যারা দেখেছেন, তারা কেবল অলংকারটি উদ্ধার হবার ঘটনাটিই দেখেন। অলংকার হারান নারীর হারিয়ে ফেলা সুখ, আনন্দ, স্মৃতি উদ্ধারের অপেক্ষার প্রহরটি কজনে দেখতে পান? বুকের মাঝে ঢিবঢিব ঢিবঢিব করতে থাকা নারী সর্বোচ্চ আশা এবং বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন ডুবুরী খুঁজে পাবার সু- সংবাদটি দিবেন। পুকুরের তলদেশ থেকে কাদা মাটি চালনিতে বিছিয়ে পানি দিতে থাকার এক পর্যায়ে যখন সোনালী ছোট্ট অলংকারটি চিক চিক করে ওঠে, যার অলংকার সেই একমাত্র উপলব্দি করতে পারে খুঁজে পাবার প্রকৃত আনন্দ।

মাঝে মাঝে কিছু বিশ্বাস এবং ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে মানুষ। ভালোবাসার ঘরে বাহ্যিকভাবে হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তবে প্রকৃত ভালোবাসার চাষী ঠিকই বুঝতে পারেন যে ভালোবাসা আছে নিশ্চিত অভ্যন্তরে। নিজে ডুবুরী হয়ে প্রতি মুহুর্তে খুঁজতে থাকেন তার আপাত হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা। সময়, পরিস্থিতি হয়ত ধারণা দেবে, নেই নেই ভালোবাসা নেই। তারপরেও যুক্তিছাড়া আশা এবং বিশ্বাস এর শক্তিতে বর্ষীয়ান হয়ে নিজেই ডুবুরী হয়ে কাংখিত ভালোবাসাকে খুঁজে পায়।
এই খুঁজে পাবার আনন্দের সাথে অন্য কোনো আনন্দের তুলনা করা যাবেনা, যায়না।

আপাত ভালোবাসা শূন্য বাসাটি ভালোবাসার উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে, বিশ্বাসে ফিরে পাওয়ায়।

* ছবিটি আমার নিজেরই প্রিয় একটি বিশ্রামাগারের রাতের ছবি।

১১৪১জন ৬৯৩জন
0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ